somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোতা কাহিনী

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইরান দেশের এক সওদাগরের ছিল একটি ভারতীয় তোতা। সে তোতা জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস, সৌন্দর্যে রুডলফ ভালেন্টিনা, পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সম্যুলার। সদাগর তাই ফুরসৎ পেলেই সে তোতার সঙ্গে দুদণ্ড রসালাপ, তত্ত্বালোচনা করে নিতেন।

হঠাৎ একদিন সদাগর খবর পেলেন, ভারতবর্ষে কার্পেট বিক্রি হচ্ছে আক্রাদরে। তখনই মনস্থির করে ফেললেন ভারতে যাবেন কার্পেট বেচতে। যোগাড়-যন্ত্র তদ্দণ্ডেই হয়ে গেল। সবশেষ গোষ্ঠীকুটুমকে জিজ্ঞেস করলেন, কার জন্য হিন্দুস্থান থেকে কি সওদা নিয়ে আসবেন। তোতাও বাদ পড়লো না। তাকেও শুধালেন সে কি সওগাত চায়। তোতা বললে, ‘হুজুর, যদিও আপনার সঙ্গে আমার বেরাদরি, ইযারগিরি বহু বৎসরের, তবু খাঁচা থেকে মুক্তি চায় না কোন চিড়িয়া? হিন্দুস্থানে আমার জাতভাই কারোর সঙ্গে যদি দেখা হয়, তবে আমার এ অবস্থার বর্ণনা করে মুক্তির উপায়টা জেনে নিবেন কি? আর তার প্রতিকূল ব্যবস্থাও যখন আপনি করতে পারবেন, তখন এ-সওগাতটা চাওয়া তো অন্যায় কিছু নয়।’

সদাগর ভারতবর্ষে এসে মেলা পয়সা কামালেন, সব সওগাতও কেনা হলো, কিন্তু তোতার সওগাতের কথা গেলেন বেবাক ভুলে। মনে পড়ল হঠাৎ একদিন বনের ভিতর দিয়ে যাবার সময় একঝাঁক তোতা পাখি দেখে। তক্ষণি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাদের এক বেরাদর ইরান দেশের খাঁচায় বন্ধ হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার মুক্তির উপায় বলে দিতে পারো?’ কোনো পাখিই খেয়াল করল না সদাগরের কথার দিকে। শুধু দুঃসংবাদটা একটা পাকির বুকে এমনি বাজ হানল যে, সে তৎক্ষণাৎ মরে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। সদাগর বিস্তর আপসোস করলেন নিরীহ একটা পাখিকে বেমক্কা বদ-খবর দিয়ে মেরে ফেলার জন্যে। স্থির করলেন, এ মূর্খামি দুবার করবেন না। মনে মনে নিজের গালে ঠাস-ঠাস করে মারলেন গণ্ডা দুই চড়।

বাড়ি ফিরে সাদগর সওগাত বিলোলেন দরাজ হাতে। সবাই খুশি, নিশ্চয়ই ‘জয় হিন্দ’ বলেছিল ব্যাটা বাচ্চা সবাই। শুধু তোতা গেল ফাঁকি। সদাগর আর ও-ঘরে যান না পাছে তোতা তাকে পায়ে ধরে সওগাতের জন্য। উঁহু সেটি হচ্ছে না ও-খবরটা যে করেই হোক চেপে যেতে হবে।

কিন্তু হলে কি হয়, গোঁপ কামানোর পরও হাত ওঠে অজান্তে চাড়া দেবার জন্য, বে-খেয়ালে গিয়ে ঢুকে পড়েছেন হঠাৎ একদিন তোতার ঘরে। আর যাবে কোথায়, ‘অস্‌-সালাম আলাই কুম ও রহমৎ উল্লাহি ও বরকত ওহু আসুন আসুন, আসতে আজ্ঞে হোক। হুজুরের আগমন শুভ হোক’ ইত্যাদি ইত্যাদি, তোতা চেঁচাল।

সদাগর হেঁ হেঁ করে গেলেন। মনে মনে বললেন, খেয়েছে। তোতা আর ঘুঘু এক জিনিস নয় জানি, কিন্তু এ তো ঘুঘু। বললে, ‘হুজুর সওগাত?’

