শৈশবে কে যেন একবার আমাকে একটা মাউথ অরগান উপহার দিয়েছিলো, তা আজ মনে নেই। কিন্তু এ কথা মনে আছে, উপহারটা পেয়ে আমি খুশীর জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলাম। রাতে ঘুমাবার সময় সেটা বালিশের নীচে রেখে ঘুমাতাম। কয়েকদিনের নিজস্ব চেষ্টায় অল্প স্বল্প সুরও তুলতে পারতাম। এর মধ্যে ভালো পারতাম ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’র কিছু অংশ, ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা পুরোটা’, আর কেমন করে জানি নিজস্ব স্টাইলে কোন দিন না শোনা একটা পল্লীগীতির সুরও তুলতে পারতাম, যা শুনে বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করতো, ‘এটা কোন গানের সুর’? আমি বলতাম, আমাদের এলাকার একটা গান। ‘নাম রেখেছি বনলতা যখন দেখেছি’ এর সুরটাও কিছুদিন তোলার চেষ্টা করে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
আমার এই ছোট্ট কিন্তু প্রাইজড পজেশনটার জন্য পাড়ার বন্ধু ও সতীর্থদের ঈর্ষার কারণ হয়েছিলাম। একদিন আমার প্রিয় এ উপহারটা হারিয়ে ফেলে মন ভেংগে গিয়েছিলো, এর পরে আর কখনো নতুন কোন মাউথ অরগান নিজের জন্য কিনিনি। প্রায় আড়াই যুগ পরে আমার ছেলেও একই জিনিস উপহার পেয়েছিলো। ওকে শেখাতে গিয়ে একদিন পরখ করে দেখলাম, আমার সেই পুরনো সুরগুলো তখনো তুলতে পারি, একদম ভুলে যাই নি। আজ ইউ টিউবে আমার একটা প্রিয় গানের সুর এই ছেলেটাকে বাজাতে দেখে (ছেলেটা অপরিচিত, আমার ছেলে নয়) আমার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
আজকের এ গানটির বিশেষ ভালো লাগার অংশঃ “বজ্রে তোলো আগুন করে আমার যত কালো”।
এই করেছ ভালো, নিঠুর,
এই করেছ ভালো।
এমনি করে হৃদয়ে মোর
তীব্র দহন জ্বালো।
আমার এ ধূপ না পোড়ালে
গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,
আমার এ দীপ না জ্বালালে
দেয় না কিছুই আলো।
যখন থাকে অচেতন
এ চিত্ত আমার
আঘাত সে যে পরশ তব
সেই তো পুরস্কার।
অন্ধকারে মোহে লাজে
চোখে তোমায় দেখি না যে,
বজ্রে তোলো আগুন করে
আমার যত কালো।
ঢাকা
০৫ জুন ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
এই করেছো ভালো নিঠুর হে...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪২