পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম বিতর্কিত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি একসময় মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য হয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থ নেবে না বলে শুক্রবার সরকার জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে জানান, আগে শর্ত পূরণ না করলে সংস্থাটি এ সেতুতে অর্থায়ন করবে না। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠি শনিবার সন্ধ্যায় প্রাইম খবরে প্রকাশের জন্য সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পাঠান। চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
দেশবাসীর প্রতি সৈয়দ আবুল হোসেনের জবাবদিহিমূলক বক্তব্য
পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক টানাপোড়েন হয়েছে। আমাকে জড়িয়ে অনেক মিথ্যা অপপ্রচার হয়েছে। কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে আমার কোন সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও অসত্য অভিযোগ ও অপপ্রচারের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করেছে। আমার সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক প্যানেল চেয়ারম্যানের যে অভিযোগ তা সঠিক নয়- তা দেশবাসীকে জানানোর জন্যই আমার এ খোলা বক্তব্য।
প্রিয় দেশবাসী, আমি গত ০৬-০১-২০০৯খ্রিঃ তারিখে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করি। মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকে সততা, স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করি। পরবর্তীকালে পদ্মা সেতু নিয়ে নানাবিধ অপ-প্রচারের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছতা রক্ষায় আমাকে ০৫-১২-২০১১খিঃ তারিখে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পরিবর্তন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এরপরও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেমে থাকেনি। দেশের নানা মহল থেকে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগ উত্থাপিত হতে থাকে। মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে কতিপয় মিডিয়া জনমনে আমার সম্পর্কে ‘ভুলবার্তা’ প্রদানে তৎপর থাকে। এই অবস্থায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক কর্তৃক অর্থায়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে, নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে এবং জনমনে ‘ভুলবার্তা’ বন্ধে, সরকারের যে কোন সংস্থা কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে প্রকৃত সত্য নিরপেক্ষভাবে উদঘাটনের জন্য আমি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করি।
সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়েছে
আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন একটি সুনির্দিষ্টি আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কার্যক্রম অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রকিউরমেন্ট আইন- বিধি, প্রচলিত আইন ও বিশ্ব ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়েছে। মূল্যায়নের প্রতিটি পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংকের সম্মতির পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরামর্শক নির্বাচনে প্রচলিত বিধিবিধান ও বিশ্ব ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ‘নিরপেক্ষ বিশেষ মূল্যায়ন কমিটি’ দরপত্র মূল্যায়ন শেষে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান অনুযায়ী মন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল রুটিন কাজ। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রীর কোন কর্তৃত্ব ছিল না। মূল্যায়ন স্তরে প্রতিটি পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু সম্পৃক্ত ছিল এবং মূল্যায়ন কমিটি নিরপেক্ষ ছিল, সেহেতু পরামর্শক নিয়োগে কোন অনিয়ম, ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির কোন ঘটনা ঘটেনি বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি নিজে কোন ধরণের অনিয়ম, অন্যায় কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে কোন বিষয়ে আমার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ও ছিল না।
মন্ত্রী হিসেবে এস.এন.সি-লাভালিন কর্মকর্তাদের সাথে আমার বৈঠক ও যোগাযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক অভিযোগ উত্থাপন প্রসঙ্গে
