ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর দায় বাংলাদেশের মানুষের তুলনায় ভারতের মিডিয়া এবং মুষ্টিমেয় কতিপয় ভারতীয় বেকুবদের বেশি। শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই ভারতের কিছু গোদি মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। অথচ দেশের মানুষ যার উপরে সবচাইতে বেশি ক্ষিপ্ত সেই হাসিনা এখন ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতাকে গ্রেফতারে ভারতকে বেশ উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। নিজের দেশের নাগরিক কে গ্রেফতার করতে গিয়ে অন্য দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে সেটা বাংলাদেশের অনেকেই ঠিকঠাক মতো বুঝেছেন বলে মনে হয় না। আবার ধর্মীয় গুরুকে অবমাননার দায়ে ইসকনের সদস্যরা একজনকে ধোলাই করতে গিয়ে সেনাবাহিনী-পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৮৩ জন কে গ্রেফতার করে। পরদিন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সাথে ভারতের সেনাপ্রধানের বৈঠকে একটি ছবি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। বাংলাদেশ তার নিজের নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখতে পারছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব সে দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। কিন্তু ভারতের এমন উদ্বিগ্ন হওয়া অথবা বৈঠক করা সত্যিই অবাক করার মতোই ব্যাপার। এতে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের অনধিকার চর্চার বিষয় টি বারংবার সামনে চলে আসে।
বাংলাদেশের যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী মতাদর্শের মানুষ, সাধারণ জনগণের একটি অংশ এবং সর্বশেষ রাজনীতিবিদেরা ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখান। ভারত বয়কট ক্যাম্পেইন চালু করেন। অনেকে আবার এক কাঠি সরেস আছেন। ভারতের থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভারতের ডাউনফল দেখা বাংলাদেশের এক বৃহৎ অংশের তরুণদের এখন স্বপ্ন। ক্রিকেটে ভারত হারলে খুশির সীমা নাই বাংলাদেশের মানুষের। অথচ নিজের দেশের খেলার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ভারতের মানুষ এক সাথে পুরো মাছ কিনে খেতে পারে না বলে উপহাস বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু নিজেরাই আবার সুপার শপ স্বপ্নের পিস ইলিশ মাছের টুকরা কম্বো প্যাকেজ কেনার জন্য লাইন ধরছে। টিসিবিতে লাইন ধরছে মধ্যবিত্ত এবং শিক্ষার্থীরা। ভারতের ৬০ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে এই তথ্য বাংলাদেশের মানুষকে তীব্র আনন্দ দেয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় দেখে চোখ কপালে উঠে যায় অনেক ভারতীয় মানুষের! এইভাবে চলছে দুই দেশের তুলনা করার প্রতিযোগিতা!
ভারতের চরম শত্রু দেশ পাকিস্তান ভারত সম্পর্কে কেমন মনোভাব পোষণ করে? তারাও কি বাংলাদেশের মানুষের মতো ভাবেন? পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা তীব্র ভারত বিদ্বেষী ও কট্টোর সমালোচক হলেও ভারতের সরকার ও জনগণের মিলিত প্রচেষ্টায় ভারত যে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা সরাসরি স্বীকার করেছেন। পাকিস্তানের দক্ষিণপন্থী ইসলামিক দল জমায়েত উলামা ইসলামের নেতা মৌলানা ফজলুর রহমান ভারতের উন্নতির প্রশংসা এবং পাকিস্তানের অবনতির সমালোচনা করেছিলেন। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে মৌলানা ফজলুর বলেন যে, “আমরা আপনাদের ইচ্ছানুযায়ী আইনও তৈরি করতে পারি না। আমরা সবাই এই নিয়ে গর্ব করি যে, সংসদের ভিভিআইপি নেতা আমরা। ভারত এবং আমরা (পাকিস্তান) একই দিনে স্বাধীন হয়েছিলাম। আর আজ ভারত যেখানে পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সেখানে আমরা বাঁচার জন্য ভিক্ষা করছি। এর জন্য দায়ী কে ? "
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সাথে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের ভারত নিয়ে এত মতপার্থক্য কেন? আমরা সাধারণ মানুষ যখন ভারতের সাথে বাংলাদেশের অবস্থা তুলনা করি তখন কি ভারতের উন্নতির দিক গুলো বিবেচনা করি ? আমরা যখন ভারতের মুদ্রার অবমূল্যায়নে উল্লাস প্রকাশ করি তখন কি নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে এখন ১ ডলার= ১২৭. ৫০ টাকা হয় সেটা লক্ষ্য করি?
ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের তীব্র ঘৃণা শুরু হয় ২০১৪ সালে ভারতের বাংলাদেশের নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে। এর শেষ কবে হবে কেউ জানে না। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছে ভারত কে জাতীয় শত্রু ঘোষণা করতে আবার কেউ বলছে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে। তবে রাজনীতিবিদরা ভারত ইস্যু জিইয়ে রেখে ভোটের মাঠ দখল করতে চান সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই। ড. ইউনূসের সরকারও নিজেদের একই পন্থায় জনপ্রিয় করে তোলার কৌশল নিয়েছেন। দেখা যাক পানি কতদূর গড়ায়!