somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা-১০ (শেষ পর্ব)

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা-৯ পড়ুন এখানেঃ

এতদিন মাসব্যাপী এই যে এক অনিশ্চিত তীর্থযাত্রায় পদযাত্রী হয়েছিলাম, সব কোলাহল থেমে যাবার পর নিজের বই দুটো একটু হাতে নিয়ে পুনরায় চোখ বুলোবার অবকাশ পেলাম। ভাসা ভাসা চোখ বুলিয়ে নেবার পর আমার হৃদকম্পন বেড়ে গেলো। শুদ্ধ বানানের ব্যাপারে আমি সবসময় একটু খুঁতখুঁতে। আমার কবিতার বই "গোধূলীর স্বপ্নছায়া" হাতে নিয়ে দেখি বেশ কিছু বানান ভুল। এমনিতেই আমার লেখালেখির সময় অনলাইন অভিধানটা খোলাই থাকে। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলেই বানান মিলিয়ে নেই। তদুপরি, পান্ডুলিপিটা আমি মনযোগ দিয়েই দেখে দিয়েছিলাম। তবুও মানুষ তো, কিছু ভুলচুক তো হতেই পারে। ছোটখাট কিছু মুদ্রণ প্রমাদ থাকবে, এটা ধরেই নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমেই যে ভুলটা চোখে পড়লো, তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমার এই বইটা পড়ে যে কয়টা কবিতার ব্যাপারে পাঠকেরা ফোন করে প্রশংসা করেছেন, তার মধ্যে ১৬ নং পৃষ্ঠার “গরমিল” কবিতাটি অন্যতম। এই কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে ব্যাধের তিরের আঘাতে নিহত সঙ্গিনীর মৃত্যুতে শোকবিহ্বল এক বিরহী ঘুঘুর বিলাপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশকের প্রুফরীডার মনে হয় “ব্যাধ” (শিকারি, পশুপাখি বধকারী তিরন্দাজ) শব্দটির সাথে পরিচিত ছিলেন না। তাই তিনি অবলীলায় আমাকে কিছু না বলেই “ব্যাধ”কে “ব্যাধি”তে পরিণত করে দিলেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, ঘুঘুটি রোগে শোকে ভুগেই মারা গিয়েছিলো। যদিও সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক, তবুও ঘাতকের হাতে অপমৃত্যুর বেদনা আর ব্যাধিতে ভুগে মৃত্যুর বেদনা শোকার্ত পাঠক কিংবা পরিজনদের নিকট সমান বেদনাদায়ক নয়। কাজেই এখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রুফরীডার শব্দটির সাথে একটা ‘ই’ কার যোগ করে চরণটির মূল আবেদনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আরো বড় একটি সাংঘাতিক ভুল চোখে পড়ায় নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেয়ে গেলাম। কারণ পাঠকেরা বইটি অর্থব্যয়ে ক্রয় করেছেন। তাদের পক্ষে এমন একটা ভুল মেনে নেয়াটা সহজ হবে না, সেটা বেশ বুঝি। ভুলটা হলো, বইটির ৬৫ নং থেকে ৮০ নং পৃষ্ঠা গায়েব, তদস্থলে ১৭ নং থেকে ৩২ নং পৃষ্ঠার পুনরাবৃত্তি। অর্থাৎ পাঠকগণ ১৬টি পৃষ্ঠার কবিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই ১৬টি পৃষ্ঠার মধ্যে অন্ততঃ দুটো কবিতা ছিলো, যেগুলো পড়ে পাঠকেরা প্রশংসা করেছেন ফোন কিংবা ইমেল/টেক্সট এর মাধ্যমে। এই ভুলটা সব বই এ হয় নাই, তবে কয়টাতে হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা অসম্ভব। ক্ষতি যেটা হয়েছে, সেটা পূরণ করাও অসম্ভব। কাজেই নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

এবারে আসি আমার “জীবনের জার্নাল” এর কথায়। অনেক কষ্ট করে সুদূর বাঙলা বাজার গিয়ে প্রকাশক আর প্রুফরীডারের মাঝখানে বসে তাদের কম্পিউটারে পান্ডুলিপিটা পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করে প্রকাশকের পেন ড্রাইভে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বই হাতে পেয়ে দেখি, বই থেকে দুটো চ্যাপ্টারই গায়েব! এছাড়া কিছু ইংরেজী শব্দ অদ্ভুতুরে বানানে বাংলা হয়ে গেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফোন করলে প্রকাশক কিংবা প্রুফরীডার কেউই ফোন ধরছিলেন না। এ ছাড়াও বইটির প্রতিটি চ্যাপ্টারের প্রারম্ভে প্রচ্ছদের একটা রেপ্লিকা দেয়ার কথা ছিলো। সেজন্য স্পেস রাখতে গিয়ে বই এর পৃষ্ঠা সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে, অথচ সে স্পেসটুকু এখন সাদা। পরে একদিন সাক্ষাতে হাতেনাতে যখন প্রকাশককে পেয়ে এর ব্যাখ্যা চাইলাম, তিনি কাঁচুমাচু স্বরে প্রুফরীডারের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে লজ্জাকাতর মুখে বললেন, ভুল বশতঃ আগের অপরীক্ষিত পান্ডুলিপিটাই ছাপাখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আর প্রুফরীডার সেই থেকে কোনদিন আর আমার ফোন ধরেন নি।

