প্রতিদিনই কোকিলটার গান শুনি। মনে হয়, পরিচিত কারো কন্ঠ শুনছি। খুব পরিচিত হয়ে গেছে। অথচ কোকিলটা জানেও না, কেউ একজন কত গভীর আগ্রহে ওর গান শুনে থাকে। আমিও যেমন জানিনা ও কার জন্য এমন মধুর সুরে গান গেয়ে যায়। জীবন পথের উভয় প্রান্তে পথিকদের এমন কত কিছু অজানা রয়ে যায়!
আর বড় জোর হয়তো এক দেড় মাস। এই এক দেড় মাসেই ওর যা গান শোনা যাবে। তারপর ও আর গান গাবে না। কোথায় চলে যাবে জানিনা। হয়তো আসে পাশেই থাকবে, হয়তো না, কিন্তু থাকলেও গান গাবে না। প্রকৃতির নিয়মেই। প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওর গান শোনা যায়। বসন্তকালের দু’মাস, আর হয়তো আগে পিছে পনের দিন করে। মোট এই তিন মাস। এবারে চলে গেলে আসবে আবার আগামী শীতের শেষে, জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে। এভাবেই শুনে যাচ্ছি গত কয়েকটা বছর। এভাবেই হয়তো শুনে যাবো আরও কয়েকটা বছর। একদিন আমি আর ওর গান শুনবো না। অন্য কেউ শুনবে। এই কোকিলটারই, অথবা অন্য কোন নতুন কোকিলের গান। প্রকৃতির নিয়মেই গায়ক ও শ্রোতার পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এ বছর প্রথম কোকিলের ডাক শুনি গত ২৮ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে, মোতাবেক ১৫ মাঘ ১৪২৩। গত কয়েক বছর ধরে কোকিলের প্রথম ডাক শোনার পর আমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আসছি। সেদিনও দিয়েছিলাম এই স্ট্যাটাসটাঃ
"প্রথম কুউ....
আজ ১৫ই মাঘ, এখন বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিট। এখনো শীতকাল চলছে, যদিও গতরাতে পাখা ছেড়ে ঘুমোতে হয়েছে। কাগজে কলমে বসন্তকাল আসতে এখনো অন্ততঃ আরো দিন পনেরো বাকী আছে। তা থাক, কিন্তু আমি যে এই মুহূর্তে শুনলাম একটা মধুর ডাক- কু, কুউ, কুউউ...! অর্থাৎ ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে!
ছোটবেলায় বসন্ত আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু ছিল। এমনিতেই ভালবাসতাম, তার উপর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রিয় ঋতু নিয়ে রচনা লিখার প্রশ্ন আসলে মন খুলে বানিয়ে বানিয়ে বসন্ত বন্দনা করতাম। এখন অবশ্য পরিণত বয়সে আমার সব ঋতুই ভাল লাগে, কেননা বাঙলার সব ঋতুরই আলাদা আলাদা সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য আছে। শুধু চোখ মেলে দেখতে হয়।
আমার বাসার কাছেই আছে বড় ছোট অনেক গাছ গাছালি। তাই কোকিলসহ বিভিন্ন পাখির কাকলি শুনেই আমার দিন শুরু হয়। এই অচেনা কোকিলটির অন্তর্ভেদী আকুতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানানোর জন্য আমার আজকের এ পোস্ট। আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে! সবাইকে অগ্রিম বাসন্তী শুভেচ্ছা!"
ছবিসূত্রঃ গুগল
ঢাকা
১৩ মার্চ ২০১৭
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৩