somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যীশু আর সক্রেটিস : পর্ব - ৩

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশের পর)

: আপনি আগেই বলেছেন যে ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, কোন কিছু ঘটার আগে থেকেই নাকি তিনি তা জানতে পারেন। তাহলে কোন পরিস্থিতিতে মানুষ কিরকম আচরন করবে তাও নিশ্চয়ই তিনি আগে থেকেই জানতেন?
: কিন্তু ঈশ্বর তো মানুষকে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। মানুষ যেমন নীতিবান এবং ঈশ্বরের অনুগত হতে পারে তেমনি আবার পাপী আর অবাধ্যও হতে পারে। এটা সম্পূর্ণই সেই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।
: আচ্ছা, মানুষ যে পাপ করতে পারে তা কি ঈশ্বর জানতেন?
: তিনি জানতেন যে মানুষ পাপ করতে পারে তারপরও তিনি তাদেরকে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে।
: আচ্ছা, কোনভাবেই পাপ করতে পারবে না বা এই ধরনের পরিস্থিতিতে তারা পাপী হবে না এমনভাবে কি ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করতে পারতেন না?
: হ্যাঁ, যেহেতু ঈশ্বর সর্বক্ষমতাবান, তাই নিশ্চয়ই তিনি তা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি চাননি মানুষ শুধুমাত্র তার হাতের পুতুল হয়ে থাকুক, মানুষের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি থাকুক এটাই তিনি সবসময় চেয়েছেন।
: আচ্ছা, দুইটি মাথা আর তিনটি পা বা তার মর্জিমতো অন্য যেকোনভাবে কি ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করতে পারতেন?
: ঈশ্বর যেভাবে চান সেভাবেই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করতে পারতেন।
: ঈশ্বর যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবেই কি তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? আজ মানুষ দেখতে যেমন অর্থাৎ একটি মাথা, দুইটি পা, এভাবেই কি ঈশ্বর মানুষকে তৈরি করতে চেয়েছিলেন?
: অবশ্যই। ঈশ্বর নিখুঁত ও সর্বক্ষমতাবান। তার কোন ভুল হতে পারে না।
: তার মানে ঈশ্বর কোন ভুল করেননি, বরং সর্বক্ষেত্রে ঠিক যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন তেমনিভাবেই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?
: হ্যাঁ।
: তাহলে আপনি আর আমিও কি স্রষ্টা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই তৈরি হয়েছি? আর আদম আর ইভও স্রষ্টা তাদেরকে ঠিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই তৈরি হয়েছে?
: হ্যাঁ, আমি তো এটাই বললাম।
: মানুষের সবকিছুই কি ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন?
: হ্যাঁ, ঈশ্বরই সব কিছুর নির্মাতা।
: শয়তান বা অন্য কোন শক্তি কি মানুষের কোনকিছু তৈরি করেছে?
: না। ঈশ্বর সবকিছু একাই তৈরি করেন।
: তাহলে শুনুন, যদি ঈশ্বরই মানুষের চোখ, পা আর মন তৈরি করে থাকেন তাহলে মনোকামনাও তিনিই তৈরি করেছেন, সেই সাথে মানুষের সব কামনা এমনকি জ্ঞানপিপাসা আর যৌনাকাঙ্খা এগুলোও তিনিই তৈরি করেছেন। আপনি বলুন, মানুষের কেন পাপ করেছে? তার অপরাধটা কোথায়?
: সে অপরাধ করেছে তার দুর্বলতা আর বদস্বভাবের কারনে।
: আচ্ছা, হাত আর পা যেমন মানুষের একটা অংশ তেমনি মানুষের চরিত্রও কি মানুষের একটা অংশ?
: হ্যাঁ, মানুষের চরিত্রও মানুষেরই একটা অংশ।
: কে মানুষকে সৃষ্টি করেছে?
: ঈশ্বর।
: কে মানুষের হাত-পা তৈরি করেছে?
: ঈশ্বর।
: কে মানুষকে দুই হাত আর দুই পা দিয়েছেন? আজ মানুষ ঠিক যেমনটি দেখতে আর যেমনটি ছিল আদম আর ইভের সময়, এমনভাবে কে মানুষকে তৈরি করেছেন?
: ঈশ্বর।
: মানুষের স্বভাব তৈরি করেছেন কে?
: ঈশ্বর।
: তাহলে এবার বলুন, কে মানুষকে তার এই বদস্বভাব আর দুর্বলতা দিয়েছে? দিয়েছেন ঈশ্বরই, কারন একটু আগে আপনিই বলেছেন মানুষের যাবতীয় অংশ তিনি একাই তৈরি করেছেন।
: কিন্তু ঈশ্বর তো মানুষকে তাদের নিজেদের মত করে চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
: মানুষের দুইটিই হাত থাকুক তা কে চেয়েছিল? শয়তান চেয়েছিল?