সদাগর কাঁটা বাঁশের মধ্যিখানে। বলতেও পারেন না, চাপতেও পারেন না। তোতা এমনভাবে সদাগরের দিকে তাকায় যে তিনি বেইমাস্য বেইমান। সওগাতের ওয়াদা দিয়ে গড্‌ ড্যাম্‌ ফক্কিকারি! মানুষ জানোয়ারটা, এই রকমই হয় বটে! তওবা, তওবা!

কি আর করেন সদাগর। কথা রাখতেই হয়। দুম করে বলে ফেললেন। যেই না বলা তোতাটি ধপ করে পড়ে মরে গেল। তার একটা বেরাদর সেই দূর হিন্দুস্তানে তার দুরবস্থার খবর পেয়ে হার্ট ফেল করে মারা গেল, এরকম একটা প্রাণঘাতী দুঃসংবাদ শুনলে কার না কলিজা ফেটে যায়?

দিলের দোস্ত তোতাটি মারা যাওয়ায় সদাগর তো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। ‘হায় হায়, কী বে-আক্কেল আমি। একই ভুল দু-বার করলুম।’ পাগলের মত মাথা থাবড়ান সদাগর। কিন্তু তখন আর আপসোস ফায়দা নেই। ঘোড়া চুরির পর আর আস্তাবলে তালা মেরে কি লভ্য! সদাগর চোখের জল মুছতে মুছতে খাঁচা খুলে বের করে আঙ্গিনায় ছুঁড়ে ফেললেন।

তখন কী আশ্চর্য, কী কেরামতি! ফুরুৎ করে তোতা উড়ে বসল গিয়ে বাড়ির ছাদে। সদাগর তাজ্জব- হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন তোতার দিকে। অনেকক্ষণ পরে সম্বিতে ফিরে শুধালেন,“মানে”

তোতা এবারে প্যাঁচার মতো গম্ভীর কণ্ঠে বললো, ‘হিন্দুস্তানে যে তোতা আমার বদ্‌নসিবের খবর পেয়ে মারা যায়, সে কিন্তু আসলে মরে নি। মরার ভান করে আমার খবর পাঠালো, আমিও যদি মরার ভান করি, তবে খাঁচা থেকে মুক্তি পাবো।’

সদাগর মাথা নিচু করে বললেন,‘বুঝেছি, কিন্তু বন্ধু যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও। আর তো তোমাকে পাব না।’

তোতা বললে,“মরার আগেই মরতে পারো, তবেই মোক্ষ লাভ। মড়ার ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, মান-অপমান বোধ নেই। সে তখন মুক্ত, সে নির্বাণ মোক্ষ সবই পেয়ে গিয়েছে। মরার আগে মরবার চেষ্টা করো।

সৈয়দ মুজতবা আলী
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড: ইউনুসের গ্রহনযোগ্যতা এখনো আছে, বাড়ছে, নাকি কমছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:১৪



দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার সরকারের বিপক্ষে ছিলো; উহার পতন হয়েছে; মানুষ উৎসাহিত হওয়ার কথা; আপনারা ৩ মাস পর কি দেখছেন? উৎসাহ আছে, বাড়ছে, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

দৃষ্টি আকর্ষন।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২২

প্রিয় ব্লগার,

একজন নারী ব্লগারকে ক্রমাগত ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্য করার জন্য সুপরিচিত ব্লগার এবং কবি সেলিম আনোয়ারের ব্লগিং সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। লিখিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণের ভিত্তিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনে কত অদ্ভুত ঘটনা দেখে ফেললাম !

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩৫



শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার এমন সব কিছু দেখতে পাচ্ছি যা কোন দিন দেখবো বলে আশাও করি নি। শেখ হাসিনা এভাবে যে পালিয়ে যাবে এটাই যে আমি কোন দিন দেখব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা : আযান

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:১৭


কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেক মুজিব সুটকেস গুছিয়ে পাকিস্তান চলে গিয়েছিল তাজউদ্দিনকে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে বলে!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮



সেক মুজিব সুটকেস গুছিয়ে পাকিস্তান চলে গিয়েছিল দেশকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ট বিপদে রেখে। তাজউদ্দিন সাহেবকে বলেছিল নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে। মেজর জিয়ার উই রিভোল্টের হাত ধরে যে যুদ্ধের শুরু, সে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×