দুরন্তবেগে আকাশপানে উঠে যাওয়া এক উষ্ণ প্রস্রবন
আধো ঘুম আধো জাগরনের পর যখন খুব ভোর সকালে ঘুম ভাংলো আর সাথে সাথে চোখ গেলো জানালায় । জানালার কাঁচ নামাতেই চোখে পড়লো অপরূপ এক প্রকৃতির দিকে। সে যে কখন গা থেকে অন্ধকারের চাদর ফেলে হালকা এক কুয়াশার শাল মুড়ি দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের ট্রেনের দুপাশ ঘেষে ঘুমের ঘোরে তা টেরই পাইনি ।
ট্রেনের জানালা থেকে সেই পাহাড়ি ঝিরি
এরই ফাঁকে ফাঁকে ডাইনে বায়ে কিছু পাহাড়ী ঝিরি চোখে পড়লো যা হয়তো চিয়াং মাই এর বিখ্যাত ঘোর বর্ষায় দুকুল ছাপিয়ে যায়।এখন শুকনোর দিন বলে পায়ের গোড়ালি ভেজানো নীলাভ সবুজ কিছু পানি এ খাদ থেকে সে খাদে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে।
সারি সারি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সাপের মত একে বেকে ছুটে চলেছে আমাদের ট্রেন। গন্তব্যে পৌছাতে তার এখনও ছয় ঘন্টা বাকি।
দূরে রঙ্গীন পাতায় ঢাকা পাহাড়
বর্নিল রঙীন পাতায় ঢাকা পাহাড়গুলোকে বেশ মোহনীয়ই লাগছে। এদের বেশিরভাগই আমার পরিচিত গাছ গাছালি যেমন সেগুন, মেহগনি, শাল ছাড়াও বিভিন্ন কাঠের গাছ।আর তারই ফাঁকে আগুন ছড়ানো পলাশ আর শিমুল ফুটে থাকা গাছগুলো যেন আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে এই ভিন দেশেও বসন্ত এসেছে । রেলপথের দুপাশে বাঁশের ঝাড় থেকে শুরু করে জংলীগাছের ঝোপ সবই আমাদের দেশের মতই বড্ড চেনাজানা মনে হলো। পথের পাঁচালীর সেই অপুর মত প্রকৃতিতে মুগ্ধ আমি শুধু একাই নই, বগির অন্য যাত্রীরাও নির্বাক কেউবা ছবি তুলে নিচ্ছে অবিরত।
এই দৃশ্য দেখলে কে ভাববে আমাদের দেশ থেকে হাজার মাইল দুরের এক দেশ।
ট্রেনটি এক্সপ্রেস হলেও যাত্রী ওঠা নামার জন্য প্রায় অনেক স্টেশনেই কয়েক মিনিটের জন্য থামছিলো। আবার কখনও প্লাটফর্মের বাইরে থেমে সুপার ফাস্ট স্পেশাল ট্রেনগুলোকে পাস করার সুযোগ দিচ্ছিল। সুউচ্চ পাহাড় ভেদ করে চিয়াং মাই শহরে যেতে হলে আপনাকে ছোট বড় দুটো টানেল পার হতে হবে। সেই ঘোর ভুতুড়ে অন্ধকার বড় টানেলের(১.৩ কিঃমিঃ)ভেতর ট্রেনটা প্রবেশ করা মাত্রই প্রচন্ড গম গম আওয়াজ করে উঠলো।বহুবার টানেলের ভেতর দিয়ে পাহাড় পেরিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা থাকলেও বের হয়ে ঐ পাশে আলো না দেখা পর্যন্ত আমার কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসে।
অচেনা এক ছোট্ট ট্রেন স্টেশন
পাহাড় থেকে বেরিয়ে এবার সমতল আর রেল লাইনের দুপাশ জুড়ে বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে ফলের বাগান।এদের মাঝে মুকুলে ছেয়ে থাকা আমাদের চির পরিচিত আম আর লিচু গাছও নজরে এলো। জনমানব শুন্য এতাটা পথ পেরিয়ে আসার পর ছোট একটা নদী,বিচ্ছিন্ন দু একটা বাড়ী-ঘর, পথ ঘাট আর পথিক মিলিয়ে ধীরে ধীরে একটি লোকালয়ের অবয়ব ফুটে উঠলো।
দুরের ঐ যে ঐ সেতুটি পেরিয়ে গেলেই চোখে পড়বে লোকালয়
