somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলছি ৯০ দশকের বাংলার ২ তরুনের গর্বিত ইতিহাস যা অনেকের অজানা !!!

০৬ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা সবাইকে জানাই সামু ব্লগে আমার ১ম বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা। গত একবছরে আপনাদের প্রেরনায় আমি কিছু লিখে জানানোর চেষ্টা করেছিলাম মাত্র। সেই এক বছর নিয়ে আমি পরে একটি পোস্ট দিবো যারা আমার পাশে ছিলেন তাঁদের নিয়ে। আজ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দিচ্ছি বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের ২জন কিংবদন্তীর অজানা কথা।

লতিফুল ইসলাম শিবলী

পয়লা বৈশাখের এক কাকডাকা ভোরে জন্ম নিয়েই দেখে, বাংলাদেশে চলছে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ ঘাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনির অবস্থানের ওপর যখন ইন্ডিয়ান মিগ থেকে বোমা ফেলা হচ্ছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সঙ্গে বাঙ্কারে বসে শিশুটি বলছিল, 'আল্লাহ্, রক্ষা কর'—গল্পটি শিবলীর মায়ের কাছে শোনা। তখন যুদ্ধ না বুঝলেও নব্বইয়ের দশকের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের ভেতর দিয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালেই স্বৈরশাসকের জেল জুলুম আর হুলিয়া মাথায় নিয়ে চলে আসেন নাটোর থেকে ঢাকায় । যেহেতু যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত, তাই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক 'রক'।
গ্রুপথিয়েটার নাট্যচক্রের সঙ্গে মঞ্চনাটকে কাজ করতে করতেই ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকেন শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমে।

অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে-পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম।

আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল ভাষায়। তাঁর সাফল্য এখানেই। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই শিবলী পরিণত হয়েছেন এদেশের ব্যান্ড সংগীতজগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে।

আমার সমবয়সী ৯০ এর বাংলা আধুনিক ও ব্যান্ড সঙ্গীতের সকল শ্রোতা ভাই বোনদের কাছে নিশ্চয়ই লতিফুল ইসলাম শিবলি ভাইয়ের কথা মনে আছে! যিনি ছিলেন গত দশকের ব্যান্ড সঙ্গীত এর পর্দার আড়ালে থাকা একজন অতি জনপ্রিয় মানুষ। যাকে পাওয়া যেত প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, মাকসুদ, মাইলস, উইনিং সহ সব জনপ্রিয় ও শীর্ষে থাকা ব্যান্ড এর নতুন অ্যালবাম এর কভারে। কারন ঐ অ্যালবাম গুলোর মাঝে যে তাঁর লিখা গান আছে। বিশেষ করে ফিলিংস( নগর বাউল), আইয়ুব বাচ্চুর অনেক অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার ছিলেন তিনি। তিনি শুধু একজন গীতিকারই ছিলেন না পরবর্তীতে তাঁকে আমরা পেয়েছি “Century Tailors “ এর বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে এবং তারপর পেয়েছিলাম প্যাকেজ নাটক ‘রাজকুমারী’ তে শমি কায়সার এর বিপরীতে অভিনেতা হিসেবে। ‘রাজকুমারী’ নাটক এর গল্প ও গানটাও তাঁর লিখা ছিল। পরবর্তীতে ‘রাজকুমারী’ নামে আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সঙ্গীতে একটি মিক্সড ব্যান্ড অ্যালবাম বের হয় যেখানে আইয়ুব বাচ্চু ‘রাজকুমারী’ গানটায় কণ্ঠ দেন। সেই প্রিয় লতিফুল ইসলাম শিবলি গত দশকের শেষ দিকে নিজের লিখা ও সুর করা একটি একক অ্যালবাম বের করেন, যার প্রত্যেকটি গানে তিনি নিজে কণ্ঠ দেন। সেই অ্যালবামটির নাম ছিল ‘নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম’ যা আজকের অডিও বাজারে নেই। এই দশকের নতুন শ্রোতারা হয়তো জানেও না যে লতিফুল ইসলাম শিবলি কে ছিলেন? অথচ তারাই জেমস এর জেল থেকে বলছি গানটা শুনেছে এবং নিজেরাও গাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু জানে না যে এই গানটি শিবলি ভাইয়ের লিখা!
'কমপ্লিট ম্যান' খ্যাত ঝুঁটিবাঁধা সেঞ্চুরি ফেব্রিকসের দুর্দান্ত সেই মডেল শিবলী ছিলেন তাঁর সময়ের ফ্যাশন-আইকন।

তিনি একজন সফল নাট্যকার। বিটিভির যুগে তাঁর লেখা প্রথম সাড়া জাগানো নাটক 'তোমার চোখে দেখি'।
নিজের লেখা নাটক 'রাজকুমারী'তে মির্জা গালিব চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও অনেকের মনে থাকার কথা।

