somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরে যাওয়ার দিনগুলি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালের দিকের ঘটনা,আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এক মেয়ের সাথে পরিচিত হই। প্রথম দেখাতেই শ্যাম বর্ণের মেয়েটাকে দেখে ভীষন ভাল লেগে যাই। কিন্তু বয়সে আমার থেকে ৩/৪ বছরের বড় হওয়ার কারনে তাকে আমার ভাল লাগার কথা জানাতে পারিনি সেদিন। সেদিন তার ফোন নাম্বারটা নিছিলাম। প্রায়ই মাসখানেক কিংবা ১৫ দিন পর পর খুব ভয়ে ভয়ে ফোন দিতাম। বিশেষ বিশেষ দিন যেমন পহেলা বৈশাখ,ঈদের দিন গুলোতে এসএমএস করে উইশ করতাম। কোন কোন সময়ে ফোনে আমার অনুভূতির কথা জানাতে গিয়েও জানাতে পারিনি, কোন এক অজানা ভয়ে। এভাবেই তিনটা বছর কেটে যায়। ২০১১,১২,১৩ সর্বশেষ ২০১৪ এর শেষের দিকে তার সাথে একটু বেশীই কথা হত। যদিও কথাগুলো খুব স্বাভাবিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
.....
তখন "ফেসবুক " বলে যে কিছু আছে তা আমার ধারনা ছিল না। এরপর একদিন সে আমাকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দেয়। এরপর ম্যাক্সিমাম টাইম ফেসবুকেই চ্যাটিং হত।
দিনটা ছিল ২০১৪ সালের ২২ শে ডিসেম্বর।
চ্যাটিং কথার বলার একসময়ে আমি একদিন আমার সব অনুভূতিগুলো অকপটে বলে ফেলছিলাম। ও খুব অবাক হয়েছিল আমার এসব শুনে। ঠিক পরের দিন থেকে থেকে সে কথা বলতে খুব ইতস্তত করতো।
এরপর থেকে সে আমাকে খুব এভয়েড করার চেষ্টা করতো। আমাকে বোঝাতো আমি তার বয়সে ছোট। সে বয়সে বড় হয়ে এরকম সম্পর্কে যেতে পারবে না। এতে বরং আমি কষ্ট পাবো। আমি ফোন দিলে সে ফোন না দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করতো।

তারপর তাকে অনেক অনুনয় বিনয় করে বলছিলাম,"আপনাকে আমার সাথে কোন সম্পর্কে যাওয়া লাগবে না,আপনি আগেই যেমন কথা বলতেন তেমনই বলেন! কিন্তু আমার অনুভূতি গুলো আপনাকে বলতে দিন।"

তারপর আমার কথায় সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে কথা বলতো। আমরা আবারও কথা বলতে শুরু করলাম। তখন থেকে প্রায়ই সময় কথা বলতাম। আমার অনুভূতিগুলো তাকে জানাইতাম। ম্যক্সিমাম টাইম চ্যাটিং - এই কথা হত। ফোনেও বেশ কথা হত।
এভাবে দুটো বছর কেটে গেল ২০১৫,১৬ । দুটো বছরে আমরা ম্যক্সিমাম কথা বলেছি, শুধুমাত্র,কি করছেন,কেমন আছেন,কি খবর এসব কথা বলেই রেগুলার ৩/৪ ঘন্টা ফোনে কথা বলতাম।
কিন্তু সে আমাদের এই কথাবলাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রন করেছিল যে আমি তাকে "আপনি" সম্বোধন থেকে কখনও "তুমি"তেও আসতে পারিনি । আমি যখন আমার ফিলিংসগুলো শেয়ার করতাম প্রতিউত্তরে তার কোন রিয়েক্ট ছিলনা। এতে করে আমি বরং আরও ভীষন কষ্টে পেতাম, নিজের ভিতরে নিজেই জ্বলতাম,ছারখার হতাম। দিনদিন বিষিয়ে উঠতাম। কিন্তু তাকে কখনও বুঝতে দিতাম না। ও কোন ভাবেই বুঝতে পারলে কথা বলতে চাইতো না,বলতো " তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা!" আমি কষ্ট পেতাম বুঝলে সে আরও বেশী উপেক্ষা করতো।
....
২০১৬ সালের দিকে সে আমার সাথে কোন রকম সম্পর্কে যাবে না জেনেও বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। তার পরিবারের কাছে গিয়ে। সবাই আমার এই প্রস্তাবে কৌতুক এবং হাস্যকর ভাবে নিল। যাহোক সে রাজি না থাকায় সেটা আর হলো না। দীর্ঘ ৫ টা বছর পরে এসে কেন যেন মনে হল,একটা মানুষ যে আমাকে পাঁচ টা বছর কোন দিক পাত্তাই দিলনা। শুধু করুনা করে কথা বলে, কিন্তু কেন তার সাথে এরকম কথা বলে যাবো, যার কাছে আমার অনুভূতির কোন মূল্য নেই তার সাথে কেন কথা বলে নিজের কষ্ট বাড়াবো।

