----------------
অর্থনীতিতে বহুল জনপ্রিয় একটি কথা হলো - Demand is unlimited মানুষের চাহিদা হলো অসীম। যদিও পৃথিবী ব্যাপ্তি মানুষের গড় আয়ু ৬০-১০০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদি সমীক্ষা করা হয়,আপনি কতটুকু সম্পদশালী হতে চান? মুষ্টিমেয় লোক বলবে দু'মুঠো ভাত খেয়েদেয়ে ছেলে মেয়েদের মানুষ করলেই যথেষ্ট। আর বেশিরভাগের মনে বাসনা থাকবে গাড়ি, বাড়ি, খামার বাড়ি, তবে এই পাওয়ার অব হর্স হওয়ার মনোবাসনা হয়তো কেউ মুখ ফুটে স্বীকার করবে না। তবে এটা সত্য যে, এই অসীম চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেকেই হয়ে যায় বেপরোয়া।
জীবনের চিরাচরিত নিয়মে যেখানে সবাইকে কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম আছে বৈকি যেমন ধরুন-যদি কেউ কোন ছাত্র সংগঠনের নেতা হয় তবে অতি সহজেই দু একটা বাড়ি, গাড়ি, কোন কোম্পানির অনারারি এম,ডি কিংবা ব্যাংক মালিক হয়ে যেতে পারেন। দুঃখজনক হলেও ধ্রুবসত্য হলো, যেখানে একজন ছাত্রনেতার মেধাবী সহপাঠীরা কোন গার্মেন্টস, ঔষধ কোম্পানি, এম এল এম কোম্পানি, ব্যাংক ও বীমায় সকাল বিকাল চাকরির সিরিয়াল নিচ্ছে । সেখানে এইসব ছাত্রনেতাদের টাক পয়সা, প্রভাব প্রতিপত্তির এ আচমকা উত্থান 'জুলুম নাকি জিতে যাওয়া' সেটা হয়তো সময়ই নির্ধারন করে দেয়।
মিঃ বাবু, একসময়ের তুখোড় রাজনৈতিক নেতা। আশি ও নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে বাড়ি ছাড়া, ও অনেক অফিসার চাকরিচ্যুত হয়েছেন। পুরো বিমানবন্দর এলাকা যার দাপটে চলতো, সোনা চোরাকারবার থেকে শুরু করে মাদক সবিই তার নিয়ন্ত্রণে ছিলো। কথিত আছে কোন এক সার্কেল এ,এস,পির বাসায় রাতের আঁধারে গুলি করে তার বিরুদ্ধে যাওয়ার মাশুল বুঝিয়ে দিয়েছিলো। শহরের মধ্যে দুটি বাড়ি, একটি বস্তি জবর দখল এগুলো ছিলো তার অন্যতম অর্জন।
অনেক অপরাধী নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে বেছে নেয় যুক্তরাজ্য ও দুবাই। সে হিসাবে মিঃ বাবু লন্ডনী কন্যা বিয়ে করে পাড়ি জমায় যুক্তরাজ্য ও সেখানে গড়ে তুলে স্হায়ী আবাস। দীর্ঘদিন সেখানে বসবাসের দরুন তিনি দুটি বাসা ক্রয় করেন।
এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম মিঃ বাবু তার একটি বাসা সুলভ মূল্যে বিক্রি করবেন তাই বন্ধুর সাথে একজন ক্রেতা হিসাবে বাবুর বর্তমান ঠিকানায় যাই। তার ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ডাস্টবিনের চেয়ে আরো বিদঘুটে গন্ধ নাকের কাছে এসে লাগলো। মনে হলো যেন এখনি বমি চলে আসবে। ঘরটি একটি স্টুডিও রুম। এদেশে এসে প্রথম স্টুডিও রুমের ব্যাপারে অবগত হলাম। যা বাংলাদেশে আমি দেখিনি। স্টুডিও রুমে একটি ছোট রুমের ভেতরে একসাথে শোবার বেড, টয়লেট,কিচেন ও ওয়ারড্রব। যেহেতু এক রুমে সবকিছু তাই পরিস্কার না রাখলে যা হয়। রুমের ভেতর এক ঘিঞ্জি পরিবেশ,চারপাশে ময়লার স্তুপ, সিগারেটের এক্সটেতে পুরাতন সিগারেটের ছাই যেন বিস্টা হয়ে গেছে। কোন রকম নাক চেপে বসে মিঃ বাবুর সাথে আলাপ হলো। চেহারায় রুক্ষতা, চোখের কোনে চামড়ার বয়েসী ভাঁজ আর গজগজ দাড়িতে পঞ্চাশ বছরের মিঃ বাবুকে দেড়'শো বছরের ভৌতিক বৃদ্ধের মতো লাগছিলো। যাক আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, এদেশে দুটি ঘর ছিলো। যার মধ্যে স্ত্রীর নামে চার বেডরুমের একটি ঘর। অপরটি সাত বেডরুমের যা তার ও স্ত্রী দুজনের যৌথ নামে। সাত বেডরুমের সেই ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পাউন্ড আয় আসে।