ঠিক সাড়ে এগারোটায় আমাদের ট্রেন এসে পৌছালো চিয়াং মাই এর প্রধান রেল স্টেশনে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম সেই স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাত্রীরা যে যার মত রওনা দিচ্ছে। আমরাও বের হয়ে এসে দেখি ব্যাংককে আমাদের অতি পরিচিত সেই সবুজ-হলুদ বা গোলাপী রঙ্গা কোন মিটার ট্যাক্সি ক্যাবই নেই, নেই সেদেশের বিখ্যাত টুকটুক।
আমাদের টেম্পু,স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘songtaews’
তার বদলে সামনের চত্বরে বোঝাই হয়ে আছে লাল রঙ এর বেশ বড় সাইজের অনেকগুলো টেম্পু, একে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘songtaews। এগুলো কি ভাবে ভাড়া করতে হয় এনিয়ে যখন দুজন ভাবছি সে সময় এক জন এগিয়ে এসে জানতে চাইলো আমরা কোথায় যাবো? হোটেলের ঠিকানা দিতেই সে আমাদের অমন একটা টেম্পুতে উঠিয়ে দিল।আমাদের দুজনকে নিয়েই হোটেলের দিকে রওনা হলো, ভাড়া মাথা পিছু ৫০ বাথ।
রাতের আলোয় সেজে আছে চিয়াং মাই এর বিখ্যাত নাইট বাজার
আমাদের হোটেলটি ছিল শহরের যাকে বলে প্রান কেন্দ্র একেবারে নাইট বাজারের পাশেই। বিগত দিনের কিছু নীরস অভিজ্ঞতা থেকেই শহরের প্রানকেন্দ্রে হোটেল নির্বাচন। চেয়ে দেখি চারিদিকে শ্বেতাংগ ট্যুরিষ্ট গিজ গিজ করছে, কেউ সপরিবারে কেউবা একা অথবা সংগী সহ। কিছু কিছু ব্যাগপ্যাকার্সদের পোশাক- আশাকে মনে হবে আমি কলকাতার সাদার স্ট্রীটে আছি। তবে পথে ঘাটের পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে আকাশ পাতাল তফাত এই যা। আমাদের কল্পনায় ছিল পুরো চিয়াং মাই শহরটি বুঝি পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বসানো। কিন্ত না, অনেক পাহাড় পাড়ি দিয়ে আসলেও পুরো শহরটি একেবারেই সমতলে।তবে শহরের চারিদিকে তাকালে দূরে আবছা মত পাহাড় দেখা যায়।
নীচে উপত্যকায় ঘন কুয়াশায় দেখা যাচ্ছে এক সময়ের বিখ্যাত লান্না রাজ্যের রাজধানী চিয়াং মাই ।
হোটেলে আসতে আসতে সোয়া বারোটা বাজায় সাথে সাথেই রুম পেয়ে গেলাম। বিখ্যাত হোটেল মোটেল বুকিং কোম্পানী বুকিং ডট কমের সদস্য হওয়ায় ছাড় পেয়ে ভাড়া প্রতি দিন ১০০০/= বাথ ঠিক হলো। সাত দিনের জন্য নেয়া হলো সাত হাজার বাথে। হোটেলটি একদমই নতুন এবং আধুনিক কিন্ত থাকার জন্য আরামদায়ক নয়। স্যুটকেস রেখে রুমে রাখা চা কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হোলাম খাবারের খোজে। হোটেলের গার্ড আমাদের পোশাক দেখেই জানালো ডান দিকে গেলেই একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে।
সোমতাম , চিকেন ফ্রাই ও স্টিকি রাইস
আমরা সেই রেস্তোরা খুজে না পেয়ে ছোটখাটো একটা থাই খাবারের রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম।আমি বেশী ঝামেলায় না গিয়ে কাঁচা পেপের সালাদ সোমতাম অর্ডার করলাম। সাথে ফ্রাইড চিকেন আর স্টিকি রাইস “খাও নিয়ে”।ব্যাংককের চেয়ে এখানে সব কিছুরই দাম কম মনে হলো। আর একটা সুবিধা পর্যটনের শহর হওয়াতে এখানে সবাই মোটামুটি ভালো ইংরাজী বলতে পারে, ব্যংককের অবস্থা না।
আমাদের হোটেলের পাশেই তিন চারটা মানি এক্সচেঞ্জ এবং ট্যুর অপারেট এর অফিস ।
হোটেলের পাশে পাতার ফাকে ফুটে থাকা লাল ফুলটি নাকি রুদ্র পলাশ
