পর্ব -০৩
-------------
একটি জিনিস সহজেই বলা যায় এই ব্রিটিশ সমজে সবকিছুর পাশাপাশি শোবার ঘরের যথাযথ ব্যবহার করা হয়। কেউ সরকারের হাউজিং সোসাইটির কোন ঘর পেলে সেখানে কোনভাবে নিজে কষ্ট করে অন্য কাউকে রুম, ডাইনিং রুম এগুলো ভাড়া দিয়ে দেয় যার উদ্দেশ্য হলো কয়েকটি পাউন্ড এক্সট্রা পাওয়া যায়। অনেকই সরকার থেকে দু'বেড বা তিন বেডের ঘর পেয়ে থাকলে ছেলে মেয়ে বড় হয়ে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে মা বাবা রুম ভাড়া দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ভাড়া মার্কেট রেট থেকে কিছুটা কম হয়ে থাকে। গত ছয় মাস ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজের দরুন থাকা খাওয়ার কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কোন খরচপাতি ছাড়া সাপ্তাহের শেষ দেড়শো পাউন্ড রোজগারের পুরোটাই হাতে জমা থাকতো। এবার অবৈধ তকমা লাগার ফলে রেস্টুরেন্ট মালিক ইমিগ্রেশনের ধরপাকড় ও জরিমানা গুনার ভয়ে কাজে রাখতে চায়না। লন্ডনের বাহিরের দুরের কোন জায়গায় যে দু একজন আবার কাজে রাখতে চায় তারা বেতন অর্ধেক যা সত্তর কি আশি পাউন্ড দিতে চায়। এখন অবস্থা বেগতিক বুঝে সাধের লন্ডন ছেড়ে আপততঃ খুব দূরের কোন রেস্টুরেন্ট কম বেতনে কাজে যোগ দিবো এমনটাই ভাবছিলাম । কিন্তু আচমকাই ভাগ্য দেবী কৃপা করলেন মনে হয়। পরিচিত এক মুরব্বি চাচার মাধ্যমে একটি অফ লাইসেন্সের দোকান কাজ পেয়ে গেলাম। প্রথম এক সপ্তাহ ট্রেনিং সকাল সাতটা থেকে বিকাল পাঁচটা, আর পরবর্তীতে রাত আটটা থেকে সকাল আট ঘটিকা পর্যন্ত ডিউটি।বেতন আগের কাজ থেকে বিশ পাউন্ড বেশি অর্থাৎ একশত সত্তর পাউন্ড। কিন্তু থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্হা নিজেকে করতে হবে তাতে মাসে প্রায় একশো বিশ থেকে একশো পঞ্চাশ খরচ হতে পারে৷ তবুও তৃপ্তি পেলাম কারণ লন্ডন ছেড়ে যেতে হচ্ছে না। কাজের ব্যবস্হা হলো এবার থাকার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা যায়।
পর্ব ৪
-------
প্রথম এক সপ্তাহ প্রতিদিন দশ পাউনড দিয়ে রাত্রি যাপন করা যায় এমন 'চিত এন্ড কাত' হোটেলে একটি রুমে উপরিপুর বেডে আরো দশ বারো জনের সাথে থাকলাম। এরিমধ্যৈ অফ লাইসেন্সের মালিকের সহায়তায় একজন বাঙালি মহীয়সী নারী পেয়ে গেলাম। তিনি সম্মত হলেন তার কাউন্সিলের বাসায় যৎসামান্য ভাড়ায় থাকতে পারবো। ভদ্রমহিলার নাম বানেছা বিবি ৷ তার স্বামী মারা গেছেন ছয় মাস আগে। বানেছা বিবি হলেন তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়াতে তার চেয়ে পঁচিশ- এিশ বছরের বড় জমশেদ মিয়া তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় বানেছা বিবির বয়স বারো কি তেরো ছিলো আর এখন আমার সববয়সী তার বড় ছেলে সে হিসাবে বানেছা বিবির বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে বলে অনুমান করলাম ৷ কিন্তু রঙিন শাড়ির ভাঁজ দিয়ে ফর্সা ও মেদহীন শরীর দেখে