somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন পরমানু

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দুপুরে ইরানী মুভি "Childrean of heaven" দেখতেছিলাম। এই মুভিটা আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছি। মুভিটা যতবার দেখি আমি আমার কান্না থামাইতে পারিনা। এই মুভিটা দেখলে আমার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। বুক ভিজে যায়। কতখানি বাস্তব,জীবন নির্ভর এই মুভিটা। পরিচালক মাজীদ মাজিজী কত নিপুন ভাবেই মানুষের দুঃখ পড়তে পারতেন। সত্যি বলতে ছোট ছেলেমেয়েদের দুঃখ আমি একটুও সহ্য করতে পারিনা। আমি আমার নিজের দু একটা গল্প বলি।
আসলে মানুষের জীবনটা অনুগল্পের সমষ্টি,কারও কারও টা আবার উপন্যাসও বটে।

বেশী দিন আগের কথা না।
আমি তখন এস.এস.সি পরীক্ষার্থী।
আব্বা পারিবারিক কোন্দলের জের ধরে মা কে বের করে দেয়।
আমার মনে আছে,সেদিন অন্ধকার রাতে মা আমাদের দুই ভাই বোনকে নিয়ে নানাবাড়ি ওঠে।
আমার নানা বেঁচে ছিলনা,মামাদের অবস্থা মোটামুটি ভাল থাকলেও দুই মামার মধ্যে একটা বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নি টানতে কেউ রাজি ছিল না।
মা নানাবাড়ি গিয়া সেলাই মেশিন চালাতো এবং সেটা দিয়েই আমাদের দুভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ বাবদ খাওয়া দাওয়ার খরচ চলতো।
নয় মাস নানাবাড়ি ছিলাম এর মধ্যে কতটা অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছে। ভাতের অভাব জিনিসটা তখন বুঝেছিলাম।
মাঝে মাঝে একটু পেট পুরে ভাত খাওয়ার জন্য সাইকেলের পিছনে ছোটবোনটাকে বসিয়ে ১৩ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে ছোট খালাদের বাড়ি যেতাম দুপুরের খাওয়ার জন্য।
এমন অনেক দিন গেছে আমরা না খেয়ে থাকতাম , কোন মামা কখনও ডাকেনি খাওয়ার জন্য। আমার নানীটা হাউমাউ করতো আমাদের জন্য। ছোট মামার ঘর থেকে চুরি করে ভাত তরকারী এনে দিত।
সেদিনের একটা ঘটনা বলি,আমি থাকতাম আমার মেজো মামাদের ঘরের সাথে লাগানো একটা কামরায়,আমার বোন আর মা থাকতো নানীর ঘরে।
হুট করে একদিন আমার মামাতো বোন মেজোটা চেঁচামেচি করতে লাগলো যে তার ১০০ টাকা হারিয়ে গেছে,সে নাকি আমি যে কামরাটায় থাকতাম ওইখানে রাখছিল। তারপর যা হবার তাই হল,মামি এসেও আমাকে চোর দোষ দিয়ে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। আমি টাকা নিইনি বললেও কেউ শুনেনি আমার কথা। মা রাগ করে এসে আমাকে লাঠি দিয়া পিটাইতে পিটাইতে ওই কামরা থেকে আমার সব বই,পত্র সরিয়ে নিয়ে আসলো।
নানাদের বাথরুমে গিয়া হু হু করে কান্না করার সেই দিনটা আমার মন থেকে মুছেনি।
..

আমি যে স্কুলে পড়তাম, প্রতিবছর স্কুলে থেকে পিকনিকের আয়োজন হত।
সত্যি বলতে আমি আমার পারিবারিক আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে কখনও পিকনিকে যাওয়ার কথা মাথায় নিয়ে আসেনি। কারন আমি বুঝতাম আমার ফ্যামিলির কাছে টাকা চাওয়া মানে তাদের বিপদে ফেলে দেওয়া এটুকু বোঝার মত সেন্স আমার মাথায় ছিল। আমি ক্লাস সিক্স থেকে কখনও স্কুল পিকনিকে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।
আমার খুব ইচ্ছে ছিল স্কুলের শেষ বছরে এসে একবার হলেও পিকনিকে যাওয়া।
সেবার ছিল স্কুলজীবনের লাস্ট ইয়ার।
অভাব অনটনের মধ্যে সেসময় আমার মা পিকনিকের টাকা দিতে পারবে না জেনেও টাকা চাইছিলাম অন্তত নিজের এই ইচ্ছেটুকু পূরন করতে।
কিন্তু সেবারও আমার এই ইচ্ছেটুকু মাটিচাপা দিয়ে কান্না করতে হয়েছিল।স্কুল পিকনিকে না যেতে পারার সেই দুঃখটা এখনও মনে পড়ে।

