*** লেখায় অনেক বড় একটা গ্যাপ পড়ল। কোন কারন নেই, নিতান্তই অলসতা। সেটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। লেখা ড্রাফটে ছিল কয়েক মাস। তাই লেখাটি পড়ার সময় পাঠকের সময়ের গ্যাড়াকলে পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ!
গত অগাস্টে যখন কানাডা (পড়তে হবে 'খ্যানাডা' !!) আসি, তখনও এখানকার আবহাওয়ায় ঠান্ডার তেজ ছিল না। যদিও আমার কাছে বেশ ঠান্ডা লাগত। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি আসার কিছুদিন পরই ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তে থাকে। সবাই বলল, আমি নাকি বাংলাদেশ থেকে ঠান্ডা সাথে করে নিয়ে এসেছি। আরে ভাই, আমি ঠান্ডা আনব কোথা থেকে! আমি এসেছি বাংলাদেশ থেকে - অগাস্ট মাসে বাংলাদেশ হয়ে আছে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। আমি সাথে করে গরম নিয়ে আসতে পারি, ঠান্ডা নয়।
এই দেশে আসার পর প্রচন্ড জেট ল্যাগে পড়লাম। বিকাল বেলা ভয়ংকর রকম ঘুম আসে, ঘুম থেকে উঠি রাত ৩ টায়। এদিক ওদিক হাটাহাটি, আর ল্যাপটপ গুতাগুতি করি, কফি বানাই - এভাবেই সময় পার করতে হয়। আবার দুপুর ১২টার দিকে চোখ ভার করে ঘুম আসে।
খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার কোনকালেই সমস্যা ছিল না। সাদা ভাত, কোন কিছুর ঝোল আর একটু ডাল হলেই মজা করে খেয়েছি। কিন্তু এখানে এসে দেখা গেল বার্গার, মিল্কশেকের উপরেই আছি। সকালে একটু পাউরুটি, কফি - ব্যাস নাস্তা শেষ। আর বেশীর ভাগ দিনতো নাস্তাটাই করা হয় না।
নাস্তার পর বসি "সরকারি" কাজ নিয়ে।
সরকারি কাজ বলতে কোন চাকুরীর কথা বলছি না

এখানে আর একটা ব্যাপার বলি - কানাডাতে সরকার আর রাজ্য দুটি আলাদা জিনিস। উদাহরন: কানাডা একটি দেশ (সরকার), কিন্তু কানাডার ভেতর ওন্টারিও একটি প্রভিন্স (রাজ্য)। যদি এভাবে দেখি: বাংলাদেশ একটি দেশ, ঢাকা একটি রাজ্য (বিভাগ)। তবে এখানে যেভাবে দেশ ও রাজ্যের পার্থক্য চোখে পড়ে, বাংলাদেশে কখনও দেশ আর বিভাগের পার্থক্য দেখি নি।
যেমন আপনি গ্রীন কার্ড পাচ্ছেন - সেটা আপনাকে দেবে কানাডা (দেশ)। আর আপনি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন - সেটা আপনাকে দেবে আপনি যে রাজ্যে আছেন, সে রাজ্য (ওন্টারিও)। যেহেতু আমি ওন্টারিও তে আছি, আমাকে ওন্টারিওর আইডি বানাতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সও একই নিয়ম। আপনি যেখানে থাকবেন, সেই রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। যেকোন লাইসেন্স দিয়ে আপনি কানাডার সব জায়গায় গাড়ী চালাতে পারবেন।
আমি আইডি বানাতে চলে গেলাম সার্ভিসওন্টারিও তে। তাদের অফিস ছিমছাম, চুপচাপ। কাউন্টার থেকে একটা টোকেন নিয়ে বসলাম। খুব একটা ভিড় ছিলনা, ১০ মিনিটের মাঝেই আমার নম্বর আসলো। বুথে গিয়ে বললাম, আইডি বানাতে এসেছি, মহিলা আমার পাসপোর্ট আর ইমিগ্রেশনের কাগজ দেখল, তার পর আমার ছবি তোলা হলো। এই আইডি বানাতে আমার খরচ লাগল ৩৫ ডলার। ঠিক ১৫দিন পর বাসার চিঠির বাক্স খুলে দেখি, সার্ভিসওন্টারিও থেকে মোটা একটা চিঠি, ভেতরে আমার ওন্টারিও আইডি।
