বিদেশ ঘুরতে যাবো বলেই সেই ২০১৪ সালে পাসপোর্ট করলাম, যাবো যাচ্ছি বলে সময়ের অভাবে আজ পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়নি। পাসপোর্ট করেই সারা। আমার পরে আমার অনেক বন্ধু বান্ধব পাসপোর্ট করে কত দেশ ঘুরে ফেল্লো আর আমি যাবো যাবো করে এখনও বসে আছি। এর মধ্যে একবার ভিয়েতনাম যাওয়ার প্লান করলাম, যাকে দিয়ে ভিসা করাবো সে বললো খালি পাসপোর্টে ভিয়েতনামের ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন হবে সম্ভাবনা একবারেই কম। উনি আরো পরামর্ষ দিলেন যে আগে পাসের দেশ ঘুরে আসো তারপর একটা বেবস্থা হবে। অবশেষে আমি আর আমর বন্ধু জাহিদ জুলাই ২০১৮ প্লানিং করেই ফেল্লাম এবার কোথাও যাবোই, ইন্ডিয়া যাবো, ইন্ডিয়ার সিলং যেকরে হোক যাবোই। ভিসা নোয়ার প্রস্তুতিটা নিয়ে ফেল্লাম।
প্রথমে ভাবতাম ভিসা নেয়ার জন্য কাগজপত্র ঠিক করা এবং ভিসার জন্য জমা দেয়া অনেক কঠিন ব্যাপার, যখন করতে গেলাম তেমন কিছুই না পানি ভাতের মতো সহজ। সময়ের অভাবে অনলাইন ফ্রমটা আর একজনকে দিয়ে করালাম বিনা পয়সায়, ওনাকে যা যা দেয়া লাগলো তা হলো, পাসপোর্ট কপি, 2X2 সদ্য তোলা ছবি, কারেন্ট বিল অথবা পানি বিলের ফটোকপি, ন্যাশনাল আডি কার্ডের ফটোকপি। পোর্ট নিয়া খুব কনফিউস্ ছিলাম, অবশেষে সিলং যাওয়ার জন্য ডাওকি পোর্ট উত্তম সেটাই ঠিক করলাম।
দুইদিন পর অনলাইন ফ্রমটা ই-মেইলে পেলাম সাথে বোনাস পেলাম ভিসা ফিস পরিশোধের রশিদ কারন ওই লোকটাই ভিসা ফিস দিয়ে দিয়েছিলো। আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার জমা দিবো, অফিস থেকে সেরকম ভাবেই অর্ধেকবেলা ছুটি নিছিলাম। ৮ আগস্ট রাতে বাসায় আসর পর যখন মেইল পেলাম মাথা তখন পুরাই নস্ট কিভাবে প্রিন্ট দিবো, অবশেষে এক বন্ধুর কাছে গিয়ে প্রিন্ট করে নিলাম, ফ্রম প্রিন্ট করার এক ঘন্টা পর পেমেন্ট রশিদ পেলাম মেইলে, পেমেন্ট রশিদ প্রিন্ট দিবো সকালে বলে ঠিক করলাম। সকাল ৭টায় বের হবো তখন কোন দোকান খোলা পাবো কিনা তাও দিধায় ছিলাম। আল্লাহ ভরসা একটা ব্যাবস্তা হবেই।
ফ্রমের সাথে যা যা কাগজপত্র নিলাম সব গুলাই দুইসেট করে ফটোকপি করেছিলাম যদি লেগে বসে। পাসপোর্ট প্রথম পাতা, ডলার এন্ডোসমেন্ট এর পাতা (আমার আর জাহিদের দুজনেরই ট্রাভল কার্ড ছিলো যার জন্য ব্যাংক থেকেই ডলার এন্ডোজমেন্ট করে দিয়েছিলো),জাহিদ সাথে নিয়েছিলো ব্যাংক স্টেটমেন্ট কপি যদিও ব্যাংকে কোন টাকা ছিলোনা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি, বিদুৎ বিল এর ফটোকপি সাথে মূল কপিও (যদিও আমার কাছে মূল কপি ওরা দেখতে চায়নি), ট্রাভন কার্ড এর ফটোকপি আর এক কপি ছবি ফ্রমের সাথে লাগায় নিলাম।