এস.এন.সি-লাভালিন প্রতিনিধিদের সাথে আমার বৈঠক নিয়ে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাকে সম্পৃক্ত করার যে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ প্যানেল উত্থাপন করেছে- তা অযৌক্তিক, অমূলক। আমি মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে, আদেশ/সুপারিশ ও তদবিরের মাধ্যমে কাউকে প্রভাবিত করে কোন সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করিনি, সুবিধা দেয়ার কোন এখতিয়ারও আমার ছিল না। বাংলাদেশের প্রচলিত সরকারি ক্রয় আইনে আমাকে সেই কর্তৃত্ব দেয়া হয়নি। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শুধু একজন মন্ত্রী ছিলাম না, জনগনের ভোটে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যও বটে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি (চঁনষরপ জবঢ়ৎবংবহঃধঃরাব), বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকারি চাকুরিজীবী নই। বাংলাদেশের মন্ত্রী ও সরকারী কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি এক নয়। মন্ত্রীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে আইনের মধ্যে থেকে জনস্বার্থে নানাবিধ কাজ করেন। দেশের জনসাধারণ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিদেশি ডেলিগেট, কুটনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন মন্ত্রীর সাথে দেখা করেন, কুশল বিনিময়সহ তাদের সমস্যার কথা বলেন- যা শুনা এবং বিধি অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা একজন মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব ও কর্তব্য। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমি মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন জনের সাথে বিভিন্ন সময়ে সরল বিশ্বাসে সাক্ষাৎ দিয়েছি, কথা বলেছি- যাকে আমি আমার দায়িত্ব বলে আমি মনে করেছি। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধিরা এই ধরণের মিটিং করাকে একটি শিষ্টাচার (ঈঁষঃঁৎব) বলে মনে করেন। এই রকম শিষ্টাচার পালনের লক্ষ্যে অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে কারো সংগে সাক্ষাৎ বা উন্মুক্ত মিটিং-এ উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রী হিসেবে আমাকে দায়ী- করা যুক্তিযুক্ত ও আইনসম্মত নয়।
ক্রয় আইনে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর দায়িত্ব রুটিন কাজ
সরকারি ক্রয়নীতি [ধারা- ২ (১৯)] অনুযায়ী, মন্ত্রী ক্রয়কারী (চৎড়পঁৎরহম বহঃরঃু) নন। ক্রয়কারী হচ্ছে- মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব অথবা অধিদপ্তর/দপ্তর ও সংস্থার ক্ষেত্রে ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান। সরকারি ক্রয়নীতির ধারা-২(১৯) অনুযায়ী, পরামর্শক নিয়োগে ক্রয়কারী হলো সচিব, মন্ত্রী নয়। আর মূল্যায়ন করবে সংশ্লিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি। এমতাবস্থায়, পরামর্শক নিয়োগে ক্রয়কারী হিসেবে (চৎড়পঁৎরহম বহঃরঃু) কেউ আমার সাথে দেখা করেনি, দেখা করার কথা নয়। আমি জনপ্রতিনিধি এবং মন্ত্রী হিসেবে সরল বিশ্বাসে সবার প্রতি ক্রয় আইনের চৎবধসনষব অনুযায়ী সম আচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে, বিভিন্ন প্রতিযোগীদের সাথে সাক্ষাৎপ্রার্থী হিসেবে সরকারি দপ্তরে প্রকাশ্য এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেখা করেছি। তাদের দেখা করার সুযোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য শুনার বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখা সঠিক নয়। আমি মন্ত্রী হিসেবে ক্রয়-সংক্রান্ত নীতির আলোকে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করেছি, সবার প্রতি সম-আচরণ নীতি প্রয়োগে সরল বিশ্বাসে দ্রুত পদ্মা সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেছি। যেহেতু পরামর্শক নিয়োগে আমি ক্রয়কারী নই, পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমার দায়িত্ব ছিল রুটিন কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন কর্তৃত্ব ছিল না, চুড়ান্ত অনুমোদনকারী ছিল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটি- তাই স্বীয় দপ্তরে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের বক্তব্য শুনে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা আমার দাপ্তরিক কাজের অংশ বলেই মনে করেছি।
এস.এন.সি-লাভালিন কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে ঃ সাবেক প্রতিমন্ত্রী জনাব আবুল হাসান চৌধুরীর অনুরোধে এবং তার উপস্থিতিতে আমার সরকারি অফিস কক্ষে এস.এন.সি-লাভালিনের প্রতিনিধির সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা কোন দিন, কোন তারিখে দেখা করেছেন তাও আমার মনে নেই। এখানে কোন গোপনীয়তা ছিল না। সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন। এস.এন.সি-লাভালিনের কোন প্রতিনিধি/কর্মকর্তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। উল্লেখ্য, এস.এন.সি-লাভালিনের প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার প্রাক্তন হাইকমিশনার দুইবার এস.এন.