আজগে আমরা ফাইবার অপটিকসের সাধারন যে বৈশিষ্টগুলো থাকে সে সম্পর্কে জানবো। সবার আগে জানা দরকার, যে মৌলিক কারনে ফাইবার অপটিকস তৈরী করা হয়েছে, আর তা হলো পরিবাহী(ট্রান্সমিশন) এবং যান্ত্রিক শক্তি (মেকানিক্যাল স্ট্রেন্থ) কে অটুট ও স্থিতি রেখেই যেন ঐ কেবল দিয়ে কাজ করা যায় এবং ফাইবার ক্যাবল ছাড়া অন্যকোন ক্যাবল তৈরীর সময়েই দেখা যায় যে সে একরকম ভাবে আচরন করে এবং যখন সংযুক্ত,প্রতিস্থাপন ও পরিচলন করা হয় তখন তার পরিবাহী ক্ষমতা ও যান্ত্রিক শক্তি অনেকটাই হ্রাস পায়।
আজগের আলোচনায় প্রথমত বাহ্যিক ফ্যাক্টর সমুহের প্রভাবের কারনে ফাইবার অপটিকসের আচরন, দ্বিতীয়ত যান্ত্রিক ও পরিবেশগত প্রভাব কি ফাইবার অপটিকস কে প্রভাবিত করে? তৃতীয়ত ফাইবার অপটিকস গঠনের একটি সাধারন বর্ননা এবং চতুর্থত গঠনের ভিত্তিতে এর নির্দিষ্ট ব্যবহার সমুহের আলোচনা করবো। আলোচনাওটি অনেক দীর্ঘ তাই কয়েক পর্বে প্রকাশ করবো। আপনাদের ভাল লাগা আর উপকারীতায় কতটুকু লাগতে পারবো জানিনা তবে চেষ্টার যে কোন ত্রুটি করছি না এইটা হলফ করে বলতে পারি।
১) ফাইবার অপটিকস এর উপর বাহ্যিক প্রভাব
অপটিক্যাল ক্যাবল বিভিন্ন পরিবেশে প্রতিস্থাপিত হয় (এরিয়াল,মাটিস্থ, ডাক্ট, টানেল, জলের তলে ইত্যাদি) এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটারই পরিবেশ আলাদা। ক্যাবল তৈরী এবং সংযুক্তকরনের সময় তাই আশাতীত ফলাফলের জন্যে অবশ্যই এই পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তার কাজ সমুহ করতে হয় যাতে করে ধারাবাহিকভাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাবলটি কাংখিত ফলাফল পাওয়ার জন্যেই সঠিকভাবে পরিবেশগত বিষয়সমুহকে খেয়াল রাখতে হবে। বাহ্যিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হওয়াকে আমরা দুইভাবে ভাগ করতে পারি ১) প্রাকৃতিক প্রভাবে (তাপমাত্রা,বাতাস,পানি,ভুমিকম্প ইত্যাদি) ২) মানব সৃষ্ট প্রভাব সমুহ (ধোয়া,বায়ূদূষন,আগুন ইত্যাদি)
২) অপটিক ফাইবারের উপর যান্ত্রিক ও পরিবেশগত প্রভাব
উপরেল্লেখিত সারনীতে অপটিক ফাইবারের দক্ষতা প্রদর্শনের উপর সরাসরি প্রভাব সমুহ দেখানো হয়েছে।
অপটিক ফাইবার তৈরী করার মুল উদ্দেশ্যই হলো যেকোন পরিবেশে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল যন্ত্রসমুহ যেন সবসময় একই ধরনের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে।
এবারে আমরা অপটিক ফাইবারে যান্ত্রিক ও পরিবেশগত প্রভাবে প্রভাবিত হতে পারে এবং কিভাবে তা প্রতিহত বা এড়ানো যায় তা নিয়ে একটু আলোচনা করবো।
২*১ অতিরিক্ত ফাইবার টান বা প্রসারংক
২*১*১ কারনঃ অবশিষ্ট বা অতিরিক্ত ফাইবার টানার সময় টেনশন, টোরিশন বা বেন্ডিং জনিত ব্যাপারগুলো দেখা যায়
২*১*২ প্রভাবঃ ফাইবারকে অতিরিক্ত টানা-হাঁচড়া করা হলে এর ভেতর “চিড়” দেখা দিতে পারে এছাড়াও অতিরিক্ত ফাইবার না কেটে ঝুলিয়ে রাখলে তা ফাইবারের ভঙ্গ হওয়ার যে প্রতিরোধক দেয়া থাকে তা নষ্ট হয়ে ফাইবার ভেঙ্গেও যেতে পারে
