somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ কানাডা জার্নাল -১

০৩ রা জুন, ২০২৩ ভোর ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নতুন প্রভাত
10 May 2023, 05:36

০৭ মে ২০২৩
আকাশপথে দীর্ঘ যাত্রাজনিত ক্লান্তির কারণে গতরাতে একটানা বেশ ভালো ঘুম হলো। সকালে নাশতার পর এক কাপ কফি বানিয়ে ল্যাপটপটা খুলে বসলাম। আজ রবিবার বলে আনায়ার স্কুল বন্ধ, তাই সেও অনেকক্ষণ ঘুম দিয়ে উঠে দেখে গেল আমি কী করছি। আগে হলে কোলে উঠে বসতো এবং ইউটিউবে ওর পছন্দের গান শুনতে অথবা কার্টুন দেখতে চাইতো। এখন একটু বড় হয়েছে, তাই সে কোলে না উঠে পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ওকে আদর করে নাশতা খাওয়ার তাগিদ দিলাম। আর বিকেলে ওর সাথে বাসা থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে ওর স্কুল দেখতে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। ও টুকটাক কিছু দুষ্টুমি করে ওর দিদির কাছে চলে গেল নাশতা খেতে।

সকালের দিকে বেশ ভালোই রোদ উঠেছিল। দুপুরের দিকে আস্তে আস্তে রোদের আলো নিস্তেজ হতে শুরু করলো। বিকেলের দিকে শীতল বাতাস বইতে শুরু করলো। তানিয়া আর সবুজ এলো আনায়ার বয়সী ওদের দুই কন্যা আর্শী আর আয়রাকে নিয়ে, ছয়টার পর। গুগল করে দেখলাম, এখানে নামাযের সময়সূচীতে বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শুধুমাত্র যোহর আর আসরের নামায মোটামুটি বাংলাদেশের কাছাকাছি সময়ে পড়া হয়। ফজরের নামায পড়া যাবে রাত সোয়া তিনটা থেকে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত। মাগরিব সাড়ে আটটায় এবং এশা সাড়ে দশটায়। ২২শে জুন পর্যন্ত প্রতিদিন এ সময়গুলো আরও দুই তিন মিনিট করে বেড়ে যাবে।

আসরের নামায পড়ে আমরা সবাই বের হলাম হাঁটতে হাঁটতে আনায়ার স্কুল দেখতে যাবার জন্য। আনায়া খুব উদগ্রীব ছিল আমাদেরকে ওর স্কুল দেখাবার জন্য। আমার ভালো লাগলো এটা দেখে যে সে তার স্কুল এবং টীচারকে নিয়ে বেশ গর্বিত। আমরা স্কুলের প্রবেশমুখে পৌঁছানো মাত্র বাচ্চাগুলো দৌড়ে চলে গেল স্কুলের প্লে গ্রাউন্ডে রাখা নানা রকমের খেলার সরঞ্জামগুলোর দিকে। ওরা অনেকক্ষণ ধরে খেললো, আমরা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে থাকলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বাড়ী ফিরে এলাম।

০৮ মে ২০২৩
নতুন কোন জায়গায় এলে আমার সাধারণতঃ দিক ভ্রম হয়। তবে এখন যে বাসায় আছি, সেখানে দিকভ্রম হবার কোন অবকাশ নেই। কারণ, ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই পূর্ব দিগন্ত দেখা যায়, আর একটা দিক সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেলেই তো বাকি তিনটে দিক সম্বন্ধেও নিশ্চিত হওয়া যায়। তদুপরি এখন তো সব সেলফোনে একটা কম্পাস থাকেই। আজ ভোরে ফজরের নামায পড়ে যখন ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম, তখন অরুণোদয়ের আয়োজন চলছে। রক্তিমাভ পূবাকাশের কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে।

