২১ শে জুলাই, ১৯৭৬
রাতঃ ৩ঃ৫০
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
আমাদের কর্নেল কে নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। কর্নেল তখনও দ্বিধাহীন চিত্তে তার লক্ষ্যর দিকে স্থির। তার লক্ষ্য তখন ফাঁসির মঞ্চ।সার্চ লাইট এর তীব্র আলোয় মঞ্চ আসন্ন মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
কর্নেল জিজ্ঞাসা করেন ঃ আর একটু সময় কি আছে ?
কারা কতৃপক্ষ বলেন, আছে।
কর্নেল বলেন, তাহলে আমি একটি কবিতা পড়তে চাই।
অনুমতি দেয়া হয়।
সহযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন এর লেখা কবিতাটি পড়তে শুরু করলেন কর্নেল - তার শ্রোতা তখন জল্লাদ, জেলার, ডাক্তার এবং কয়েকজন কারারক্ষী।
অবাক হয়ে তারা দেখলেন ফাঁসির মঞ্চে কর্নেল উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন-
"জন্মেছি সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়েই গেলাম।
জন্মেছি তাদের বুকে পদচিহ্ন আঁকব বলে
এঁকেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর দুটো বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
সেই পাথরের নিচে শোষক আর শাসকের কবর দিলাম।
পৃথিবী অবশেষে এবারের মতো বিদায় নিলাম।"
এরপর কর্নেল বললেন- All right...go ahead...do your duty... I am ready....
তিনি নিজে তুলে নেন ফাঁসির দড়ি... যমটুপি পড়ানোর আগে বললেন- "বিদায় বাংলাদেশ... বিদায় দেশবাসী।
মঞ্চের কাছাকাছি থাকা কয়েদীরা হঠাৎ নীরবতার মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে জেগে উঠে... ফাঁসির মঞ্চের কাঠের ডালা পড়ার শব্দ ভোরের সব নীরবতাকে ভেঙ্গে দেয়।
সময় তখন- ভোর ০৪ঃ০১ মিনিট।
মিথ্যা এবং প্রহসনমূলক কোর্ট মার্শাল এর মাধ্যমে খুন করা হয় কর্নেল আবু তাহেরকে ...ট্র্যাজিক নায়ক হিসেবে সমাপ্তি ঘটে এই অসাধারণ মেধাবী মুক্তিযোদ্ধার ।
-নর্থ ক্যারলিনার ফোর্ট ব্রাগ এ সামরিক প্রশিক্ষনের শেষে আবু তাহেরের সার্টিফিকেটে লেখা ছিল-
"Abu Taher is fit to serve with any army under any condition in the world."
-স্বাধীনতার পূর্বে বাঙ্গালি অফিসার হিসেবে তাহের ছিলেন তৎকালীন পাক সেনাবাহিনীর এলিট কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এস.এস.জি এর টু কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এর কমান্ডিং অফিসার।
-স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একমাত্র বাঙ্গালি সামরিক অফিসার যাকে "মেরুন প্যারাসুট উইং" সম্মান দেয়া হয়।
-১৯৭১ এ তাহের যখন মুক্তিযুদ্ধে তখন ময়মনসিং এর মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর এবং সেনাবাহিনীতে তাহেরের প্রশিক্ষক জেনারেল কাদির খান, আবু তাহের এর বড় ভাই আরিফ কে বলেছিলেন- "Taher is a volcano... a hundrer percent professional."
যে সেনাপতি আবু তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার বিখ্যাত কালো সানগ্লাস এর আড়ালে চোখ ঢেকে ক্যান্টনমেন্টে ক্রুর হাসি হাসছিলেন আর ভেবেছিলেন ইতিহাস তার হাতের মুঠোয়... ঠিক চার বছর পর তারও সমাপ্তি ঘটেছিলো বীভৎস রক্ত গঙ্গায়।
তথ্যসূত্র ঃ ক্রাচের কর্নেল/ শাহাদুজ্জামান