শারীরিক এমন কিছু বিষয় থাকে যা হয়তো আপাতত মোটেও ক্ষতিকর নয় কিন্তু বিয়ের পর বাচ্চা হওয়া বা উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই প্রতিটি ছেলে-মেয়ের বিয়ের আগে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেয়া ভালো। এতে যেমন ভবিষ্যৎ হয় নিশ্চিন্ত, তেমনি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন সঠিক তথ্য। অথচ আপনার সামান্য সচেতনতার অভাবে হয়তো সন্তান বয়ে আনবে নানা ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা আপনাদের জন্য হতে পারে স্থায়ী অশান্তির কারণ। তাই নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও বংশধরকে সুরক্ষিত করতে বিয়ের আগে অবশ্যই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিৎ।
সাধারণ পরীক্ষা
ছেলেমেয়ের বয়স বেশি না কম, শারীরিক উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের কোনো সমস্যা, হেপাটাইটিসসহ সব টিকা দেওয়া আছে কি না, পাত্র-পাত্রী নেশাগ্রস্ত কি না, তাদের মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কি না সব কিছু ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ত্রিশের পর প্রথম বাচ্চা নেওয়াটা খুবই ঝুঁকির ব্যাপার। তাই যাদের বেশি বয়সে বিয়ে হবে তাদের এই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে। এই ঝুঁকি কম বয়সের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে উভয় দিক বিবেচনা করা উত্তম।
বংশগত রোগ
বংশগত কিছু রোগ যেমন- থ্যালাসেমিয়া, মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশিতে এক ধরনের দুর্বলতা), নার্ভের বিশেষ কয়েকটি অসুখ, এপিলেপ্টিক ডিজঅর্ডার (মৃগী রোগ), মানসিক অসুস্থতা যেমন সিজোফ্রেনিয়া, হাতাশা, ব্রেস্ট ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, অ্যাজমা, গ্লুকোমা ইত্যাদি আছে কিনা জেনে নেয়া দরকার। বংশগত এসব রোগ সুস্থ শরীরেও যখন তখন দেখা দিতে পারে।
যৌন সমস্যা
যৌন অক্ষমতা বা ধ্বজভঙ্গ এবং সন্তান ধারণে অক্ষমতা থাকলে দম্পতির ভবিষ্যৎ পরিণতি ভালো হয় না। হরমোন ও সিমেন (শুক্র-ধারক বীর্য) অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে এর একটি সমাধান পাওয়া সম্ভব। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার সন্তান কামনা করে এবং বংশগতি রক্ষা করে। বন্ধ্যাত্ব হতে পারে পুরুষ-নারী উভয়ের। পারিবারিক জীবনে বন্ধ্যাত্ব চরম অশান্তির বড় কারণ। তাই আপাতদৃষ্টিতে এ সংক্রান্ত পরীক্ষা নিষ্প্রয়োজন মনে হলেও চিকিৎসা দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তরোগ
বিয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো রক্তের গ্রুপ নির্ণয়। রক্তের গ্রুপের ভিন্নতার কারণে পারিবারিক জীবনে কিছু জটিলতা হতে পারে। যাদের রক্তে আরএইচ ফ্যাক্টর নেই তাদের রক্তের গ্রুপ 'নেগেটিভ' বলা হয়। নেগেটিভ গ্রুপধারী কোনো নারীর সঙ্গে পজেটিভ গ্রুপধারী পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তান জন্মদানের সময় জটিলতা হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। শিশুর মৃত্যু হতে পারে। এর পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, রক্তের কোনো অসুখ আছে কি না পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে।
সতর্কতা
আমরা অধিকাংশ সময় এসব পরীক্ষা বিয়ের আগে করাতে ভয় পাই। কারণ পরীক্ষার ফল খারাপ কিছু হলে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্র চিন্তার পরিবর্তন আনা জরুরি। ভাবতে হবে, যদি সত্যিই কোনো সমস্যা থাকে তবে তার চিকিৎসা এবং বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। সমস্যার সমাধান আগেই করা উচিৎ, সমস্যায় পড়ে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কোনো মানে হয় না। তাই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