somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ আছেন, মানুষ মরলে ক্ষতি কি !

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ আছেন, মানুষ মরলে ক্ষতি কি !
কয়েছ আহমদ বকুল


মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে আজ ৭ই নভেম্বর শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া বা মূলধারার সংবাদ মাধ্যম কোথাও নেই দীপন, অন্তত আমি খুঁজে পাইনি। সাত দিন আগে গত ৩১শে অক্টোবর শাহবাগের আজীজ সুপার মার্কেটে নিজ কার্যালয়ে জাগৃতি প্রকাশনের কর্ণধার ও লেখক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মাত্র সাত দিনে আমরা এখন অন্য ঈস্যুর খুঁজে।

দুর্বৃত্ত! এই শব্দটি বলতে আমি নারাজ। দীপন কি দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হয়েছেন? আহমেদুর রশীদ টুটুল, রনদীপম বসু ও তারেক রহিম কি দুর্বৃত্তের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন? রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিক বাবু, অনন্ত বিজয়, নীলাদ্রি চক্রবর্তী এরা কি দুর্বৃত্ত কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন? না, প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে দিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করা হয়েছে। আক্রান্তদের তালিকা তৈরী করে তা পাবলিকলি প্রকাশ প্রচার করে তারপর আক্রমণ করেছে তারা। এই 'তারা' কারা তাতো আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। এই 'তারা' হচ্ছে বাংলাদেশের উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ মাওলানা মুফতিরা। যে মৌলানা মুফতিরা ধর্মের বিজ্ঞান সম্মত সমালোচনাকারিদেরকে কতল বা হত্যা করা ওয়াজিব বা অবশ্য করনীয় বলে ঘোষনা দিচ্ছে তারা তো সর্বজন পরিচিত, সরকার সমাদৃত। বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত ভুল শিক্ষার মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা আর জঙ্গীবাদের তালিম দিয়ে যাচ্ছে তারা। তাহলে সেই পরিচিত খুনিচক্রকে ধর্মের অপব্যাখ্যারিদেরকে কেবল দুর্বৃত্ত অন্তত বলা চলে না।

ব্যক্তিগত ভাবে কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই। ধর্ম বিষয়ে আমার লেখাপড়া বা গবেষনা খুবই কম। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখজনক ভাবে লক্ষ করছি প্রায় ১৪ কুটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে হাতেগুনা মাত্র কয়েক হাজার উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীগুষ্টি ধর্মের নামে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে যে অধর্ম করছে তা সামগ্রিক ভাবে সব মুসলমান মেনে নিচ্ছে কিভাবে বা কেন? ইসালম ধর্মের নাম করে প্রকাশ্যে যে হত্যা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বাংলাদেশে একজন সত্যিকারের মুসলমান তো তার প্রতিবাদ করার কথা, এভাবে ইসলামকে কুলষিত করার প্রক্রিয়াকে সর্বপ্রথমতো মুসলমানরাই প্রতিহত করা উচিৎ কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে সে তৎপরতা তো দেখা যায়না। তাহলে কি বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনীময় অর্জিত আমাদের লালসবুজ পতাকার মর্যাদা রক্ষায় আমরা ব্যর্থ, মননে আমরা আর বাঙ্গালী নই, রক্তে বীর্যে আমরা তালেবান হতে চলেছি! আমাদের সোনার বাংলা কি তবে আফগান পরিণতির দিকে এগুচ্ছে!

৩১ অক্টোবর নিহত হয়েছেন দীপন, পুরো জাতিকে স্তম্বিত করে কান্নার্ত ক্লেশাকুল করে কাদোঁ কন্ঠে তাঁর শিক্ষাবিদ পিতা বলেছেন তিনি তাঁর সন্তান হত্যার বিচার চান না, তিনি চান সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। হায় শুভ বুদ্ধি! সরকারের গেঁয়ো মন্ত্রী মাহবুবুল আলম হানিফ বললেন হত্যাকারীরা দীপনের বাবার আদর্শের লোক।

রে হানিফ, অনির্বাচিত সরকারের রে হাম বড়ো মাতাল মন্ত্রী সময়টা এখন তোমাদের, তোমাদের মতো অশিক্ষিত নাপাক মনের সরিসৃপরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ট, তোমাদের মতো ধর্মান্ধ জারজরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসেই এদেশে উগ্র ধর্মীয় জঙ্গী জাহেলদেরকে প্রতিষ্টিত করেছ। নপুংশক রাজনীতির কারনেই এই হত্যাকারিদের অবাধ বিচরণ ভূমি হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচন করেছিলো যে রাজনীতিবীদেরা সেই দালাল গোত্রীয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের অনেকেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই ২০১৩ সালে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পা ধরে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসাবে তাকে ব্যবহারের জন্য রাতের আঁধারে বারবার তার বাসায় গিয়েছিলো। সুতারাং পরিষ্কার বুঝা যায় দীপনের বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক নয় হত্যাকারীদের আদর্শের সাথে সরকারেরই অনেকের আদর্শগত অনেক মিল আছে।

১৮ এপ্রিল ২০১৪ কক্সবাজারের এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শাহ শফী বলেছিলেন 'নাস্তিকরা তোমরা মুরতাদ হয়ে গেছো, তোমাদেরকে কতল করা আমাদের ওয়াজীব হয়ে গেছে'।পরদিন দেশের প্রায় সব দৈনিকে শফী মাওলানার এই ঘোষনা আসে। জানতে বড়ো ইচ্ছে করে মানুষ হত্যার এতো বড়ো একটা ঘোষনা শুনার পর সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছিলো। কেন পদক্ষেপ নেবে সরকার? এই একই সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশ্যে ঐ ধর্মগুরু বলেছিলেন 'আমরা তোমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গালি দেই নাই, শুধু শুধু আমাদের দিকে চোখ বড় করে তাকাও কেন? সরকার আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই'।


শফী হুজুরদের দিয়ে সরকার বা আওয়ামীলীগের ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই। শেখ হাসিনাকে তারা গালি দেয়নি সুতারাং আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ। তাহলে সরকার শুধু শুধু কেন হত্যাকারিদেরকে সমূলে উৎখাত করতে যাবে, আঘাত করতে যাবে! সাধারণ মানুষ বা জঙ্গীনেতা শফী হুজুরের ভাষায় নাস্তিকরা মরছে মরুক তাতে সরকার বা আওয়ামীলীগের ক্ষতি কি?






৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×