আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমা করা যায়না?
এই লেখাটা শুরু করতে আমার হাত কাঁপছে, হ্যাঁ ভয় পাচ্ছি। আওয়ামীলীগ এখন একটি সংবেদনশীল শব্দ, একটু আগে জানলাম সাংবাদিক প্রবীর শিকদার গ্রেফতার হয়েছেন। এটাও আওয়ামীলীগের সংবেদনশীল মানষিকতারই পরিচয় বহন করে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের চেয়ে আওয়ামীলীগকে বেশি ভালোবাসেন এমন একজন মানুষও বর্তমান আওয়ামীলীগে নেই। একজন ব্যক্তির সমালোচনা করে শ্রীমান শিকদার আজ শ্রী ঘরে অথচ আওয়ামীলীগের মূল নীতি নৈতিকতা ও আদর্শকে তিনি কিভাবে ধারন করেন তা তাঁর ঘনিষ্টরা ভালো জানেন। তাই আওয়ামীলীগকে নিয়ে কিছু লিখতে ভয় হওয়াটাই স্বাভাবিক, প্রবীর শিকদারের মতো আওয়ামী ঘরানার সাংবাদিক যদি নব্য আওয়ামীলীগারদের ক্ষমতার অপব্যবহারে কারান্তরিণ হতে পারেন আমরা তবে ছাঁই না মূলা। ভয় ডরকে জয় করে এই লেখাটা তবু লিখতে হবে, লিখতে হবে কারণ আওয়ামীলীগ একটি সংঘটন মাত্র আর বঙ্গবন্ধু মুজিব মানে বাংলাদেশ। আওয়ামীলীগ নামের ঐতিহ্যবাহি সংঘটনটি হয়তো একদিন কারো কারো স্বেচ্চাচারিতা দূর্নীতি আর অপশাসনের বলি হয়ে হারিয়ে যেতে পারে, ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হয়ে যেতে পারে কিন্তু বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অস্থিত্বের সাথে মিশে থাকবেন চিরকাল, লাল সবুজ পতাকায় পতপত করে উড়বেন মুজিব, আমার সোনার বাংলা' অমিয় বাণীতে চিরকালই লেগে থাকবে মুজিবীয় সুধা। সুতারাং সুযোগ সন্ধানী, ক্ষমতা লোভী, চাঁদাবাজ, স্বঘোষিত খ্যাতি লোভী বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের অশুভ খপ্পর থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা রক্ষার মানসে এই লেখটি লেখা।
শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি আওয়ামীলীগের প্রধানও। কিন্তু আমাদের কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি জাতির জনকের কন্যা। কোন ক্ষমতাই চিরস্থায়ি নয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকি তাঁর এবারকার ক্ষমতাকালীন সময়ে আমাদেরকে আওয়ামীলীগ সহ বহু সংঘটন গুষ্টি দল কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদা করার হাত থেকে রক্ষা করতে একটি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেননা?
বঙ্গবন্ধু কি কেবল আওয়ামীলীগ আর তার অঙ্গ সংঘটন গুলোর নেতা? প্রশ্নটা কাকে করবো, কে জবাব দেবে? আওয়ামীলীগ ভুলে যায় কেন পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত আওয়ামীলীগই ক্ষমতায় এসেছিলো, পনের আগষ্টের পর কোথায় ছিলো আওয়ামীলীগ? দেশ জুড়ে কেঁদেছিলো, বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলো যে কুটি কুটি মানুষ তারা তো আওয়ামীলীগ ছিলো না, তারা ছিলো এই দেশের সরল সাধারণ জনগন। আজ তবে ফি বছর পনেরও আগষ্ট আসলেই শোক দিবস পালনের নামে সেই সাধারণ মানুষ গুলোর কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে শোকোৎসব পালনের দ্বায়িত্ব আওয়ামীলীগকে কে দিলো? বিরানীর প্যাকেটে আজ বনঙ্গবন্ধুর ছবি, চাঁদা না পেয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসের শিকার ছাত্ররা আজ হাসপাতালে, শোকের দিনে আজ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, বঙ্গবন্ধু মুজিবের ছবি আজ কালো টাকার মালিক আর গডফাদারদের বড়ছবির পোষ্টারের এক ছোট্ট কোনায়। কিন্তু কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তোবা ট্যাকনিকাল কারণে ইনু সাহেবদের মতো পচাত্তরে উল্লাসকারিদেরকে তাঁর মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়েছেন, হয়তোবা একই কারণে পনের আগষ্ট পচাত্তর পরবর্তি সরকারের কাউকে কাউকে তিনি আওয়ামীলীগের এম পি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সে সব নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। আমরা নেতা হারিয়েছি, জাতির পিতা হারিয়েছি কিন্তু তিনি হারিয়েছেন তাঁর নিজের জন্মদাতা পিতা । আমাদের চেয়ে যন্ত্রণা কষ্ট নিশ্চয়ই তাঁর বেশি। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলে সরকারের প্রচ্ছন্ন পৃষ্টপোষকতায় শোকদিবসের নামে চাঁদাবাজী হবে, যত্রতত্র যতেচ্ছ ব্যবহার হবে বঙ্গবন্ধুর ছবি নাম সেটা কি মেনে নেয়া যায়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বুঝা উচিৎ আমরা যাঁরা ক্ষমতাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের সুযোগ সন্দানী আর সুচতুর সাময়িক নেতাদের কারণে আওয়ামীলীগ থেকে দেশ থেকে দূরে থাকি আমাদের আদর্শ আর চেতনা জুড়ে যখন আর আওয়ামীলীগ থাকে না থাকেন কেবল বঙ্গবন্ধু তখন বঙ্গবন্ধুর এমন অমর্যাদা আমাদেরকে আহত করে, ইচ্ছে করে চিৎকার করে প্রশ্ন করি - আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমা করা যায় না?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:০৪