শিবলীর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ইচ্ছে হলে ছুঁতে পারি তোমার অভিমান'।
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ-- 'তুমি আমার কষ্টগুলো সবুজ করে দাও না'।

বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে তাঁর 'বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত আন্দোলন' নামে ব্যান্ড সংগীতের ওপর লিখিত প্রথম গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ।

নিজের লেখা, সুর ও কম্পোজিশনে এবং নিজের কণ্ঠে গাওয়া তার প্রথম অ্যালবাম-- 'নিয়ম ভাঙার নিয়ম'।
শিবলীর লেখা (প্রায় ৩০০) জনপ্রিয় গানের মধ্যে কয়েকটি:


জেল থেকে বলছি | কথা-সুর: শিবলী, ফিলিংস /নগরবাউল
তুমি আমার প্রথম সকাল | তপন চৌধুরী-শাকিলা জাফর
কষ্ট পেতে ভালবাসি | আইয়ুব বাচ্চু (এলআরবি)
কেউ সুখি নয় | আইয়ুব বাচ্চু
হাসতে দেখো, গাইতে দেখো | আইয়ুব বাচ্চু
কত কষ্টে আছি | জেমস
পালাবে কোথায় | জেমস
মাকে বলিস | আইয়ুব বাচ্চু
কষ্ট কাকে বলে | আইয়ুব বাচ্চু
একজন বিবাগি | জেমস
রাজকুমারী | আইয়ুব বাচ্চু
আহা, জীবন! | আইয়ুব বাচ্চু
নীল বেদনা | আইয়ুব বাচ্চু
একটা চাকরি হবে, চাঁদমামা? | আইয়ুব বাচ্চু
লাশকাটা ঘর | নিলয় দাস
কার কাছে যাব | আইয়ুব বাচ্চু
কী ভাবে কাঁদাবে তুমি (যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে) | খালিদ (চাইম)
জোসি প্রেম | জেমস
নাটোর স্টেশন | জেমস
প্রিয় আকাশি | জেমস
ভালবাসার যৌথ খামার | জেমস
মধ্যরাতের ডাকপিয়ন | জেমস
মন্নান মিয়ার তিতাস মলম | জেমস
জঙ্গলে ভালবাসা | জেমস
কতটা কাঙাল হয়ে থাকি | জেমস
হাজার বর্ষারাত | পার্থ (সোলস)
বড়বাবু মাস্টার | আইয়ুব বাচ্চু
পলাশীর প্রান্তরে | মাইলস
ঘুমাও তুমি | জেমস
গিটার কাঁদতে জানে | জেমস
হাত বাড়ালে বন্ধু হব | টিপু
এ-শহরের কত-শত অট্টালিকার ফাঁকে (জানালাভরা আকাশ) | জেমস
চাই জল | আইয়ুব বাচ্চু
মানুষ বড় একা | আইয়ুব বাচ্চু
ও আমার প্রেম | আইয়ুব বাচ্চু
কষ্ট পেলে নষ্ট হব কেন | আইয়ুব বাচ্চু
তুমি নও, আমার বেদনা আমি বুঝি | আইয়ুব বাচ্চু
নীল আকাশ যত দূর দেখা যায় | জেমস
পেশাদার খুনি | জেমস
হ্যালো, ঢাকা! | মাইলস
প্রানের শহর ঢাকা | জেমস (অ্যালবামঃ জেল থেকে বলছি)
মাঝে কিছু বছর গেল | সুমনা হক
নিঝুম রাতের তারার মেলায় । duet আগুন- সুমনা হক
শেষ ঠিকানা | মাইলস
তুমি একা থাক যখন অগোছালো তোমার ঘরে | আইয়ুব বাচ্চু
বিষনন হুইসেল | শুভ্র দেব
দুরে কোথাও পালাবার ঠিকানা নেই আমার | ঝলক
যত দুর যত পথ | আজম খাঁন
চাঁদের সাথে জেগে মধ্য রাতে । শেখ ইসতিয়াক
প্রিয়তমা তুমি কখনো পুরোন হবেনা | আইয়ুব বাচ্চু
যাবে যদি চলে যাও | আইয়ুব বাচ্চু
খুব সাধারন জীবন আমার | আইয়ুব বাচ্চু
রংধনু হয়ে যাই | আইয়ুব বাচ্চু
প্রেমিক মেয়র | সোলস (অ্যালবামঃ অসমের গান)
পায়ের আওয়াজ শুনি | সোলস (অ্যালবামঃ অসময়ের গান)
নিঃসঙ্গতা | হামিন আহমেদ (অ্যালবামঃ একটি গোলাপ)
নীল সাগরের হিমেল বাতাসে | আইয়ুব বাচ্চু (অ্যালবামঃ টি এণ্ড টি)
আর্তনাদ | আইয়ুব বাচ্চু (অ্যালবামঃ ঘৃণা)
তুমি আর কারো নয় | চন্দন wining(অ্যালবামঃ ঘৃণা)
একাকী আকাশের সন্ধ্যাতারা | নকীব খান (অ্যালবামঃ ঘৃণা)
ব্যবিলন | জেমস (অ্যালবামঃ স্ক্রু-ড্রাইভার)
একা গাঙচিল - হামিন আহমেদ (বিষন্ন ভালবাসা)
নির্জনতার গান - শাফিন আহমেদ (তোমাকে)
আরশী ও আমি | নিলয় দাশ (অ্যালবামঃ সন্ধ্যাতারা)
অপবাদ | নিলয় দাশ (অ্যালবামঃ সন্ধ্যাতারা)
বন্দী জেগে আছে | LRB অ্যালবামঃ Screw Driver
বন্দী জেগে আছে | পার্থ (অ্যালবামঃ t&t (Tone & Tune)
চলে গেলেই বুঝতে পারি এসেছিলে তুমি | আইয়ুব বাচ্চু
সাড়ে তিন হাত ভুমি | জেমস (অ্যালবামঃ পালাবে কোথন্থ)
নিচে লতিফুল ইসলাম শিবলি ভাইয়ের একমাত্র একক অ্যালবাম থেকে দুটি গান দিলাম (পুরো অ্যালবাম পাবেন পোষ্টের শেষে দেয়া রেডিও লিঙ্কে)