সি-লাভালিনের বিষয়ে আমার সাথে দেখা করেছেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ হাই কমিশনার এবং জাপানের রাষ্ট্রদূতও তাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমার সাথে দেখা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সরকারি অফিসে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কথা বলা মন্ত্রী হিসেবে আমার দাপ্তরিক কাজের অংশ ছিল এবং ক্রয় আইনের চৎবধসনষব অনুযায়ী সকল ব্যক্তির প্রতি সম আচরণের নীতি বাস্তবায়নের অংশ ছিল। সৌজন্য সাক্ষাতকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যাপারে মন্ত্রী হিসেবে আমি সকলকেই আশ্বস্ত করেছি যে, টেন্ডারের শর্ত, দাখিলকৃত দরপত্রের মেরিট, মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ এবং বিশ্ব ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ীই যথারীতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। যেহেতু বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত, যাঁদের দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সুখ্যাতি রয়েছে, সেহেতু দরপত্র মূল্যায়নে কোন পক্ষপাতিত্ব হবে বলে আমি মনে করি নাই। সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে, ক্রয়নীতির কোন ব্যত্যয় না ঘটিয়ে আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এক্ষেত্রে কারো সাথে দেখা করার সূত্র ধরে আমাকে দায় করার চেষ্টা অযৌক্তিক এবং বিধিসম্মত নয়।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল এর ধারণা ‘দরদাতা নির্বাচন ও কার্যাদেশ প্রদানে মন্ত্রী চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ’ প্রসঙ্গে
দরদাতা নির্বাচন ও কার্যাদেশ প্রদানে মন্ত্রী চুড়ান্ত কর্তৃপক্ষ- বিশ্ব ব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রী চুড়ান্ত কর্তৃপক্ষ নয়। ক্রয়নীতি অনুযায়ী যে কোন প্রকল্পের উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তি মূল্য সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তি মূল্য সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অনুমোদন দিতে পারেন। চুক্তি মূল্য এর অধিক হলে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর সুপারিশসহ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করতে হয়। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের আনুমানিক চুক্তি মূল্য ৩০০ কোটি টাকার অধীক। তাই এ চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি কোনভাবেই চুড়ান্ত অনুমোদন দাতা নই। এক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদই চুড়ান্ত অনুমোদনকারী। কাজেই “মন্ত্রী চুড়ান্ত অনুমোদনকারী”- এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে আমার জড়িত থাকার ইঙ্গিত কোনক্রমেই সঠিক নয়, আইন সম্মত নয় এবং যুক্তিসঙ্গতও নয়।
পিপিআর অনুযায়ী মন্ত্রী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ কোনক্রমেই পূনঃমূল্যায়ণ নির্দেশ দিতে পারে না
মূলত পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নসহ সুপারিশ এবং তাতে বিশ্ব ব্যাংক থেকে অনুমোদন প্রাপ্তির পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপিত হবে। বিধি অনুযায়ী মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ প্রস্তাবটি মন্ত্রী হিসেবে আমার সুপারিশসহ সার-সংক্ষেপ আকারে মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরিত হবে এবং মন্ত্রিসভা কমিটি কার্যাদেশ দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পিপিআর অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ মন্ত্রী পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন বা পুনঃমূল্যায়ন করতে পারেন না। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেও দরপত্র পূনঃমূল্যায়ণ করার কোন এখতিয়ার মন্ত্রীর নেই। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশই চুড়ান্ত। অতএব, বিশ্ব ব্যাংকের প্যানেলের ধারণা অনুযায়ী মন্ত্রী হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে দর-কষাকষি করে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন সুযোগ ও এখতিয়ার আমার ছিল না। পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য কোন প্রস্তাব/নথি আমার কাছে মন্ত্রী থাকাকালীন উত্থাপিত হয়নি। যেক্ষেত্রে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের সাথে মন্ত্রী একমত না হন, সেক্ষেত্রে মন্ত্রীকে মূল্যায়ন রিপোর্ট অপরিবর্তনীয় রেখে নিজের ভিন্ন মত/অবজারবেশন সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটিতে প্রেরণ করতে হয়। মন্ত্রীর ইচ্ছাতে মূল্যায়ন রিপোর্টের সুপারিশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংশোধনের কোন সুযোগ নেই।
এস.এন.সি-লাভালিনের স্থানীয় এজেন্টের প্রেরিত কথিত ই-মেইলে আমার নাম ইঙ্গিত করা হয়েছে প্রসঙ্গে