রাত ১২ টায় জাহিদ ফোন দিলো যে ওর ছবি অফিসে রেখে এসেছে, আমি এবার ভাবলাম কাল আর হয়তো জমা দেয়া হবে না ও বললো রাস্তা থেকে তুলবো। এতো সকাল কোন স্টেডিও খুলবে কিনা জানিনা। যাই হোক আমরা আর সকল কাগজ নিয়া সকালে রওনা দিলাম, বসুন্ধরা গেটে বাস থেকে নেমে দুই বন্ধু দুই দিকে ছোটা শুরু করলাম স্টেডিও খুজতে থাকলাম , একটু হাটার পরই জমুনা ফিউচার পার্ক এর সামে আসলাম দালালের অভাব নাই কেউ বলছে ফ্রম পুরন করে দেই, কেউ বলছে ফটোকপি করায় দেই, কেউ বলছে ইউকেশে পেমেন্ট দিয়া দেই, কেউ বলছে ভিআইপি লাইন লাগবে? দালালদের কোন কথায় কান না দিয়ে কাংখিত স্টেডিও পেয়ে গেলাম, ওরা সকালেই খোলে যারা ভুক্তভুগি মনের ভুলে কিছু নিয়ে না বের হয় তাদের জন্য। অনেক অনেক অফিস খুলে বসে আছে সব ভারতিয় দ্যূতাবাস রিলেটিভ, অবুঝদের সাহায্যে জন্য। আমরা কাংখিত ছবি আর পেমেন্ট রশিদ প্রিন্ট করে ফেল্লাম।
গেট খোলার ১ ঘন্টা আগেই লাইলে দারালাম রাস্তায়, এখনো যমুনা ফিউচার পার্ক এর গেট খোলেনাই। ঠিক ৯ টায় গেট খুললো সবাই হুরো-হুরি পারা-পারি করে ঢ়ুকতে লাগলো আমরাও নিজেদের কনট্রল করতে পারলামনা আমরাও পারা-পারিতে যোগ দিলাম। যমুনা ফিউচার পার্ক এর ভিতরে গিয়ে আবার লাইনে দারালাম আস্তে আস্তে ভিতরে নিচ তলায় গিয়ে ঢ়ুকলাম এতো বড় লাইন দেখে ভয় পেয়ে গেলাম যে সময় মতো কি অফিসে যেতে পারবো? অল্প সময়ের মধ্যেই ভয়টা কেটে গেলো যখন খুব তারা তারি লাইন ফুরাতে লাগলো, সাথে ব্যাগ নেই নাই বেচে গেছে ৩০ টাকা কারন ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয়না সেই ব্যাগ রাখার কাউন্টার আছে যা প্রতি ব্যাগ এর জন্য নেয় ৩০ টাকা। অবশেষে কাঙ্থিত দ্যূতাবাসে ঢুকলাম, বিশাল ফ্লোর ৪৮ টা কাইন্টার সিরিয়াল পরলো ৯৮৫ নাম্বার ১৮ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। কল্পনার থেকেও কম সময়ে আমি পাসপোর্ট ও কাগজ-পত্র জমা দিয়ে ফেল্লাম। বেঘাত ঘটলো জাহিদের বেলায়, ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যেটা দিয়েছিলো ওইটায় টাকা না থাকায় ফেরৎ দিলো এবং বিকল্প হিসেবে ডলার এন্ডোজমেন্ট এর রশিদ চাইছিলো ওটাও ওর অফিসে ফেলে আসছে, সেটাও দিতে পারলোনা বলে ওকে ফেরৎ দিয়ে দিলো। আমি সাথে সাথে ওকে পরামর্শ দিলাম যেনো ট্রাভল কার্ড এর ফটোকপি যেন জমা দেয় এবং তাই করলো জমা নিলো। দ্যূতাবাসের ভিতরে ফটোকপি মেশিনের ব্যাবস্থাও আছে।
সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত জমা নেয়।
বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত পাসপোর্ট ডেলিভারী দেয়।
লাইন দেখে ভয় পেলে চলবেনা। মুর্হুতে লাইন শেষ হয়ে যায়।
দালালের খপ্পরে পরে লাইলন দারানো মানে টাকা নস্ট করা।
ভিতরে মোবাইলে কথা বলা, ছবি তোলা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
মহিলা ও চিকিৎসা ভিসার জন্য আলাদা রাইন।
পাসপোর্ট ডেলিভারি আনার সময়ও এমন লাইনে দাড়াইতে হইছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৪