ছুটি পেলে এবার মাগো- লতিফুল ইসলাম শিবলি (কথা, সুর ও কণ্ঠ)
নাগরিক কবিয়াল - লতিফুল ইসলাম শিবলি (কথা,সুর ও কণ্ঠ)
*** প্রিন্স মাহমুদ *** একটা ভাল গান সৃষ্টির পর, নিজের ভেতর যে আনন্দের স্রোত বয়, তা লিখে বোঝাতে পারবোনা। বাবা থাকলে বলতাম তোমার বুকের চেয়ে শান্তির জমি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই; মাকে বলতাম তোমার কোলে শুয়ে হারানো সুখ এবং একটা শান্তির সবুজ জমি খুঁজে পাই, একটা ভাল গান সুর করার পর। ---- প্রিন্স মাহমুদ/২১.১২.২০০০ (পিয়ানো অ্যালবাম থেকে উদৃত)

নব্বইয়ের শুরুর দিকে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে ব্যান্ড মিক্সড বা মিশ্র অ্যালবামের প্রচলন শুরু করেন আর্কের দলনেতা আশিকুজ্জামান টুলু (জনপ্রিয় ব্যান্ড চাইমেরও প্রতিষ্ঠাতা দলনেতা ছিলেন। পরবর্তীতে চাইম ছেড়ে দিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড "আর্ক" এবং পরবর্তীতে "আর্ক" চরম শ্রোতাপ্রিয়তা পায়)। আশিকুজ্জামান টুলুর সুরবিন্যাস, সঙ্গীতায়োজন ও পরিকল্পনায় প্রকাশিত হয় বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের ইতিহাসে প্রথম ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম "Stars"। "Stars" এর সফল ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আশিকুজ্জামান টুলুর সুরবিন্যাস ও সঙ্গিতায়োজনে প্রকাশিত হয় "Stars 2"। সে-ই শুরু ব্যান্ড ও সলো অ্যালবামের পাশাপাশি জনপ্রিয় আরেক ধারার যার নাম "ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম"। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এরপরের সময়টুকু ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামের জন্য শুধুই ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জল নক্ষত্র যুবরাজ মাহমুদ ঠিকাদার।


যুবরাজ মাহমুদ ঠিকাদার --- সঙ্গীতাঙ্গনে যার একমাত্র পরিচয় তিনি "প্রিন্স মাহমুদ"। সঙ্গীতে যার পদার্পন বন্ধুদের নিয়ে গড়া ব্যান্ড "দ্যা ব্লুজ" দিয়ে। এরপর 'দ্যা ব্লুজ' থেকে বেরিয়ে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড "ফ্রম ওয়েষ্ট"। ফ্রম ওয়েষ্ট এর পরিবেশনায় প্রকাশিত হয় আবেগ নামে একটি অ্যালবাম যেখানে আরও পারফর্ম করে অবসকিউর ও ডিফরেন্ট টাচ। আবেগ অ্যালবামে আছে প্রিন্স মাহমুদ এর চারটি চমৎকার গান। প্রিন্স তখন আমাদের কাছে " বেলা শেষে ফিরে এসে পাইনি তোমায় ' ও ''সব রাজাকার ভাইসা যাইবো বঙ্গপোসাগরে'' গানের শিল্পী। কত আড্ডায়, স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রিন্সের এই দুটি গান গেয়েছিলাম তাঁর হিসাব নেই। প্রিন্স কে এই প্রজন্মের সবাই জানে একজন গিতিকার,সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কিন্তু প্রিন্স এর পথচলাই শুরু হয়েছিল একজন ব্যান্ড শিল্পী হিসেবেই। সেই প্রিন্স ৯৪ তে এসে পুরোদমে হয়ে যায় একজন গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক।

গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদঃ ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম "শক্তি" দিয়ে যার শুরু। ঐ অ্যালবামের ১২ টি গানের ভেতর ৮ টি গানের কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজন ছিল প্রিন্স মাহমুদের। তারুণ্যের উন্মাদনাকে পুঁজি করে প্রকাশ পাওয়া "শক্তি"র শিল্পীরা ছিলেনঃ গুরু আজম খান(উচ্চারণ), এবি(এল.আর.বি), জেমস(ফিলিংস/বর্তমান নগরবাউল), পার্থ(সোলস), বাবনা(ওয়ারফেইজ), ফজল(নোভা) ও নকীব খান(রেঁনেসা)। চমৎকার সব পরিবেশনা সমস্ত অ্যালবাম জুড়ে। প্রতিটি গানের কথা সুর ও সঙ্গীতায়োজনে নান্দনিকতার ছোয়া স্পষ্ট। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। সেই প্রথম অ্যালবাম থেকেই করেছেন নিজের মনের মত গান। গানের কথা সুর ও সঙ্গীতায়োজন ছিল বরাবরই নান্দনিকতায় ভরপুর। সেই নান্দনিকতার প্রমাণ স্বরুপ শুধুই একটি গানের কথা উল্লেখ করলাম আর সেটা এবি'র করা 'পালাতে চাই'। (বর্তমান সময়ের অনেকেই হয়ত অসাধারণ ও চমৎকার সব গানে ভরপুর এই সংকলনটি শোনেন নি। অনুরোধ রইল অন্তত একবার শুনে দেখবেন। প্রিন্স মাহমুদ এমনই এক নাম, আমার কাছে সেই নামের প্রতিশব্দ হল 'বিশ্বস্ত সৃষ্টিশীল ও নান্দনিকতার প্রতীক'।)

'শক্তি' অ্যালবাম এর জনপ্রিয়তায় আসে 'ওরা ১১ জন' নামক একটি চমৎকার ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম। যেখানে এবার জেমস, বাবনা ও আজম খান নেই। অ্যালবাম এ আছে আইয়ুব বাচ্চু, ফজল, পার্থ, চন্দন,বিপ্লব, নকীব খান,খালিদ,টিপু, পলাশ ও প্রিন্স মাহমুদ প্রথম অ্যালবাম এর 'শক্তি' এর আইয়ুব বাচ্চু এবারো অ্যালবাম এর প্রথমে ''আমার দুটি আকাশ ছিল'' নামক একটি দুর্দান্ত গান দিয়ে। যেখানে আরও ছিল চন্দন '' কোন অভিযোগ মনে নেই'' টিপুর 'হাত বাড়ালেই বন্ধু' ফজল এর ''এখন তুমি সুখে নেই'', নকীব খানের ' সে তুমি' বিপ্লব এর 'ভয়' ও খালিদ এর ' কিভাবে কাঁদাবে বলো' এর মতো সুপাড় ডুপার গান।

তৃতীয় অ্যালবাম 'ঘৃণা'। আর্কের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরী হয় মূলত এই অ্যালবামের মাধ্যমেই। আর্কের মেইন ভোকাল হাসান ও আর্কের দলনেতা শক্তিমান গীতিকার ও সুরকার আশিকুজ্জামান টুলু এই প্রথম বারের মত কন্ঠ দেয় প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে এবং সেই সাথে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে সংযোজিত হয় আরেক অনবদ্য সঙ্গীতের। চমৎকার সব পরিবেশনার মধ্যে যে কয়েকটি গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়ঃ 'শুণ্য'-মাকসুদ, 'ভালবাসতে হবেই'-হাসান, 'নীরা'-খালিদ, 'অভিমানিনী'-টুলু, 'একা হয়ে যাই'-বাবনা, 'তুমি আর কারো নও'-চন্দন, 'অভিমানে'-পার্থ সহ সবকটি গান (অনেক চেয়েছি গানের শিরোনাম গুলো উল্লেখ না করার জন্য। কিন্তু উল্লেখ না করে তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। লোভ এই যে, যারা অসম্ভব সুন্দর এই গানগুলো শোনেনি তাদেরকে বলাঃ যদি এই গানগুলো অন্তত একবার না শোনেন তবে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের নান্দনিক ও চরম আবেদনময়ী একটা দিগন্ত অন্ধকারেই থেকে যাবে আপনার কাছে)