আমি একজন আনকোরা লেখক, মাত্র এ বছরেই লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। আমার মত নবীন লেখকদের হয়তো প্রকাশকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী খেয়াল পাবার কথা নয়, বিশেষ করে একুশের ডামাডোলের পটভূমে। মাঠে নেমে দেখতে পেয়েছি, একটা বই পাঠকের হাতে পৌঁছতে কতটা ঘাট বেঘাট পার হতে হয়। অনেক সময় প্রকাশকরাও ছাপাখানার কাছে (নিজস্ব ছাপাখানা না থাকলে), বাঁধাইকারকের কাছে, প্রুফরীডারের কাছে অসহায় থাকেন। যে কারণে তাদের কথা রাখতে অসুবিধা হয়। যারা এসবের সবকিছু দক্ষ হাতে সামাল দিতে পারেন, তাদের সুনামই অক্ষুন্ন থাকে। ভুল যারই হোক, পাঠকের কাছে লেখকের একটা দায়বদ্ধতা থাকে। সেই বোধ থেকেই আমার সকল পাঠকের কাছে এসব ভুলের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আশাকরি তারা সকলে এসব ভুলগুলোকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।

পরিশেষে, আমি যে আজ নিজেকে একজন লেখক হিসেবে দাবী করতে পারছি আমার দুটো বই প্রকাশ হবার কারণে, এর পেছনে বড় কৃতিত্বের দাবীদার একজনের নামোল্লেখ না করে আমার এ সিরিজের লেখাটার সমাপ্তি টানলে নিজেকে বড় অপরাধী বলে মনে হবে। তার সাথে আমার পরিচয় বাংলা কবিতা ডট কম নামের এক আন্তর্জালিক কবিতা আসরে, যেখানে আমি গত দু’বছর ধরে কবিতা লিখে চলেছি। তিনি একজন সব্যসাচী লেখক এবং বাঙলা সংস্কৃতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেন না। তার সাথে একত্রে নিজেদের কবিতার বই প্রকাশের ব্যাপারে ২০১৪ সালের শেষের দিকে অনলাইনে আলাপ হয়েছিল। ২০১৫ এর বইমেলা চলাকালীন তিনি প্রবাস থেকে ঢাকায়ও এসেছিলেন এবং তার নিজের একাধিক বই প্রকাশের ব্যাপারে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় তিনি আমার সাথে আর যোগাযোগের সুযোগ পান নাই। আমিও কিছু মনে করি নাই, কারণ তার সাথে আমার আলাপটা এমন পাকাপোক্ত কিছু ছিলনা, জাস্ট হালকা একটু আলাপ। ২০১৫ এর শেষের দিকে হঠাৎ একদিন তার কাছ থেকে একটা মেসেজ পেলাম, যেখানে তিনি আমাদের আগের আলাপটার কথা উল্লেখ করে জানতে চাইলেন যে আমি বই প্রকাশের ব্যাপারে এখনো আগ্রহী কিনা। যেহেতু আমার পান্ডুলিপি তৈরীই ছিল, সেহেতু আমি ইতিবাচক সাড়া দিলাম। ব্যস, তারপর থেকেই বই প্রকাশের আগের দিন পর্যন্ত তিনি রেগুলার খবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় মতামত দিয়েছেন। তার সম্বন্ধে বাংলা কবিতা ডট কম থেকেই তার পরিচিতি উদ্ধৃত করছিঃ

“কেতন শেখের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায়। স্কুলজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন থেকে তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এবং বর্তমানে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিনস্টারে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। শিক্ষা ও অর্থনীতির গবেষনায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি ভূষিত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ স্কলারশীপ ও ওয়ার্ল্ড বিজনেস ইন্সটিটিউট ফেলোশীপে। কর-নীতি এবং কৃষি ও উন্নয়ন অর্থনীতির উপর লেখা তাঁর বেশ কিছু গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বমানের একাডেমিক জার্নালে। এছাড়াও জাগৃতি প্রকাশনী থেকে তার তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের অমর একুশে বইমেলায়। যুক্তরাজ্যের প্রবাস জীবনে তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে সমাদৃত হয়েছেন। স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডের এইলসবারীতে বসবাস করছেন"।

আমার বই দুটো এ বারের বইমেলায় বের না হলেও হয়তো আগামীতে কোন এক বইমেলায় হতো। আবার নাও হতে পারতো, এর একটা কারণ আমার ব্যক্তিগত আলসেমি আর প্রকাশকদের পেছনে ছুটতে অনীহা। ভাগ্য ভাল, আমার দুজন প্রকাশকই আমার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাদের সৌজন্য ও নম্রতা ভব্যতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের দ্বারস্থ হতে যেটুকু উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল, সেটুকু যুগিয়েছিলেন এই অধ্যাপক কেতন শেখ। সেই “মাচ নীডেড পুশ” টুকু দিয়ে ব্যক্তিজীবনে সদালাপী এবং আড্ডাপরায়ন এই গুণী ব্যক্তি আমাকে আজীবন ঋণী করে গেছেন।

ঢাকা
০২ এপ্রিল ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×