থাইল্যান্ডে বেশিরভাগ ব্যবসাই পরিবার কেন্দ্রিক। রেস্তোরা থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই সবাই মিলে ব্যাবসা পরিচালনা করে। মা বোন রান্না করছে, ভাই পরিবেশন আর বাবা ক্যাশ বাক্স সামলাচ্ছে। এখানেও দেখলাম মহিলারা ডেস্কে বসা কাস্টমারের সাথে লেনদেন করছে আর স্বামী বা ছেলেরা হয়তো নিজস্ব গাড়ী/ভ্যান নিয়ে পর্যটকদের ঘুরিয়ে আনছে বিভিন্ন স্পট থেকে।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গালের এক ছোট্ট কফি শপ
এক ট্যুর কোম্পানীর সাথে আলাপ হলো কি কি দেখার আছে আর আমরা কি দেখতে পারি। আমার সহ-পর্যটক এখানে আসার আগেই ঘোষনা দিয়েছিল যে সে থাইল্যান্ডের একেবারে উত্তর সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ী শহর চিয়াং রাই যাবে আর বিখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল এলাকাটি দেখবেই দেখবে। আমি যদি না যাই তবে যেন হোটেলে বসে থাকি।
এই বিড়ালটি যেমন বসে আছে ক্যাট ক্যাফের মেনু বই এর উপর, তেমনি যেন ঘরে বসে থাকি
পাহাড়ের পাক-দন্ডী পথে চক্কর দিতে দিতে ২৫৬ কিঃমিঃ দূরের সেই চিয়াং রাই যেতে হবে ভেবে আমার ভেতরটা শুকিয়ে উঠলো। মনে পড়লো ভুটানের কথা, এমন পাহাড়ি পথে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি পুনাখা পার হয়ে ওয়াংডি পৌছানোর পর। যার জন্য চুড়ান্ত গন্তব্য সেই পবজিখা যেখানে রয়েছে হাজারো রংগের রডোড্রেন্ডন ফুল আর তিব্বত থেকে উড়ে আসা ব্ল্যাক নেক ক্রেইন এর নাচ না দেখেই ফিরে এসেছিলাম তিনজন মাথাপিছু ৭৪ ইউএস ডলার গচ্চা দিয়ে।
পাহাড়ী পথে ঘুরে ঘুরে ওঠা
আমার ভয়ের কথা শুনে ভদ্রমহিলা জানালো চিয়াং রাই যাবার সেই পীচ ঢালা হাইওয়ে নাকি খুবই সুন্দর, মসৃন আর চওড়া । আকাবাঁকা পথ থাকলেও তা টের পাওয়া যায় না। শুনে রাজী হোলাম, না হলে সারা জীবন আমার হয়তো একটা আফসোসই থেকে যেত।
সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা দিয়ে রাত আটটায় ফিরে আসা এর মাঝে বিভিন্ন সাইট সিয়িং প্রোগ্রাম মাথা পিছু টিকিট ৮৫০ বাথ। লাঞ্চ সহ একটি মন্দিরে ঢোকার ৫০ বাথের টিকিট এতে অন্তর্ভুক্ত। আগামীকাল সকাল সাতটায় ভ্যান আসবে আমাদের হোটেল থেকে তুলে নিতে। আমরা যেন লাউঞ্জে রেডী থাকি। হাই এস বা টয়োটা এমন বিভিন্ন কোম্পানীর লাক্সারী মাইক্রোবাসগুলো থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়ায় ভ্যান নামে পরিচিত।
১২৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তর থাইল্যান্ডের বিখ্যাত লান্না রাজত্বকালে নির্মিত দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ।
পরদিন ঠিক সময়ে ভ্যান এসে হাজির। ড্রাইভার লিষ্ট দেখে নাম ধরে ডেকে নিল আমাদের। ড্রাইভার আর একটি অল্প বয়সী মেয়ে গাইড ছাড়া গাড়ীতে আমরা বিভিন্ন দেশের মোট তের জন পর্যটক ছিলাম। গাড়ী চলতে শুরুর সাথে সাথে গাইড পানিতা সামনের সিট থেকে মাথা ঘুরিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে সবার সাথে পরিচিত হলো,সেই সাথে আমাদের ট্যুর প্ল্যানটাও জানিয়ে দিল।
