আচ্ছা সন্ধ্যার রঙয়ের নাম টা কি? দুঃখ রঙ?নাকি এই রঙ এর নাম বেদনা অথবা কান্না? কি নাম তার?
আমি বরং এই রঙয়ের নাম দিলাম বিষাদ!
অনেক কবিরা আবার সন্ধ্যার বিভিন্ন নাম দিয়ে গেছে। কেউ নাম দিছে আবির,কেউ দিছে স্নিগ্ধ।
আমার ইদানীং এই স্নিগ্ধতা, আবিরতা কিছুই ছোঁয় না। অবশ্য এক কালে আমারও মনে হত সন্ধ্যা রঙ আবির। সে কালে ছিল দুপাশে ফসলের মাঠ,মাঝখানে সরু খাল। অনেক ব্যস্ততা ছিল সেকালে, সন্ধ্যায় সুতো ছেড়া ঘুড়ি খুঁজে বাড়ি ফিরতে হত। নবান্নের নতুন ধানের গন্ধ ছিল উঠান জুড়ে। নীলাভ চাঁদের আভায় উদ্ভাসিত নতুন দীঘির জলে হাতমুখ ধুয়ে সন্ধ্যা হারিকেনের আলোয় পড়তে হত পাঠ্যবইয়ে মহাদেব সাহার সেই কবিতা...
"ধীরে ধীরে সন্ধ্যার সময় সমস্ত রঙ
মনে পড়ে, সূর্যাস্তের
লীন সরলতা
হঠাৎ আমারই জামা সূর্যাস্তের
রঙে ছেয়ে যায়,
আর আমার অজ্ঞাতে কারা আর্তনাদ
করে ওঠে রক্তাক্ত রক্তিম
বলে তাকে!"
আজকাল আমার কাছে সন্ধ্যা মানে বিষাক্ততা,নিগূড় সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন্ পথে কোন্ ঘরে যাব!।
যেন মূর্মুর্ষ রোগীর মত খুবলে খুবলে হৃদয় খায়,অদৃশ্য সিরিন্জ যোগে রক্তের মত ভিতরের সব সুখ দহন করে বিষাক্ত কান্না ছড়ায়।
ঘরপোড়া স্মৃতিরা আকাশ মেঘে রঙ বদলিয়ে রক্তাক্ত হয়।
শিমুল অথবা কদমের ডালে লক্ষীপেঁচারা গান গায়,বারান্দায় দাড়িয়ে সেই গান শুনতে শুনতে জুবুথুবু হৃদয় নিয়ে অদ্ভুদ এক মৌনতায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হই। কেউ দেখেনা।
চোখ আর প্রকৃতির মাঝখানে ভিতরেও যে শ্যাওলা ধরা জমিনে তীর তীর করে কান্নার জল নামে, বিস্মৃতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে দগদগে হৃদপিন্ডটাও যে কোন এক পুরানো দিনের কাছে পণবন্দী তা এই সন্ধ্যা নামলেই বুঝি টের পাওয়া যায়।
সেই কবে তাহার চলে যেতে যেতে পিছনে ফিরে চাওয়া দেখেছি,উদাস সন্ধ্যায় হুলুস্থুল হয়ে কান্নাকাটি করেছি মধুৃমতীর তীরে। কেউ জানেনা,কেউ জানেনি।
কোথায় যেন শুনছিলাম বিষে বিষ কাটে।
তাই আমি বরং বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে সূর্যাস্তের গন্ধ নিই,বেদনার আবির মাখি,রক্তাক্ত হই।
সুনীল সন্ধ্যার আয়োজনে তোমার চলে যাওয়া পায়ের নুপুরের গান শুনি,কারনে অকারনে বৈরাগী হয়ে নেশার গান গাই।
অপেক্ষাতুর চোখে ফুলে ফেঁপে বেড়ে ওঠা অভিমানী মন নিয়ে শুধু তোমার ফিরে আসার দিন গুনি।
আর পথ খুঁজতে খুঁজতে জীবানন্দের কবিতার চরন উচ্চারনে বলি,
" সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন্ পথে কোন্ ঘরে যাব!"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