গতকাল আনায়া ওর নোট বই থেকে চারটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে তাতে কিছু ছবি এঁকে আমার পাশে সোফার উপর রেখে গিয়েছিল। ছবিগুলো তখন দেখিনি। চারটা পৃষ্ঠায় ছবির উপরে চারজনের নাম লিখা ছিলঃ দাদা, দিদি, বাবা আর আরহাম (ওর ছোট ভাই)। ছবিগুলো কিসের, তা দেখার জন্য হাতে নিলাম। আমারটাতে আঁকা একটা সেলফোন-স্ক্রীন এর ছবি। ওর দিদিরটাতে একটা ফুলের আর ওর ছোটভাই এর টাতে একটা গাড়ির। বাবারটাতে কী এঁকেছে তা দেখে বুঝতে পারলাম না। ও ঘুম থেকে উঠে যখন স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছিল, তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম ছবিগুলো কিসের এবং কেন সে তা এঁকেছে। সে বললো, "তোমরা সবাই যে যেটা ভালোবাসো, তার জন্য সেটার ছবি এঁকেছি"। ওর বাবারটার সম্বন্ধে সে বললো, ওটার নাম 'কন্ট্রোলার', ওটা দিয়ে ওর বাবা টিভিতে গেইম খেলে।

০৯ মে ২০২৩
গতকাল ভোরে যেমন আকাশটা উজ্জ্বল ও রক্তিমাভ ছিল, আজ ঠিক তার উল্টোটা। পূব দিগন্ত আজ ধুসর, মেঘাচ্ছন্ন। সাত সকালে এমন একটা আকাশ মনে বিষণ্ণতার ছায়া ফেলে। হাল্কা বাতাসও বইছে। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে, আজ আনায়াকে ছাতা ক্যারী করতে হবে। এমন শীত শীত সকালে বড়রাই শয্যা ত্যাগ করতে গড়িমসি করে, বাচ্চাদের তো কোন কথাই নেই, সে যতই "ভোরের পাখি" হোক না কেন। আনায়াও উঠতে চাচ্ছে না। নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওকে তোলা হলো। একবার উঠে গেলে ও অবশ্য তৈরি হতে বেশি সময় নেয় না, তবে কিছু খেতে ভীষণ ঝামেলা করে।

১০ মে ২০২৩
আজ আবার পূব-আকাশে গত পরশুদিনের মত অরুণোদয়ের উজ্জ্বল আলোর ছটা। কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্য ওঠা দেখলাম। আনায়া তৈরি হবার পর আমি আর ওর দিদি মিলে ওকে স্কুলে দিয়ে আসলাম। পথেরও কিছু ছবি তোলা হলো। ফেরার পথে 'Safeway' থেকে কিছু grocery কিনে আনলাম।

১১ মে ২০২৩
আজ আকাশে সূর্যোদয়ের আভা থাকলেও, কিছু কিছু মেঘেরও আনাগোনা ছিল। শীঘ্রই বৃষ্টি নামতে পারে ভেবে তাড়াতাড়ি আনায়াকে তৈরি করে স্কুলে রেখে এলাম। তারপর এক এক করে দেশে অনেকের সাথে কথা বললাম এবং কুশল বিনিময় করলাম।

১২ মে ২০২৩
আজ সকাল থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। এরই মাঝে তৈরি হয়ে আনায়াকে স্কুলে দিয়ে আসলাম। পথে বাতাসের কারণে মাঝে মাঝে আমাদের হাত থেকে ছাতা দুটো উড়ে যেতে চাচ্ছিল। কানাডায় আসার পর আজ প্রথম জুম্মাবার। দুপুরে একজন প্রতিবেশীসহ আমরা জুম্মার নামায পড়তে গেলাম। রাতে আল-বুরাক নামের এক রেস্টুরেন্টে ডিনার করলাম। আগামী কাল শনিবার, ছুটির দিন। স্থানীয় কতিপয় বাংলাদেশী পরিবার মিলে ঈদ-পুনর্মিলনি এবং বৈশাখ বরণ উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানে আনায়ারও সামান্য অংশগ্রহণ থাকবে। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থকার আশা নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম।



রিজাইনা, কানাডা
১২ মে ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৭২৯


07 May 2023, 20:09


অরুণোদয়
10 May 2023, 05:26


দাদার পছন্দের জিনিস (ওর মতে) এঁকেছে আনায়া।
08 May 2023


Overcast sky on a Summer day
09 May 2023, 06:39
Regina, SK, Canada
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৩ ভোর ৫:৪৪
৪৫৬ বার পঠিত
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×