(বয়োবৃদ্ধ ও বয়োকনিষ্ঠদের পোস্টটি না পড়ার অনুরোধ)
(১)
রাহিমা বেগম, নামটিতে খাঁটি মুসলিম গন্ধ, সাথে মমতায় জড়ানো সুমিষ্ট সুঘ্রাণ। কিন্তু তার চলনে, বলনে, হাল ফ্যাশনের রংয়ে ঢংয়ে যেন মিস ইউনিভার্সকে নিশ্চিত হার মানাবে। বয়স তের হবার সাথে তেপান্তরের অবোধ্য লীলা। কত ঢেউয়ে ঢেউয়ে তুলা সফেদ ফেনা, প্রমোদ সুখে ঠোঁটের ম্যাক ব্রান্ডের কড়া লিপস্টিক শুষে নিলো প্রায় তিরিশ-পয়ত্রিশ যুবা। লেখাপড়ার পাঠ কোনরকম এ লেভেল পযর্ন্ত গড়ালো। লেখাপড়ায় কতটুকু না মনযোগ তার চেয়ে সহস্র গুণ গবেষণা ছেলেদের নিয়ে। কোন ছেলের কথা বলার ধরনটা কেমন। কোনটির হাঁটার স্টাইল, কাপড় পড়ার স্টাইল এসব যাচাই বাচাই করে স্কুল জীবন শেষ করলো। একসাথে তিনটা ছেলেকে ম্যানেজ করতে সক্ষম যে কৌশল দরকার তা সহজেই সে আয়ত্বে নিয়ে নিলো। ছোট বোন রুপিয়া বেগম ও বান্ধবী মল্লিকা সহ তার সববয়সী সবাই রীতিমতো ঈর্ষা করতে লাগলো। সবাই রহিমা বেগমকে প্রেমের আইডল হিসাবে দেখতে লাগলো। রহিমা কখনো কাউকে ফোনে সময় দেয়, কাউকে গাড়ির ভেতরে আর কারো বাসায় গিয়ে ধোঁয়া তুলে সিগারেট, চা- নাস্তার সাথে হালকা এলকোহল পানীয় খেয়ে 'কোয়ালিটি টাইম' অতিবাহিত করে। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে কখনো মাঝ রাতে বাড়ি ফেরে। কখনো আবার বন্ধুর সাথে রাত যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রথম প্রথম বাবা রমজান আলী শাসনের চোখ রাঙানো ও কড়া কথার আওয়াজ তুলতেন। কিন্তু একদিন সোস্যাল সার্ভিসের লোকজন এসে তাকে কড়া ধমক দিয়ে গেছে মেয়ের কমপ্লেইন পেয়ে। সেই থেকে রমজান আলী ভিজে বিড়াল হয়ে ঘাপটি মেরে আছেন। কখন যে শিকারে পরিণত করবেন সে চিন্তায় মাথা ঠুকতে লাগলেন। কখন যে সুবর্ন সুযোগ আসবে তার অপেক্ষায় আছেন।
(২)
বয়স বাড়ার সাথে সাথে রহিমা বেগম প্রেমের পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে ওঠে। সে এবার আজে বাজে ছেলেদের ছাঁটাই করে। তার হিট লিস্টে এবার তিনটি ছেলে। এদের একজন হলে ইংলিশ স্যাম, নাইজেরিয়ান হেডলার, আর বাঙালী শাকিল। আর বাকী সব মাইনাস। এদের তিনজনের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে সে বিয়ে করবে কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে কাকে রেখে কাকে বিয়ে করবে। তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন দিকে পারফেক্ট। কেউ কোন না কোনভাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাকে পরিপূর্ণতা দেয়। সে আশা করে এমন যদি হতো তিনজনই তাকে স্ত্রী হিসাবে সংসার করবে কিন্তু বাস্তবতা তো এমনটা হয় না। তাই বেছে নিতে হবে সবচেয়ে ভালো লোকটাকে যে তাকে আদর সমাদর করবে। তাকে কেউ এক মুহূর্তের জন্য অবহেলা করবে সেটা সে মেনে নিতে পারে না। সেদিক দিয়ে স্যামকে সেরা বলে মনে হয়। আজ পযর্ন্ত সে তাকে অবহেলা তো দূরে থাকে যতক্ষণ পাশে থাকে এক হাত দিয়ে তার হাতে ধরে থাকে অন্য হাত দিয়ে পিছনে জড়িয়ে থাকে। স্যামের কাছে অদ্ভুত মায়া আছে। যদিও হেডলার তার সেরা মানুষদের একজন। ভালোবাসায় পাগল করে দেয় কিন্তু সে বেখেয়ালি আচরণ করে যা দিয়ে সংসার করা যাবে না। আর শাকিল তো হাফ পাগলা কখন কি বলে তার ঠিক নাই। এই বলবে তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আবার কয়েকদিনের জন্য ঔষধ হয়ে যায়। তাই সবদিক বিবেচনা করে সে স্যাম'কে বিয়ে করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার পরিবার তো কোন অবস্থাতেই ইংলিশ ছেলেকে মেনে নিবে না। যদিও বড় ভাই, ছোট বোন কোন সমস্যা না তারা সহজেই মেনে নিবে। আসল সমস্যা হলো মা- বাবা তারা কোন অবস্থায় মেনে নেবে না। সকল চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে সে কথা বললো স্যামের সাথে,
স্যাম, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে বিয়ে করবো?
