somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাইসা ও আমি

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন ১৯৮৮ সাল।
আব্বা তখন ইরাকে একটি বিদেশী কনস্যুলেটে চাকরি করতো। রেডিও টিভিতে তখন প্রতিনিয়ত ভয়াবহ ইরাক - ইরান যুদ্ধের সংবাদ শুনতাম।প্রায়ই আব্বার কাছে আমরা বাড়ি থেকে চিঠি পাঠাইতাম,খোঁজ নিতাম যুদ্ধে আব্বার কোন সমস্যা হইছে কিনা। আব্বা যখন চিঠি পাঠাইতো বাড়িশুদ্ধ সবাই গোল হয়ে বসে চিঠি পড়া শুনতো।আব্বার ভাল খবর শুনেই আমার দাদি তখন "আলহামদুলিল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ " বলে খুশী প্রকাশ করতো। আমার অল্পবয়সী মায়ের চোখে
দেখতে পেতাম খুশীর অশ্রু।
আমাদের এলাকার পোস্ট অফিসের পিয়ন ছিল জলিল চাচা,বেশ মোটাসোটা,সবসময় একটা পাকিস্তানি আমলের খাকি ইউনিফর্ম টাইপ পড়ে থাকতো।জলিল চাচাদের বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ি থেকে ৫-৭ মিনিটের পথ।সেবার ঝড়ের কয়েকদিন পরেরে একদিন বিকালে জলিল চাচা মসজিদ থেকে নামায পড়ে আসার সময় আমাদের বাড়ির দরজায় নক করে বলে গেল,"কেউ কি বাড়িত আছো?"
আমার মা বাসার ভেতর থেকে উত্তর দিল," জ্বী ভাই আছি,কোন খবর আছে নাকি?
---হ্যা,ভাবি ইরাক থেকে রফিকের একটা চিঠি পাঠাইছে,সেটা দেওনের জন্য আসলাম।
আমার মা আমার ছোট ফুফুকে বললে, ফুফু গেটের দরজা খুলে জলিল চাচার কাছ থেকে চিঠিটা নিয়ে আসলো।তারপর আবার সবাই গোল হয়ে বসে চিঠি পড়া শুনা।আব্বা চিঠিতে জানতে চাইলো ঝড়ে আমাদের কোন ক্ষতি হয়ছে কিনা।বোধ হয় টিভি নিউজে শুনছে ঝড়ের খবর।
আমার তখন অষ্টম শ্রেনীতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে করে নবম শ্রেনীতে উঠছি মাত্র। গ্রামে আমাদের পাড়া থেকে আমি আর আমার এক পাড়াতো চাচাতো বোন রাইসা একসাথেই স্কুলে যেতাম। রাইসা আর আমি দুজনেই বিজ্ঞান বিভাগের হওয়াই স্কুল ছুটি হওয়ার পরে স্কুলের নন্দিতা ম্যাডামের কাছে কোচিং শেষে একসাথেই বাসায় ফিরতাম।
রাইসা আর আমাদের উভয়ের ফ্যামিলি ছিল খুবই রক্ষনশীল।সবথেকে বড় কথা আমি ছোট থেকেই একটা অভ্যাসে বড় হয়েছি যে ওদের সাথে আমাদের অনেক আগের একটা পুরানো দলাদলি ছিল।পাশাপাশি বাড়ি হওয়াইও কখনও ওদের বাসায় আমাদের কেউ বা আমাদের বাসায় ওদের কেউ আসতো না।
কি নিয়ে, বা কবে থেকে এই ঝগড়া দলাদলি তা আমি নিজেও জানিনা তবে এটা সত্য যে আমার জন্মের আগে থেকেই।কারন আমার এই ১৬ বছর বয়স অব্দী তাদের প্রাচীর ঘেরা বাড়ির মধ্যে আমি কখনও যায় নাই।কেন যায় নাই এটা নিয়ে আমার মধ্যে খুব একটা কৌতুহল ও ছিল না
শুধু এটুকু বুঝতাম আমার পরিবারের কেউ যেতনা তাই আমিও যেতাম না।

