somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে যাবেন বগা লেক আর কেওক্রাডাং

২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন আগে কিওক্রাডাং ঘুরে এসেছি। যারা যেতে চান তাদের জন্য নিজ অভিজ্ঞতার খুঁটিনাটি বর্ণনা এ পোস্টে দিলাম। কেউ উপকৃত হলে পোস্টটি সার্থক হবে।
সামুতে কেওক্রাডাং ভ্রমণ কাহিনীর সিরিজ ও ছবি ব্লগ দিয়েছিলাম। সেগুলোর লিংকও দিয়ে দিলাম। প্রয়োজন হলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

ছবিব্লগ: বান্দরবন স্বর্ণমন্দির
ছবিব্লগ: অনিন্দ্যসুন্দর বগা লেক
ছবি ব্লগ: সাঙ্গু নদী
বর্ষায় বগালেক ও কেওক্রাডাং: ১ম পর্ব (যাত্রা হলো শুরু)
বর্ষায় বগালেক ও কেওক্রাডাং: ২য় পর্ব(বগা লেকের পথে পথে)
বর্ষায় বগালেক ও কেওক্রাডাং: শেষ পর্ব (কেওক্রাডাং চূড়ায় উড়িয়ে দিলাম লাল সবুজ নিশান)

# ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন যাওয়ার বাস রয়েছে। এছাড়া ট্রেনে করে চট্টগ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে গেলে বহদ্দারহাট থেকে বাসে চড়তে হবে। ভাড়া ৭০ টাকা। সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা।

# বান্দরবন পৌঁছানোর পর রিকশা/টমটম করে চলে যাবেন রুমা বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে কাইক্ষ্যংঝিরি যাওয়ার বাসে চড়বেন। ভাড়া ৭০ টাকা। চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে দুইহাজার টাকার মত। আরো বেশিও লাগতে পারে। কাইক্ষ্যংঝিরি পৌঁছুতে সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। পাহাড়ী রাস্তা হওয়ায় এসব জায়গায় সন্ধ্যার পর কোন বাস চলাচল করেনা। ক্ষেত্র বিশেষে চাঁদের গাড়ি চলাচল করে। তবে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দিন থাকতেই কাইক্ষ্যংঝিরি চলে যাওয়া উত্তম।

# কাইক্ষ্যংঝিরি নেমে সাঙ্গু নদী পার হওয়ার জন্য চড়তে হবে নৌকায়। ভাড়া মাথাপিছু ত্রিশ টাকা। সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো।

# নৌকা করে পৌঁছে যাবেন রুমা বাজারে। সেখানে হোটেল হিলটন সহ কমদামি কিছু হোটেল পাবেন। রাত কাটানোর জন্য যে কোন একটায় উঠে পড়তে পারেন। হোটেল ভাড়া মৌসুমের উপর নির্ভরশীল। তবে তা খুব বেশি নয়। বর্ষায় হোটেল হিলটনে এক রাত কাটানোর জন্য আমরা তিন বেডের একটি রুম পেয়েছিলাম মাত্র আড়াইশো টাকায়।

# রুমা বাজার পৌঁছে প্রথম কাজ হচ্ছে গাইড ঠিক করা। রুমা বাজার থেকে বগা লেক বা কেওক্রাডং বা আরও দূরে গেলেও দিনপ্রতি গাইড ভাড়া তিনশত টাকা। তাছাড়া গাইড আপনার সঙ্গে থাকাকালীন তার যাবতীয় খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। বিভিন্ন পর্যটন অফিস সেনাবাহিনীর রেজিস্টার্ড গাইড সরবারহ করে। আপনি সেখান থেকে গাইড নিয়ে নিবেন। সাধারনত সিরিয়ালে যে গাইড থাকে তাকেই নিতে হয়। পাহাড়ী গাইড পেলে ভালো। বাঙ্গালী গাইডের ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। এরা টাকা-পয়সা নিয়ে বাটপারী করতে ওস্তাদ। সবচেয়ে ভালো আপনার আগে গিয়েছে এমন কারো কাছ থেকে পাহাড়ী গাইডের মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে তাকে ভাড়া করা। আমি বাটপার একটা বাঙ্গালি গাইড পাওয়ায় এ ব্যাপারে তেমন কোন সহায়তা করতে পারছিনা বলে দুঃখিত।

