পর্ব--২
******-
দেখতে দেখতে হেন্নার চাকুরি জীবনের তিনটি সোনালি বৎসর শেষ হতে চললো। সময় আপন নিয়মে বহতা নদীর মতো বয়ে বয়ে যায়। চলার পথে ছাপ রেখে যায় শত পাওয়া,না পাওয়া, হতাশা আর বেদনার।
এই স্বল্প পরিসরের কর্মজীবনে রোজী ও হেন্না দুজনের অনেক কিছুই জানা হলো। জানা হলো তাদের বর্তমান ও পৃর্ববর্তী প্রজন্মের বাঙালিদের কালচার,পারিবারিক কলহ ও পরিণতি,বিবাহিত জীবনের সুখ ও দুঃখবোধ,সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভরনপোষণ,দায়দায়িত্ববোধ ইত্যাদি সমন্ধে এক বিশাল পাঠশালা তারা আয়ত্বে করতে সক্ষম হলো। "কিন্ত"
সফলকাম কে কতটুকুই বা হলো!!
যে কেউ পরিবেশে ও পারিপার্শ্বিকতা উপলব্ধি থেকে, যদি সেগুলোর পজেটিভ দিকগুলো অন্তরে লালন করো,তাহলে জীবন খেয়ায় অনায়াসে সাহসী নাবিকের মতো তীরে ভীরতে পারো। হোক শত ঝড় ঝঞ্ঝা,আসুক বাঁধার ঢল,মিলবে তরী সমুজ্জ্বল।
বিপরীতভাবে,নেগেটিভ দিকগুলো আয়ত্ব করো তবে ভীরুতা,শঠতা আর কাপুরুষতা তোমাকে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে কাটুরিয়ার মতো মানবিক গুনগুলি কুচি কুচি করে নষ্ট করে ফেলবে। ছাই ভস্ম হয়ে পোড়া মাটির উপর লেপ্টে থাকা ছাড়া আর কিছুই রবে না।
ঠিক যেমনটা ঘটেছে হেন্না আর রোজীর ক্ষেত্রে, পারিপার্শ্বিক জীবন থেকে,মানুষের অনাচার আর অবিচারের কাহিনী সচক্ষে দেখে-শুনে,বিচারিক আসনে বসে।
রোজী বেগম শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের সংসারে আলো ছড়াচ্ছে।
অপরদিকে হেন্না অপরিণত মনোভাব আর চরম বালখিল্যতা দেখিয়ে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলো।
নেগেটিভ জিনিস নিজের মনে পুষে নিজে নিজেকে পুরোপুরি নিঃশেষ করে চলছে।
যেখানে, কাজের শেষে রোজীনা সরাসরি চলে যায় তার গৃহে,স্বামী,এক কন্যা সন্তান নিয়ে তার সাজানো,গোছানো,পরিপূর্ণতার জীবন।
২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ব্যাচেলার ডিগ্রিধারী সোহেল রবের সাথে রোজীর বিয়ে হয় । ইংল্যান্ড পার্টনার ভিসায় ইমিগ্রেন্ট হবার পর সোহেল রবের নামকারা প্রতিষ্ঠান থেকে ACCA সম্পন্ন করে। বর্তমানে একটি ফার্মে একাউন্টেন্ট পেশায় নিয়োজিত আছেন।
দুঃখজনকভাবে ,গাঙচিল পাখির মতো ডানা মেলে গগনবিহারী হেন্না। সে কখনো কলিগদের সাথে ক্লাবে আমোদে প্রমোদে মনোহর রূপে পদ্মের মতো ভেসে যায়।
কখনো বন্ধু,বান্ধবীদের সাথে নিয়ে শীসা ক্লাবে গিয়ে অতৃপ্ত মনোবাসনা পূর্ণ করে যাকে তার ভাষায় "কোয়ালিটি টাইম পাস" বলে।
হেন্না,বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে দু'বার রোজীর ঘরে এসেছে।কিন্ত আজ অবধি রোজীর কখনো ওদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া হয় নাই।
আগামী শনিবারে,হেন্নার, ত্রিশতম জন্ম দিন।
হেন্না ,বিগ থার্টির বিগ পার্টিতে রোজীকে আন্তরিকভাবে দাওয়াত করেছে।
হেন্না বলেছে যেমন করে হোক এইবার রোজীকে যেতেই হবে তাদের বাসায়। তার ছোট বোনেরা তাকে খুশি করার মানসে তাদের গার্ডেনে Barbecue party করতে চায়। তাদের কাছের সব বন্ধুরা আসবে তাই রোজীকে যেতে হবো।
যেহেতু রোজী কখনো হেন্নাদের বাসায় যায় নি।তাই পরিবারের সবাই চায় একমাত্র বাঙালী কলিগ তাদের বাসায় আসুক।
আরো একটা বিশেষ কারণে রোজীকে হেন্নাদের বাসায় যেতে হবে তা হলো,
-হেন্নার আম্মা রোজীর সঙ্গে কথা বলতে চান। পাশাপাশি হেন্নার কাছে মায়ের মুখের প্রশংসার কথা শুনে সব মিলিয়ে বিষয়টি তার অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং লাগছে। সেও বিগ থার্টির জন্য এখন থেকে মুখিয়ে আছে।
রোজী তার স্বামী সোহেল রবকে বলল,
-হেন্নার বিগ থার্টির অনুষ্ঠানে তোমাকেও যেতে হবে।
- কবে বিগ থার্টির অনুষ্ঠান?