আমাদের বাড়ির সামনেই দিয়েই একটা মাটির রাস্তা।এই রাস্তা দিয়া ২ মিনিট হাটলেই ইটের রাস্তা পাওয়া যায়।প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় এই রাস্তায় এসে রাইসা আর আমি একসাথে হয়ে স্কুলে যেতাম।

সেদিন একদিন রাইসা আমায় জিজ্ঞেস করলো,"আচ্ছা তুই আমার সাথে স্কুলে যাস সেটা তোর বাসায় জানে?"
আমি ভুলেও হঠাৎ এরকম একটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বস্তুত আমি নিজেও জানিনা আমার বাসায় কেউ জানে কিনা!
কি বলবো হঠাৎ খুঁজে না পেয়ে চুপ থাকতে দেখে রাইসা আবার বললো,"কি রে বলিস না ক্যান"
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম,"হু,জানেতো,মা জানে,দাদী জানে,ফুফু জানে সবাই জানে"
রাইসা চাঁদে হাতে পাওয়ার মত খু্শী হয়ে চিৎকার করে বললো,
--সত্যি?
--হু সত্যি না তো কি;তো র বাসায় সবাই জানে?
রাইসা একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,"হুম সবাই জানে,আব্বু জানে, ভাইয়া জানে, আম্মু জানে,দাদু জানে,চাচু জানে "

রাতে একা একা শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসছিল না।
রাত বাড়ার সাথে সাথে রাইসাকে মিথ্যা বলে খুশীর করার অপরাধটা আমার ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
আমি এটকু জানি যে রাইসা আমায় বিশ্বাস করে,কোনদিন যদি জানতে পারে যে আসলে আমার বাসায় কেউ জানতো না,সেদিন কি ভাববে!! এই কল্পনীয় ভয় আমার বিবেকবোধে সার্বক্ষনিক আঘাত করতে থাকলো।

.

দিন যায়,মাস যায়, সময়ের তরী নদী বেয়ে সামনে এগোয়,কৈশোরের গন্ডি পেরিয়ে পা দিই বিতর্কিত যৌবনে। ভেতরে তখন কৈশোর হারানোর খাঁ খাঁ আর্তনাদ,এই রাস্তা,এই মাঠ,এই ঘর,এই স্কুল,বৃষ্টি,রাইসা সবকিছু স্মৃতি হয়ে মেঘ মেদুর আকাশে তুমুল গর্জন।
দিনকে দিন রাইসা আর আমার ভাই বোনের সৌহার্দ্যতা শূন্যের কোঠায়।

