বন্ধুত্বটা শেষ হতে ফিলিংস লেগে থাকে। কিন্তু বন্ধুত্বটা শুরু হয় অদ্ভুত ভাবে। কোন আগের প্ল্যান থাকে না।
হাইস্কুলে যাওয়ার পর যে ছেলেটি আপনাকে নিজ থেকে নক করে আপনার থেকেই কিছু জানতে চায় তার প্রতি একটা আলাদা দূর্বলতা থাকে। না চাইতেই দূর্বলতাটা সৃষ্টি হয়। যদিও আপনার সাথে আসা যাওয়া করা ছেলেগুলো আপনার ফ্রেন্ডের তালিকায় থাকে। একসময় আপনারা সবাই প্ল্যান করেন যে, পরেরদিন ব্যাট আর বলটা নিয়ে যেতে। ক্রিকেট খেলবেন শর্টপিচ। স্কুলে যাওয়ার পর দেখা যায় আপনারা যে কয়জন খেলার প্ল্যান করলেন তারা ছাড়াও ব্যাট আর বল দেখে ক্লাসের অনেক ছেলেপুলেই মাঠে আপনাদের সাথে খেলার জন্য চলে আসে। এভাবে দিনের পর দিন এই খেলতে যাওয়া গ্রুপের মেম্বারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। খেলতে গিয়ে বল হারিয়ে যায়, ব্যাট ভেঙে যায়। যারা খেলতে আসে তাদের মধ্যে অনেকেই টাকা ভাগাভাগি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়, মানে নতুন ব্যাট-বল কিনে। আবার অনেকে এই ক্ষতিপূরণ থেকে সড়ে দাঁড়াতে গিয়ে খেলার গ্রুপটি থেকেই সড়ে পড়ে। অতটুকুতেই তারা হারিয়ে যায়। ক্লাস নাইন টেনে উঠার পর খেলতে আসা ছেলেগুলোই একটা গ্রুপ খোলার স্বপ্ন দেখে। একটা ইংরেজির উপর স্মার্ট নাম খুঁজে গ্রুপের নাম দেওয়া হয়। মারামারি, মেয়ের কেস, মোবাইল হারানোর কেস, বড়ভাইয়ের শো-ডাউন সব কিছুতেই এই ফ্রেন্ড গ্রুপটা এনাফ... আর কিছুই লাগে না। ছেলেগুলোও অনেকটা বন্ধু প্রবণ থাকে। টং এর বন-কলা খেতে গিয়ে বন্ধুকে ভাগ দিতে ভুলে না।
.
ব্যাপারটা খারাপ হয় এসএসসির রেজাল্টের পর। সবাই একই স্কুলে পড়তে পারলেও একই কলেজে ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। কেউ পাবলিকে টিকে তো কেউ আবার প্রাইভেটে।
কলেজে যাওয়ার আগেরদিন পর্যন্ত তাদের ফ্রেন্ড গ্রুপে ভাঙন ধরানোর কেউ থাকেনা। কলেজে উঠার পর কেউ কেউ নতুন নতুন মেয়েদের টাচে আসে। মানে যে ছেলেগুলো স্কুল লাইফে মেয়েদের থেকে শতহাত দূরে থাকতো সেও মেয়েদের নিয়ে মত্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ এসএসসিতে আশানুরূপ ফল না পেয়ে ইন্টারমিডিয়েটে "দেখাইয়া দেওয়ার" প্ল্যান করতে থাকে। আগে যে যায়গার দেয়ালে স্প্রে করে গ্রুপের নাম লিখে আড্ডা দেওয়া হতো সেখানে ছেলেগুলো আর শেষ বিকালের আড্ডা দিতে আসে না।
.
আবার মেয়েদের দিকে ঝোঁকা বন্ধু গুলো নিজেদের চাইতে মেয়েদেরকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, আর মেয়েগুলো তাদেরকে তাদের বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেয়েটির প্রাধান্য বেশি থাকায় ছেলেটি বিবেচনা ছাড়াই বাকি ছেলেগুলোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে নেয়। সারাদিন তাদের সাথে সেল্ফি, কলেজ বাংক, আড্ডা দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকেলের আড্ডায় আসার এটেন্ডেন্স কমতে থাকে।
.