ওদিকে আমি তার সাথে কথা বলতে পারবো না ভাবলেই শিউরে উঠতাম। কি করে ভুলে যাবো এতগুলো বছর যাকে ধারন করে আছি।
ওদিকে আমার ভিতরের অবস্থা জানার পরে সেও নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইতো।একটা সময় আমি তাকে বাঁধা দিতাম না। কথা না বলতে চাইলেও জোর করতাম না।
......
২০১৬ সালের ৩০ শে আগস্ট। আমি তখন চিটাগং থাকতাম। খুব উদাসীন ছিলাম। বাড়িতেও কথা কম বলতাম। বেশ কয়েকদিন পরে সেদিন বিকালেও কথা হয়ছিল ওর সাথে। অনেকটা জমে থাকা মেঘগুলো হুট করে বৃষ্টির হয়ে ঝরে যাওয়ার মত সেদিন বিকালে আনন্দের সীমা ছিলনা,কারন অনেকদিন পরে কথা বলছে।

সেদিন ঠিক সন্ধ্যায় ও আমাকে আবারও ফোন করে বললো যে আমার সাথে আর কখনও কথা বলতে পারবে না,এটাই শেষ কথা। কারন ছিল সেদিন রাতেই আমারই কোন খালাতো ভাই এর সাথে ওর বিয়ে হবে। এটা শোনা মাত্রই আমার কাছে যেন সমস্ত পৃথিবীটা ধুসর হয়ে গেছিল।হুট করে আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে হল।
আমি আর কেন কথা বলতে পারিনি। প্রতিউত্তর না পাওয়ায় হয়তো ওপাশ থেকে ফোন টা কেটে গেছিল।

সেদিন অনাকাঙ্খিত কারনে মেডিকেলে ভর্তি হয়ছিলাম। মেডিকেল থেকে এসে আমার এই হঠাৎ পরিবর্তন আমার বন্ধু,কোয়ালিগ মানতে পারছিল না। সারাটা রাত ঘুমাইতে পারতাম না।
আমি তখন প্রচুর উদাসীন ছিলাম। আমার রিয়েল আইডি ডিলেট দিয়ে ফেক আইডি খুলে সারা রাত ওর আইডিতে ঘুরে ঘুরে দেখতাম। ফোনের পুরোনো মেসেজগুলো দেখতাম।
একটা সময়ে "আমার তাকে ভুলে যেতেই হবে" এই মনস্থির করে নিজেকে অসম্ভব ব্যস্ত রাখতাম। তার সব স্মৃতি,গিফট,ছবি,মেসেজ সবকিছু নষ্ট করে দিলাম। অফিসে ইচ্ছে করেই এক্সট্রা ডিউটি নিতাম,পারলে আরেকজনের ডিউটি নিজে করে দিতাম শুধু মাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য।
গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তাম যাতে তাকে ভুলে থাকতে পারি দোয়া করতাম,মানত হিসেবে নফল রোজা রাখতাম।
সারাটাদিন অফিস করে বিকালে খেলাধুলা, শরীরচর্চা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত থাকতাম।যাতে করে ক্লান্ত হয়ে রাতে ঘুমোতে পারি। রাত ১০ টা পর্যনৃত টিভি দেখা,রুমে এসে মুভি দেখা,গেইম,রুমে পিকনিক এ্যারেন্জ করা, রাত নাই, দিন নাই ঘুরতে বের হওয়া এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।
এভাবে অনেকগুলো মাস কেটে গেল। একটা সময়ে আবিষ্কার করলাম আমার মাথায় আর সে আগের মত আসে না আসলেও সেভাবে আসে না।
তারপর চলে আসছিলাম যশোরে। নতুন জায়গায় নতুন অফিসে সব নতুনত্ব আমার পুরানো দিনগুলোকে ভুলতে আরও সাহায্য করছিল।
একটা সময় আসলো তার কথা জোর করে মনে টেনে নিয়ে আসতে হইত এবং সে চলে যাওয়ার আফসোস আমার ভিতরে আর বিন্দুমাত্র উপলদ্ধি হত না কিংবা হলেও হত না।

এখন আমি অনেক ভাল আছি। মানুষের দিন কোন কারও জন্য হয়তো কিছুক্ষনের জন্য থমকে থাকে,কিন্তু সারাজীবনের জন্য থেমে থাকে না।

২০১৮ সালের জানুয়ারীর ৯ তারিখে বিকেল বেলা হুট করে একটা অচেনা নাম্বারে ফোন আসলো। আমি রিসিভি করে হ্যালো শব্দটা শুনেই চিনতে পারলাম। ফোনটা কেটে দিয়ে নাম্বার ব্লাক লিস্টে ভরে এক গ্লাস পানি খেয়ে মনে মনে বললাম," সে চলেই গেছো,সে দূরেই থাক না, যোজন যোজন দূরে"!

সে হয়ত চলে গেছে,তবে সে আমার সবটুকু নিয়ে চলে গেছে। অবশিষ্ট বলতে কিছু নাই।
আলহামদুলিল্লাহ।






সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৫
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×