বিষয়টি জলের মতো স্বচ্ছ কিন্তু ঘোলা পানিতে নাক ছিটকানোর মতো। হ্যাঁ ' বলছিলাম সমাজ সচেতনতার অভাব হোক আর সামাজিক চিন্তা চেতনার দৈন্যদশা হোক পুত্র সন্তান পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্খা পিতামাতার মনে রয়ে যায়। হয়তো কেউ তা অকপটে স্বীকার করে আবার কেউ বলে আল্লাহ যা দেয় তাতেই খুশি। তবে কয়জন মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর হাস্যমুখে গ্রহন করে সে তর্কে নাই গেলাম।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসাবে অতি সহজে ইউরোপ থেকে অনেকেই বৃটেনে মাইগ্রেশন করেছেন। তাদের মধ্যে ইতালি, স্পেন,পর্তুগাল ও অন্যান্য ই,ইউ সদস্যভুক্ত দেশ থেকে বহুসংখ্যক বাংলাদেশী পরিবার এসেছেন। অনেকে দীর্ঘদিনের ব্যবসা, বাড়ি,গাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে আবার অনেকে পরিবারের অর্ধেক সদস্য বৃটেনে এসেছে বাকী অর্ধেক ইউরোপ ও লন্ডন যাওয়া আসা করে। এদের অনেকেই আবার বৃটেন থেকে বেনিফিট সুবিধা নেয় আবার ইউরোপের যে দেশের নাগরিক সে দেশ থেকেও সুযোগ সুবিধা নেয়। অবশ্য তাদেরকে এ ব্যপারে বললে খাড়া যুক্তি দিবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে এদেশে আসা। বৃটেনে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি যা নাকি ইউরোপের অন্যকোন দেশে নেই । তাদের সকলেই মূলত বেনিফিট সুবিধা নেওয়ার জন্য যে বৃটেনে পাড়ি দেয়া তা ভুলেও স্বীকার করবে না। যা হোক এদের মধ্যে দু'একজন ভিন্ন থাকলেও থাকতে পারে।
আমার পরিচিত মিঃ উদদীন, স্ত্রী,ও দু'মেয়ে নিয়ে সপরিবারে ইতালি থেকে বৃটেনে এসেছেন প্রায় চার বছর। প্রথমদিকে কষ্ট করে শেফের কাজ করতেন আর বেনিফিট নিতেন। এখন প্রাইভেট ট্যাক্সি (উবার) করেন। প্রতিমাসে আবার ইতালি যান সেখানে তার নিজস্ব একটি দোকান আছে যা ভাড়া পান তা নিয়ে আসেন। ভদ্রলোক আমাকে জানালেন জীবনের সব চাহিদা মিটে গেছে শুধু একটা পুত্র সন্তান হ'লেই তিনি খুশি। আমি বললাম এদেশে মেয়ে হলে তো ভালো মা বাবাকে দেখাশোনা করে আর বিয়ে দিতে কোন ঝামেলা নাই। আর ইসলামী রীতি অনুযায়ী দুটি মেয়ে হলে তো দুটি জান্নাত পেয়ে যাবেন। লোকটা যে যুক্তি দিলো তাতে আমাকে বেশ ভাবনায় ফেলে দিলো। ভাবলাম 'নাহ' মানতে হবে পুত্র সন্তান পাওয়ার পিছনে উনার পাওয়ারফুল যুক্তি হলো, মেয়ে তো আর কাঁধে করে কবর দিতে পারবে না, জানাযা করতে পারবে না, যা একটা ছেলে পারবে তাই উনার একটা ছেলে দরকার।
এর কিছুদিন পর লোকটার সাথে দেখা ও তার হাতে বেশ কিছু কাগজপত্র । কুশল বিনিময় করে জানতে পারলাম উনি আইনজীবীর কাছে যাচ্ছেন। কোন বিষয় নিয়ে আইনজীবীর কাছে যাচ্ছেন তা জানার আগে হাসিমুখে বললেন, আপনাকে তো জানানো হয় নাই আমার তো একটা পুত্র সন্তান দুনিয়াতে এসেছে। উনার হাসিমাখা মুখ দেখে ভালো লাগলো। আমি বললাম তাহলেতো আপনার আর কোন আফসোস নাই! যাক, এবার তাহলে আপনি মারা গেলে পুত্র করব দিতে পারবে। তিনি হাসি দিয়ে বললেন বর্তমান যে সমস্যা আছে তা আগে দূর হোক, নইলে তো কাজ করতে পারবো না। বললাম এবার কি হলো আপনার! তিনি কাতর স্বরে জানালেন, মাস খানেক আগে যেদিন পুত্র সন্তান জন্ম নেয় সেদিন তিনি কাজে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছেলে হয়েছে এমন ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আসতে গিয়ে রেড ট্রফিক লাইট ক্রস করেছেন। কিন্তু বেরসিক ড্রাইভিং লাইসেন্স অথরিটি সিক্স পয়েন্ট দিয়ে দিছে। এখন আইন অনুযায়ী আগামী এক বছর গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং পরবতীতে আবারো ড্রাইভিং পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে লাইসেন্স আনতে হবে। এখন আপিল করবেন যদি কোন সুরাহা হয়ে যায় ৷যদিও আপিল জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ( উল্লেখ্য ইউ,কের মটর আইন অনুযায়ী একটি ফুল ডাইভিং লাইসেন্সে ১২ পয়েন্ট থাকে,ডাইভিং অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী লাইসেন্সে পয়েন্ট ও সাথে জরিমানার বিধান আছে )
১) পুত্র সন্তান পাওয়ার আকুতি কারো নেই বললে ভুল হবে আর সে চাহিদা কোনদিন শেষ হবে না।
২) পুত্র সন্তান যে কতভাবে আবেগপ্রবণ মা-বাবাকে লালবাতি দেখায় তার কোন হিসেব নেই।
৩) আমারা যতই সুবিধা ভোগ করি না কেন আরো বেশি আদায় করে নেওয়ার কৌশল চলতেই থাকে।
আরো পড়ুন -
গড ইজ স্মাইলিংং টু'ডে,নোট -০১
ইউ আর এ পাকি বয়, নোট -০২
একজন বিদেশীনীর বঙ্গ দর্শন,নোট-৩
বন্ধুর কৃতজ্ঞতাও থ্রি ডাব্লিউ,নোট-৪
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ৩:৪৮