# পরদিন ভোরে বগা লেক রওয়ানা হওয়ার আগে অবশ্যই সেনাবাহিনীর কাছে আপনার নাম ঠিকানা নিবন্ধন করে নিবেন।

# বগা লেক চাঁদের গাড়ি করে যেতে পারবেন। রিজার্ভ গাড়ি ১৫০০ টাকা। আর মৌসুমের সময় লোকাল গাড়ি পাওয়া যায়। মাথাপিছু ভাড়া ১০০ টাকা। বর্ষায় গাড়ি করে যাওয়ার পরও কিছুটা পথ হাঁটতে হয়। সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা।
আর যদি হাঁটতে চান তবে দু’টো পথ। গাড়িতে যাওয়ার পথেই হাঁটতে পারেন। সময় বেশি লাগবে, ঝুঁকি কম আর তেমন কোন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না। আর একটা আছে ঝিলের পথ বা ঝিরিপথ। এ পথে হাঁটলেই বগা লেক যাওয়ার আসল মজাটা পাবেন। প্রায় পঞ্চাশবারেরও বেশি ঝর্ণা আর ঝিলের পথ পার হতে হবে। সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। এ পথে সামান্য ঝুঁকি আছে। তবে অ্যাডভেঞ্চারেই যখন বেরোবেন তো একটু ঝুঁকি না নিলে কী চলে??:P

# বগা লেক ও কেওক্রাডাং যাওয়ার জন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে নিতে পারেন। দলের সবাই ঘাড়ে একটি করে ব্যাগ নিবেন। ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা হওয়া ভালো। ব্যাগে প্রয়োজনীয় ঔষধ পাতি যেমন পেইনকিলার, স্যাভলন, স্যালাইন, ব্যান্ডেজ ও কিছু শুকনা খাবার ইত্যাদি নিয়ে নিবেন। ছোট বোতলে পানি নিবেন। আরেকটি ছোট বোতলে গ্লুকোজ বা স্যালাইন বানিয়ে রাখতে পারেন। পানি নিয়ে চিন্তা করবেন না। পথে এত এত ঝর্ণা পাবেন যে বোতল ফুরোলেই পানি ভরে নিতে পারবেন। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে তাই রুমা বাজার থেকে রবারের জুতো কিনে নিবেন। মোজা নিয়ে যাবেন। বেশ ভালোই কাজে দিবে জুতোগুলো। দাম পড়বে ১০০-১৫০ টাকা।

# এ জায়গাগুলোতে যাওয়ার প্রধান দুই আতংকের নাম মশা ও জোঁক। জোঁক থেকে বাঁচার জন্য ব্যাগে লবণ রাখবেন। আর মশা থেকে বাঁচার জন্য চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে ‘অডোমস’ কিনে নিবেন। রুমা বাজারেও অডোমস পাবেন।অভিযানের শুরুতে সবাই ‘অডোমস’ শরীরে মেখে নিবেন। প্রায়ই এ অভিযানে গিয়ে অনেকে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। মাঝে সাঝে সাঁপের দেখাও পেতে পারেন। তবে শীতকালে গেলে সাপ আর জোঁকের ভয় একবারেই কমে যায়। (এ প্রস্তুতি না নিলেও তেমন ক্ষতি নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো)

# বগা লেক পৌঁছে এক রাত ওখানে থাকতে পারেন। ঐদিনই কেওক্রাডং যাওয়ার শারীরিক শক্তি সাধারনত থাকার কথা নয়। তাছাড়া সন্ধ্যা হয়ে গেলে যেতেও পারবেন না।

# বগালেকে সিয়াম দিদি অথবা লারামের রেস্ট হাউজে উঠবেন। মনে রাখবেন যে রেস্ট হাউজে উঠবেন সেখানেই খাবেন। এত খরচ কম হবে।

# পরদিন ভোরে কেওক্রাডাং রওয়ানা হবেন। যেতে লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। ফিরতে দুই ঘন্টা। এখানে জোঁকের ভয় একটু বেশি। কিন্তু বগা লেকের চেয়ে রাস্তা কম ঝুঁকিপূর্ণ।

# রুমা বাজার ফেরার সময় আবার হেঁটে হেঁটে ফিরতে পারেন। চাইলে চাঁদের গাড়ি করেও ফিরতে পারেন। সেজন্য গাইডকে বলবেন চাঁদের গাড়ি ঠিক করতে।

আরেকটা বিষয় খরচাপাতি মৌসুমের উপর নির্ভরশীল। যদি চাঁদের গাড়ি করে না যান তবে সব মিলিয়ে মাথাপিছু দেড়হাজার টাকার বেশি লাগার কথানা।
শীতকালে কিওক্রাডাং যাওয়া সব দিক থেকে নিরাপদ। তবে বর্ষায় মজা বেশি।
আজকাল শীতকালে বগা লেক ও কেওক্রাডং পর্যন্ত সরাসরি চাঁদের গাড়ি যায়। সেভাবেও যেতে পারেন। তবে এত কোন মজা নেই। আরো কিছু জানার থাকলে আওয়াজ দিয়েন।

যারা ভবিষ্যতে যাবেন তাঁদের জন্য শুভকামনা। সবাইকে ধন্যবাদ।:D
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৩
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×