চতুর্থ অ্যালবাম 'ক্ষমা'। 'ক্ষমা' অ্যালবামের মাধ্যমেই প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে প্রথম বারের মত গান করেন মাকসুদুল হক (মাকসুদ ও ঢাকা), খালিদ(চাইম), চন্দন(উইনিং) ও টিপু(অবসকিউর)। এছাড়াও এই অ্যালবামে আরো ছিলেন গুরু আজম খান(উচ্চারণ), বাবনা(ওয়ারফেইজ), ফজল(নোভা), পলাশ(অরবিট), বগি(রেঁনেসা), পার্থ(সোলস) ও ইকবাল আসিফ। বেশ কিছু গান তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পায় তারমধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ 'অশ্রু মুছে তুমি তাকাবে/মনকে আলোকিত করবে/তোমার অশ্রু আমায় দুর্বল করে দেয়/আবার দেখা হবে/এখনি শেষ দেখা নয়/আবার কথা হবে/এখনি শেষ কথা নয়'--- আবার দেখা হবে/খালিদ(চাইম), 'কেন মন নিয়ে এত দাও যন্ত্রনা/কেন ক্ষমা দিয়ে ভুল তুমি ঢাকলে না/কেন আধাঁরে এই জীবনে কাছে আসবে না' --- ক্ষমা(মন নিয়ে যন্ত্রনা)/মাকসুদুল হক এবং টিপুর 'চাঁদ জাগা এই রাতে/দুচোখের বরষায় ভিজে/ভাবছি তোমায়/জেগে জেগে রাত/তুমিও কি ভাবছো আমায়' গানগুলো তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এছাড়া চন্দনের 'ছোটো ছোটো কিছু কিছু ভুল', বাবনার 'কোথায় হারালে', ইকবাল আসিফের 'ভাঙ্গা হৃদয়' যেকোন শ্রোতা হৃদয় বিমোহিত করবে খুব সহজেই। প্রতিটি গানের কথা সুর ও সঙ্গীতায়োজনে নান্দনিক সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া পাবেন অজান্তে নিভৃতেই।

'জয় পরাজয় ' অ্যালবাম দিয়ে প্রিন্স শুরু করেন আধুনিক শিল্পীদের নিয়ে মিক্সড অ্যালবাম যেখানে তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, খালিদ হাসান মিলু, এরপরপরই প্রিন্স মাহমুদের সুরে বের হয় আধুনিক গানের শিল্পীদের নিয়ে অ্যালবাম 'ব্যবধান'। প্রিন্স মাহমুদ হেরে গলার ড্রামস গিটারের কিছু ব্যান্ড গানই করতে পারে --- আধুনিক গান প্রিন্স মাহমুদ'কে দিয়ে সম্ভব নয় বলে যারা প্রিন্স মাহমুদের সমালোচনায় মুখর ছিলেন, তাদের মুখ বন্ধ করতেই আসে 'ব্যবধান'। উদ্দীপ্ত প্রতিভার সৃষ্টিশীল নান্দনিকতায় প্রিন্স মাহমুদ বরাবরই ছিলেন অন্য সবার শীর্ষে। ব্যান্ড শিল্পীদের ছাড়াও করেছেন আধুনিক ও সলো শিল্পীদের গান। 'এক মুঠো জ্যোছনা' নামে পুরো একটা অ্যালবাম করেছেন জনপ্রিয় শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ-এর। আধুনিক গানের আরেক দিকপাল এন্ড্রু কিশোরের জন্য করেছেন 'গাঁয়েন' নামে একক অ্যালবাম। এছাড়াও করেছেন এন্ড্রু কিশোর ও আতিক হাসানকে নিয়ে ডুয়েট অ্যালবাম 'পদ্ম পাতার জল' ও 'দুই দিনের মেলা' নামে দুটি অ্যালবাম সহ আরো অনেক সলো ও মিক্সড অ্যালবাম। শুধুই ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে আবদ্ধ হয়ে থাকেন নি তিনি। মেধা ও নান্দনিক মননশীলতার জ্যোতি ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যান্ড, পপ ও আধুনিক গানে। এবং প্রিন্স মাহমুদের সেই জ্যোতি শুধুই ছড়িয়ে পড়েনি চারপাশ জুড়ে, উপরন্তু সেই সাথেও আলোকিত করেছেন প্রতিটি শাখা।