দেয়াল ঘেরা চিয়াং মাই শহরের দেয়ালগুলো মাঝে মাঝে ভেঙ্গে পড়লেও সংস্কারের ফলে গেটগুলো অটুট।
ঝকঝকে নীল আকাশ সুন্দর দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে একদা গৌরবময় লান্না রাজত্বকালের নিরাপত্তা দেয়ালবেষ্টিত শেষ রাজধানী চিয়াং মাই শহর থেকে বের হয়ে আসলো আমাদের বাস। দক্ষ চালক চলতে শুরু করলো চার লেনের চওড়া এক মসৃন ঝা চকচকে পথ ধরে। চারিদিকে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। দুপাশে হাল্কা থেকে গাঢ় সবুজবনে ছাওয়া পাহাড়ের পর পাহাড় পার হয়ে চলেছি।
এখনো অনেক পথ বাকি বহু দূর দূর যেতে হবে ।
পাহাড় পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাবার জন্য সেই সমতল রাস্তায় এত বড় বড় বাঁক নিয়ে ঘুরে ঘুরে উঠছি যে টেরই পাইনি আমরা কখন এত উপরে উঠে গেছি।আবার একটু পর পরই নেমে আসছি সমতলে। দ্রুতগামী সেই ভ্যানের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি রাস্তার দু পাশে ছোট ছোট ছাপড়া দোকানে স্থানীয় পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রী করছে।যার মধ্যে আনারসটাই নজরে পড়লো বেশি।
পথের ধারে এমন করে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ফল
আমাদের প্রথম গন্তব্য হলো চিয়াং মাই থেকে ৬৫ কিলোমিটার দুরত্বের এক প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবন যা গাইড আগেই জানিয়েছিল। সেই বহু আগে ঊষ্ণ প্রস্রবন সম্পর্কে পড়েছি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বইতে। আর সেটা ছিল আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক যার বিবরণ ছাড়াও ছবি দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। সে সময় টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেল ছিলো না। ইয়েলোস্টোন না হলেও কোন এক উষ্ণ প্রস্রবন আমি স্বচক্ষে দেখবো ভাবতেই উত্তেজনা বোধ করছি।
এই সেই প্রাকৃতিক ঊষ্ণ প্রস্রবন
এক ঘন্টার একটু বেশী চলার পর আমাদের যাত্রা পথ ১১৮ নম্বর মহাসড়কের বাঁদিকে এক খোলা চত্বরে ভ্যান থামলো। চত্বরে প্রবেশের মুখেই চারিদিক শিলা পাথরে বাধানো স্বপ্নের সেই ঊষ্ণ প্রস্রবন যার উপরে ঝোলানো কাঠের সাইনবোর্ডে নাম লেখা Thaweesin Hot Spring”।
Thaweesin Hot Spring”
এখানে সময় পনের মিনিট কারন আমাদের শেষ গন্তব্য গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল যে আরো প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে। এই পথের দু পাশেই অনেক উষ্ণ প্রস্রবন রয়েছে তবে পর্যটক-বান্ধব বলে বেশিরভাগ ট্যুরিষ্ট কোম্পানী তাদের অতিথিদের এখানেই নিয়ে আসে। তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমেই দৌড়ে গেলাম সেই ফোয়ারার কাছে। বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম খানিক পর পরই ফোয়ারা থেকে বাস্প সহ গরম পানি তীব্র গতিতে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে, যার উষ্ণতা প্রায় ৯৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
বাস থেকে নেমেই উপর থেকে নেমে আসা উষ্ণ প্রস্রবনের দিকে এগিয়ে চলেছে সবাই