এস.এন.সি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধির প্রেরিত ই-মেইলের বিষয়ে আমি অবহিত নই এবং ই-মেইল দাতা ও গ্রহীতা কাউকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এক্ষেত্রে ই-মেইল দাতা ও গ্রহীতা- উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই আমার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে। আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, মন্ত্রী হিসেবে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে আমি চুড়ান্ত অনুমোদনকারী নই। মূল্যায়নে আমার প্রভাব বিস্তারের কোন এখতিয়ার নেই। সে ক্ষেত্রে আমার সাথে আমার অফিস কক্ষে সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসারের উপস্থিতিতে (প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর অনুরোধে অনুষ্ঠিত বৈঠকে) সৌজন্য সাক্ষাতের সূত্র ধরে আমার নাম ইঙ্গিত করে এস.এন.সি-লাভালিনের স্থানীয় ও সদর দফতরে ই-মেইল আদান প্রদান এবং আমাকে পদ্মা সেতু দুর্নীতির সাথে জড়িত করা- প্রচলিত কোন আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ‘উর্ধ্বতন ব্যক্তি’ হিসেবে যদি আমাকে ইংগিত করে ই-মেইল আদান প্রদান করা হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে নিতান্তই প্রতারনার সামিল। এ ধরণের ই-মেইল আদান প্রদান অন্য কোন উদ্দেশ্যে হয়েছে কিনা- তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। তাদের কথিত ই-মেইলের বিষয়বস্তুর সাথে আমি কোনক্রমে জড়িত নই।
বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক সচিবের মধ্যস্থতায় এস.এন.সি-লাভালিনের প্রতিনিধির সাথে মন্ত্রী হিসেবে আমার বৈঠকের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঃ বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক প্রেরিত চিঠিতে ‘সচিবের মধ্যস্থতা’ বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন- তা কোনক্রমেই আমার বোধগম্য নয়। কেননা আমি ইতোপূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধে এবং তার উপস্থিতিসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আমার সরকারি অফিস কক্ষে এস.এন.সি-লাভালিন প্রতিনিধির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। মন্ত্রী চাইলে যে কোন বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকা নিতান্তই স্বাভাবিক এবং তাদের দাপ্তরিক দায়িত্বও বটে। এক্ষেত্রে ‘সচিবের মধ্যস্থতা’ - কথাটি অবান্তর। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি কারো সাথে কোন বৈঠক করিনি।
১৩ জুন, এস.এন.সি লাভালিনকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দানের সুপারিশের সাথে কেভিন ওয়ালেস ও রমেশ শাহ’র ২৯ মে, ২০১১খ্রিঃ তারিখে ঢাকা সফরের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে ঃ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক ১৩ জুন, ২০১১খ্রিঃ তারিখে এস.এন.সি লাভালিনকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগেদানের সুপারিশের সাথে কেভিন ওয়ালেস ও রমেশ শাহ’র ২৯ মে, ২০১১খ্রিঃ তারিখে ঢাকা সফরের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত তা আমার জানা নেই। এ ধরণের অভিযোগের অর্থ- আন্তর্জাতিক মাপের সর্বজনবিদিত নিরপেক্ষ, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির সদস্যদের ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা। মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতি সহজেই জানা যাবে যে, আমি মন্ত্রী হিসেবে মূল্যায়ন কমিটির কোন সদস্যের সাথে কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া বা না দেয়ার ব্যাপারে কোন তদবির বা কোন অনুরোধ করেছি কিনা। কমিটির সদস্যদের বক্তব্যে আমার ভুমিকা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। কেভিন ওয়ালেস ও রমেশ শাহ’র ২৯ মে, ২০১১খ্রিঃ তারিখে ঢাকা সফর এবং ১৩ জুন, ২০১১খ্রিঃ মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ-এ দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে একীভুত করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজা নিতান্তই অবাস্তব ও ভিত্তিহীন।
রমেশ শাহ’র ডাইরিতে পিসিসি বা প্রজেক্ট কর্মাশিয়াল কষ্ট হিসেবে মন্ত্রীর জন্য পার্সেন্টেজ প্রদানের বিষয়ে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রসঙ্গে ঃ রমেশ শাহ তার ডাইরিতে কি- কারণে আমার নাম অর্ন্তভূক্ত করেছেন- তা আমার জানা নেই। রমেশ শাহ’র ডাইরিতে লেখা- ‘পিসিসি’ তিনি কি উদ্দেশ্যে লিখেছেন তা তিনি নিজেই জানেন। আমার সাথে রমেশের বা অন্য কারো সাথে এ ধরণের অনৈতিক কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমি তাদের কারো সাথে এককভাবে কথা বলিনি, দেখাও করিনি। আমাকে সম্পৃক্ত করে এ ধরণের লেখা (যদি থাকে) তা অসত্য, অন্যায় ও অযৌক্তিক। রমেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার বক্তব্য গ্রহণ করা ব্যতীত আমাকে অর্থ প্রদানের বিষয়টি সঠিক ও সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে আমাকে আগাম দোষী সাব্যস্ত করা অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্যও নয়। এক্ষেত্রে, কথিত ডাইরির কপি, রমেশ শাহ’র বক্তব্য এবং তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে কিনা- তা পরীক্ষাসহ পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়াবলী অনুসন্ধান করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন না করে, এ ব্যাপারে আমাকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা উদ্দেশ্যমূলক এবং সার্বিকভাবে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
