প্রথমাংশ
(৪)
বাল্য বন্ধু শাহীন লন্ডন গেটউইক (Gatwick) বিমানবন্দরে মজনুকে রিসিভ করতে এলো।সেখান থেকে তাকে সোজা নিয়ে গেলো ইংল্যান্ডের কেন্টাবারী এলাকায়।
মজনু,লন্ডনে পা রেখে প্রথম প্রহরেই নিজে নিজেকে প্রশ্ন করলো,যে বয়সে বিয়ে করে সংসারী হওয়ার কথা সেই বয়সে আজ ভিন্ন পরিবেশে এসে নতুন করে সংগ্রাম করার কতটুকুই বা যৌক্তিকতা?বহিঃরাজ্যে জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে সে কোন অভীষ্ট লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছবে?যে পথ বেছে নিয়েছে তা কি স্বেচ্ছায় আত্মাহুতির সমতুল্য নয়?
যাবার পথে কেন্টের(Kent) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বুঝলো কেন এই জায়গাটাকে ইংল্যান্ডের বাগান বলা হয়,কেন্টের রাস্তার চারদিকে ঢেউ তোলা পাহাড়ের দেয়ালে সবুজ আর সবুজ। গাছপালা ও পাহাড়ি পরিবেশে দিগন্ত ছোঁয়া সবুজের সমারোহ।চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দুর্গ,প্রাসাদ,ও গীর্জা যেন চোখ জুড়ানোর মতন স্বর্গীয় দৃশ্য।
বন্ধু শাহীন আরো যোগ করলো,ঐতিহাসিক মধ্যযুগীয় দুর্গ ডোভার ক্যাসেল কেন্টের অদূরে সমুদ্রতীরের খাঁড়া পাহাড়ের উপর অবস্থিত। আবার বিশ্বের দীর্ঘতম ইংলিশ চ্যানেল ট্যানেল এই কেন্টেই অবস্থিত।গভীর সমুদ্রের সুরঙ্গ পথ দিয়ে লন্ডন টু ফান্স ট্রেন চলাচল করে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দু' সপ্তাহের মধ্যে পরিচিত হলো কমর উদ্দীনের সাথে।অমায়িক ও বন্ধুবাৎসল কমর উদ্দীন কলকাতার তাড়াশংকর এলাকার ছেলে।সে বললো তার জানা মতে একটা (Pub)মদের বারে পার্ট টাইম কাজ আছে। মালিকে সপ্তাহে দু'দিনের জন্য ভালো লোক খোঁজছে।মজনুকে ঠিকানাটা দিয়ে বললো তুমি যোগাযোগ করে দেখতে পারো।
বিকালে ঠিকানা অনুযায়ী মজনু পৌঁছে গেলো সেই মদের বারে।ওয়েট্রেসের কাছে জানতে চাইলো মালিক আছে কি না?সে একটা কাজের জন্য এখনে এসেছে।ওয়েট্রেস তাকে অপেক্ষা করতে বলেই ভেতর দিকে চলে গেলো।
"কিছুক্ষণএকজন ভদ্রলোক এলেন যার ছিমছাম,শান্ত,বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ,ছিপছিপে চেহারায় বাঙালীয়ানার ছাপ। বয়সের চেয়ে লোকটাকে অনেক বুড়ো দেখাচ্ছে।
আমার নাম সনজিত হাওলাদার সবাই আমাকে মিঃ হাওলাদার বলেই চিনে।
নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন এই মদের বারে সতের বছর থেকে শেফের কাজ করছেন।এরপর ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে মজনুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। মজনু সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো ঠিকই কিন্ত মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো আর ভাবছিলো বুড়োটা এখানকার শেফের কাজ করে সে কেন তার ইন্টারভিউ নিবে? যার সাথে দেখা করতে আসলাম সেই আসল মালিকের খবর নাই!
-এই লোকটা আবার কোন পার্ট নিতেছে নাতো?
পরক্ষনেই মজনু বেশ বিচলিত হয়ে ওঠে লোকটার পাল্টা প্রশ্ন শুনে,
-কার রেফারেন্সে এখানে কাজের জন্য এসেছো?
- জ্ঞী,কমর উদ্দীনে নামের কলকাতার একজন লোক।
- Oh Yes,He told me about you,
- তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছো! Right.
-জ্বী
- Lets speak in Bangla.
এই ব'লেই লোকটি তৃপ্তির হাসি দিলেন।বেশ শুদ্ধ বাংলায় পরিষ্কার কথা বলতে লাগলেন সেই সাথে তার রুক্ষ-সুক্ষ চেহারার আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
- বাংলার প্রতি এত ভালোবাসা সাথে বাঙালীয়ানার বিন্যাস দেখে মিঃ হাওলাদার সাহেবের প্রতি মজনুর সম্মান বহুগুণে বেড়ে গেলে।
- শোনা চাচা,আমার পূর্ব পুরুষ এখানে আসেনি,আমার বয়স যখন বিশ তখন এদেশে আসি।দু মেয়ের দুজনেই ডাক্তার।মেয়ে দু'টো দু'জন ভিনদেশি ছেলে বিয়ে করে সুখেই আছে ৷
- আমি সতের বছর আগে এখানে কিচেন পটার হিসাবে কাজ শুরু করি।
- আচ্ছা,তারপর এখনো পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন!
- যদিও সতের বছর একটানা একি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা খুবই কঠিন।
- তাতো অবশ্যই,
-সেই কঠোর পরিশ্রম ও অনেক সমালোচনা সহ্য করে আজ এখানকার পঁচিশ পাসেন্ট মালিক।
- যাক এই লোকটার তাহলে মালিকানা আছে।
- আমার পার্টনার একজন সম্মানিত ইহুদি ব্যক্তি যার আরো দশটি মদের বার আছে।মাঝে মাঝে এক-দুইবার দেখতে আসে।
- মূলত আমি ও ম্যানেজার এটার দায়িত্বে।
- তুমি কাল থেকে কাজ শুরু করো।
- কাল আমার ক্লাস আছে শেষ হবে বিকাল চারটায়।সপ্তাহে দুদিন আমার ক্লাস থাকে।
-কোন সমস্যা নেই ক্লাস শেষে করে আসো।
-বিকাল পাঁচটা থকে রাত এক ঘটিকা পযন্ত বিকেলের শিফট।
- যেহেতু তোমার ইংলিশে ভালো দখল আছে তাই তোমাকে ফুল টাইম কাজ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
- আক্কেল আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো কোন ভাষা জানা নেই।
- আপনাকে বিদেশের মাটিতে বাবার আসনে বসালাম।
- বড় বেশি ভালোবাসায় জড়িয়ে ফেললে মজনু।
- এসে ডিনার করে তারপর রুমে ফিরে যাও।আর যেহেতু বাবার আসনে বসালে তাই আগামী সপ্তাহ থেকে আমার এখানে চলে আসে।এই বারের উপরেই আমি থাকি।এখানে বিশাল রুম আছে।তোমার কোন ভাড়া দেওয়া লাগবে না যা লাগবে শুধু আমাকে মাঝেমধ্যে ইংলিশে থেকে বাংলায় কিছু অনুবাদ করে দিবে।
- কি অনুবাদ?
- তেমন এই কিছু না নিউজপেপার থেকে কিছু অনুবাদ করে দিবে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৯