তার আগে একটা ঘটনা বলি।সেদিন আমার দাদি কিভাবে যেন জানতে পাড়লো,আমি আর রাইসা একসাথেই স্কুলে যায় আসি।
তারপরের কথা আর নাই বলি।
আমাদের স্কুলে একসাথে যাওয়া আসা বন্ধ।শুধু মাত্র স্কুলে থাকার সময়টুকুই রাইসার সাথে থাকা,বাকি সময়টা দুজনেই আলাদা।প্রতিটা দিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে অপেক্ষা করতাম,কখন বিকাল শেষে রাত আসবে,রাত ফিরে নতুন দিন ফুটবে,স্কুলের ঘন্টা বাজবে।আমার অবুঝ মন কি যেন অজানা টানের খাতিরে তোলপাড় হয়ে অপেক্ষা করতো রাইসার জন্য।
তখন দশম শ্রেনীর সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষার সামনে রাইসা বায়োলজি ক্লাস শেষ করে আমার জন্য বারান্দায় দাড়ালো।স্যার সহ সব ছাত্র-ছাত্রী চলে যাওয়ার পরে আমি রাইসাকে ডেকে বললাম,"চল একসাথে যাবো বাসায়"
রাইসা চোখে মুখে ভয় নিয়ে বললো এক নিঃশ্বাসে,"না আব্বু জানতে পারলে আমায় মেরে ফেলবে,তোর দাদী এসে আমাদের বাড়ি এসে বলে গেছে,মেয়ে ঠিক রাখতে পারো না,আমাগো পোলাগের সাথে নির্লজ্জের মত স্কুলে যায়,"
তারপর আবার নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,"তুই না সেদিন বলছিলি,তোর বাসার সবাই জানে,এই নাকি সবাই জানে?"
আমি কোন উত্তর দিলাম না, নির্লজ্জের মত রাইসার হাত টা ধরে বললাম," রাইসা সেদিন আমি মিথ্যা বলছিলাম ভয়ে"
--কিসের ভয়?
-- তুই যদি আর আমার সাথে না যাস সেই ভয়ে।
--না গেলে না গেলাম, এটাতে ভয়ের কি আছে?
--বলিস কি এটাতে ভয়ের কিছু নেই! তোর কি একটু ভয় লাগতো না,কবে না জানি ..........
রাইসার আমার হাতের আঙ্গুল গুলো জোরে চাপ দিয়ে বললো,"অনেক ভয় হত রে জয়! এখনও করে ভয়।"
--এখন কিসের ভয়?
--তখন ছিল একসাথে স্কুলে না যেতে পারার ভয়,আর এখন হারানোর ভয়।
রাইসার চোখ দুটো পানিতে ছল ছল করছে একটু পরেই গড়িয়ে পড়বে বলে।
১৬/১৭ বছর বয়সী একটা মেয়ে এতদিন ভিতরে একটা গোপন ব্যাথা,গোপন ভালবাসা,গোপন আর্তনাদ নিয়ে বেঁচে থাকতো, আজ একটু একটু তর্জনীর স্পর্শ লাগতেই বৃষ্টির মত বর্ষন হতে লাগলো।
আমি হাত দিয়ে রাইসার চোখের নিচে মুছে দিয়ে রাইসার আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুলগুলো সজোরে চেপে ধরে বললাম,"ভালবাসিস রাইসা?"
--- খুউব।
--আমিওও
--তুই মিথ্যা বলছিস,আগেও যেমন বলছিলি।
--আমি ব্যাকুল হয়ে বললাম,আমার মুখের কথা মিথ্যা,চোখের কথা শোন।

রাইসা কিছু না বলে ওড়নার মধ্যে চোখ মুছতে মুছতে আমাকে ডান হাত দিয়ে আমাকে আস্তে আস্তে আমার হাতে হাতে কয়েকবার আঘাত করে বললো,"আরও আগে বলিসনি কেন?"

ঠিক এমন সময় তালা চাবির শব্দে পিছনে ফিরে দেখলাম স্কুলের দফতর বিমল কাকা তালা দেয়ার জন্য আসছে।আমাদের দেখে বললো," কি ব্যাপার স্কুল ছুটি হয়ে গেছে কখন তোমরা এখানে কি করতেছো,দাড়াও আমি অমল স্যারকে ডেকে নিয়ে আসতেছি"
বলেই বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে সিটকিনি লাগানোর সময়,আমি দরজার গায়ের হাত দিয়ে আঘাত করে খোলার ইঙ্গিত করে ভিতর থেকে বললাম স্যার কে না বলার জন্য।
কে শোনে কার কথা, বিমল কাকার সিড়ি বেয়ে নামার শব্দ শুনে আমি রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাইসা কাঁপতেছে।
কিছুক্ষন পর অমল স্যার এসে আমাদের দুজনকে দেখে বেরিয়ে আসতে বললো,তারপর সপাৎ সপাৎ ২০ টা বেতের বাড়ি খেলাম দুজনে।

পরের দিন স্কুলে আমাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে সবকিছু জানালো।আমার অভিভাবক বলতে দাদী আসছিল স্কুলে।
সমস্ত স্কুল জুড়ে আমার আর রাইসারে নিয়ে কি বাজে কথা। এসব রিউমার স্কুল থেকে এলাকা,গ্রাম,খেলার মাঠ।ক্লাসের খুব কাছের বন্ধুটাও বলতো,"কি রে একাই একাই খেলি,আমাদের একটু জানালি না, কতদিন ধরে চলছিল এমন "
জুনিয়রদের ক্লাসের সামনে দিয়ে আসার সময় সবাই কানাখুসু করতো,কেউ কেউ একটু সুউচ্চ স্বরে বলতো,"এই দেখ,এই হলো সেই ছেলেটা"
আমি কারও কথার কোন উত্তর দিতাম না।নিজের মতই ছিলাম।
তারপর থেকে রাইসাকে আর ক্লাসে দেখি না।খুব ইচ্ছে করছিল ওকে একটু দেখার।কিন্তু সে সুযোগ আর ছিল না।
প্রায় মাস খানেক ধরে রাইসার কোন খবর পাইনা,কার কাছে যেন শুনছিলাম রাইসার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বিয়ে হবে।
৯১ সালের মে মাসের দিকে তখন আমার মেট্রিক পরীক্ষা শেষ। ইরাকে আব্বার সাথে থেকে পড়ালেখা করবো এই লিখে চিঠি পোস্ট করছিললাম আব্বার কাছে।তার তিন চার মাস পরে সবকিছু ব্যবস্থা হয়ে গেছিল।
বড় মামা আমাকে এয়ারপোর্ট এগিয়ে দিয়ে আসছিল।