২*১*৩ বিবেচ্য বিষয়সমুহ
ফাইবার অপটিকস তামা বা স্টিলের তারের চেয়ে ভিন্ন হয় যার ফলে এর প্রসারন ও সংকোচনের ফলে প্রভাবিত হয় তাই কাঁচ দ্বারা নির্মিত ফাইবার অপটিক ক্যাবল খুব সামান্য প্রসারংক দেখায়।অতিরিক্ত টানাটানা করা হয়ে এর প্রসারংক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে ভঙ্গুরতা দেখা যায় যা ফাইবার কে দুর্বল করে দেয় এবং এই দুর্বলতা ফাইবারের ভেতরে সবসময় থেকেই যায় এবং ক্রমাগত বাড়তেই থাকে তাই যখনই কোথাও ফাইবার সংযুক্ত করতে হবে তখন অবশ্যই এর প্রসারংক শক্তি জেনে নিয়ে তবেই ফাইবার টানা উচিৎ,এইজন্যে অপটিক ফাইবার যখন তৈরী করা হয় তখনই এর প্রসারংক মাত্রা পরীক্ষা করে নেয়া হয় যে সে কতটুকু চাপ ও টান সহ্য করতে পারে। সাধারনত একটি অপটিক ফাইবার ২০-৪০বছরেও নষ্ট হয়না কিন্তু অতিরিক্ত টানাটানি অর্থাৎ এর সহনশীল মাত্রার চেয়েও ২০-৩০% ভাগ পর্যন্ত সে সহ্য করতে পারে কিন্তু এরচেয়ে বেশীমাত্রায় যদি একে টানা হয় তাহলে এর কার্যকারীতায় বিশেষ প্রভাব পড়ে এখানে বিশেষভাবে বলা যায় উচ্চ আদ্রতায়,এরিয়েল ক্যাবলিং অথবা উচ্চ তাপমাত্রা এলাকায় এই প্রসারংক ও অতিরিক্ত টানার ব্যাপারটা অবশ্যই খেয়াল রাখতেই হবে নচেৎ এর সংযুক্তকরনের যেই সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে করা হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে।
সে কারনে ক্যাবল টানার নকশাই এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার,নিরাপদ মাত্রা,ত্রুটি এবং ফাইবারের ফাটল তৈরীর প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে। সে কারনে এর প্রসারংক মাত্রা, ভঙ্গুর টান, চাপ সহনের মাত্রা সবকিছুকে মাথায় রেখেই যদি অপটিক্যাল ফাইবারের সংযুক্ত করা হয় তাহলেই ক্যাবল এর দীর্ঘমেয়াদী ও নিরাপদ আকাংখিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
২*২ ঘাতবল জনিত টান বা প্রসারংক
২*২*১ কারনঃ ঘাতবল জনিত কারণ অপটিক ফাইবারে প্রভাব ফেলে এর সংযুক্তকরনের সফলতা ও কার্যকরীতায় ছেদ ঘটায়
২*২*২ প্রভাবঃ যখন ঘাতবল জনিত কারন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন নিশ্চিতভাবেই এর বিচ্ছেদ ঘটবে এবং তা জটিল আকার ধাওরন করলে অপটিক ফাইবার ছিঁড়েও যেতে পারে
২*২*৩ বিবেচ্য বিষয় সমুহ
ঘাতবল জনিত প্রভাব এড়ানর জন্যে একটি সুরক্ষিত প্রলেপ দ্বারা একে আচ্ছাদিত করা যেতে পারে এছাড়া আরো স্তর দ্বারা প্রলেপ,ঢাকনা বা শক্ত কোন অবকাঠামো ঢেকে ফেলা যেতে পারে যাকে এককথায় বলতে গেলে বলা যায় যে ফাইবার অপটিকস এর “বর্ম” তৈরী করা উচিৎ।
অতিরিক্ত চাপজনিত পরিবেশে সংযুক্তকরনের সময় অপটিক ফাইবার “টান” ও “মোচড়” দুটিই আসতে পারে সেকারনে ক্যাবলের মোচরের ব্যাসার্ধ, এর মিলিত হওয়ার স্থান সমুহকে সীমিত করে বা সেইদিকে লক্ষ্য রেখে সংযুক্তকরনের কাজটি সমাধা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
(চলবে……)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:২৯