একজন বিদেশীনীর বঙ্গ দর্শন
****************************
সেদিন পরিচয় হলো মিস ব্রাউনিয়ার সাথে। পেশায় সদ্য পাশ করা একজন আইনজীবী। পরিচয় পর্বের শুরুতে আমার নাম শুনে বললেন, তার বেষ্ট ফ্রেন্ডের নাম আর আমার নাম নাকি একি। কথাটা শুনে বেশ কৌতুহলী হলাম। ইংলিশ মেয়ে আর বেস্ট ফ্রেন্ড বাঙালী কারণটা কি! অনেক কথাবার্তা বলার পর জানলাম মিঃ রহমান তার ক্লাসমেট ছিল যে পাশ করে দেশে চলে গিয়ে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছে। সে মূলত আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বিলেতে পড়তে আসেনি, এদেশে পড়তে এসেছিলো শুধু পারিবারিক স্টাটাস ধরে রাখার নিমিত্তে । আমার কৌতূহল আরো বেড়ে গেলো, বিস্তারিত জানতে পেরে যা ভাবছিলাম তার কোন মিল নয় বরং উল্টো জিনিস বুঝতে পারলাম। নাহ কোন প্রেম নয়। খাঁটি বন্ধু, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবাইকে নিয়ে ক্লাবে ডিংকস ও পার্টির জন্য মিঃ রহমান অতি সহজেই সবার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল । কিছুদিন আগে বন্ধু মিঃ রহমানের বিয়েতে মিস ব্রাউনিয়া সহ পনের জনের একটি গ্রুপ চট্টগ্রাম গিয়েছিলো। বাংলাদেশে একজন বিদেশীনীর ভ্রমণ কাহিনি জানতে পেরে নিজ দেশ সম্পর্কে তার ভাবনাটা জানতে ইচ্ছে হলো, আমি বললাম আচ্ছা তোমার অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের পাঁচটি মন্দ ও পাঁচটি ভালো দিক বলো প্লিজ, সে কোন কিছু চিন্তা না করে প্রথমেই মন্দ দিক বলতে শুরু করলো,
১) তাদের গ্রুপের সবাইকে বাংলাদেশের লোকজন নাকি অন্য গ্রহের মানুষ মনে করে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকতো।
২) বাংলাদেশে মদ ও বারের কোন সুবিধা নেই। যদিও তাদের বন্ধু মদের ব্যবস্থা করে ঘরের মধ্যে পার্টি দিয়েছিলো।
৩) তার বন্ধুর বাড়ির গেটে দারোয়ান,গাড়িতে ড্রাইভার, চলাফেরার জন্য পারসোনাল সিকিউরিটি,এত এত কাজের লোকের জন্য টাকার অপচয় যা তার কাছে বড় একটা অপরাধ বলে মনে হয়েছে।
৪) বাংলাদেশে একটি বিয়েতে হরেক রকমের পার্টি করা হয় যেমন হলুদ পার্টি , মেহেদী পার্টি, বৌভাত, সহ অনেক কিছু যা নিতান্তই অপচয়। এত বেশি অপচয় তার জীবনে আর কখনো দেখে নি।
৫) একদিকে তার বন্ধুর এত টাকা,অভিজাত বাড়ি, দামী গাড়ি অন্যদিকে তাদের আশেপাশে অনাহারী লোকজন খাবারের জন্য হাত পেতে আছে। যা তার কাছে বেশ অমানবিক ও নিষ্ঠুরতা বলে মনে হয়েছে।
সে আরো বলতে থাকলে আমি থামিয়ে বললাম পাঁচটি কারণ জানতে চেয়েছি, এবার ভালো দিকটা বলো, সে এবার চিন্তায় পড়ে গিয়ে নিচু স্বরে বললো,
১) সাধারণ মানুষ তাদের দেখে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকলেও তারা কোন ক্ষতি করতে চাইতো না।
২)দেশের মানুষগুলোর মধ্যে কিছু সংখ্যাক অনেক ধনী আর কারো কারো সম্পদ বলতে কোন কিছু নেই।
৩) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার দেখা সকল কোন দেশের চেয়েও সুন্দর স্পেশালি সী-বিচ।
এইটুকু বলে থেমে গেলে আর কোন পয়েন্ট বলতে পারলো না।
মনে মনে ভাবলাম, মিঃ রহমান তাহলে পনের জনের গ্রুপকে টিকেট দিয়ে নিয়েছে যেভাবে সবাইকে ক্লাবের মদ আর টিকেটের টাকা দিতো তাহলে কিভাবে কনফার্ম হওয়া যায়! মেয়েটা যদি আবার মাইন্ড করে বসে। বুদ্ধি করে বললাম। তাহলে বাংলাদেশে অনেক মজা হয়েছে সেই সাথে আমাদের দেশের মানুষ ও ফুড সম্বন্ধে আইডিয়া পেয়ে গেলে। সে বললো বাংলাদেশের ফুড খুব চমৎকার। তাহলে কি আবার ছুটির সময় বন্ধুকে দেখতে যাবে ? অবশ্য আমাদের দেশে যেতে প্লেনের ভাড়া অনেক! সে অবাক হয়ে বললো, তাই নাকি কত পাউন্ড নেয়? আমি বোকার মতে হেসে হেসে বললাম,তোমার তো সেটা জানা লাগবে না। এটা আমাদের ট্রেডিশন কাউকে দাওয়াত দিলে ভাড়াসহ নিতে হয়। এদেশে দেখো না রেস্টুরেন্ট খাবার পর সবাই বিল ভাগ করে দেয় আর আমাদের দেশের হেড অফ ফ্যমেলি সব ম্যানেজ করে। সে হাসলো এটি কি বিদ্রুপের হাসি নাকি তৃপ্তির হাসি জানা হলো না।
একজন বিদেশীনী যা দু'সপ্তাহের ছুটিতে বুঝতে পারলো তা অভাগা জাতি দু'শ বছরের গোলামী থেকেও বুঝলো না।
নোটঃ
১) বাংলাদেশে মুসলিম বিয়েতে যে অপচয় হয় তা নিঃসন্দেহে লোক দেখানো আয়োজন ছাড়া কিছু নয়।
২) কিছু সংখ্যাক লোক বাংলাদেশে যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তা বহু দেশের রাজা বাদশাকেও হার মানাবে।
৩) যথাযত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে পর্যটন খাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হতে পারতো।
সঞ্চিত অভিজ্ঞতার নোট -০১
সঞ্চিত অভিজ্ঞতার নোট -০২
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৭:২৬