আমার ফুপুদের চুল যেমন ঘন তেমনি সিল্কি আর লম্বা। একেবারে কেশবতী বলতে যা বোঝায় আর কি। উত্তরাধিকার সূত্রে ফুপাতো চাচাতো বোনরাও পেয়েছে এমন ঘন কালো কেশ। একবার তো শুনলাম পার্লারে গিয়ে চুল কমিয়ে এসেছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ক্যানো! জবাবে যা বললো তার শানে নুজুল হলো চুল দুই দিনেও শুকায় না। ফলে ঠান্ডা লেগে যায়। কথা সেটা না। কথা বলতে চাচ্ছি আমার ফ্যামিলি নিয়ে।
আমার বাবার চুল ও খুব সিল্কি। আর চুল নিয়ে উনি বেশ সচেতন ও। কিন্তু কাহিনী হলো আম্মুর চুল নিয়ে। ম্যাগি নুডলস না হলেও খুব কম যে কোকড়া তাও কিন্তু না। তবে অতীব সুন্দরী হওয়াতে কেউ চুলের দিকে তেমন তাকায় ও না। যাইহোক আম্মুর জন্য আমরা পেয়েছি মিক্সড হেয়ার। আই মিন ভদ্র ভাষায় বললে যাকে বলে হালকার উপর ঝাপসা ওয়েভ। কিন্তু পোড়া কপাল আমার ছোট ভাইয়ের। সবে মাত্র কলেজে পড়ে। চোখে রঙিন চশমা। চেহারা ভালো হলেও তার ভাষ্যমতে কোকড়া চুল তার পার্সোনালিটির সাথে যায় না। আর তাই প্রায়ই আবদার ধরে "আপু আমার চুল গুলো তোমার হেয়ার স্ট্রেটনার দিয়ে স্ট্রেট করে দাওওওনা "
একদিন তার আবদার পূরণ করে দিলাম। দেখতে সদ্য জন্মানো শজারুর মত লাগলেও নিজেকে আয়নায় দেখে বেশ খুশি আমার ছোট ভাই। ঠিক সেই মুহুর্তেই রুমে ঢুকলেন বাবা। ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেন বাবা। তারপর খুব সিরিয়াস টাইপ চেহারা করে বললেন "তোর মত চুল যদি আমার হতো তবে আমি জীবনেও বাড়ির বাহিরে যেতাম না " কথাটা শুনে আমি আর ছোট খুব মজা পেলেও বাবা যে সিরিয়াসলি বলেছেন তাও জানতাম। প্রত্যেক মাসে একবার নর সুন্দরের কাছ থেকে চুল কাটিয়ে আসতেন। কিন্তু তার ধারনা কোন নর সুন্দর ই পেছনে সমান করে চুল কাটেনা। আর তাই সেলুন থেকে বাসায় এসেই চিরুনি আর ছোট্ট আয়না নিয়ে আমার কাছে আসতেন। বলতেন পেছন দিয়ে একটু সমান করে দে তো। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বাবার চুল সমান করে দিতাম।
একবার তো নাপিত সেইরাম ছোট করে দিলো চুল। ভ্রু কুচকে বাসায় এসে বাবা বললেন "আমি এখন বাহিরে কিভাবে যাবো" আমি এমন ভাব করলাম যেন মহা সমস্যার ব্যাপার। আর তাতে বাবার টেনশন যেন আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো। সত্যিই সেই একমাস বাবা তেমন বাসা থেকে বের হননি।
আজ অনেকদিন যাবত বাবা বাসায় নেই। দেশেও নেই। হজে গেছেন। হজ পালন শেষে রাতের ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন। জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ করে ফিরছেন। অবশ্যই অনেক খুশি লাগছে। কিন্তু খারাপ লাগছে চুল নিয়ে এতো সিরিয়াস মানুষটাকে চুল ছাড়া কাল দেখবো কিভাবে। হয়তো এই টেনশনে প্রচন্ড টায়ার্ড শরীর নিয়েও ঘুম আসছেনা। হয়তো বাপের একমাত্র মেয়েরা এমনি হয়। হামি তুলতে তুলতে চোখের কোন বেয়ে পানি পরে কিন্তু চোখের পাতা এক হয়না..... .
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:২৭