শেষবারের মত কি তাকে একবার কল করে দেখবো? শেষবারের মত তার কন্ঠটা একবার শুনে নেই। আর কোনদিন শোনা হয় কি নাহয়। ভাবতে ভাবতেই জানালার গ্রিলটা ধরে দাড়ালো মায়ান্তী। অমনি অঝোরে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টি মেয়েটার ভীষণ প্রিয়। মায়ামাখা আলতো রোঁদকে ফাঁকি দিয়ে মাঝে মধ্যে অল্প কিছু বৃষ্টি যখন ধরনীকে ছুয়ে দিয়ে যায় তখন রোদে পোড়া মাটি তাকে একটা চমৎকার সুবাস ছড়িয়ে বরণ করে নেয়। আর সেই সোদা মাটির সুবাসটাই খুব প্রিয় মায়ান্তীর। প্রথম বর্ষার আগে কদম ফুলের সুবাস, বৃষ্টির শব্দ, বৃষ্টির সাথে মাখানো হিমহিম বাতাস, বৃষ্টি ভেজা মেঠোপথ, বৃষ্টির গান, সব পছন্দ তার ; সব। কেবল পছন্দ না বিদ্যুৎ চমকানো। আকাশ থেকে নেমে আসা সেই আলোর ঝককানিকে প্রচন্ড ভয় পায় মেয়েটি। রাতের বেলা ধোঁয়া ওঠা কফির মগ নিয়ে যখন বৃষ্টির সৌন্দর্য বিভোর চোখে দেখতে ব্যালকনিতে বসতো মেয়েটি। আর চিন্তা করতো কোন একদিন তার পছন্দের মানুষটার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে সে। হুড নামিয়ে রিক্সায় ঘুরবে। প্রচন্ড বাতাশে একগুচ্ছ চুল তার মুখে এসে আছড়ে পরবে, আর সেই মানুষটা...সেই মানুষটা আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে কপালে চুম্বন একে দেবে। মায়ান্তী লজ্জায় চোখ মেলাতে পারবেনা মানুষটার সাথে। কিন্তু আনন্দ আর ভালোলাগায় তার চোখ ভরে আসবে। তারপর অশ্রু লুকানোর ছলে অন্য দিকে তাকিয়ে বলবে চলো কোন টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাই। আর সেই চায়ের কাপে টুপটাপ বৃষ্টির পানি পরে চায়ের রং হালকা হতে থাকবে। আচ্ছা বৃষ্টির পানি মিশিয়ে চা খেতে কেমন লাগে? খাওয়া হয়নি কখনো। সেইসাথে বলাও হয়নি কোনদিন কাউকে এই ইচ্ছাগুলোর কথা। কারো জন্য সে ইচ্ছা গুলোকে আজো বাচিয়ে রেখেছে। ইচ্ছা পূরণ করা মানুষটা যেন সারাজীবন তার পাশেই থাকে সেইরকম একটা মানুষ খুঁজছে সে৷ জীবন মেলায় অনেক মানুষই তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। দুইএকজনকে নিয়ে সেও মনে মনে স্বপ্ন বুনেছে, কিন্তু কাউকে দেখে মনে হয়নি এই মানুষটাই সে ইচ্ছা পূরণকারী। ভাবনার ভেলায় ভাসতে ভাসতে সে ভুলেই গিয়েছিলো কফির মগটা শূন্য হয়ে গেছে। আবার একমগ কফি বানিয়ে ফুল ভলিউমে "আজ এই আকাশ কালো হয়ে " গানটা ছেড়ে ব্যালকনিতে এসে বসলো মায়ান্তী। গানটাতে মহাদেব সাহার কবিতার পার্ট টুকু খুব ভালো লাগে তার। যেন তাকে নিয়েই লিখা..
বড় একা আমি
নিজের ছায়ার মত
শুন্যতার মত
দীর্ঘশ্বাসের মত
নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মত
নির্জন নদীর মত
বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত
মৌন পাহাড়ের মত
আজীবন সাজাপ্রাপ্ত, দণ্ডপ্রাপ্ত
আসামীর মত
বড় একা আমি
বড় একা!
আসলেই বড় একা মেয়েটি। ভালোবাসার মানুষটাকে সেতো বুঝে ঠিকই কিন্তু মানুষটা তাকে বোঝেনা। আর তাই নিজের অনুভূতি বোঝাতে ব্যর্থ মায়া তার স্বপ্নের কথা গুলো বলার সাহস করেনি আজো। কখনো বলেনি কেনো প্রথম বৃষ্টির দিন তুমি আমার হাত ধরে হাটোনি। বলেনি বৃষ্টিতে বাইকে নয় তোমার হাত ধরে হাটার ইচ্ছা ছিলো, কোন একটা লোকাল বাসে চড়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে অজানায় হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। তারপর শহর থেকে একটু দূরে গিয়ে নেমে বৃষ্টিতে ভিজে তোমার ঠোঁটে চুম্বন একেঁ দেয়ার ইচ্ছা ছিলো। বলেনি কোনদিন, বিদ্যুৎ চমকালে আমি আমার মায়ের রুমের সামনে গিয়ে সারারাত দাড়িয়ে থাকতাম কারণ আমাকে জড়িয়ে ধরার কেউ ছিলোনা। কোনদিন রাতে যদি বৃষ্টি নামে তুমি আমাকে পাশ ফিরে জড়িয়ে ধরো। আমার দুকানে হাত দিয়ে চেপে রেখো যেন আমি বিকট শব্দে চমকে না উঠি। না বলা কথা গুলো হয়তো আর কোনদিন বলা হবেনা। মানুষকে জোর করে কিছু করানো যায়না সেইটা সে বুঝে গেছে। কেউ নিজ থেকে এসে তার স্বপ্ন জানতে চাইবে, আর সে মনে মনে ভাববে "আরে এতো স্বপ্নের মতন লাগছে" এই আশাকে সে গলাটিপে হত্যা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর তাই আজ সে সব আশা স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে চলে যাচ্ছে বহুদূর। কিন্তু বেহায়া মন তবুও শেষবারের মত তার কন্ঠ শুনতে চায়। আচ্ছা,শেষবারের মত তাকে একবার কল করে দেখবো? শেষবারের মত ঐ আলোহীন ল্যাম্পপোষ্টের রাস্তাটা ধরে একবার হাটবো? শেষবারের মত আকাশের চাঁদটার দিকে একবার তাকাবো? কিন্তু আজ তো পূর্নিমা নয়। আমাবস্যার রাত!