মূল্যায়নকালে এসএনসি-লাভালিনের ২য় অবস্থান থেকে প্রথম স্থানে উঠে আসা সংক্রান্ত
এস.এন.সি-লাভালিন ২য় থেকে ১ম স্থানে উঠে আসার মধ্যে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা- তা আমি অবগত নই। বিষয়টি দরপত্র মূল্যায়ন সংক্রান্ত। কাজেই এ বিষয়টি মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট এবং মূল্যায়ন কমিটি যে সুপারিশ করেছে- তাতে উল্লেখ আছে। চুড়ান্ত অনুমোদনের লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংকে অগ্রায়নের সময় বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশই হুবহু সেতু বিভাগ থেকে বিশ্ব ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে মন্ত্রী হিসেবে আমি কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা সংশোধন করিনি। মূল্যায়নে এসএনসি-লাভালিনের দ্বিতীয় অবস্থান থেকে প্রথমে উঠে আসার ক্ষেত্রে আমার কোন ভুমিকা ছিল না। এটা মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্টই প্রমাণ করবে। এসএনসি-লাভালিনের ২য় থেকে প্রথমে উঠে আসার বিষয়টি বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, ক্রয় আইন (ধারা-৭ (৩) ক. খ.) অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে এককভাবে পক্ষপাতহীনতার এবং যৌথভাবে ক্রয় ক্ষেত্রে আইন ও বিধি প্রতিপালনের প্রত্যয়ন প্রদান করতে হয়। কাজেই পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার কোন ভুমিকা নেই বা ছিল না। আমি কোনক্রমেই এর সাথে জড়িত নই, জড়িত থাকার সুযোগও নেই।
সরকার জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কোম্পানিকে পরামর্শক কাজ দিতে চেয়েছিল প্রসঙ্গে
এ কথাটি যেভাবে এসেছে তা কিন্তু ঠিক নয়। সরকারের এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে, আমার যতদূর মনে পড়ে, কোন এক সভায় প্রসঙ্গক্রমে বিভিন্ন দেশের কাজ ও কাজের মান নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেক্ষেত্রে জাপানের কাজের মান ভাল বলে মন্তব্য এসেছিল এবং ওরিয়েন্টাল কোম্পানির নাম আলোচনায় স্থান পেয়েছিল। ঘটনা এ পর্যন্তই ছিল। কাজেই সরকার জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টালকে কাজ দিতে চেয়েছিল- এটা ঠিক নয়।
বার বার বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি গঠন/ভাংগা প্রসঙ্গে
কমিটি ভাংগা/গড়া নয়, কমিটি গঠন বা পুনর্গঠন হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইন্টিগ্রিটিকে সমুন্নত রাখার জন্য তা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারো কোন নির্দেশে নয়, প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও সেতুর কাজ দ্রুত সম্পাদন করার জন্যই সচিব মহোদয় কমিটি গঠন/পুনর্গঠন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি নথিতে বিভিন্ন সময়ে আমার অনুমোদন নিয়েছেন কিনা তা মনে নাই। মূল্যায়ন কমিটি গঠন/পুনর্গঠনের ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের মতামত ও সম্মতিকে সবসময় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, কমিটি পুনর্গঠনের তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাবে, সর্বশেষ কমিটিই- সত্যিকারভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য যোগ্য বিশেষজ্ঞ কমিটি। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সমন্বয়ে উক্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনঃ ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আইনুন নিশাত, বুয়েটের সাবেক ভিসি ড. মোঃ সফিউল্লাহ, বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত পরামর্শক ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. দাউদ আহমেদ ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস। এক্ষেত্রে সদস্য-সচিব ছাড়া উক্ত কমিটির সকল সদস্যই সেতু বিভাগের বাইরের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, যাদের দেশে ও আর্ন্তজাতিক পরিম-লে সুনাম রয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটির সকল সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। আর এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোন অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না।
বিশ্ব ব্যাংকের অনড় অবস্থান এবং আমার বক্তব্য