..
এস এস সির পরে আমি তখন একটা ইলেকট্রীক দোকানো কাজ শিখতাম। পরনের জামা কাপড় বলতে খালাতো ভাইদের বাদ দেয়া বা পরিত্যক্ত শার্টগুলো পড়তাম।নতুন শার্ট প্যান্ট একপেয়ার শার্ট প্যান্ট ছিল তোলা। যেটা পড়ে পরীক্ষা বা কোথায় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাইতাম।
সেদিন এক মামাতো বোনের বিয়েতে গেছিলাম আমার নতুন শার্ট পরে। বিয়ে বাড়িতে সবাই আনন্দ করতে গিয়ে আমার নতুন শার্ট প্যান্টে কাঁদা লেগে গেছিল। পরদিন বউভাতে যাওয়ার সময় আবিষ্কার করলাম আগের দিনের ধুয়ে দেওয়া প্যান্ট টা এখনও শুকায়নি। বাধ্য হয়ে লুঙ্গী পরেই বের হয়ছি। আত্মীয় স্বজনেরা সবাই আমাকে লুঙ্গীতে গাড়িতে তুলতে অস্বীকৃতি জানালো। সবাই চলে গেল আমি আর নানী বাড়িতে ছিলাম। ওই বয়সে তখন অপমান জিনিসটা এত কাজ করতো না,গাড়ি নিইনি লুঙ্গীর জন্য এটা নিয়ে তখন দুঃখবোধ হয়নি,কিন্তু বউ ভাতে যেতে না পারার দুঃখে সেদিন দুপুরে অভুক্ত থাকার গল্পটা আমার কেউ জানে নি।

এমন কত স্মৃতি- বিস্মৃতির এই জীবনে কত দুঃখ বজ্রপাতের মত ধাক্কা দিয়ে যায়।
একটা ঘটনা বলে শেষ নামায়।
তখন আমি ক্লাস এইটে পড়তাম। আমার আব্বার তখন আলসার হয়ছিল। ডাক্তার বলছিল এখন থেকে ছয় মাস পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে।
আমাদের দুই-ভাইবোনের লেখাপড়া, খোরাকী সব খরচ চালাতে গিয়া হিমশিম খেতে হচ্ছিল মাকে। আমি আমার আব্বার ভ্যান টা নিয়ে তখন চালাইতাম। সকালে স্কুল শেষ করে বিকালে ভ্যান চালাইতাম।
সেদিন ছিল ঈদুল আজহা। ঈদের নামাজ পড়ে ভ্যান নিয়ে বের হলাম। ওই বয়সে স্কুলে পড়ার দরুন ভ্যান চালাতে লজ্জা একটু করতই, নরমালী আমার পরিচিত যেমন,স্কুলমেট,টিচার এদের এভয়েড করে ভ্যান চালাইতাম। যাহোক সেদিন আমাদের বাড়ি থেকে অদূরে বাস স্ট্যান্ডে প্যাসেন্জারের জন্য বসে আছি। কিছুক্ষন পর বেশ সেজেগুজে একটা মেয়ে এসে বললো,সে অমুক জায়গায় যাবে। ভাল করে ওর মুখের দিকে তাকাতেই লজ্জাই মরে যেতে ইচ্ছে হল।
মেয়েটা ছিল আমারই ক্লাস মেট ওর নাম ছিল পপি। ও বললো, "কি রে তুই ভ্যান চালাচ্ছিস কেন?"
আমি কিছু না বলে অন্য দিকে তাকায় ছিলাম, অদ্ভুদ একটা অনুভূতিতে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি লুকাতে চেষ্টা করলাম।
আমি লজ্জা পাইছি বুঝতে পেরে ও আস্তে আস্তে পাশ কেটে চলে গেল......।

জীবনে পাওয়া না পাওয়ার এমন অনেক দুঃখ নিয়ে পথ পাড়ি দিছিলাম স্বপ্নের রংমহলে।যে রংমহল এখন আকাশে উড়তে জানে।

পরিশেষে ইরানী এই মুভিটা দেখার আমন্ত্রন জানালাম। ইরানের পরিচালক মাজিদ মাজীদির ম্যাক্সিমাম মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে একজন শিশু। একজন শিশুর ছোটবেলার ইমোশন জীবন চরিত্র নিয়েই তার বেশীরভাগ মুভিগুলো তৈরী।
They want to play with viewer's emotion and in real life nobody cares about a child's thought or their psychology

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×