
ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠলাম সসন্মানে । আমাদের স্কুলটা দুটো সিফটে ছিল।সকালে মেয়েরা, দুপুর থেকে ছেলেরা ।
যথারীতি ক্লাস শুরূ হলো একমাস পর থেকে।বান্ধবীদের সাথে বেশ অনেক দিন পর দেখা খুব খুশী।
সেই খুশীর মধ্যে এক মূর্তিমান আতংক হয়ে আসল আমাদের অংক স্যার। উনি ছিলেন ছেলেদের সিফটে, কি কারনে যে তার আমাদের শিফটে আগমন ঘটলো তা আল্লাহ্ পাকই ভালো জানেন!
স্যার ছিলেন বেটেখাট মতন,চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করা, চেহারাটা ছিল গোলগাল , চোখ দুটো ভাটার মতন গোলগোল, শরীরটা সব সময় পেছন দিকে হেলে থাকতো। আমরা আড়ালে ডাকতাম চিৎ স্যার !
ক্লাসে ঢুকেই এক হাতে ডাস্টার আর আরেক হাতে চক নিয়ে কোনো কথা না,
কি থেকে কি হচ্ছে, কিচ্ছু না ,সারা বোর্ড জুড়ে এক বিশাল অংক করতো।
তারপরেই আমাদের দিকে তাকিয়ে বিশাল গোল গোল চক্ষু দুটো পাকিয়ে চিৎকার করে প্রশ্ন করতো, 'গার্লস তোমরা কি অংকটা বুঝেছো '?
আমরা না বুঝেই সমস্বরে বলতাম 'জী স্যার'
বলার সাথে সাথেই উনি ওটা মুছে আরেকটা অংক একে ফেলতো।
আমরা সাহসী দু একজন দু একবার বলতে চেয়েছিলাম 'বুঝিনি' ।
তাতে উনি আমদের জ্ঞান গরিমা এবং মগজ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে এমন বকাবকি করেছিলেন যে আমরা দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করিনি।
যাইহোক এর ফলে আমাদের অংকের বুনিয়াদ এতই শক্তিশালী হলো যে আমরা পুরো ক্লাস অংকে ফেল করলাম।
তাকে যে কেন ছেলেদের শিফট্ থেকে আমাদের এখানে প্রেরন তার কারনও বুঝলাম। তৈলাক্ত বাঁশ আর বাপ ছেলের বয়স বের করার অংক রুবিক কিউবের পাজলের চেয়েও জটিল।সরল যে এত গরল তা ঐ স্যারের কল্যানেই বুঝতে পারলাম।
সব সাবজেক্টে ৭০/৮০র ঘরে নাম্বার উঠছে, শুধু অংকে৪০/৫০। তিন বছর তার হাতে পরে আমরা পাশ ফেল, পাশ ফেল করে নাইনে উঠলাম।
এখানে নতুন স্যার খুবই ভাল। কিন্ত আমাদের তো গোড়াতেই গলদ।
যাক এবার এসএসসি পরীক্ষা এক মাস বাকী। মা আমার অবস্থা দেখে খুব শীঘ্রই আমার জন্য একজন গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করলেন।
স্যার সে বারই ঢাবি থেকে অংকে অনার্স সহ মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম স্হান অধিকার করে ওনার বিভাগেই চাকুরীর দরখাস্ত করে বসে আছেন। আর তারই উপর দায়িত্ব পড়লো আমার মতন গাধা পিটিয়ে মানুষ করার। ওনার অপরিসীম ধৈর্য্যকে এখনো ধন্যবাদ জানাই। আমাকে মনে হয় উনি মুখস্হ করিয়ে দিচ্ছিলেন।
যাক আসল কথায় আসি।পরীক্ষা শুরু।পন্চম দিন অংক। জীরো কনফিডেন্স নিয়ে হলে গেলাম। প্রশ্ন দেখলাম, ৬০ এর উত্তর দিতে পারবো। জ্যামিতির দিকে তো চেয়েও দেখিনি।
কারন এবিসি একটি ত্রিভূজ ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছুই জানতামনা।
যাই হোক যে মেয়েটা আমার পাশে (অন্য স্কুলের) বসে গত চার দিন ধরে অনবরত প্রায় সাদা খাতা জমা দিয়ে যাচ্ছে ,আজ তাকিয়ে দেখলাম আমার করা দুটো অংকের ফল ওর অংকের চেয়ে ভিন্ন। আমি জানি আমারটাই ঠিক, অংক দুটো আমার মুখস্ত, তারপরও নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাবে আমার ১৪ নম্বরের সঠিক অংক দুটো কেটে সাদা খাতার করা অংক লিখে আসলাম।
বাসার স্যার শুনে খুব মন খারাপ করলো।
ফল বের হলে দেখা গেল ৪৬।
যাক পরবর্তী জীবনে অংক আর কোনদিন আমার জীবনে আসেনি।
তা নাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সহ মাস্টার্সে দ্বিতীয় স্হান অধিকার করে জীবনে পাশ করতে হতোনা।
এই জন্য ব্লগে অংক সম্পর্কে কোন পোস্ট দেখলে আমি দুরে দুরে রই !!
ছবিটি নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১৭