- ত্রিশ তারিখে।
- ত্রিশ তারিখে! এইরে! ঐ দিন যে আমার রিজিওনাল কনফারেন্স আছে।প্লীজ, এবারটা তুমি বরং মেয়েকে নিয়ে ম্যানেজ কর।
রোজীর একটা বহু দিনের অভ্যাস কোথায় কোন অনুষ্ঠানে,যে কোন অকেশনে সে আত্মীয়,স্বজনদের উপহার দিতে পছন্দ করে।এই অভ্যাসটা তার বাবা- মায়ের কাছ থেকেই শেখা।
রোজীর মা তাকে শিখিয়েছেন,উপহার আদানপ্রদান একদিকে যেমন সামাজিক সৌন্দর্য বাড়ায় অন্যদিকে মনের সুকুমার বৃত্তির উম্মেষ ঘটায়।বাবা জীবিত অবস্থায় সবসময় তাকে উপহার কিনে দিতেন। তার মনে আছে সে যখন কোরআন খতম করে সেদিন বাবা তার পুরো রুম গোলাপী রঙ আর গোলাপী আসবাবপত্র দিয়ে মনোরম করে দিয়েছিলেন যা এখনো মনে হলে তার চোখে অশ্রু চলে আসে।
- আসলেই বাবারা এমন হয়,মেয়েরা কিসে খুশি হবে তা কোনভাবে আন্দজ করতে পেলে তা যতক্ষণ পর্যন্ত পুরণ করতে না পারবে ততক্ষণ তাদের মনে শান্তি আসে না।
রোজী কাজের ফাঁকে কখনো শপিং এ গেলে সময় করে কিছু না কিছু উপহার কিনে বান্ধবীর জন্যে সুন্দর একটা গিফট বক্স রেডি করলো।
যাতে বিভিন্ন লেডিস আইটেম,চুলের দোলা,ক্লিপ, পারফিউম এরসাথে একটা বার্থ ডে কার্ড কিনে আনলো---
আর হেন্নার মায়ের জন্যে একটা রেশমী পশমের সুন্দর শাল কিনে আনলো। ভাবলো তার মা যখন স্পেশাল দাওয়াত দিয়েছেন তাই তার জন্যে একটা আলাদা গিফট নেওয়া উচিৎ তাতে তিনি খুশি হবেন আর মুরব্বি লোকের দোয়াও পাওয়া যাবে।
রোজী গিফট আইটেম রেডি করে,রেপিং করার আগে --
---তার স্বামীকে জিগ্যেস করলো --
এই কার্ডে কি লিখবো? একটু লিখে দাও না!!
রোজী জানে তার স্বামী সাহিত্যমনা আর শিক্ষায় দীক্ষায় তার চেয়ে এগিয়ে। তাই লেখালেখির কাজটা স্বামীকে দিয়ে এক প্রকার জোর করে করিয়ে নেয়।
---প্লিজ লিখে দাও কার্ডে ---
--সোহেল রব হেসে বলে,নিজের বান্ধবীর কার্ডে নিজে লেখো--
--'অহ্' প্লিজ'লিখে দাও---
সোহেল রব বললেন "ওকে দাও" লিখে দিচ্ছি।
সে লিখে দিলো---
সুপ্রিয় বান্ধবী,
জানি,
তুই বলবি বয়স মানে শুধুই গননার নাম্বার,
আর,
আমি বলি বয়স মানে শিক্ষাগ্রহণ,শির উঁচু করে দাঁড়াবার।
বয়সের ভারে যখন হয়ে যাবে থিতু,
সু-সময়ের বন্ধুরা তখন দিবে থু-তু।
মনে রোখো,
গৃহস্থ আর দুগ্ধ-পোষ্যে গড়া জীবন,
আলোয় কাটে প্রতিটি প্রহর,
চিত্ত পায় সুখের মরণ।
সঠিক সময়ে নির্মাণ করো ইস্পাত কঠিন পণ,
ভুলো না একটাই তো মহামতি আপন জীবন।
"জন্মদিনের শুভেচ্ছান্তে "
'রোজী'
""অহ মাই গড""
দিস ইজ আনবিলিভএবল" জাষ্ট ইমেজিং
তুমি কিভাবে জানো? হেন্না সবসময় বলে --
---এইজ ইজ নাথিং, জাষ্ট দ্যা নাম্বার ---
- মে বি ইউ আর এডুকেটেড ফরম ব্যাক হোম এন্ড ফরম দিস কান্টি দেটস হোয়াই!!
সোহেল রব হাসে আর বলে ---
--মাই ডিয়ার লাভ-
দিস ইজ কলড এক্সপ্রেরিয়ানস-
---আফটার অল-----
--আই এম, "মেইড ইন বাংলাদেশ"
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৪