নিজের ছবিটা যা উঠেছে না, দেখে মনে হচ্ছে দাগী আসামী, জেলে ঢোকানোর আগে ছবি তোলা হয়েছে।
সার্ভিসওন্টারিও
৫ সেন্ট ------ ১০ সেন্ট ------ ২৫ সেন্ট ------ ১ ডলার ------ ২ ডলার
২৫ সেন্টকে বলা হয় কোয়ার্টার
১ ডলারকে বলা হয় লুনি
২ ডলারকে বলা হয় টুনি।
এই লুনি-টুনি নিয়ে একটা মজার গল্প শেয়ার করি। আমি একদিন কফিশপে বসে আছি। বেকার মানুষ তাই ছন্নছাড়ার মতো হাটাহাটি আর কফি খাওয়া ছাড়া তেমন কোন কাজ ছিলনা। কফি খাচ্ছি আর পকেট থেকে পয়সা গুলো বের করে দেখছিলাম (উপরের ছবিটি তখনই তোলা)। হয়ত আমাকে পয়সা নিয়ে এত গবেষনা করতে দেখে কিনা জানি না - পাশ থেকে একজন স্বর্নাকেশী মহিলা আমাকে বলল "আরে তুমি এত টাকা পয়সার মালিক?" আমি সব সময়ের মত ভদ্র-লাজুক ভাবে মাথা নেড়ে বললাম "আসলে আমি এখানে নতুন, তাই একটু ভালভাবে দেখছিলাম। তবে আমি এটা বুঝতে পারছিনা কোনটাকে লুনি আর কোনটাকে টুনি বলব? ১ ডলারকে নাকি ২ ডলারকে?" । উনি তখন আমার কাছে এসে বললেন "সবচেয়ে সহজ উপায়টা হলো এভাবে মনে রাখা - ২ডলার কে টুনি বলা হয় - কারন ২ ডলারে দুটো রং আছে () ।" আমি দেখলাম আসলেই তো তাই। ২ ডলার টি রুপা আর সোনালী রং দিয়ে বানানো। ১ ডলারে শুধু সোনালী রং। তারপর উনি কেমন লাগছে, কোথায় আছি - টুকটাক কথাবার্তা, যে যার পথে হাটা।
তার শেখানো এই বুদ্ধির জন্য এখন আর ভূল হয় না।
ওন্টারিও ফটো আইডি (ক্রেডিট কার্ডের মত)
বাসার পাশেই একটি স্কুল
তার সামনেই বাগান
বাগানের উপর লেখা: "এই বাগানের শাকসবজি প্রদর্শনের জন্য কেবল। শাকসবজি ফলানোর পর সেগুলো খাদ্য ভাগে দান করা হবে। "
পুরোনো একটা গির্জা
বাইরে যাওয়ার দরজা

নিজের তোলা খুব প্রিয় একটা ছবি
"এই মেঘলা দিনে একেলা/ ঘরে থাকে না তো মন"
এক মুঠো তুষার
একটা ব্যাপার বলি, অনেকেই এই ধরনের ব্লগ দেখে ভাবেন "কি সুন্দর, যদি একটু যেতে পারতাম" - কোন সন্দেহ নেই কানাডা একটি সুন্দর দেশ। সাথে এটাও মনে রাখতে হবে, কানাডা আসলেন মানেই যে স্বর্গে এসে পড়লেন, তা কিন্তু নয়। কেউ মুখে তুলে কিছু খাইয়ে দেবে না। আপনার ঘরের সামনে কেউ টাকার একটা গাছ লাগিয়ে যাবে না। আপনি জানালা দিয়ে টাকা ছিড়ে ছিড়ে আনলেন, আর আয়েশ করলেন - এটা কখনই কখনই হবে না।
মাথার ঘাম পায়ে পড়ে কিনা জানি না। হাড় ভান্গা খাটুনি কেউ খাটে কি না এটাও জানি না। তবে এটা জানি পরিশ্রমের কোন বিকল্প এখানে নাই। আপনি সপ্তাহে ৬০ ঘন্টা কাজ করবেন। সপ্তাহ শেষে বেতন পাবেন। বেতনের একটা বড় অংশ জমাবেন। ১০ বছর পর দেখবেন আপনিই মালিক। কিন্তু কাজ নিয়ে নাক সিটকাতে পারবেন না। এখানে কাজের ভেদাভেদ নাই।
আমি এমনও দেখেছি বউ হাসপাতালের বড় ডাক্তার - আর জামাই ট্রাক চালায়। বউ মাসে কামায় ৭ লক্ষ টাকা, জামাই কামায় ট্রাক চালায়েই কামায় ৩ লক্ষ টাকা
কাজের কোন ভেদাভেদ নাই। এটা মনে থাকলে সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবেন অনেক সহজে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৬