তিন বছর আগে তার মেয়ের বয়স যখন আটারো হয় তখন নাকি সে বৃটেনের সব আইন কানুন শিখে যায়। মেয়েটির নাকি পাকিস্তানি এক ছেলের সাথে মেলামেশা ও ফষ্টি নস্টি আর আদরের দুলালী মেয়েটাই যত সমস্যার মূল। মাকে যুক্তি দিয়েছে যে ইউ,কে'র আইন অনুযায়ী স্বামীর সম্পত্তির অর্ধেক পাওনাদার হলে স্ত্রী, তাই যে ঘর স্ত্রীর নামে ছিলো তা বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা পয়সা মা মেয়ে ভাগ করে নিয়ে নেয়। আর মিঃ বাবুকে মা মেয়ে দু'জনে আলাদা আলাদা কেইস করে ঘর থেকে বাহির করে দেয়। শুধু লন্ডনে নয় বাংলাদেশেও কেইস করে দিয়েছে। এমনকি দেশের যা সম্পত্তি আছে তাও বাবুর হাতছাড়া হয়ে গেছে। লন্ডনে থাকা খাওয়ার জায়গা না থাকাতে হোমলেস (Homeless) হয়ে মিঃ বাবু কাউন্সিলের বারান্দায় কয়েকদিন থাকার পর এই স্টুডিও রুম( Studio Room) পেয়েছেন। কিছুদিন আগে মেয়ে পাকিস্তানি সেই ছেলেকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। সাত বেডরুমের ঘর ভাড়া যা আসে তা স্ত্রী ও মেয়ে ভাগ করে নেয়। যৌথ মালিকানার এই ঘরটি আবার মিঃ বাবুর দস্তখত জাল করে রি-মর্গেজ থেকে স্ত্রী ব্যাংক থেকে আরো লোন নিয়েছে। আর পরিচিত কিছু মানুষ দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘরে আরো তিনটি চার্জ ( Charge)বসিয়েছে,(চার্জ হলো- কেউ টাকা ধার দিয়েছে এখন পরিশোধ করতে অপারগ বিধায় সম্পত্তির ভাগিদার হতে পারবে। যদি কেউ সম্পত্তি ক্রয় করে বা ব্যাংক পজিশন নিয়ে নেয়,তবে চার্জের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য) এখন ব্যাংক মিঃ বাবুকে এক অংশের মালিক হিসাবে ব্যাংক চিঠি দিয়েছে যদি তিনি ঘরটি রাখতে চান তবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে নইলে ঘরটি ব্যাংক নিলামে নিয়ে নিবে।
যা হোক হিসাব করে দেখলাম যদিও ঘরের দাম চারশো হাজার পাউন্ড হয় তবে ব্যাংকের লোনের টাকা, চার্জ সব বাদ দিয়ে মিঃ বাবুর ভাগে পনের থেকে বিশ হাজার জোটবে। এসব ঝামেলায় কেউ জড়াবে না তাই নিজেও জড়াইনি। আসার সময় মিঃ বাবুর দেওয়ালে টাঙানো বহু দিনের পুরানে সাদাকালো একটি ছবি চোখে পড়লো। তিনি বুক খোলা অবস্থায় সিডিআই হোন্ডার উপরে বসা, চোখে কালো চশমা আর ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত দেখে আমাদের দেশের বেগুন ক্ষেতের কথা মনে হলো, বেগুন ক্ষেতের যে গাছটিতে পোকার সংক্রমণে মরে যাবার আগে বিদঘুটে হলদে কলিজা পোড়া ভাব আসতো, আজকের মিঃ বাবু যেন সেই পোকায় আক্রান্ত বেগুন গাছের প্রতিচ্ছবি।
নোট -
(১) আজ হোক কাল হোক নিজের জুলুমের যাতনা নিজেকে বহন করতেই হবে।
(২) আজ যদি আপনি মানুষের সাথে জুলুম করেন, কাল আপনার রক্ত থেকে আরো বড় জুলুমবাজ সৃষ্টি হয়ে আপনাকে ধ্বংস করবে না এমন কোন নিশ্চয়তা আছে কি!
(৩) পাপের প্রায়শ্চিত্ত কখন, কিভাবে যে দিতে হবে তা পাপীজন কল্পনাও করতে পারবে না।
আরো পড়ুন -
গড ইজ স্মাইলিংং টু'ডে,নোট -০১
ইউ আর এ পাকি বয়, নোট -০২
একজন বিদেশীনীর বঙ্গ দর্শন,নোট-৩
বন্ধুর কৃতজ্ঞতাও থ্রি ডাব্লিউ,নোট-৪
পুত্রসন্তান ও লালবাতি, নোট-৫
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৯ ভোর ৪:৩১