আজ ২৮শে অক্টোবর বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানি মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নয় সপ্তাহ ধরে নানা ধরণের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ইরানের সরকারের দেয়া বিভিন্ন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে উনাকে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং পশ্চিমা যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তিদের এই কারাগারে রাখা হয়। মানবাধিকার সংস্থা ' free narges coalition ' তাকে পুরোপুরি ভাবে মুক্তি দিয়ে দীর্ঘসময়ের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে । ২০২২ সাল থেকে নার্গিস মোহাম্মদি হৃদরোগে আক্রান্ত এবং সে সময় উনার অস্ত্রোপচার করা হয়।
নার্গিস মোহাম্মদির জন্ম ১৯৭২ সালের ২১শে এপ্রিল ইরানের জাঞ্জান প্রদেশে। পেশায় একজন প্রকৌশলী এই নারী বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই সংবাদপত্রে নারীর অধিকার নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। সরকারের সমালোচনা করায় ১৯৯৮ সালে সর্বপ্রথম গ্রেফতার হন। শুরু হয় তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৩ বার মোহাম্মদিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত হন। শাস্তি স্বরুপ উনাকে মোট ৩১ বছরের কারাবাস ও ১৫৪ টি বেত্রাঘাতের হুকুম দেয়া হয় ইরানের আদালতে। নার্গিস মোহাম্মদি সারাজীবন ইরানের নারীদের প্রতি হওয়া অন্যায় এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে গিয়েছেন।
নার্গিস মোহাম্মদি মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ২০১৯ সালে নার্গিস তেহরানের এভিন কারাগারে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হলে মোহাম্মদি জামিনে মুক্ত পান । ২০২১ সালে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ 'clubhouse' এর মাধ্যমে একটি আলোচনা আয়োজন করেন যেখানে ১৯৮০-২০২১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নারীদের উপর নিপীড়ন নিয়ে সবাই নিজের অভিজ্ঞতা জানান।এর কারণে পুনরায় তাকে জেলে যেতে হয়। কারাগারে থেমে থাকেনি নার্গিসের প্রতিবাদ। জেলে থেকেও তিনি সেখানকার নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আবার সরব হন। ২০২২ সালে ইরানের কারাগারে নারীদের উপর নির্মম সব নির্যাতন পদ্ধতি নিয়ে 'হোয়াইট টর্চার: ইন্টারভিউ উইথ ইরানিয়ান উইমেন প্রিজোনার্স ' শীর্ষক বই প্রকাশ ও নির্জন কারাকক্ষে থাকা বন্দিজীবনের কাহিনী নিয়ে প্রামাণ্য চিত্রের কারণে মোহাম্মদি কে আবার সাজা দেয়া হয়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কঠোর পোশাক বিধি না মানার কারণে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনি কে গ্রেফতার করে নীতি পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে মাসা মারা গেলে সমগ্র ইরানে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় CNN কে লিখা চিঠিতে নার্গিস ১৯৯৯-২০২২ সাল পর্যন্ত মাসা সহ সকল নারী বন্দিদের উপর যৌন সহিংসতার একাধিক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নার্গিস মোহাম্মদি কে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন নোবেল কমিটি ।নোবেল কমিটির প্রধান মোহাম্মদি কে একজন 'মুক্তিযোদ্ধা ' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নার্গিস মোহাম্মদির স্বামী তাঘি রাহমানি দুই সন্তান সহ ফ্রান্সে নির্বাসিত আছেন বর্তমানে। মহান আল্লাহ তায়াল এই মহিয়সী নারীকে দ্রুত সকল রোগ থেকে শেফা দান করুক সেই প্রার্থনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৯