ব্যবধানের পরপর প্রকাশিত হয় প্রিন্স মাহমুদের সর্বাধিক জনপ্রিয় ধারার অ্যালবাম 'শেষ দেখা'। আগের সমস্ত অ্যালবাম দিয়ে যাদের গ্রহণযোগ্যতা মিলেনি তারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে এই অ্যালবাম নিয়ে। শুধুই তাই নয় --- যারা বাংলা ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে দোটানায় ছিলেনঃ ব্যান্ড সঙ্গীত শুনবেন কি শুনবেন না তারা সমস্ত দ্বিধা ছুড়ে ফেলে লুফে নেয় ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম 'শেষ দেখা'। 'শেষ দেখা'-ই প্রিন্স মাহমুদের প্রথম অ্যালবামে যেখানে এবি, জেমস, হাসান, শাফিন আহমেদ, পার্থ, টুলু, খালিদ, গুরু আজম খান, ফজল, টিপু ও বিপ্লব এক সাথে একই অ্যালবামে উঠে আসে। এর আগে আর কোন অ্যালবামে এমনটি ঘটে নি। ততকালীন সময়ের মূলধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর শিল্পীরা এক সাথে একই অ্যালবামে গান করার সুযোগ পায়। ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামের শক্তি এখানেই নিহিত। সব ঘরানার শ্রোতা-ভক্তের জন্য এর চেয়ে ভাল আর কোন প্লাটফর্ম নেই একমাত্র ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম ছাড়া। আর প্রিন্স মাহমুদও ঢেলে দিয়েছে দীপ্তপ্রতিভার সবটুকু নান্দনিক ছাঁপ। প্রতিটি শিল্পীর কন্ঠোপযোগী শ্রেষ্ঠ গানগুলো তৈরী করেছেন সব শ্রেণীর শ্রোতা-ভক্তকুলের জন্য। এই অ্যালবাম প্রিন্স মাহমুদের অতিতের সমস্ত অর্জন'কে ছাপিয়ে জ্যোতির দ্যুতি আরো বেশী ছড়িয়েছে আপন মহিমায়। এই অ্যালবামে ছিল তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া জনপ্রিয় গানঃ শেষ দেখা-এবি, হতেও পারে এই গান শেষ গান-জেমস, এত কষ্ট কেন ভালবাসায়-হাসান, প্রতিরাতই নির্ঘুম রাত-শাফিন, আকাশনীলা-খালিদ, জীবনের শেষ কটা দিন-গুরু আজম খান, সময় আর কাটে না-পার্থ (কথাঃ আশরাফ বাবু, সুরঃ পার্থ) সহ আরো বেশ কিছু গান।এই অ্যালবামের আগে শাফিন আহমেদ অন্য কোন মিক্সড অ্যালবামে গান করেছেন বলে আমার জানা নেই। অন্যদিকে আর্কের বাইরে হাসান'কে জনপ্রিয় করতে প্রিন্স মাহমুদের অবদান অনস্বীকার্য। হাসানের করা 'এত কষ্ট কেন ভালবাসায়' ঐ সময়ের মানুষের মুখে মুখে বেড়াতো, জেমসের 'বন্ধু ভেঙ্গে ফেলো এই কারাগার/খুলে দাও সে হৃদয়ে প্রণয়ের দ্বার/হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা/হতেও পারে এই গান শেষ গান' কিংবা পার্থর 'সময় আর কাটে না' এখনও গান পাগল মানুষগুলো নিয়মিত শোনেন।

শেষ দেখা'র পরপরই প্রকাশ পায় প্রিন্স মাহমুদের পরবর্তী অ্যালবাম 'এখনও দু'চোখে বন্যা'। এবি'র 'কতদিন দেখেনি দুচোখ', জেমস-এর 'মা', হাসানের 'প্রশ্ন' ও 'চলে যাও বন্ধু', শাফিন আহমেদের 'কোন এক সাঁঝে', খালিদের 'কোন কারণেই'। এই গানগুলো ঐ সময়ে শ্রোতাকুলকে কিভাবেই না আন্দোলিত করেছিল প্রতিটি গানের প্রতিটি কথা ও সুরে !!!! এই গানগুলির কথা নতুন করে বলতে চাইনা শুধুই এইটুকু ছাড়াঃ কিছু গান হয়ত শুধুই শিল্পীর কারণে অনেক বিখ্যাত। আবার কিছু কিছু গানের গীতিকারের খোজও রাখিনি অথবা জানিনা তবে এই গানগুলি যখন কোন শিল্পীর কন্ঠে Amplification এর সুযোগ পাবে তখন ঐ শিল্পীর পাশাপাশি আরও একটি নাম উচ্চারিত হবে, আর সেই নামটি হল 'প্রিন্স মাহমুদ'। এই গানগুলোর যারা শ্রোতা ছিলেন তাদের বলিঃ প্রতিটি গান শ্রোতা-হৃদয়কে এখনও আন্দোলিত করে সেই আগের মতই। আর যেই সব গানপাগল মানুষগুলো বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের এই কালজয়ী নান্দনিক গানগুলো শুনে দেখেন নি, আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে নান্দনিক সৃষ্টিশীলতায় ভরপুর এই গানগুলি একটি বারের জন্য শুনে দেখুন --- আপনার নিজের ভেতরে কেউ একজন হয়ত বহুকাল ধরেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে এই গানগুলোর জন্য। যেন কত আপন, কত চেনা, কত প্রিয় এই গানগুলো অভিমানে এতদিন আপনার থেকে অনেক অনেক দূরে ছিল। আর আজ কাছে পাওয়াতেই অশ্রুর বাধ ভেঙ্গে গেছে . . .