বিশ্ব ব্যাংকের অসত্য অভিযোগ ও কতিপয় পত্রিকার অপপ্রচার পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নকে স্থগিত করে দিয়েছে। আমি কোন অন্যায় ও অনিয়ম করিনি- যাতে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল হতে পারে। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন আটকে গেল। এটা আমার জন্য যেমন বেদনাদায়ক ও অস্বস্তিকর, তেমনি দেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ। আমি পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে কোন অন্যায় না করা সত্ত্বেও, মিথ্যা অভিযোগ ও কতিপয় মিডিয়ার অপপ্রচারের কারণে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি চেয়েছি পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ধরে রাখতে। বিশ্বব্যাংক প্যানেল প্রধান মেরিনো ওকাম্পো’র দুদক চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে আমাকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যুক্তি, সাক্ষ্য ও প্রমাণ ছাড়াই আমাকে অন্যায়ভাবে শুধু দাতা সংস্থার নির্দেশে দুর্নীতির আশংকার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে- এমন বক্তব্য ও দাবি ন্যায় বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অধিকন্তু, আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন- বিশ্ব ব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল যখন দুদকে বৈঠক করেন, তখন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিসেস গোল্ড স্টেইন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- যা নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অগ্রহণযোগ্য। কারণ, বিশ্ব ব্যাংক অভিযোগকারী।
সামগ্রিক বিবেচনায় এটা স্পষ্ট যে, আমি চুড়ান্ত মূল্যায়ন কর্তৃপক্ষ নই, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কোন সুপারিশ পুর্নমূল্যায়নে আমার কোন এখতিয়ার নেই, আমি মূল্যায়নে কোন সদস্যকে কারো জন্য তদবির করিনি। তাই পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ কার্যক্রমে আমাকে সম্পৃক্ত করার কোন সুযোগ নেই। একজন নাগরিককে বিনা দোষে, বিনা অপরাধে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করার কোন বিধান পৃথিবীর কোন আইনেই নেই। একজন সচেতন ও নিরাপরাধ নাগরিক হিসেবে দেশের প্রচলিত আইনের উপর আমি বিশ্বাসী। আমি চাই, বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে গেলেও দুদক-এর তদন্ত যথানিয়মে, সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হোক। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো- ইনশাল্লাহ। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, বিশ্ব ব্যাংকের কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। কারণ, পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তিতে বিশ্ব ব্যাংককে দায়মুক্তি দেয়া আছে। তবে, দায়মুক্তির নামে বিশ্ব ব্যাংক বিনা দোষে অন্য কাউকে দোষী করতে পারে কিনা- তা ভেবে দেখার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ রাখছি। বিশ্ব ব্যাংকের দায়মুক্তির কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপসংহার
মিথ্যা অভিযোগ ও কতিপয় পত্রিকার অপপ্রচার বিশ্বব্যাংককে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেছে। কতিপয় পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার যেমন- যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে আমার গ্রামের বাড়ি নির্মাণ, সড়ক দুর্ঘটনায় মন্ত্রীকে জড়িয়ে রিপোর্ট, সম্পাদকীয় এবং কার্টুন প্রকাশ করে আমার সম্পর্কে জনমনে একটি ‘ভুলবার্তা’ দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমাকে জড়িয়ে পদ্মা সেতুর বিষয়েও নানা অপপ্রচার হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের উত্থাপিত বিষয়গুলো মূল্যায়নে দেখা যাবে- এসব অভিযোগের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, আমার কোন আইনগত এখতিয়ার নেই- অথচ তারপরও আমাকে জড়াতে হবে- বিষয়টি একটু ভেবে দেখলে দেশবাসী বুঝবেন- আমি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
আমি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে, অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই- আমি সততা, নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সাথে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কাজ করেছি। আমি তিন বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময় জমি অধিগ্রহণসহ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসনের যাবতীয় কাজ সমাপ্ত করে এসেছি। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি কাজে যেখানে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি ২ বছরে শেষ করেছি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এক্ষেত্রে আমি কোন অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি। প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বীয় দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলাম। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখার জন্য এবং বিশ্ব ব্যাংক হতে দ্রুত পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ প্রাপ্তির স্বার্থে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। তদন্ত চলছে। এরপরও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অযৌক্তিক। দেশের একজন সাধারণ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সঠিক তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো- ইনশাল্লাহ।