- তুমি কি সত্যি বলছো? আর ইউ সিরিয়াস!
- কতদিন থেকে তোমাকে অনুরোধ করে আসছি কোন পাত্তাই দাও না আজ হঠাৎ এত সিরিয়াস?
- পরিবারের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?
- নাহ! সে রকম কিছু না, অনেক চিন্তা করে দেখলাম তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
- জব ডান, তাহলে চলো আজই আমাদের বাড়িতে চলে যাই।
- কেথায়!
- লন্ডন থেকে দেড়শো মাইল দুরে সালফোর্ড (Salford)।
- তুমি রেডি হয়ে চলে আসো, আজ বিকালেই আমরা রওয়ানা দিবো।
বিকালবেলা মাকে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছে ফিরে আসতে দু'দিন লাগবে, এমন কথা বলে সাথে একটা ব্যাগ টেনে টেনে রহিমা নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে।
(৩)
যে পিতামাতা আদরে, আহ্লাদে বড় করলো তাদেরকে তুচ্ছ ভেবে রহিমা বেগম যাত্রী হলো আবেগের ট্রেনের। যার গন্তব্য শহর তার কাছে এখনো বড় অচেনা। ট্রেনে বসে স্যামের কাঁধে বহু দিনের তৃপ্তির ঘুম দিয়ে সোজা চলে যায় সেলফোর্ড।
স্যামের বাড়িতে চারটি বেডরুম যেখানে শুধু বৃদ্ধ মা বাবা থাকেন। স্যামের বড় ভাই বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। রহিমা বেগমকে দেখে স্যামের মা বাবা তেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। শুধু হ্যালো বলে তাদের রুমে চলে গেলেন।
একা একা রুমে থেকে প্রায় বিরক্তিবোধ করলো, কেউ তার সাথে কথা বলে না। স্যাম তাকে সাথে নিয়ে বাইরে যায় না। সে রাতে যখন বাড়ি ফিরে কখনো পুরো মাতাল আর কখনো অর্ধেক মাতাল। রহিমা বেগম নিজেকে অন্য দ্বীপের মানুষ হিসাবে আবিস্কার করলো।
একসপ্তাহে সে বুঝতে পারে আসলে কালচার এমন একটি খাম যাতে মোড়ানো থাকে টুকরো টুকরো গল্প। সবার প্রিয় গল্প যেমন এক হয়না তেমনি মানুষের কালচার ও এক হয় না। স্যামের মদ্যপ অবস্থা পড়ে থাকা,বহু নারীর প্রতি আসক্তি রহিম বেগমের জন্য মোটেই সংসার করার জন্য সুখকর জায়গা নয়।
সপ্তাহ শেষ রহিমা কোন কুল না পেয়ে মা - বাবার কাছে ফিরে আসে। রাগে গোস্বায় রমজান আলী মেয়েকে বলেন, হয় বাড়িতে তুই থাকবে নয়তো আমি। অনেক সহ্য করেছি আর নয়। অনেক বাকবিতন্ডার পর রহিমা বেগম কথা দিলো সে এখন থেকে মা-বাবা যা বলবে সে অনুযায়ী কাজ করবে। আর কোন ছেলের সাথে মেলামেশা করবে না। রহিমার মা অনেক কাকুতি মিনতি করে স্বামীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শেষবারের মতো ম্যানেজ করলেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৯ রাত ২:১৯