: না, ঈশ্বর চেয়েছিল মানুষের দুইটি হাত থাকুক।
: কে চেয়েছিল মানুষের দুর্বলতা থাকুক, বদস্বভাব থাকুক? বলুন শয়তান চেয়েছিল? না, মানুষের দুর্বলতা, বদস্বভাব এগুলো থাকুক তা ঈশ্বরই চেয়েছিল। মানুষ যদি আজ ধূর্ত, খারাপ বা দূর্বল হয়ে থাকে তবে তা ঈশ্বরের কারনেই কারন ঈশ্বরই এগুলো দিয়েছেন আমাদের; তিনি চেয়েছেন বলেই আজ আমরা এরকম হয়েছি।
: কিন্তু মানুষের তো নিজস্ব চিন্তাশক্তি আছে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরই নেওয়ার ক্ষমতা আছে। ঈশ্বর তো আর তাকে পাপ করতে বাধ্য করেননি। তিনি মানুষকে নীতিবান অথবা পাপী যেমন ইচ্ছা তেমনই হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ভাল ছাড়া যে কোন কিছু করতে পারে না এমন পুতুল করে মানুষকে সৃষ্টি করলে মানুষের তো কোন মূল্যই থাকতো না। ঈশ্বর আমাদেরকে নিজের মর্জিমাফিক নীতিবান বা পাপী হওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন।
: এর কোন মানে নেই। একবার সৃষ্টি করার পর তিনি আবার মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন না। হোমার একবার একটা কবিতা লিখেছিলেন একটা শুকরছানা নিয়ে। লেখা শেষ হবার পর তিনি আবার কবিতাটি পড়লেন আর তারপর হঠাৎই কাগজটিকে দুমড়ে মুচড়ে আগুনে ফেলে দিলেন। কেন জানেন? কারন শূকরছানাটির যে সকল বৈশিষ্ট্যের কথা তিনি লিখেছিলেন সেগুলো এখন তার নিজেরই আর পছন্দ হচ্ছে না। আপনার ঈশ্বর এখন আমাদের সাথেও কি একই কাজ করছেন না?
: ঈশ্বর মানুষকে অপরাধী করে তৈরি করেননি। তিনি এমনভাবে আমাদের তৈরি করেননি যে আমরা পাপ করবই।
: তাহলে কে করেছে?
: ঈশ্বর মানুষকে ভাল আর নিষ্পাপ করেই সৃষ্টি করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষকে স্বর্গে অর্থ্যাৎ ইডেন গার্ডেনে রেখে আসেন। তিনি মানুষকে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই তিনি শয়তানকে ইডেন গার্ডেনে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। মানুষ পাপ করবে কিনা তা তিনি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেননি।
: কিন্তু ঈশ্বর তো মানুষকে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই তৈরি করেছেন। যখন তিনি একটি একটি করে সবকিছু তৈরি করছিলেন তখনই তিনি জানতেন কিভাবে এগুলো পরস্পরের সাথে খাপ খাওয়াবে। কারন তিনি তো সবজান্তা। তিনি সবকিছুই ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক তেমনটিই তৈরি করেছেন কারন তার তো কোন ভুল হতে পারে না। ধরুন, একজন বিজ্ঞানী সাধারন কিছু রাসায়নিক উপাদান দিয়ে একটি ওষুধ তৈরি করলেন। যেসব উপাদানগুলো দিয়ে এই ওষুধটি তৈরি করেছেন সেগুলো ছিল সাধারন কিন্তু যখন তিনি এগুলোকে একসাথে মেশালেন তখন এটি ভয়ংকর হয়ে উঠল। তারপর ওষুধটি রোগীর শরীরে প্রয়োগ করার পর যখন রোগী মারা গেল তখন তিনি সবকিছু অস্বীকার করলেন। ঠিক একইভাবে, ঈশ্বরও নিষ্পাপ মানুষ, জ্ঞানবৃক্ষ, স্বর্গের বাগান আর দেবদূত এ সবকিছু একত্র করেছেন।
: এরা সব পাপী, এরা ঈশ্বরের করুনা পাওয়ার যোগ্য নয়।
: আমার এখন মনে হচ্ছে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে শুধুমাত্র এটা দেখার জন্যই আপনার ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এই শয়তানের কাহিনী, ইডেনের বাগান আর নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি এগুলো সবই বাজে কথা। মানুষকে নির্যাতন করার জন্য তিনি শুধু একটি অজুহাত খুঁজছিলেন। মহাক্ষমতাবান সবজান্তা কেউ যদি সবকিছূ তৈরি করে থাকেন, তার সৃষ্টি কখন কেমন আচরন তাও যদি তিনিই ঠিক করে দেন তাহলে ফলাফলের জন্যও তিনিই দায়ী থাকবেন।
: সাবধান, ঈশ্বর তোমার ব্যঙ্গ করার পাত্র নয়। এসব বললে তিনি তোমাকেও ঐ ভয়ংকর অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করবেন।
: আমি ভেবেছিলাম আমাদের অলিম্পিক দেবতারাই শুধু নিষ্ঠুর কিন্তু এখন দেখছি তারা আপনার ঈশ্বরের কাছে নিতান্তই নগন্য। তিনি নিজেই আমাদের দিয়ে এসব অপরাধ করিয়ে নিয়ে এখন আবার এগুলোর জন্যই আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন।
: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দাও। ভাল বলেই এখনো তিনি এসব সহ্য করছেন।
: কেন? আপনিই বলেছেন তার অজান্তে কিছুই ঘটতে পারে না, যদি তাই হয় আর যদি তিনি সত্যিই দয়ালু হতেন, যদি সত্যিই তিনি শান্তি চাইতেন তবে মানবজাতিকে এত কষ্ট তিনি দিতে পারতেন না, পৃথিবীতে এত রক্তপাত চাইতে পারতেন না, মানুষকে অত্যাচার করার জন্য শয়তানকে তিনি অনুমতি দিতেন না। কিস্তু সত্য হচ্ছে তিনি এটাই চেয়েছেন।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:২৯
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×