আওয়ামীলীগ, তোমাকে নিশ্চিহ্ন হতে দেবনা
কয়েছ আহমদ বকুল
--------------------------------------------------
আওয়ামীলীগ হারলে আমরা হারি, মোটা দাগে এদেশের সাধারণ নিরীহ শান্তীপ্রিয় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষগুলো হারে। আওয়ামীলীগ জিতলে জেতে গুটিকয় হাতেগুনা নেতা আর সাময়িক ক্ষমতা লোভী পাতিনেতা। আওয়ামীলীগ বারবার তার ত্যাগি লড়াকু নেতাকর্মীকে অপমান করে অবহেলা করে প্রয়োজনে জেল জুলুম নির্যাতন অতঃপর দেশছাড়া করে। এসব পুরান কথা। নতুন করে এসব আলোচনায় বাক্যব্যয় নেহায়েতই বোকামি, এ লেখার উদ্দেশ্য তা নয়। কোথায় যাচ্ছে আওয়ামীলীগ, নিশ্চীত পতনের পথে কারা নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগকে? এই মারাত্মক প্রশ্নটা যখন মগজের আয়ু খায় কলম হাতে উঠে আসে অজান্তে।
আওয়ামীলীগ কি একটি কট্রর ধর্মীয় রাজনৈতিক সংঘটন হতে চলেছে? এই প্রশ্নটা আজকাল ক্ষুরে খা্য খুব। হয় হোক, ঠিকে থাকার লড়াইয়ে নিজের মৌলিকত্বকে অবলীলায় বিলিয়ে দিয়েও যদি আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পারে মন্দনা। কিন্তু এতে করে কি আওয়ামীলীগের শেষ রক্ষা হবে? এটা কি আসলেই ঠিকে থাকার কোন সঠিক পথ বা কৌশল?
লতিফ সিদ্দীকি একজন মুসলমান ঘরের মানুষ, তিনি নিজেও নামাজ কালাম করেন বলে জানি, হ্বজও করেছেন। আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের একজন। কাকে খুশী করার জন্য ঠিক কি অপরাধ করার জন্য আজ লতিফ সিদ্দীকিকে সামাজিক রাজনৈতিক ভাবে চরম অধঃপতিত করা হচ্ছে? এই বয়োঃবৃদ্ধ মানুষটির সাথে তার পুরো পরিবার কি রাষ্ট্রীয় ভাবে অপমানিত হলোনা? আওয়ামীলীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিকদল। এই দলটির একজন নেতা একটি বিশেষ ধর্মের নির্দিষ্ট একটি অনুষঙ্গ বিষয়ে যদি তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করেন আওয়ামীলীগের অনুশাসন অনুযায়ি সেটাতো অপরাধ নয়। তাহলে মন্ত্রীত্ব যায় কেন তাঁর? গেলই বা না হয় মন্ত্রীত্ব, লোকটিকে জেলেও পুরতে হবে! শুধু তাই নয় তাঁর সংসদ সদস্য পদটা পর্যন্ত কেড়ে নিতে হবে।
প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের হাতে বাংলা একাডেমী বইমেলায় নিহত হলেন অভিজিৎ রায়। নিহতের পিতাকে অনানুষ্টানিক শান্তনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আনুষ্টানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া আসলো না কেন প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বললেন সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলমানের দেশে একজন ধর্ম বিদ্বেষি এভাবে নিহত হওয়াতে আনুষ্টানিক প্রতিক্রিয়া জানানোতে সমস্যা আছে। জনাব জয়রা ভুলে যান আসলে ধর্মীয় উগ্রতা আর ধর্মের নামে সন্ত্রাসী, এক সাথে ৬৩ জেলায় বোমা, বাংলা ভাই - শায়েখ আব্দুর রহমানদের উত্থানের বিপরীতেই এ দেশের সংখ্যাঘরিষ্ট মানুষ কিংবা জয়ের ভাষায় সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলমানই ২০০৯ সালের নির্বাচনে আাওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিলো। আসলে কোন ভাবেই আমাদের দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে উগ্র বা অসহিষ্ণু ভাবার কোন অবকাশ নেই। বরং আমাদের অবস্থান বরাবরই এর বিপরীতে। সরকার বা আওয়ামীলীগের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার কেন এরকম তথ্য সরবরাহ করার চেষ্টা করা হয় বোধগম্য নয়।
অনলাইন এক্টিবিষ্ট বা ব্লগার আজকাল আমাদের দেশে ঢালাও ভাবে নিহত হচ্ছেন। মানুষ হত্যাকারী কোন ভাবেই অন্তত একজন মুসলমান হতে পারেনা। আমি অন্তর মন থেক বিশ্বাস করি যে বা যারা ধর্মের যুক্তি দেখিয়ে মানুষ হত্যা করছে তাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ধর্ম রক্ষা নয়। আমাদেরকে আশ্চর্য্য হতে হয় যখন দেখি আমাদের প্রশাসন বা সরকার প্রায় হুবহু সেই খুনি চক্রের ভাষায় তাদের কার্যক্রমকে সমর্থন করে প্রায় বলেন ধর্ম নিয়ে ব্লগাররা যেন বাড়াবাড়ি না করেন, বাড়াবাড়ি করলে এমন পরিণতিই হবে।
ব্লগার হত্যার ফতয়া যারা দিয়েছে প্রকাশ্যে, সরকার তাদের চেনে, তাদের হুমকিতেই লতিফ সিদ্দীকির মন্ত্রীত্ব যায় জেল হয়, এরাই অন্য নামে অন্য রুপে ৬৩ জেলায় বোমা ফাটিয়ে ছিলো, এরাই শায়েখ আব্দুর রহমানের অনুসারী, এরাই সরকার পতন করে ক্ষমতায় যাবার লোভে শাপলা চত্বরে এসেছিলো। আওয়ামীলীগ এতো অসহায় তুমি আজ, এই সামান্য চক্রটিকে তুমি সমিহ করে চলতে হচ্ছে । তুমি ভুলে যাচ্ছ আওয়ামীলীগ তোমার মুল শক্তি কিন্তু অন্যত্র, তোমার মূল শক্তি কিন্তু স্বাধীনতা - গনতন্ত্র - লালা সবুজ - এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ জেলে কৃষক কামার কুলি মজুর। মূল স্রোতের বিপরীত যাত্রা তোমার জন্য বিপদজনক হবে আওয়ামীলীগ। তোমার বিপদ মানে রাষ্ট্রের বিপদ। তোমাকে বিপদগ্রস্থ হতে দেয়া যাবেনা।
এদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আসে এবং হারিয়ে যায়, আওয়ামীলীগ ও নিশ্চিহ্ন হবার পথ ধরে এবং আবার গুরে দাঁড়ায়। নিশ্চিহ্ন হতে হতে গুরে দাঁড়াবার প্রক্রিয়াটা খুবই কষ্টময় বেদনাদায়ক। নিশ্চিহ্ন হতে হতে আওয়ামীলীগ গুরে দাঁড়ায় কারণ বাংলাদেশের মানুষ জানে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামীলীগ তিনটি অভিন্ন শব্দ। মানুষের এই আবেগের ভুল ব্যবহার আবার শুরু করেছে আওয়ামীলীগ, আমার নিজেকে নিশ্চিহ্নের পথে ঢেলে দিয়েছে তারা। যদিও সত্য জানি অভিমানি মানুষগুলো তোমাকে নিশ্চিহ্ন হতে দেবেনা আওয়ামীলীগ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০৩