আমার শয্যাপাশে দখিনের জানালা। রাতে যখন সব আলো নিভিয়ে শয্যা গ্রহণ করি, তার আগে আমি জানালার পর্দা সরিয়ে দেই। বাহিরে মিশমিশে কালো আঁধার থাকলেও, জানালা গলিয়ে আমি দৃষ্টি মেলে দেই সেই কালো আকাশের দিকেই; কালোর মধ্যেই অনেক কিছু দেখতে পাই। আর রাতটা যদি জ্যোৎস্নাস্নাত হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই। আমি এখন যেখানে আছি, সেখানে শীত আসবো আসবো করছে। রাতে তাপমাত্রা ১৩-১৪ সেলসিয়াসের মত থাকে। বাহিরে মৃদুমন্দ বাতাসও বয়। আমি কম্বলের নীচে উষ্ণ হতে থাকি, বাহিরে গাছপালা একসাথে জ্যোৎস্না ও শিশিরস্নাত হতে থাকে। জ্যোৎস্না রাতে আমি আন্দোলিত গাছপালা আর জ্যোৎস্নার মাঝে সখ্য গড়ে ওঠা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাই। শেষরাতে সেহরীর পর ফযরের নামায পড়ে একটু ফেসবুকিং করতে করতে যখন পুনরায় ঘুমুতে যাই, তখন শুয়ে শুয়ে আবার জানালা গলিয়ে তাকিয়ে দেখি আকাশটা ক্রমে ক্রমে ফর্সা হয়ে উঠছে। প্রথমে ছোট্ট একটা পাখির একটা বা দুটো ডাক শুনতে পাই। কল্পনা করি, পাখিটা একটা শিশু পাখি। সে যেন উসখুস করতে করতে তার মাকে বলছে, “আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে?” এর একটু পরে তার কল্পিত মায়ের কণ্ঠও শুনতে পারি। এবং তার পরে.... সমস্বরে কিচির মিচির। প্রথম আলোর ছটা তরুশাখায় চুম দিয়ে যাবার সাথে সাথেই ওরা আকাশে ডানা মেলে দেয়। কোথায় যাবে, কী খাবে, তার কোন রুটিন বাঁধা নেই। প্রকৃতি মাতাই ওদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে এদিকে সেদিকে নিয়ে যায়, আবার দিনশেষে আপন নীড়ে ফিরিয়ে আনে।
প্রকৃতি প্রতিদিন কি অপার্থিব সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি সকাল আমাদেরকে উপহার দেয়, অথচ আমরা অধিকাংশ সময়েই প্রত্যুষের সেই শুভক্ষণটি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই!
ছবিটি আমার আইফোন-৭ এ আজকেরই তোলা।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
০১ মে ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ২৪৩
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৫