মার্কিন পুঁজিবাদ ব্যবস্থা যে কত কঠিন, কত ক্রিটিক্যাল।
এই দেশ অন্যায় ভাবে আরেক দেশের উপরে অবরোধ করলে আর কোন দেশ এবং কোম্পানী সেই অবরোধ আরোপিত দেশের সাথে ব্যবসা করতে পারবে না।
এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমেরিকার এক দিনের চাল না শতশত বছরের চালবাজের ফসল।
আজ একটা নিউজ দেখলাম ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটা পাল্টা আদেশ জারি করছে," যদি কোন কোম্পানী মার্কিন অবরোধ অনুসরন করে ইরানের সাথে ব্যবসা করতে অস্বীকৃতি জানায় বা ব্যবসা গুটিয়ে নেয়, তাহলে সেই কোম্পানীর উপরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবরোধ আরোপ করবে।"
এক্ষেত্রে এসব কোম্পানীগুলো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। তাদেরকে হয় ইরানকে বেছে নিতে হবে নয়তো মার্কিন নীতি অনুসরন করে চলতে হবে।
১৯৭৯ সালের পর থেকে পারস্য উপসাগরের এই দেশের উপর শুধু অর্থনৈতিক অবরোধই না আমরা জানি তৎকালীন ইরাকী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে দিয়ে এক দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ ও চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন সাদ্দাম হোসেনের সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধ ছিল এই আমেরিকা। যুদ্ধের ময়দানে সামরিক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে ইরাককে সব ধরনের সামরিক সহায়তা করছিল আমেরিকা।
এমনকি তখন ইরানে সাদ্দাম হোসেনর রাসায়নিক হামলার পরেও ইরাকের উপর জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে আসলে আমেরিকা তাতে ভেটো দেয়।
৮ বছর যুদ্ধ শেষে যখন ইরানকে কাবু করতে পারেনি। ১৯৮৮ সালের ১৮ এপ্রিল ইরানের একটি বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমান টেক অফের সময়ে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত মার্কিন রনতরী থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল।
বিমানের ২৬০ যাত্রী ক্রু সহ সবাই মারা যায়।
সেদিন বিশ্ববাসী শুধ চেয়ে দেখেছিল। ইরাকের সাথে যুদ্ধ করে কোনরকমে বেঁচে থাকা ইরান সাথে সাথে সরাসরি হয়তো কোন প্রতিশোধ নিতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে এর প্রতিশোধ হিসেবে লেবাননের নৌবন্দরে রাখা মার্কিন রনতরীতে এক হিজবুল্লাহ সদস্যকে দিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায়। যে হামলায় প্রায় ২৯৬ জনেরও বেশী আমেরিকান নৌসেনা নিহত হয়। বিশ্ব মিডিয়া সেদিন এঘটনা প্রকাশ করেনি। এই হামলার পরে আমরিকা লেবানন থেকে তাদের সব ঘাঁটি ত্যাগ করে লেজ গুটিয়ে পলায়। ( আলজাজিরার নিউজগুলো খুঁজলে এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে,উইকিপিডিয়াতে নেই)
এইসব ক্ষোভ আমেরিকার এখনও মনে আছে।
১৯৭৯ সালে তেহরান ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা আমেরিকান দুতাবাসে যখন হামলা করে আমেরিকা অনেক চেষ্টার পরেও দূতাবাসে কর্মরত আমেরিকানদের উদ্ধার করতে পারেনি আমেরিকা।
এইসব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজ এখনও ইরান বয়ে বেড়ায়।
যদিও এতশত অবরোধের পরেও ইরান তার নিজের পথ নিজেই দেখে নিচ্ছে,ইরানীরা নিজেদের দেশেই ক্ষেপনাস্ত্র,ট্যাংক,যুদ্ধবিমান,সাবমেরিন,রনতরী বানায়।
এসব প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রের জন্য তাদের কারও কাছে হাত পাতা লাগে না।
হরমুজ প্রণালীতে মহড়ায় ইরানী জাহাজ
১৯৭৯ সালের পর থেকে আজ অব্দী অবরোধের মুখে থেকেও এই দেশটা তার সম্ভ্রম হারায়নি।
যদিও গত অবরোধের পর থেকে ইরানের মুদ্রাস্ফীতি অনেক নিচে নেমে গেছে।
ফলে আফগান যুদ্ধের সময় ইরানে আশ্রয় নেওয়া যে শরনার্থীরা আর নিজ দেশে ফিরে যায়নি,পরে ইরানে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী কোম্পানী, আবাসনে চাকরী নেওয়া এই লোকগুলো ও চাকরি হারাতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজনমতের তোয়াক্কা না করে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বকালের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপে মডিউলে সাইন করেছে।
চাীন, ভারত, রাশিয়া হয়তো এই অবরোধ অগ্রাহ্য করবে,পাকিস্তান ও এই অবরোধকে উপেক্ষা করে ইরান- পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন কাজ সম্রসারন করবে।
সর্বোপরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই পাল্টা আদেশ কতটা কার্যকর হয় সেটাই দেখার বিষয়।
যদি ইইউ এর এই পদক্ষেপ অকার্যকর হয় তাহলে ইরানের সামনে হয়তো দুটো পথ খোলা থাকবে...
প্রথমত, এই অবরোধের বোঝা মাথায় নিয়ে চলা।
দ্বীতিয়ত, হরমুজ প্রাণালী বন্ধ করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেক্ষেত্রে হয়তো বিশ্ব একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হবে।
বাকিটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