somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীন

২৮ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাথাটা ঝুঁকতে ঝুঁকতে বুকের কাছে এসে নেমে এসেছে। সারা জীবন মাথা উঁচু করে চলা মানুষটার মনে হচ্ছে জীবনে আর কখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন না। কি গভীর লজ্জা- আত্মজের কাছে!

দোষ কার! হায়দার সাহেব কিছুতেই বুঝতে পারছেন না কেন এমন হলো। রিটায়ারমেন্টের পর অবসর জীবনের সময়গুলো বেশ সুন্দরভাবে কেটে যাচ্ছিল- আজ দুপুরের আগে পর্যন্ত। আজ দুপুরেও খাবার-দাওয়ার পর ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলেন, প্রতিদিনের মতো সামুব্লগে লগইন  করে মগ্ন হয়ে নানা পোস্ট দেখছিলেন। একটা পোষ্ট পড়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দেখেন কেউ একজন মন্তব্য করার বদলে বীভৎস কদর্য ছবি দিয়ে পোষ্টটি ভরিয়ে রেখেছে। হায়দার সাহেব  স্তব্ধ হয়ে গেছিলেন, ল্যাপটপ বন্ধ করার কথা তার মনেই ছিলনা। হঠাৎ পিছনে শব্দ শুনে ফিরে দেখলেন ছেলে সৌমিক দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
"সৌমিক, চলে যাচ্ছিস কেন?" হায়দার সাহেবের ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ালো সৌমিক। তক্ষুনি হায়দার সাহেবের মনে পড়ল তার ল্যাপটপে সামু ব্লগ খুলে রাখা আছে!

এটা একটা কালো গল্প। আমার লেখা। লিখতে লিখতে মন খারাপ হয়ে গেল।  তাই মন ভালো করার জন্য ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটা নীল-সবুজের গল্প নিয়ে বসি।

এক স্বৈরশাসক এক দ্বীপে ৩০ জন লোককে বন্দী করে রেখেছে। বন্দীদের স্বৈরশাসক বলেছে যে তাদের কারো কারো চোখ নীল, কারো কারো চোখ সবুজ। সবুজ চোখের কোন বন্দী চাইলে দ্বীপ ছেড়ে যেতে পারে। নিয়ম হচ্ছে রাতের কোন সময়ে  দ্বীপের দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলতে হবে যে, "বের হতে চাই"। দারোয়ান তখন চোখে টর্চের আলো ফেলে চোখের রং দেখবে। সবুজ চোখ দেখলে দারোয়ান যেতে দেবে, কিন্তু নীল চোখ দেখলে দারোয়ান বন্দীকে নিয়ে সোজা দ্বীপের আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেবে। নিশ্চিত মৃত্যু! মৃত্যুভয়ে কোন বন্দীই দারোয়ানের কাছে যাবার সাহস করেনা, নিজের চোখের রং জানার কোন উপায় কোন বন্দীরই জানা ছিলনা যে।কারণ দ্বীপে আয়না বা এমন কিছু ছিলনা  যাতে দেখে চোখের রং বোঝা যায়। আবার সমুদ্রের পানি এতটাই ঘোলা যে সেই পানিতেও চোখের রং বোঝার উপায় ছিলনা । দ্বীপে একজন আরেকজনের চোখ দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু তারা কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারবেনা বা কোন ভাবে কোন তথ্য দিতে পারবেনা- স্বৈরশাসক নিয়ম করে দিয়েছে। তাই নিজের চোখের রং জানা বড় মুশকিল হয়ে গেছে বন্দীদের কাছে।

 এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপের মানুষেরা দ্বীপ থেকে বেরোবার কোনো উপায় দেখছিল না। তাদের অবস্থা দেখে এক মানবাধিকারকর্মী তাদের সাহায্য করতে চাইলেন। এই মানবাধিকারকর্মীকে স্বৈরশাসক দ্বীপে যাতায়াতের অনুমতি দিয়েছিলেন। মানবাধিকার কর্মী দেখলেন, স্বৈরশাসক মিথ্যা বলেছেন। দ্বীপে কোন নীল চোখের মানুষ নেই, দ্বীপের সমস্ত মানুষের চোখ সবুজ। তিনি ভাবলেন, এই তথ্যটা জানতে পারলেই দ্বীপের সমস্ত মানুষ মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু বন্দীদের সাথে কথা বলার অনুমতি মানবাধিকারকর্মীর ছিলনা।  অনেক অনুরোধের পর স্বৈরশাসক তাকে দুটি শর্তে বন্দীদের সাথে কথা বলার অনুমতি দিলেন:

প্রথম শর্ত- বন্দীদের উদ্দেশ্যে একটিমাত্র বাক্য বলা যাবে।

দ্বিতীয় শর্ত- সেই বাক্যটিও এমন হতে হবে যেন  তা শুনে বন্দীরা নতুন কিছু জানতে না পারে, অর্থাৎ কেবলমাত্র তাদের জানা কোন বিষয়ই মানবাধিকারকর্মী তাদের জানাতে পারবেন।

এই শর্ত মেনে নিয়ে মানবাধিকারকর্মী  একটি বাক‍্য‌ তৈরি করলেন। স্বৈরশাসক যখন দেখলেন যে বাক‍্যটি  তার দুটি শর্তই পূরণ করছে, তিনি মানবাধিকারকর্মীকে অনুমতি দিলেন বাক্যটি বলার। মানবাধিকারকর্মী একটি মাইক নিয়ে দ্বীপে গেলেন, দ্বীপের নানা জায়গায় গিয়ে তিনি বারেবারে একটি বাক্যই ঘোষণা করতে লাগলেন-

"তোমাদের মধ্যে অন্তত একজনের চোখ সবুজ।"

এক রাত, দুই রাত করে ২৯ রাত কেটে গেল। ত্রিশতম রাতে দেখা গেল ত্রিশজন বন্দীই বের হয়ে গেছে। কি করে এটা সম্ভব হলো?

≠================================
=====≠=≠=========================

উত্তরের ক্লু :  সমাধান শুরু যাক বন্দীর সংখ্যা দুইজন ধরে নিয়ে। মনে করা যাক তাদের নাম লেবু আর ফেবু। প্রথম দিন তারা পরস্পরের সবুজ চোখ দেখতে পাচ্ছে কিন্তু যেহেতু ঘোষণা মত অন্তত একজনের চোখ সবুজ, তাই লেবু  ভাবছে ফেবুর চোখ সবুজ মানে তার নিজের চোখ নীল বা সবুজ হতে পারে। সে এটাও ভাবছে, তার চোখ নীল হলে ফেবু দেখে বুঝতে পারবে ফেবুর নিজের চোখ সবুজ- তাই সে রাতে চলে যাবে কিন্তু যদি তার চোখ সবুজ হয় তবে ফেবু নিজের চোখ নীল হবার সম্ভাবনায় রাতে থেকে যাবে। ফেবুও একই রকম ভাবছে। পরের দিন সকালে দুজনই দুজনকে দেখতে পেল আর সাথে সাথে বুঝতে পারল যে তাদের দুজনেরই চোখ সবুজ! তাই দ্বিতীয় রাতে তারা দুজনেই চলে যেতে পারল।

এভাবে তিন, চার,পাঁচ জন বন্দী থাকলে তারা যথাক্রমে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম রাতে মুক্ত হতে পারবে। গাণিতিক ভাবে প্রমাণ করা যায় যে যদি দ্বীপে n সংখ্যক বন্দী থাকে তবে n-তম রাতে তারা সবাই চলে যেতে পারবে, ত্রিশজন যেতে পারবে ত্রিশতম রাতে!





সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×