যাওয়ার সময় রাইসার কথা খুব মনে পড়ছিল, কত দিন দেখিনা,শুনছিলাম প্রবাসী একটা ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।ছেলে বেলজিয়ামে থাকে।
মাস খানেক আগে শুনছিলাম রাইসাও নাকি তার জামাইয়ের সাথে ওখানে থাকে। একটা অসহ্য যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিলাম।
চলে যাওয়ার সময় স্কুলটার দিকে তাকিয়ে বার বার দফতরী বিমল কাকা আর অমল স্যারকে অভিশাপ দিতে মন চাচ্ছিল।
.
তারপর ইরাকে ছিলাম ৭ বছর পর।
ইরাকে যাওয়ার বছর তিনেক পরে এক চিঠিতে খবর পেয়েছিলাম দাদী মারাগেছে।আব্বা খুব ভেঙে পড়ছিল সেদিন।
২০০৩ সালে ইরাকে আমেরিকার হামলার পরে আব্বা আমাকে নিয়ে দেশে চলে আসে। তারপর আব্বার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে আমাকে বিয়েয়ে দেওয়া।
আমার বউ এর নাম নার্গিস।বিয়ের ২বছর পর আল্লাহর রহমতে আমাদের ঘরে ২ টা যমজ মেয়ে বাচ্চার জন্ম হয়
স্ত্রী সন্তান,মা বাবা নিয়ে আমরা একরকম সুখী পরিবার।

গত ৪/১৪/২০১৫ তারিখে আমার শশুরালয়ের এক রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতেছিলাম।আমার বাচ্চা দুইটা ওর নানী সাথে শুয়ে গল্প করতেছে।নার্গিস ওর বোনের সাথে গল্প করতেছে।
মেসেন্জারে স্ক্রলিং করতে করতে, মেসেন্জারের রিকোয়েস্ট বক্সে একটা মেসেজ জমা দেখলাম।
মেসেজটা ওপেন করে,পুরো একটা বাংলা রচনার মত একটা চিঠি দেখলাম,
পুরো নিঃশ্বাস নিয়ে চিঠিটা পড়লাম,

কেমন আছো,আমাকে চিনতে পারছো? আমি রাইসা? এখন চিনতে পারছো?চিনতে পারনি তো? আরে ওই যে তোমার বাসার পাশে যে রাইসার সাথে স্কুলে যেতে। ৮৯ সালের দিকে আমরা মেট্রিক পরীক্ষার্থী ছিলাম।এখন মনে পড়েছে।
তোমাকে অনেক খুঁজেছি ফেসবুকে বিয়ের পরে প্রথম দিকে যখন দেশের বাড়িতে যাইতাম তখন তুমি ছিলে ইরাকে। আব্বা মারা যাওয়ার পরে গত ১০ বছট যাবৎ আর কখনও যাওয়া হয়নি।তোমার ঠিকানা তে কত বার চিঠি পাঠানোর ট্রাই করছি।কিন্তু সাহস হয়ে ওঠেনি। যাহোক আমার বড় মেয়ে এখন ক্লাস সেভেন এ পড়ে।ওর কাছে থেকে ফেবু আইডি খুলে নিয়ে তোমাকে অনেক খুজেছি।কিন্তু পাইনি।প্রতদিনি যথারীতি খুঁজতে খুঁজতে আজ তোমার ছবিসহ তোমার একাউন্টখুঁজে পেয়ে তোমাকে মেসেজ করলাম।রিকু দিছি এক্সেপ্ট করো।আমার কথা তোমার কি এখনও মনে আছে? বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা।তোমাকে এখনও মনে পড়ে, প্রতি দিন, প্রতি মূহুর্তে গত দুই দশক আগের সেই স্মৃতি আমার এখনও মনে পড়ে।স্বামী,সংসার, সন্ততি কিছুই তোমাকে মুছিয়ে দিতে পারিনি।
আমি সব জেনেছি,তোমার বিয়ে,বাচ্চা,সব খবর রাখি তোমার অজান্তে।তোমার মেয়েবাবু দুইটা কেমন আছে? ওদের শরীর ভাল আছে তো?
শুনেছি সেই দফতরী বিমল কাকা, অমল স্যার তারা আর বেঁচে নাই।কি মারটা না খেয়েছিললাম সেদিন।তুমি খুব ব্যাথা পেয়েছিলে তাই না?
জানো,সেদিন বাসায় গিয়ে আবারও আব্বুর কাছে মার খেয়েছি।তারপর আর ঘরের বাইরে বের হতে দেইনি।আমার অমতে চাপ দিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য করছিল।বিয়ের আগের রাতে খুব কান্না কররছিলাম।পাগলের মত তোমাকে একবার দেখার জন্য খুব খুজছিলাম।একটা বার তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য কত কাউকে অনুরোধ করছিলাম।কিন্তু কেউ দিইনি।কতটা কষ্ট নিয়ে সেদিন বিয়ের লাল শাড়ী পরেছিলাম তা তোমায় বোঝাতে পারবো না।আমি জানি তুমি অনেক রক্ষনশীল পরিবারের ছেলে,তোমাকে বিয়ের ব্যপারটা বললেও টু শব্দটি করার ক্ষমতা ও তোমার ছিল না।তারপরেও আপন মনকে বুঝ দিতেই তোমার সাথে অন্তত একবার বলার বলার প্রয়োজন বোধ করছিলাম সেদিন।আমার স্বামী অনেক ভাল একজন মানুষ।বিয়ের পরে আমার সব অতীতগুলো ভুলতে অতি উৎসাহী হয়ে আমার স্বামীর সাথে বেলজিয়ামে পাড়ি জমাইছিলাম তোমাকে তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু কেন জানি আজও তোমায় ভুলতে পারিনি।
যাহোক এত কথা তোমায় এভাবে বলা ঠিক না জানি,তবুও আবেগের বশে বলেছি।
রিকুটা একসেপ্ট করিও।

বিণীত
রাইসা

মেসেজটা আমি পর পর ৭ বার পড়লাম। চোখের কোণা বেয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।আমার স্ত্রী নার্গিস দেখে ফেলার ভয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের মধ্যে ঢুকলাম।তারপর মেসেজটা আরও কয়েকবার পড়ে হু হু করে বাচ্চাদের মত কেঁদে ফেললাম।
আমি কি করবো না করবো কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।আমি জানি তার জন্য চোখের পানি ফেলার অধিকার আমার নেই।সে অধিকার এখন অন্য কারও।তেমনি আমার ভালবাসা পাওয়ার মত অধিকার ও রাইসার নেই।রাইসার ভালবাসা পাওয়ার অধিকার ও আমার নাই।সেই অধিকার অন্য কারও।
তারপরেও কখনও ভালবাসার খাতিরে সব অধিকার বিসর্জন দিতে হয়। রাইসা কে আমি ভালবাসতাম,আজ এই চিঠিটা পড়ে মনে হচ্ছে তাকে এখনও ভালবাসি,যতখানি ভালবাসা যায় একজন মানষকে।কিন্তু এটাও সত্যি আমি আমার স্ত্রী নার্গিসকেও ভালবাসি।
সত্য কথা হল,ভালবাসলেও সবাইকে অধিকার এর মর্যাদা দেওয়া যায় না।কিছু ভালবাসা থেকে যায় অধিকার ছাড়া।
অধিকার আর অনধিকারের এই হিসাব নিকেষ শেষে আমি রাইসার আইডিটায় ব্লক মেরে দিলাম।
তারপর আমি আরও একবার আকুল হয়ে কাঁদলাম।।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×