'এখনও দু'চোখে বন্যা'র পর শতাব্দী পরিবর্তনের আগে ১৯৯৯ এ প্রিন্স মাহমুদের দুটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। একটি হল 'দাগ থেকে যায়/৯৯ এর শুরুর দিকে' আর অন্যটি হল 'স্রোত/৯৯ এর শেষের দিকে'। শেষ দেখা এবং এখনও দু'চোখে বন্যার সফল ধারাবাহিকতার সরব উপস্থিতি মেলে 'দাগ থেকে যায়' অ্যালবামে। সেই সৃষ্টিশীল নান্দনিকতার পুরোটায় উঠে আসে এই অ্যালবাম জুড়ে। শাফিন আহমেদের গাওয়া 'আজ জন্মদিন তোমার' গানটি অ্যালবাম প্রকাশের সাথে সাথেই সারা বাংলাদেশ কাঁপায়। যেখানেই যাই সেখানেই বাজে শাফিন আহমদের 'আজ জন্মদিন তোমার', জেমসের 'কিছু ভুল ছিল তোমার', এবি'র 'বেলা শেষ ফিরে এসে', জুয়েলের তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া 'তুমি বোঝনি বন্ধুত্ব কি',খালিদের 'হয়নি যাবার বেলা' সহ এই অ্যালবামের বাকী গানগুলো। বাংলা মিউজিকে জন্মদিন উৎসব নিয়ে এর চেয়ে কোন ভাল গান নেই, আসবে সেই আশা ক্ষীণ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্মদিনের উৎসব পালনে এই গানটি জন্মদিন-সঙ্গীত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই অ্যালবামের রেশ কাটতে না কাটতেই আসে ৯০ দশকের প্রিন্স মাহমুদের শেষ অ্যালবাম 'স্রোত'। সবকটি গানই শ্রুতিমধুর। স্পষ্ট এবং নান্দনিক কথামালায় গাঁথা গানগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটিঃ এবি'র 'অভিমান নিয়ে', জেমসের 'পাপী', জুয়েলের তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া 'যদি কখনো অসহায়', টিপুর 'একদি কাদঁবে', পিয়াসের 'মন শত পাহারায়', মিজানের 'কাল যে আপন ছিল আজ হল পর' এবং শাফিন আহমেদের 'দুঃখ স্রোত'।



ফিরে যাই এক অবাক কন্ঠে --- জেমস। এখনও দু'চোখে বন্যা অ্যালবামের সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় ও বিখ্যাত গান হল জেমস-এর 'মা'। এই গানটি প্রথমবার শুনেছিলাম দানাবাকৃতির একটি সিডি প্লেয়ারে (শুরুতেই যেই সিডি প্লেয়ারের গল্প করলাম)। তাও আজ ১ যুগেরও কিছু বেশী সময় পেরিয়ে গেছে। কালের স্রোতে যতদিন বাংলা ব্যান্ড মিউজিক টিকে থাকবে ঠিক ততদিন ঠিক আগের মতই আবেদন থাকবে প্রিন্স মাহমুদের কিছু গানের যেই গানগুলোতে কন্ঠ দিয়েছেন বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের শক্তিমান শিল্পীরা। তবে এখনও দু'চোখে বন্যা অ্যালবামে করা জেমসের 'মা' তার অন্যতম। একটি গানই যথেষ্ঠ জেমস-কে এই বাংলা মিউজিকে অনন্তকাল শ্রোতাকুলের অন্তরে গেঁথে রাখার জন্য। এই একটি গান শ্রোতা শ্রেণীর সমস্ত প্রাচীর ভেঙ্গে পৌছে গেছে সর্বস্তরে এবং সেই সাথে পৌছে দিয়েছে তারুণ্যদীপ্ত ব্যান্ড সঙ্গীতের বারতা। যে গান শুধুই কানে কানে বলে যায়নি; কাঁদিয়েছে অজস্র শ্রোতা হৃদয়কে, সৃষ্টি করেছে বড় ধরণের দাগ। শত চেষ্টাতেও সেই দাগ মুছে ফেলা যায়। বরং থেকে যায়। যিনি একটি বারের জন্য জেমসের 'মা' গানটা শুনেছেন তার যে অনুভূতি শত শত শ্রোতা হৃদয়েরও অনুভূতিও তেমন-ই এক ও অভিন্ন। প্রিন্স মাহমুদ এমন অভিন্ন অনুভূতির জন্ম দিয়েছেন অসংখ্যবার। হয়ত তিনি নিজেও জানেন না। আমার মনে আছে আমি যখন মা গানটা হাই-ভলিউমে শুনতাম তখন লক্ষ্য করতাম আশেপাশে যতদূর পর্যন্ত গানের শব্দ স্পষ্ট শোনা যেত তার ভেতরের সমস্ত মানুষ যখন জেমসের কন্ঠে 'দশ-মাস দশ-দিন ধরে গর্ভে ধারণ/কষ্টের তীব্রতায় করেছে আমায় লালন' বাক্যটা শুনত তখন পুরো গানটা শোনার জন্য উদ্গ্রীব থাকত। হোক সে আবাল, বৃদ্ধ কিংবা বনিতা।