আবার কিছু ছেলে যারা দেখিয়ে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে তাদের খাতিরটা আঁতেল টাইপের ছেলেদের সাথেই জমে। সে বন্ধুত্বের চেয়েও নোট, শীট, স্যারের পানিপড়া নিয়েই মত্ত থাকে।
.
আবার কিছু ছেলে রাজনীতির বেড়াজালে বন্দি হয় পড়ে। অমুকভাই তমুকভাই বলে সপ্তাহের তিনদিন রাজপথে নেমে যায়। তাদের বন্ধুত্বটা হয় নেতা, এস্কারাপ টাইপের ছেলেদের সাথে।
.
অনেকে আবার কলেজে গিয়ে কিছু "ভালো বন্ধু" পায়। এই বন্ধু গুলো অল্প সময়েই খুব ক্লোজ হয়ে যায়। আবার পান থেকে চুন খসার আগেই তাদের সাথে ঝগড়া বেঁধে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
.
একসময় কলেজ লাইফ শেষ হয়। একেকজন একেক ভার্সিটিতে চান্স পায়। কলেজ লাইফে জোটা বন্ধুগুলো কিছু পদচিহ্ন রেখে হটাৎ করেই কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়।
যেদিন সবাই নিজেদের ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে আর আপনি নিষ্ক্রিয় ইলেক্ট্রনের মতো ঘোরাঘুরি করবেন সেদিন মনে হবে আপনার স্কুলে থাকা ফ্রেন্ড গুলোই সেরা ছিলো।
যেদিন নতুন ফ্রেন্ডগুলোর থেকে চুতিয়াবাজ ট্যাগ পাবেন সেদিন মনে হবে স্কুলের ফ্রেন্ডগুলোই সেরা ছিলো। বাথরুমে আধাঘণ্টা কি করেছিলেন তা গ্রুপের আলদা আলাদা করে না জেনে সবাই জানতো। চুতিয়াবাজির কোন চান্সই ছিলোনা।
যেদিন রাজনীতির ময়দানে দেখবেন আপনার কোন অপূর্ণতা ছিল বলে আপনি আশা করা পদটা পাননি, আর এজন্য টেনশন আর টেনশনে সিগারেট খেতেখেতে সিগারেটের টাকাও হয় না সেদিন মনে হবে স্কুলে গড়া গ্রুপটা থাকলে আজকে সিগারেট না হোক সিগারেটের শেষটা হলেও তাদের কাছে পেতাম।
যে ছেলে মেয়ে মেয়ে করে কলেজ লাইফ ত্যানা বানাইছে আর সেও বুঝবে এই মেয়ে গুলো ছিলো তাদের জীবনে সাময়িক বিনোদন মাত্র।
.
একদিন তাদের হৃদয় আবেগে ভরে উঠবে। কিন্তু তারা চাইলেই সব পারতো। চাইলেই পারতো সারাদিন মেয়েদেরকে টাইম দিয়ে বিকেলে একবার দেখা করতে, তারা একটু ইগো কমিয়ে একজন আরেকজনের বিপদে আসতেও পারতো, একটু ভুল বোঝাবোঝিকে দমিয়ে রেখে পারতো গ্রুপটা টিকিয়ে রাখতে। তারা যেখানে একসাথে সহজেই অসাধ্যকে সাধন করতো সেখানে তাদের গ্রুপটাকে বাঁচিয়ে রাখা তাদের কাছে আহামরি কিছুই ছিলো না।
সকল গ্রুপ ভাঙার পর গ্রুপের সব মেম্বারই হাড়ে হাড়ে সত্য গুলো টের পায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়, অনেক। হাজার চাইলেও সেই দিন গুলো পাওয়া সম্ভবকর হয়ে উঠেনা। কিন্তু তারা চাইলেই পারতো, ম্যাচিউর হওয়ার পর পুরানো আড্ডার যায়গায় গিয়ে আগের মতো লাইন ধরে সিগারেট নিয়ে বসে যেতে।
বন্ধুত্বটা শেষ হয়ে যায়। লেগে থাকে অব্যক্ত ফিলিংস।