মনে হয় যেন বানেছা বিবির বয়স আড়ি দিয়ে সুদূরে চলে গেছে। আমার কাছে তার বয়স কোন অবস্থাতেই পঁচিশের বেশি মনে হলো না । মনে মনে ভাবলাম একসময় দেখতাম স্বামী মারা গেলে স্ত্রীরা রঙিন কাপড় ছেড়ে সাদা কাপড় পড়ে সাদাসিধা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর এখন দেখি বানেছা বিবির মতো রমণীরা অতি সহজেই স্বামী হারানোর ব্যাথা ভুলে যায়। তাদের দেখা যায় অনেকটা শোকহীন ও অনুতাপহীন। মেয়েদের তাহলে স্বামী হিসাবে কাউকে গ্রহন করার জন্য কতটা বয়সের ব্যবধান হওয়া প্রয়োজন! বৃদ্ধ চাচারা কেমন করে দেশ থেকে সুন্দরী যুবতীদের নিয়ে এসে অসময়ে মরে গিয়ে এইসব মেয়েদের জীবন বিনাশ করে এসব নিয়ে অযথাই ভাবতে থাকলাম। বানেছা বিবিকে আমি খালা বলে সম্বোধন করি আর উনি আমার নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। বানেছা বিবির চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় দুই ছেলে বাংলাদেশ থেকে মা-বাবার রাইটে যেমন মা বারা বৃটিশ হলে ছেলেমেয়ের অধিকার জন্মায় এমন আইনে ইংল্যান্ডে এসেছে বছর তিনেক আগে। আর বাকী এক ছেলে এক মেয়ে দেশে আছে। ইমিগ্রেশন জটিলতায় পড়ে ওদের বয়স আটার বছরের বেশি হওয়াতে ভিসা পায়নি কিন্তু আপিলে আছে যে কোনো সময় ভিসা পেয়ে চলে আসবে। বানেছা বেগমের বড় ছেলে বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। তার তিন বেডরুমের ঘরে একরুমে তিনি, একটিতে মেজ ছেলে,আর অন্য রুমে বাঙালি এক ছেলের সাথে আমার শেয়ার রুম হলো। যাক মাথা গুঁজার একটা ব্যবস্হা ও সাথে কাজের সংস্থান হলো। ভাগ্য বিধাতা কাউকে তাহলে নিরাশ করেন না। মনে মনে খুশি হয়ে অবৈধ থাকার ব্যাথা ভুলতে যেতে লাগলাম।
আমি বুঝতে পারলাম প্রথম দিন থেকেই বানেছা বিবি আমাকে পছন্দ করা শুরু করলেন। তার বাসায় আসার পরের সপ্তাহ থেকে একসাথে পরিবারের লোকের মতো খাওয়া-দাওয়া করি। আমি মাঝে মাঝে মাছ, মাংস ও তরকারির নিয়ে আসি কিন্তু খাবারের জন্য কোন বাড়তি টাকা নেন না। আমি সেক্ষেত্রে ভাগ্যবানই বলতে হয়। আর বানেছা বিবির হাতের রান্না অতটা সুস্বাদু যে একবার খেলে কেউ ভুলতে পারবে না।
কিছুদিনের মাথায় বানেছা বিবি আমাকে গোপনে ডেকে তার বেডরুমে নিয়ে গেলেন। আমি কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগতে লাগলাম। তিনি বললেন,আমি তোমাকে সচরাচর ছেলেদের থেকে অনেকটা ভিন্ন রকম দেখলাম। তোমার কোন আজেবাজে অভ্যাস নেই। কোন লোভ, হিংসে নেই আজকাল এমন ছেলে লাখে একটাও নেই। তাই আমি অনেক ভেবেচিন্তে তোমাকে একটি প্রস্তাব দিতে চাই। আমি চোখ তুলে বানেছা বিবির দিকে তাকালাম। তিনি স্বাভাবিক ও ভাবলেশহীন আছেন কিন্ত আমার হাত পা কেমন জানি কাঁপছে। মনে হয় জীবনে এই প্রথম কোন নারীর কাছে এতটা গোপনে কথা বলছি তাই আমার ভীরু হৃদপিণ্ড কেঁপে লোমশ শরীরের সবগুলো লোম যেন উঁকি দিয়ে আছে। আমি ঘেমে ভিজে যাচ্ছি......
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫১