somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী-পুরুষ সমান না কেনো?

২১ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“হে মানুষ জাতি তোমাদেরকে আমি এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন সমাজ ও জাতিতে ভাগ করেছি, যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি আল্লাহ-সচেতন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব বিষয়ে সচেতন”।

আল্লাহ এর কাছে বিচার করার যে মানদন্ড আছে সেটা কোন লিঙ্গ নয়, গায়ের রং নয়, বয়স নয়, ধন-সম্পত্তি নয় সেটা হলো তাকওয়া।
মহান আল্লাহ তার বান্দাকে সবথেকে বেশি মর্যাদা দেন তার তাকওয়া মেনে চললে, ন্যায়-নিষ্ঠতা এবং ধার্মিকতা মেনে চললে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তিনি মানুষের গায়ের রং ও ভাষার মধ্যে বৈচিত্র্য দিয়েছেন যাতে করে জ্ঞানীরা বুজতে পারে এটা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা। সূরা রুম, সূরা নং ৩০, আয়াত নং- ২২ “তাঁর মহিমার নিদর্শন হচ্ছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে”। এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা আমাদের পুরো মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একজোড়া নারী ও পুরুষ হতে, তারা হলেন আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সূরা ইসরাইল, সূরা নং ১৭, আয়াত নং ৭০-“নিশ্চয়ই আমি আদমসন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে জলেস্থলে চলাচলের বাহন দিয়েছি, দিয়েছি উত্তম জীবনোপকরণ। আমার অনেক সৃষ্টির ওপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি”। আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছেন হোক সে কালো, হোক সে সাদা, হোক সে নারী, হোক সে পুরুষ। তারা যে দেশেই জন্মক যেখানেই থাকুক তারা সবাই আদম সন্তান।



আর ইসলাম সর্ব ধাত্রীদের কথা বলার পাশাপাশি একে বারে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়। পৃথীবীর অনেক ধর্ম বা মানুষ বিশ্বাস করে যে না যে আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে মানবজাতির সৃষ্টি। আর কিছু কিছু ধর্ম বা মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে যে, আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে মানবজাতির সৃষ্টি। তবে অনেক মুসলিম বা অমুসলিমরা তারা বিশ্বাস করে যে, তারা হাওয়া (আঃ) কে দায়ী করে মানবজাতির পতনের কারণ, তারা এটাকেই আদি পাপ বলে সমার্থন করে। তারা বলে হাওয়া (আঃ) এর ভুলের কারণেই আদম (আঃ) কে বেহেস্ত থেকে আল্লাহ বের করে দিয়েছেন।

আমার কথা হলো মুসলিমদের নিয়ে তারা কতটা মুর্খ হলে এসব কথা বলে। আল্লাহ কোরআনে স্পর্শ ভাবে বলেছেন সুরা আরাফ, সুরা নং ৭, আয়াত নং ১৯ থেকে ২৭ আয়াত পর্যন্ত। তাদের ঘটনাটা পুরো এই আয়াতগুলোতে লিখা আছে। এখানে বলা আছে তারা একই সাথে দুজনই ভুল করেছেন, আবার দুজনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তাই দায়ভারটা তাদের দু’জনার উপর। তাই কোরআনের এমন কোন আয়াত নেই যে দায়ভারটা হাওয়া (আঃ) এর উপর একা পরেছে।
তবে হ্যা পবিত্র কোরআনে আরো একটি সুরা আছে নাম “তাহা সুরা নং-২০ আয়াত নং-১২০-১২১ শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। প্রলুব্ধ করে সে বলল, ‘হে আদম! আমি তোমাকে আমরত্ব ও অক্ষয় রাজত্ব দানকারী গাছের কথা বলব? তারপর তারা সে গাছের ফল খেল। তারা মুহূর্তে নগ্নতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠল। তখন তারা বাগানের গাছের পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতে লাগলো। আদম তার প্রতিপালকের নির্দেশ লঙ্ঘন বা অমান্য করল”। এই আয়াতে কিন্তু আদম (আঃ) কে দায়ী করা হয়েছে। ক’জন পুরুষ আছে এই আয়াত সম্পর্কে জানে আর জানলেও তারা কেনো বলেনা আদম (আঃ) দায়ী, হাওয়া (আঃ)কে কেনো দায়ী করে? তাহলে কি বলবো না নারীদের প্রতি কিসের এতো হিংসে পুরুষদের। আর যে বানী আল্লাহ নিজে বলেনি সেটা কেনো পুরুষরা বলে?



একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে এই সুরার আয়াতে কিন্তু আদম (আঃ) কে দায়ী করা হয়েছে হাওয়া (আঃ) কে নয়। তারপরও আমরা বলি ভুলটা দুজনই আছে। কিছু মুসলিম পুরুষ যারা নারীদের কে ছোট করার জন্য, নারীদের হিংসে করার জন্য এই সব বিবৃত ছড়ায়। পুরুষরা বলে ওদের পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত, পুরুষরা বলে আল্লাহ যদি বলতেন যে তার পরে কাউকে সিজদা করো তাহলে আমি বলে দিতাম স্বামীদের সিজদা করো! কত বড় শিরকি কথা আল্লাহ নামে ওরা বলে। তাহলে কি তারা মনে করে যে সৃষ্টিকর্তার উপরে টেক্কা দিয়ে ওরা পার পেয়ে যাবে। ওদের থেকে পালোয়ান পালোয়ানরাই তার সাথে টেক্কায় পারেনি আর তো ওরা ছোছা বিড়াল।

আর এই কথাগুলো বলার পরিনামটা আল্লাহ কি বলেছেন সেটা দেখে নেক ঐসব কাপুরুষরা। আল্লাহ বলেছেন- সুরা নিসা, সুরা নং ৪, আয়াত নং ৪৮-“আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করার মতো অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ-ছাড়া অন্যান্য অপরাধের জন্য যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহর সাথে যে শরিক করে সে মহাপাপ করে”। আরো একটি আয়াত সুরা নিসা, সুরা নং ৪, আয়াত নং ৫০ “দেখ! ওরা নিজেদের মিথ্যা কথাগুলোই কীভাবে আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দিচ্ছে! প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এইটা যথেষ্ট।”

পুরুষরা বলে ওদের জন্য নাকি ৭০টি পরি বেহেস্তে রেখে দিয়েছে। ঐসব বোকা পুরুষরা জানেনা যে পরি বলতে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করেননি শুধু মাত্র জীন আর ইসনাস ছাড়া। আর কোরআনে তো এরকম আল্লাহ কোন আয়াত নাজিলই করেননি। আল্লাহ অনেক আয়াতে বলেছেন সাথির কথা, সেসব সাথি যে কাউকেউ বুঝাতে পারে, হোক সে ছেলে হোক সে মেয়ে। কিন্তু ৭০টি পরি! এরকম আয়াত আমি সারা কোরআনের একটা জায়গাও পায়নি। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন- সুরা আল-ইমরান, সুরা নং ৩, আয়াত নং ১৯৫-“তারপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলবেন, আমি কোন সৎকর্মশীল নরনারীর কর্ম বিফল করি না। তোমরা একে অপরের পরিপূরক। তোমাদের সৎকর্মের পুরস্কার সমান।” তাহলে সমান হলে পুরুষেরা কি ভাবে ৭০টি পরি পাবে হায়রে মুর্খ পুরুষ।

পবিত্র কোরআন কি এমন কোন আয়াত আছে যেখানে আল্লাহ বলেছেন নারী-পুরুষ সমান নয়? কেউ কি দেখাতে পারবেন আছে কি এমন কোন আয়াত! নাই! যুক্তিটা অন্য রকম তাই না। অনেকেই বলেন ইসলাম নারীদের অনেক অধিকার দিয়েছেন, অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন। তাহলে আমি প্রশ্ন করবো, ইসলাম আর সমাজ কি আলাদা? কিন্তু আমি জানি কোরআনের বিধানই হলো সমাজ! তাহলে কেনো আলাদা হতে গেলো? কোরআন না হলে সমাজ গঠন হলো কিভাবে? তাহলে তো এই সমাজ রাখার কোন দরকার নেই যেখানে কোরআনের কোন বিধান মানছে না সমাজ, সমাজের মানুষ। তাহলে মুসলিম হওয়ার কি দরকার আছে?

ফিরে যাই তাহলে সেই বহুযুগ আগে। যখন মেয়েদের দূর্বল পেয়ে কিছু ইহুদী, খ্রিষ্টানরা মেয়েদের উপর বিষন ভাবে অত্যাচার করতো, মেয়েদের অমর্যাদা, অসম্মান করতো, মেয়েদেরকে মানুষ না ভেবে অভিশাপ ভাবতো। শুধু মাত্র সকল যুগের নবী (আঃ) এদের ছাড়া। সকল যুগের নবীগণরা নারীদের মানুষই ভাবতো। কারণ তারা জানতো নারী-পুরুষ সবাই সমান, তারা মানুষ এবং তারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সেরা। এই ব্যপারটা ইহুদীরা জানতো না কারণ ওরা ছিলো অন্ধ, ওরা তো মহান আল্লাহ তায়ালাকেই বিশ্বাস করতো না। তাহলে তার সৃষ্টিকে কি করে বিশ্বাস করবে।



এভাবেই আগাতে থাকে প্রচীন যুগ, মধ্য যুগ এবং আধুনিক যুগ থেকে এই পর্যন্ত। আজো সেই বহুযুগ আগের ইহুদী খ্রিষ্টানদের অনুসারীরা বেচে আছে। কিছু মুখোশধারী মুসলিমরা তারা যুগে যুগে নারীদের উপর অত্যাচার করে আসছে। নারীদের অন্যায় ভাবে মেরেছে, পা বন্দী করে রেখেছে ঘরে, ঘর-সংসার শত অত্যাচার সইতে হয়েছে একটা মেয়েকে। ঘর থেকে বের হতে দেয়নি, কোন মেয়েকে পড়া শুনা করতে দেয়নি। মেয়েদের চোখের সামনে বিয়ে করেছে ৩/৪টা। বোকা মুসলিম পুরুষরা ওরা কতটা বোকা ওদের দিয়ে ইহুদী খ্রিষ্টানরা কত বোকা বোকা কাজ করে নিয়েছে। ওদের কত ভাবে বুঝিয়েছে আর মুর্খ বানিয়েছে তোমরা কোরআনকে অনুসরণ না করে আমাদের কে অনুসরণ করো। বোকা মুসলিমরা তো কিছুই জানতো না। আল্লাহ বলেন এক কাজ করতে আর বোকা মুসলিমরা করে আরেক কাজ ইহুদীদের মতো করে এসেছে। আল্লাহ বলেছেন লানত ঐসব মানুষের উপর যারা আমার আয়াত আমার নিদর্শন অমান্য করে।

বোকা মুসলিমরা কত বড় বোকা দেখুন এবার তার একটা বড় প্রমান দেখাই। পুরুষদের চার বিয়েয় ব্যপার নিয়ে। পুরুষরা মনে করে যে ওরা নাকি চার বিয়ে করতে পারবে। আরে বোকা পুরুষরা এটা তো কোন সাধারণ পুরুষদের বেলায় বলেনি। কোরআনে কিছু কিছু আয়াত সেটা তখনকার মানুষদের জন্য বলেছিলেন। কোরআনে স্পর্শ ভাবে বলা আছে দেখুন সূরা নিসা, সূরা নং ৪, আয়াত নং-৩ “আর যদি ভয় হয় যে, মেয়ে এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না; তবে বিয়ে করে নেও তাদের মধ্য হতে দুই, তিন, অথবা চারজন করে তোমাদের পছন্দ মতো; তবে যদি সুবিচারের ভয় হয় একজন অথবা অধিকারভুক্ত দাসীকে এতে অন্যায় না হওয়ার সম্ভবনা বেশি। একমাত্র কোরআনের বলা আছে একজনকে বিয়ের কথা। দেখাতে পারবে কেউ এমন কোন আয়াত আছে এই আয়াত ছাড়া কে আছে দেখাও। আর কত মিথ্যে ছড়াবে তোমরা ছিঃ লজ্জা হয় তোমাদের উপর। এখানে সব পুরুষদের কথা বলা হয়নি যারা বিপদে পরে তারাই সেটা করতে পারবে। যেমন তাদের ঘরে যদি কোন এতিম থাকে, বা আশ্রতা থাকে তদের উপর সমাজ বা মানুষ অবিচার না করতে পারে সেই জন্যই বিয়ের বিধান করা হয়েছে। আর আমাদের দেশের অনেক পুরুষ দাবি করে তারা নাকি চার বিয়ে করতে পারবে। আছে কি এমন এযুগে কারো কাছে এমিত মেয়ে বা আশ্রিতা। না থাকলে তো এই যুগে তার প্রশ্ন আসেনা।



এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ্য করি আমাদের শেষ নবী রাসূল (সঃ) যখন মক্কা থেকে মদিনায় কিছু সাহাবীদের পাঠালেন তখনকার মদীনার এক খ্রিষ্টান রাজার নিকট। সাহাবীদের বলে দিলেন তারা যেন তাকে সকল ঘটনা খুলে বলে আর তাদের যেনো সেখানে আশ্রয় দেয়। কিন্তু সাহাবীদের অনুসরণ করলো এক ইহুদী নেতা। সে ইহুদী, খ্রিষ্টান রাজাকে বিভিন্ন ধরনের কুমন্ত্রণা দিতে লাগলো। আর তাদের আশ্রায় যাতে না দিয়ে তার সাথে যেনো পাঠিয়ে দেয় মক্কায় সেই প্রস্তাব দিলো। কিন্তু রাজা ইহুদীর কথা না শুনে, সাহাবীদের জিজ্ঞেসা করলো তোমরা কি বলতে চাও আমাকে বলো আমি তোমাদেরও কথা শুনতে চাই। তারপর এক সাহাবী বলল- আল্লাহ বলেছেন মুহাম্মদ আমাদের শেষ্ঠ্ এবং চুড়ান্ত রাসূল (সঃ), আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা অন্যায় করো না, কারো সম্পদ কেড়ে নিওনা, এক আল্লাহকে বিশ্বাস করো, আর নারী-পুরুষ সমান কিন্তু তাদের গঠন আলাদা, তাদের সাথে খারাপ আচারণ করো না। তখন মদিনায় আসা ইহুদী রেগেমেগে উঠলে আর বলল “কি নারীরা হলো আমদের দাসী আর তারা নাকি আমাদের সমান হতে যাবে” এটা তোদের কোন আল্লাহ বলেছে? নাকি ঐ মুহাম্মদ বলেছে সেটা তোমরা বিশ্বাস করো। এই ঘটনাটা বলার করাণ - একবার ভেবে দেখুন আল্লাহ এবং রাসূল (সঃ) কি বলেছেন আর ঐ ইহুদী কি বলেছে। তাহলে কি আমি বলবো না- যেসব পুরুষরা বলে যে নারীর কোন ক্ষমাত নেই, নারীর কোন সমান অধিকার নেই তারা কি তাহলে ঐ ইহুদীর অনুসারী নাকি আল্লাহ এবং রাসূলের অনুসারী। নিশ্চয় ওরা ইহুদীদের অনুসারী। আমার এই প্রশ্ন তাদের জন্য যারা মনে করে নারী-পুরুষ সমান নয়।

সঠিক ইসলাম সর্ম্পকে অনেকের ভুল ধারণা আছে- বেশির ভাগই মানুষই ভাবে নারী-পুরুষ সমান নয়। বেশির ভাগ মুসলিমরা আন্দাজ-অনুমানে বেশি বিশ্বাসী। সুরা হুজুরাত- সুরা নং ৪৯, আয়াত নং ১২- “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা অন্যের ব্যপারে আন্দাজ-অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। আন্দাজ-অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে গুনাহের কাজ।” সত্যিটা হলো ইসলাম পুরুষ আর নারীর সব ক্ষেত্রে সমান সমান অধিকার দিয়েছেন। তবে দেখতে উভয় আলাদা আলাদা ধরনের যেমন- তাদের আছে শাররীক ভাবে পার্থক্য, মানসিকভাবে পার্থক্য, প্রকৃতিক ভাবে পার্থক্য আর তাদের ভূমিকাও আলাদা। তবে সব মিলিয়ে পুরুষ এবং নারী সমান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীর অধিকার অনেক বেশি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের অধিকার বেশি দিয়েছেন বিধাতা। তাই কিছু দিক দিয়ে পুরুষ এগিয়ে আছে আর কিছু দিক দিয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। একটা উদাহরণ দেই যেমন-

ধরুন একটা স্কুলে দুজন ছাত্রছাত্রী সমান নম্বার পেয়ে ফাস্ট হয়েছে। তাদের দু’জনেরই রেজাল্ট সমান কিন্তু শিক্ষক যখন ওদের খাতা দেখলেন আর প্রশ্ন ১০টি আর প্রতিটি প্রশ্নই ১০ করে নম্বার। ১ম প্রশ্নে ছাত্রী পেলো ১০ এর মধ্যে ৯ আর ছাত্র পেলো ৭। এবার ২য় প্রশ্নে ছাত্র পেলো ৯ আর ছাত্রী পেলো ৭। আর বাকি আটটি প্রশ্নে দুজনই সমান পেলো ১০ এর মধ্যে ৮ করে। দেখা গেলো টোটাল যোগ করে দু’জই ১০০ এর মধ্যে ৮০ পেলো। ঠিক এই ভাবেই পুরুষ আর নারীর সমান কিছু কিছু দিক থেকে অসমান হলেও। আর সেটা যে বেশি পার্থক্য সেটা কিন্তু নয়



কিছু ভন্ড হুজুর আলেম সমাজ নষ্ট করে দিয়েছে আজকে সমাজটাকে। তাদের কত বড় স্পর্দা আল্লাহ এবং তার রাসূলের বিধানকে নকল করে, অমান্য করে। ওরা নারীদের নামাজের নিয়মটা আলাদা করে দেয়। নারীদের নামাজ এরকম না ও রকম হয় এই বলে বিভিন্ন বই লিখে চিত্রসহকারে প্রচার করেছে। দেখিয়ে দেয় মহিলাদের নামাজের নিয়ম এরকম হবে আর পুরুষদের নামাজের নিয়ম এরকম হবে। আর শত শত বছর ধরে মহিলারা সেটাই করে আসছে। আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার নাদি, নানি, খালা, চাচি, ফুফুদের আলাদা করে নামাজ পড়তে আমাদেরও শিখিয়েছে সে রকম। তারপর যখন সব শিখতে পারলাম যখন বুঝলাম এই ভন্ড আলেম সমাজ কত কিই না করেছে আল্লাহ পবিত্র বিধান কে। আমি দোয় করি লানত হোক ঐসব ভন্ডদের উপর, আল্লাহ অভিশাপ হোক ঐসব ভন্ডদের উপর।

আমি যখন কোরআন বাংলা অনুবাদ পড়লাম যেখানে আল্লাহ আলাদা করে নারী-পুরুষের নামাজের কোন বিধান দেননি। রাসূল (সঃ) বলেছেন তোমরা আমাকে যে ভাবে নামাজ পড়ে দেখেছে সেই ভাবেই নামাজ পড়ো। তাহলে কিভাবে হয় নারী-পুরুষের নামাজের বিধান আলাদা। রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত তো সবার জন্য সমান। ছিঃ ওরা কত বড় ভন্ড আলেম। অভিশাপ পড়ুক তোদের উপর। তোরা ভন্ড, তোরা শিরক কারি আল্লাহ পবিত্র বিধাতকে তোরা অমান্য করেছিস।

ইসলামের মূল যে ভিত্তি সেটা হলো আল্লাহ তায়ালাকে মন থেকে বিশ্বাস করা আর তার বানীগুলো থেকে আদেশ নির্দেশগুলো মেনে চলা। তবেই সে মানুষ মানুষের মধ্যে পরে। একজনকে ঠকিয়ে অন্যজন জিতার নাম ইসলাম না, নারীকে অবমাননা করা ইসলাম নয়, নারীদের সাথে হিংসা করা ইসলাম নয়। আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রেরিত রাসূল পৃথীবির প্রত্যেক মানুষের জন্যই সমান যদি এটা সকলে মানে তাহলে কোন ধর্ম আর মানুষের মধ্যে বেধাবেধটা থাকে না। আর এটাই হলো পৃথীবির সকল মানুষের বিধান। আল্লাহ তায়ালার বিধান থেকেই মানুষ শিখতে পারবে সঠিক ধর্ম, সঠিক সমাজ ব্যবস্থা, আর আচার-আচারণ।



পুরুষরা একটা সময় বিষন ভাবে মেয়েদের উপর অত্যাচার করতো। ইহুদী, খ্রিষ্টানদের অনুসরণ করে। তারা আল্লাহর বিধান কে অমন্য করতো। এরপর এখন নারীরা ঘরের বাইরে নামতে শিখেছে, পড়তে শিখেছে, নিজেদের অধিকার আদায় করতে শিখেছে। কিন্তু ওদের কাপুরুষত্য এখনো চেঞ্জ হয়নি। তবে হ্যা নারীদের আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন সেটা কিন্তু নারীরা অমন্য করছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন “হে পুরুষ তোমরা পর্দা করো, চোখকে হেফাজত করো, লজ্জা স্থানের হেফাজত করো। হে নারী তোমরা চোখকে হেফাজত করো, পর্দা করো, লজ্জা স্থান হেফাজত করো, তোমাদের গোপন অঙ্গগুলো তোমাদের গায়ের ওড়না বা চাদর দিয়ে ঢেকে দেও। কোরআনের আরো একটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন -হে নবী তুমি তোমার স্ত্রীদের এবং সাধারণ ঈমানদার নারীদের বলো তারা যেনো জনসমাবেসে বের হলে তাদের গোপন অঙ্গগুলো ওড়না বা চাদর দিয়ে ঢেকে বের হয়। কিন্তু নারীরা এখন পুরুষের মতো ভন্ড হয়ে গেছে ওরা ও ভন্ডামি করে আল্লাহ বলেছেন যে পুরুষ নারীদের পোষাক পড়বে আর যে নারী পুরুষদের পোষাক পড়তে তাদের উপর আমার লানত।

আর এর জন্য আমি দায়ী করবো পুরো পুরুষ সমাজকে। কারণ ওরা এতো দিন যা করেছে সেটার ফল এখন ওরাই ভোগ করবে। পুরুষরা যদি কখনো নারী-পুরুষের কোন বেদাবেদ না করতো, নারীদের সাথে সব সময় সম্মান দিয়ে কথা বলতো, নারীদের নারী না ভেবে মানুষ ভাবতো তাহলে আজকের সমাজটা এই রকম হতো না। আজ আমরা মানুষ হয়েই পৃথীবিতে বাস করতাম, অমানুষ হয়ে না। আজকে দশজন পুরুষ আর দশজন নারীর কারণে গোট সমাজ, গোট রাষ্ট্র অধপতনের দিকে চলে গেছে। আর এই প্রভাবটা এসে পড়ে কিছু ভালো পুরুষ আর ভালো নারীদের উপর।



আল্লাহ বলেছেন- “সুরা নূর, সুরা নং ২৪, আয়াত নং-২৬, “চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীনা পুরুষের যোগ্য আর চরিত্রহীনা পুরুষ চরিত্রহীনা নারীর যোগ্য। চরিত্রবতী নারী চরিত্রবান পুরুষের যোগ্য আর চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবতি নারীর যোগ্য। কোন মিথ্যা অপবাদই চরিত্রবানদের কলঙ্কিত করতে পারে না। এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবনোপকরণ।”
হে ভন্ড পুরুষ সমাজ এই আয়াতে মহান আল্লাহ কি বলেছেন যে “চরিত্রহীনা পুরুষের জন্য চরিত্রবতী নারী যোগ্য” বলেছে এখানে? কিসের তাহলে তোদের এতো বড়াই শুনি।

তাই সকল পুরুষ নারীর জানা উচিত পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন কি কি বিধান দিয়েছেন। তাহলে আর দুনিয়াতে এতো বেধাবেদ থাকবে না, এতো অহংকার থাকবে না, কারো সাথে কারো অমিল থাকবে না। আগে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধান জানি। আর সর্বোপরি মেয়েদের শৃঙ্খলায় আসতে হবে। অধিকার, ক্ষমতা দিয়ে তুমি তোমার বিচার করতে পারবে না। অধিকার ক্ষমাত এগুলোর থেকে সবার আগে হলো আমরা নারী-পুরুষ সবাই সমান, সবাই মানুষ। ছেলেদের অনেক ভুল আমি ধরিয়ে দিতে পারি তারা কোথায় কোথায় অহংকার করে, কোথায় কোথায় ভুল করে, কোথায় কোথায় মেয়েদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। এগুলো ঠিক না আপনার যেটা করেন সেটা সম্পূর্ন ভুল করেন। আপনাদের এমন কোন ক্ষমতা নেই যেটা মেয়েদের থেকে বেশি আছে। কথায় কথায় মেয়েদের মিথ্যে খোটা, কথায় কথায় মেয়েদের সাথে অশ্লিন ভাষা ব্যবহার এগুলো পরিহার করুন। লজ্জা হেফাজত করুন কারণ মেয়েদের থেকে বেশি লজ্জাশীল ছিলেন রাসূল (আঃ)।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১০
১৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×