ব্যাপার টা কি তাহলে ও ভুল দেখল! প্রিয়কের আসলে প্রথমে বিশ্বাস হতেই চায় নি। ও যাচ্ছিল চিটাগং। অনেকদিন মা-বাবার সাথে দেখা হয়না। ব্যাগটা সিটে রেখে ও গিয়েছিল পেপার আর পানির বোতোল কিনতে। সিটে বসার সময় খেয়াল করল , পেছনের সিটে বসে আছে সাজিদ আর যূথী। ওরা ওকে খেয়াল করার আগে আগেই অবশ্য ও সিটে বসে পড়ল।
প্রিয়ক, সাজিদ আর যূথী ব্যাচমেট। একই মেডিকেল কলেজে পরত। ওর আর সাজিদের মধ্যে ছিল বন্ধুত্ব। যে সে বন্ধুত্ব না , জানের জিগরি দোস্ত টাইপের বন্ধুত্ব। যূথীর সাথে প্রিয়কের সম্পর্কটা সাজিদের জন্যই হয়েছিল। সদালাজুক প্রিয়ককে সাজিদই বারবার গুঁতাগুঁতি করতো। বলত, সাহস থাকে তো বলে ফেল । না প্রিয়ক বলে নি। কিন্তু যূথীর সাথে কথাবার্তাটা চালু হয়ে গিয়েছিল। প্রিয়কের ভালই লাগত। কিন্তু সাজিদ ই বারবার বলত, আচ্ছা তুই সত্যি করে বলত, তুই কি ওকে ভালবাসিস ? যদি বাসিসই তবে বলতে এত গড়িমসি ক্যন? এই প্রশ্নের উত্তর তখন প্রিয়কের কাছে ছিলনা। একদিন ও হুট করে বলে ফেলেছিল, আমার মনে হয় এটা স্রেফ ভাললাগা ,ভালবাসা না। তোর যখন এত আগ্রহ তো তুই বলে ফেল না ক্যান? ব্যাপারটা যে সাজিদ সত্যি সত্যিই করে বসবে এটা কখনো ও ভাবে নি। পরদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাসে দেখা গেল , সাজিদ ইজ ইন এ রিলেশনশিপ উইথ যূথী। অন্য সবার মত প্রিয়ক ও সাজিদ কে অভিনন্দন জানিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি যূথীর সামনে যাওয়ার সাহস হুল না। এরপর যূথীর সাথে অল্পসল্প কথাবার্তাগুলোও বন্ধ হয়ে গেল। সাজিদ ও নতুন প্রেম নিয়ে বযস্ত হয়ে পড়ল। লেকচার গ্যালারিতে যূথীর সাথে বসা, দিনের বাকিটা সময় দুজনের রিডিংরুমে গ্রুপ স্টাডি -এইসবের শেষে মেডিকেল স্টুডেন্টের হাতে আর বন্ধুদের জন্য সময় থাকে না। তাই একটা সময়ের পরে বন্ধুত্বের সেই ঝাঁজ হারিয়ে গেল। কিন্তু প্রিয়কের আর যূথীর সাম্নাসামানি হওয়া হল না। শুধু যখন ওদের দুজন কে একসাথে দেখত, তখন বুকের মধ্যে একটু খচ করে উঠত। মাঝরাতে যখন চ্যাটলিস্টে শুধু সাজিদ আর জুথিকে অনলাইন দেখাত তখন আর ফেসবুকে থাকতে ইচ্ছে করত না।
ওরা সবাই যথারীতি পাশ করে গেল। এর মধ্যে একদিন খবর এল, সাজিদ আর যূথীর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে। যে যার পথে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । পোস্টগ্র্যাজুয়েশন, বাবা মা আর আত্মীয় স্বজনের ইচ্ছে পূরণ ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যস্ত সময়ের অবসরে , দেশে -বিদেশে কোন এক নিঃসঙ্গ মুহূর্তে ওর মনে হত, তবে কি অইদিনের উত্তরটা ভুল ছিল!!!কিন্তু অই পর্যন্তই। জীবনের স্রোতে আর বেশি কিছু ভাববার অবকাশই মেলে নি।
চিন্তার জাল ছিন্ন হতে ও বাস্তবে ফিরে এল। পেছনে ওদের কথা শোনা যাচ্ছিল। কথাবার্তায় ওদের অনেক খুশি মনে হচ্ছিল। জানা গেল, এ বছরই দুজনের এফ সি পি এস হয়েছে। এবং কয়েকদিন আগে ওদের বিয়ে হয়েছে। প্রিয়ক মনে মনে ভাবতে লাগল, এঙ্গেজমেন্টের এত্তদিন পরে বিয়ে !এই ভ্যালেন্টাইন ডে টাতে ওরা হানিমুনে কক্সবাজার যাচ্ছে।
হঠাত করে বাস থেমে গেল চিটাগঙ্গের কাছাকাছি । জানা গেল আজ থেকে ধর্মঘটের কারনে কক্সবাজার রুটে বাস চলাচল বন্ধ ।প্রিয়কের বাসা কাছেই ছিল। ও তাই একটা রিকশা নিয়ে চলে যাবার প্ল্যান করছিল। এমন সময় পেছন থেকে যূথীর কণ্ঠ শোনা গেল( এখনো আগের মতই মিষ্টি আছে! ব্যাচ প্রোগ্রামে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার সময় যতটা মিষ্টি ছিল। ঠিক ততটাই। )।যূথী চিন্তিত এখন কক্সবাজার কিভাবে যাবে এই নিয়ে। চিটাগং এ ও এই সময় আগে থেকে বুক করা না থাকলে হোটেল পাওয়া যায় না।ধ্যাত , হানিমুনটা এইভাবে নষ্ট হবে ভাবতেই পারছিনা-জুথিকে কাঁদোকাঁদো স্বরে বলতে শোনা গেল।
প্রিয়ক পেছন ফিরে ওদের বলল, হানিমুনটা নষ্ট হবে ক্যান! চিটাগঙ্গের এই প্রিয়কের বাসা আছে না।জুথির চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বলতে গিয়ে গলাটা ধরে আসছিল। আর তখনই প্রিয়ক উত্তরটা পেয়ে গেল। ভুল ছিল। হ্যাঁ সেদিন সাজিদের করা প্রশ্নে তাঁর উত্তরটা ভুল ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:০৪