এখানে পর্যটকদের জন্য প্রধানত তিনটি আকর্ষনের মাঝে প্রথম হলো উষ্ণ প্রস্রবনের পানিতে এক মিনিটে সেদ্ধ করা ডিম। বাস থেকে নামার সাথে সাথেই আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো স্থানীয় পোশাকের কিছু মেয়ে, তাদের হাতে একটি লাঠি আর তার ডগায় ছোট ছোট ঝুড়ির ভেতর মুরগী আর কোয়েলের ডিম। দরিদ্র পরিবারের সেই মেয়েগুলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে জানালো আমরা চাইলে দু মিনিটের মধ্যে গরম ঝরনার জলে এই ডিম সেদ্ধ করে দেবে। অনেকেই শুধু পদ্ধতিটি দেখার জন্য তাদের কাছ থেকে ডিম কিনছিল ।
উষ্ণ প্রস্রবনের পানিতে ডিম সেদ্ধ হচ্ছে ।
আমরাও কিছু কোয়েলের সেদ্ধ ডিম কিনে সামান্য এগুতেই দেখি দ্বিতীয় আকর্ষন ফুট স্পা অর্থাৎ গরম পানিতে পা চুবিয়ে বসে আছে কিছু নারী পুরুষ। পশ্চিম বিশ্বের শেতাংগ পর্যটক ছাড়াও বেশিরভাগই ছিল চীনা আর জাপানীজ পর্যটক। থাই বা কোরিয়ান ছিল কি না বুঝতে পারি নি । আর আমরা দুজনাই তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করছিলাম।
ফুট স্পাতে পর্যটক
সবুজ পাহাড়ের দিক থেকে নেমে আসা প্রচুর সালফার সমৃদ্ধ ঝরনার কুসুম কুসুম সেই গরম জলে পা চুবিয়ে বসে থাকার ব্যাপারটি বেশ আকর্ষনীয়ই মনে হচ্ছিল । কিন্ত স্নিকার পরা থাকায় দ্বিতীয় আকর্ষনও আমার কাজে লাগলো না,কে জুতা মোজা খুলবে আবার পড়বে! এ ছাড়াও রয়েছে ফিস স্পা ।একুরিয়াম বোঝাই ক্ষুদে মাছ, আপনি পা চুবিয়ে বসে থাকলেই হলো, মাছরাই চেটেপুটে খেয়ে করে দেবে আপনার পাকে ঝকঝকে তকতকে। সময় কম তাই সেটাও বাদ গেলো ।
স্যুভেনীর শপ
আর তৃতীয়ত হলো স্থানীয় স্যুভেনীরের দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা। স্থানীয় নকঁশায় পাহাড়ী জনগনের হাতে তৈরী বিভিন্ন জিনিস ছাড়াও রয়েছে চিয়াং মাই এর বিখ্যাত খাঁটি রূপোর গহনা আর ঘর সজ্জার সম্ভার।স্যুভেনীর আর কিনবো না বলে পণ করেছি। রাখার জায়গা নেই ঘরে,তাই আর ঐদিকে গেলামই না।
কফি খাবার পালা
প্রিয় ভুট্টা সেদ্ধ দিয়ে নিয়ে অগত্যা গিয়ে বসলাম এক কফি শপে নাম সাবাই কফি শপ। উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ী জনগোষ্ঠী যারা এক সময় পপি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো রাজা ভুমিবলের অক্লান্ত চেষ্টায় বদলে যাওয়া সেই আদিবাসীরা রয়েল প্রোজেক্টের সহায়তায় উৎপাদন করছে বিশ্বখ্যাত এরাবিকা কফি । সেই অসাধারন ফ্লেভার যুক্ত কফির স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে আমার।
হট স্প্রিং চত্বরের এক পাশে রয়েছে খেমার নকশায় তৈরী মন্দির ।
পনেরো মিনিট শেষ হলো আমরা আস্তে আস্তে ভ্যানে গিয়ে বসলাম। আবার চলা শুরু হলো । এবারের গন্তব্য ওয়াট রঙ খুন বা হোয়াইট টেম্পল যার বিস্তারিত বর্ননা আমি আগের পোষ্টে দিয়েছি। তাই আর পুনরুক্তি করলাম না । তারপর আছে লম্বা গলার কায়ান মেয়েদের গ্রাম সহ আরো অনেক কিছুই । সাথে থাকবেন আশাকরি ।
ছবি :- ফলের ছবিটি নেট থেকে বাকি সব আমাদের ক্যামেরা আর মোবাইলে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০