প্রিন্স মাহমুদ মানেই তুমুল শ্রোতা নন্দিত সারা বাংলাদেশ কাপাঁনো চমৎকার চমৎকার সব অ্যালবাম। প্রতিটি অ্যালবামের সর্বাধিক গানই নান্দনিক, তারুণ্যদীপ্ত কথামালায় গাঁথা ও অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় গড়া অনন্যসব সংকলন। শক্তি, ক্ষমা, ঘৃণা, শেষ দেখা, এখনও দু'চোখে বন্যা, দাগ থেকে যায়, স্রোত এই অ্যালবামগুলি ব্যান্ড সঙ্গীতে অনন্য সংযোজন হিসেবে টিকে থাকবে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের ইতিহাসের পাতায়। সেই ইতিহাস প্রিন্স মাহমুদের ইতিহাস। সেই ইতিহাস বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের এক যুবরাজের ইতিহাস।
*** প্রিন্স মাহমুদের প্রকাশিত অ্যালবামসমূহ।



০১. শক্তি

০২. ওরা এগার জন

০৩. ক্ষমা

০৪. ঘৃণা
৫. জয় পরাজয় - তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, খালিদ হাসান মিলু,

০৬. ব্যবধান

০৭. দূর থেকে ভালবেসে যাব - কামাল আহমেদ (ঠিক মনে নেই)

০৮. শেষ দেখা

০৯. এখনও দু'চোখে বন্যা

১০. দাগ থেকে যায়

১১. স্রোত

১২. দেয়াল দুই হৃদয়ের মাঝে

১৩. প্রিয় বন্ধুকে - ভেলেন্টাইন স্পেশাল

১৪. হারজিৎ

১৫. পিয়ানো

১৬. চিঠির উত্তর দিও

১৭. তাল - হাসান

১৮. মেহেদী রাঙ্গা হাত

১৯. ছুটি - এবি, হাসান, জেমস

২০. হীরা চুনি পান্না - আসিফ, সুমন, আতাহার টিটু

২১. এক মুঠো জোছনা - কুমার বিশ্বজিৎ

২২ . কিশোর কিশোরী - বাপ্পা, কানিজ সুবর্না

২৩. দুই দিনের মেলা -এন্ড্রু কিশোর (আর কে যে ছিল ঠিক মনে নেই)

২৪. ১২ মাস - এবি, হাসান, জেমস, মাকসুদ

২৫. এক টুকরো চাঁদ - খালিদ

২৬. গায়েঁন – এন্ড্রো কিশোর

২৭. ও পুতুল আমার পুতুল - আরিফ

২৮. দহন শুধু তোমার জন্য - এবি, হাসান, জেমস, বিল্পব

২৯. সারেগামা - হাসান, জেমস

৩০. পদ্ম পাতার জল - এন্ড্রু কিশোর, আতিক হাসান

৩১. দেশে ভালবাসা নাই - এবি, জেমস

৩২. যন্ত্রনা - এবি, জেমস

৩৩. হ্যালো কষ্ট - হাসান

৩৪. প্রতারণা - এবি, জেমস

৩৫. মাটি - এবি, জেমস

৩৬. দেনা পাওনা - এবি, জেমস, হাসান

৩৭. বাজনা - এবি, জেমস, বিল্পব

৩৮. ভালবাসা মানে দুঃখ - হাসান

৩৯. আড্ডা - মেহরাব, রুমী

৪০. দেবী

৪১. বন্দনা - মাহাদী

৪২. হাটি - কুমার বিশ্বজিৎ, ফাহমিদা নবী

৪৩. ঘুমাও - খালিদ

৪৪. বোকা - ক্লোজাআপ ওয়ান তারাকাদের নিয়ে

৪৫. প্রিন্স মাহমুদের গান - প্রিন্স মাহমুদ, পলাশ, মেহরাব, ফাহমিদা নবী

৪৬. নির্বাচিতা (প্রিন্স মাহমুদের সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবাম)

** এখানে উল্লেখ্য যে সবাই প্রিয় আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ''বেলা শেষে'' গানটি শুনেন সেটি হলো প্রিন্স মাহমুদ এর 'ফ্রম ওয়েস্ট' ব্যান্ড এর 'সে কেমন মেয়ে' অ্যালবাম এর 'বেলা শেষে' গানটির ২য় পর্ব। ১ম পর্বে প্রিন্স নিজেই গানটি গেয়েছিলেন যা বহু শ্রোতার অজানা। এই ব্যাপারে আমি এর আগে আমার একটি পোস্টে বিস্তারিত বলেছিলাম যে গানটি আমি ও আমার সমবয়সীরা পেয়েছিলাম ১৯৯১ তে। ***

বেলা শেষে ফিরে এসে- প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)

রাজাকার আলবদর - প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)
সার্বিক সহযোগিতায় ও ধন্যবাদান্তে ঃ মুখলেসুর রহমান সজল (সিলেট)
বাংলা গানের সব দুর্লভ, হারানো ও সেরা গান পেতে এইখানে খোঁচা দেন - RaDiO bg24 (রেডিও বাংলার গুরু২৪)



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৫৩
৩১টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×