somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্নেল এর মৃত্যু

২৭ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২১ শে জুলাই, ১৯৭৬
রাতঃ ৩ঃ৫০
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

আমাদের কর্নেল কে নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। কর্নেল তখনও দ্বিধাহীন চিত্তে তার লক্ষ্যর দিকে স্থির। তার লক্ষ্য তখন ফাঁসির মঞ্চ।সার্চ লাইট এর তীব্র আলোয় মঞ্চ আসন্ন মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

কর্নেল জিজ্ঞাসা করেন ঃ আর একটু সময় কি আছে ?

কারা কতৃপক্ষ বলেন, আছে।

কর্নেল বলেন, তাহলে আমি একটি কবিতা পড়তে চাই।

অনুমতি দেয়া হয়।

সহযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন এর লেখা কবিতাটি পড়তে শুরু করলেন কর্নেল - তার শ্রোতা তখন জল্লাদ, জেলার, ডাক্তার এবং কয়েকজন কারারক্ষী।



অবাক হয়ে তারা দেখলেন ফাঁসির মঞ্চে কর্নেল উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন-

"জন্মেছি সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়েই গেলাম।
জন্মেছি তাদের বুকে পদচিহ্ন আঁকব বলে
এঁকেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর দুটো বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
সেই পাথরের নিচে শোষক আর শাসকের কবর দিলাম।
পৃথিবী অবশেষে এবারের মতো বিদায় নিলাম।"

এরপর কর্নেল বললেন- All right...go ahead...do your duty... I am ready....

তিনি নিজে তুলে নেন ফাঁসির দড়ি... যমটুপি পড়ানোর আগে বললেন- "বিদায় বাংলাদেশ... বিদায় দেশবাসী।

মঞ্চের কাছাকাছি থাকা কয়েদীরা হঠাৎ নীরবতার মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে জেগে উঠে... ফাঁসির মঞ্চের কাঠের ডালা পড়ার শব্দ ভোরের সব নীরবতাকে ভেঙ্গে দেয়।

সময় তখন- ভোর ০৪ঃ০১ মিনিট।

মিথ্যা এবং প্রহসনমূলক কোর্ট মার্শাল এর মাধ্যমে খুন করা হয় কর্নেল আবু তাহেরকে ...ট্র্যাজিক নায়ক হিসেবে সমাপ্তি ঘটে এই অসাধারণ মেধাবী মুক্তিযোদ্ধার ।



-নর্থ ক্যারলিনার ফোর্ট ব্রাগ এ সামরিক প্রশিক্ষনের শেষে আবু তাহেরের সার্টিফিকেটে লেখা ছিল-

"Abu Taher is fit to serve with any army under any condition in the world."

-স্বাধীনতার পূর্বে বাঙ্গালি অফিসার হিসেবে তাহের ছিলেন তৎকালীন পাক সেনাবাহিনীর এলিট কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এস.এস.জি এর টু কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এর কমান্ডিং অফিসার।

-স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একমাত্র বাঙ্গালি সামরিক অফিসার যাকে "মেরুন প্যারাসুট উইং" সম্মান দেয়া হয়।

-১৯৭১ এ তাহের যখন মুক্তিযুদ্ধে তখন ময়মনসিং এর মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর এবং সেনাবাহিনীতে তাহেরের প্রশিক্ষক জেনারেল কাদির খান, আবু তাহের এর বড় ভাই আরিফ কে বলেছিলেন- "Taher is a volcano... a hundrer percent professional."

যে সেনাপতি আবু তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার বিখ্যাত কালো সানগ্লাস এর আড়ালে চোখ ঢেকে ক্যান্টনমেন্টে ক্রুর হাসি হাসছিলেন আর ভেবেছিলেন ইতিহাস তার হাতের মুঠোয়... ঠিক চার বছর পর তারও সমাপ্তি ঘটেছিলো বীভৎস রক্ত গঙ্গায়।

তথ্যসূত্র ঃ ক্রাচের কর্নেল/ শাহাদুজ্জামান
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×