বন্ধুর কৃতজ্ঞতা ও থ্রি ডাব্লিউ।
--------------------------------------
শিক্ষা একটি পণ্য নাকি সেবা (Product or Service) নাকি উভয়ই (Both) হিসাবে অভিহিত করা যায় ? সেটা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি থাকতে পারে। আবার মেধা পাচার (Brain drain) নাকি মেধা অর্জন (Brain gain) সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। তবে মোদ্দাকথা বর্তমানে মুক্ত অর্থনীতির (Open Economy) যুগে শিক্ষা যে কেবল বানিজ্যের (Profit Businesses) একটি লাভজনক শাখা সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০০৯ সালে পুরো বিট্রেন জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দ (Recession) শুরু হয়, আর মন্দা কাটাতে তৎকালীন লেবার সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে স্টুডেন্ট নিয়ে আসার রাস্তা সহজতর করে।
ভাবতে পারেন মন্দা কি? বৃটেনে পর পর দু'টি অর্থ বছরে বিরূপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বা নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক মন্দা বুঝায়। যার ফলে মানুষের ক্রয়- ক্ষমতা,জিডিপির হার,সঞ্চয়,গৃহস্থালি আয়,ব্যবসায়ার মুনাফা হ্রাসের প্রভাবে ব্যাংকি খাতে দেউলিয়াত্ব ও কর্মহীনতার রেইট বেড়ে যায়।
মন্দার সাথে ইমিগ্রান্ট স্টুডেন্ট নিয়ে আসার সম্পর্ক বা কি? সরকারের আভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ হিসাবে অর্থের যোগান ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি স্টুডেন্টের ব্যবহার করা হয়। স্টুডেন্টরা এদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, ভিসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খাতে অনেক অর্থের যোগান দেয় সেই সাথে বাসাভাড়া, জিনিসপত্র ক্রয়ের মাধ্যম ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করে মন্দা দূর করতে সাহায্য করে। তাই বলি, শিক্ষাকে ব্যবসার লাভজনক শাখা হিসাবেে অভিহিত করা মোটেই অযৌক্তিক নয়।
সরকারের মন্দ দূর করার সেই পলিসির সুযোগে বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল,বুয়েট,পাবলিক,বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাটিফিকেট সংগ্রহধারী (Collected) অনেকেই ব্রিটেনে পাড়ি জমায়। যাদের একাংশ মেধাবী শিক্ষার্থী আরেক অংশ সুযোগ সন্ধানী।
তাদের মধ্যে মেধাবী দলের একজন আমার এক বন্ধু সালেহ। যে কিনা সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসারের কাজ ছেড়ে চলে আসে লন্ডন। ২০০৯ সালের কোন এক মাসে তাকে হিথরো বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসার জন্য যাই। ব্যাংক অফিসারের মতো শার্ট- পেন্ট পরিহিত অবস্থায় সাথে একটি ব্যাগ নিয়ে সে বিমানবন্দর অবতরণ করে। তার শরীরের কাঁপুনি দেখে নিজের জ্যাকেটি পরিয়ে দিয়ে উপদেশ বাণী দিলাম,এই লন্ডনে সবাই বলে, নেভার বিলিব ইন থ্রি ডাব্লিউ,(Never believe in three W) W- weather, W- work, W- Wife, যে কোনো সময় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। যেকোন সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে তাই সবসময় শীতের কাপড় সাথে রাখবি।
এরমধ্যে অনেকদিন অতিবাহিত হলো, সালেহ'র সাথে বন্ধু হিসাবে সুসম্পর্ক অটুট থাকলো। যেকোন প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে একে অন্যে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতাম।
কিছুদিন আগে সালেহ আমাকে ফোন করে বলে আমার অফিসে আসতেছে। কিছুক্ষণ পরে দেখি সে আমার সামনে উপস্থিত।একটি ব্রাউন খাম আমার হাতে তুলে দিয়ে বলে এটা খুলতে হবে। আমি বললাম কি এমন গুরুত্বপূর্ণ চিঠি বন্ধু ! (এদেশে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অফিস থেকে ব্রাউন খামে চিঠি আসে)। সে বললো এটা তুই ছাড়া আমি খুলি নাই যদিও সলিসিটর থেকে আমি জানি এটা কি। আমি খুলে দেখি তার ইনডিফিনেট লিভ টু রিমেইন ইন দ্য ইউ,কে'র পারমিট (ILR)। সালেহ বেশ অনুনয় করে বললো,লন্ডনের আসার সেই প্রথম দিন তুই যে তোর জ্যাকেট আমাকে খুলে দিয়েছিলে তা আমি ভুলি নাই। এই রেসিডেন্সি পাওয়ার মূলে তোর অনেক অবদান। অনেকদিন আগের ছোট্ট কর্মটি বন্ধুর মনে রেখাপাত করার দরুণ কৃতজ্ঞতার দায় স্বীকার করার জন্য আমার দ্বারে ছুটে আসাতে আমি 'ভালোবাসার সুখে' সুখ সাগরে ভাসতে থাকি।
"ইউরোপ,আমেরিকা, কানাডা সহ উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘদিন থাকলে সে দেশের সরকার ভিনদেশীদের নাগরিকত্ব প্রদান করে, কিন্তু আরব দেশগুলোতে সারাজীবন থাকলে নাগরিকত্ব দূরে থাক মিসকিন অপবাদ দূর হয় না। এটা কেমন মানবাধিকারের ধারণা আজও বুঝতে পারি না"!!!
নোট -
১) দিনে দিনে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্হা দুর্বৃত্তদের কুক্ষিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
২) নিজের কোন কর্ম সাধন কার মনে কখন কিভাবে রেখাপাত করে তা অনেকসময় অজানাই থেকে যায়।
৩) ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'ফাইভ ডাব্লিউতে' বিশ্বাস করা যায় না-
W- Work, W- Workers,W- Wealthy,W- Weather,W- Women,
আরো পড়ুন -
গড ইজ স্মাইলিংং টু'ডে, নোট -০১
ইউ আর এ পাকি বয় নোট -০২
একজন বিদেশীনীর বঙ্গ দর্শন -নোট - ৩
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৯ ভোর ৬:১৬