২০০২ সাল। জার্মানি-ব্রাজিল ফাইনাল। ফাইনালে জার্মানি ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিলো। সেদিন ভালো-খারাপ লাগাটা বোঝার ক্ষমতা হয়ে উঠেনি। দেখেছিলাম আশেপাশের বড়জনরা আনন্দ করে সেলিব্রেট করছে। সেদিন কিছুই বুঝিনি।
.
২০০৬ সাল। জার্মানি ছিল বিশ্বকাপের হোস্ট। তখন আমি ক্লাস থ্রি তে মাত্র। স্কুলে গিয়ে দেখি যে যার মতো ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বলে গলা ফাটাচ্ছিলো। আমার ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা কোন নামই পছন্দ হলো না। বরংচ হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে এবং নামটা একটু স্মার্ট হওয়ায় আমার কেন জানি জার্মানিকেই ভালো লাগতো। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই জার্মানির সাপোর্ট করলাম। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার কাপটা জিতলো ইতালি। ভালোলাগা খারাপলাগা তখনো বোঝার ক্ষমতা আমার হয়নি। মূলত হোস্ট কান্ট্রি হিসেবেই জার্মানিকে চেনা।
.
২০১০ সাল আসলো। হোস্ট সাউথ আফ্রিকা। ক্লাস সেভেনে পড়ি। মোটামুটি ভালো-খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও বুঝতাম। পুরানো জার্মানপ্রীতি। ছাড়তে পারলাম না। জার্মানিকেই পাগলের মতো ভালোবেসে ফেললাম। বাসার ছাদে একখানা জার্মানির পতাকাও ঝুলিয়ে দিলাম। ভালোবাসাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় যখন দেখি জার্মানি আর্জেন্টিনাকে ৪-০ গোলে হারিয়ে দেয়। এভাবে জার্মানি গুটি গুটি পায়ে ফাইনালের দিকে যেতে থাকে। সেমিফাইনালে অপনেন্ট পড়ে স্পেন। সেদিন স্পেন ১-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দেয়। খুব খারাপ লেগেছিলো। যদিও জার্মানির ভক্ত হিসেবে জার্মানি তৃতীয় স্থানটা অর্জন করে আমাকে কোনভাবে সান্তনা দেয়। স্কুলে যাওয়ার পর র্যাগিং এর ফাঁদে পড়ছিলাম। হাসি ঠাট্টা করতে থাকে সবাই। তাদেরকে এটা বুঝাতে অসমর্থ হয়েছিলাম যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তো অনেক আগেই ফুটসে!
.
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ। শত বাঁধা অতিক্রম করে জার্মানি নিজ তেজে এগিয়ে যেতে থাকে। সেবছর নতুন জার্মানির বড় পতাকার পাশাপাশি একটা জার্সিও কিনেছিলাম। অ্যাপোলো মার্কেটে গিয়ে এসব খুঁজতেই পাশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফ্যান যারা কিনা আমার মতো জার্সি আর পতাকা কিনতে গিয়েছিলো তারা হেসেছিলো। ব্যাস সেমিফাইনালে ব্রাজিলরে ডিরেক্ট সেভেনআপ! নিজের ব্রাজিলিয়ান ফ্যান বন্ধুদের ঘর থেকে বের করাই যায়না। একপাশে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা তাদের পিছু নিবে আর কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আমি মানে একজন খাঁটি জার্মান ফ্যান তো আছিই! সৌরভ স্যার, রঞ্জিত স্যার সবাই যেন মনমরা হয়ে পড়েছিলেন সেদিন। কোচিং এ যেতেই উনারা ব্রাজিলের হারার সম্ভাব্য কারণ গুলো এনালাইসিস করে বলছেন। আর আমি জার্মানির জার্সিটা গায়ে দিয়ে রাস্তায় ফুললি পার্টে!
ফাইনালে আর্জেন্টিনা... অনেকে বলছিলো আর্জেন্টিনা জিতবে, আবার অনেক ব্রাজিলীয় ফ্যান সেদিনের জন্য আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করেছিলো। চেনা পরিচিতদের লিস্টে আমি আর পাশের বাসার এক বড়ভাই জার্মানির সাপোর্টে। স্বপ্নের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে জার্মানি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। গোলদাতা উঠতি তরুণ মারিও গোটজে!
এরপর আমাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে। নানাভাবে প্রুভ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, আমি সিজনাল নাকি বাস্তবেই একজন জার্মানির সাপোর্টার। এটা সত্য যে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতার পর অনেকেই জার্মানির "ফ্যান" বনে যান। তারা আমাকে সে দলের প্রমাণ করতে চাইছিলেন। অতঃপর হেটার্সরা অনেক টেস্ট করে বুঝতে পারে যে আমি একজন খাঁটি জার্মান সাপোর্টারই। হেটার্স বলতে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কিছু সমর্থককে বুঝিয়েছি।
.
আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে যারা ট্রল করছেন, যারা বলছেন বাংলাদেশ নাকি ওয়ার্ল্ড কাপ জিতবে! তাদেরকে বলছি, হয়তো বাংলাদেশও কোনদিন ওয়ার্ল্ড কাপ জিতবে, সেদিন খুব দূরে নেই। আর লেইম টিমগুলোর সুবিধা নিয়ে না জিতে ইন্ডিয়া, অষ্ট্রেলিয়া কিংবা সাউথ আফ্রিকার মতো টিমকে রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে গোহারা হারিয়েই ওয়ার্ল্ড কাপ জিতবে।
সেদিন মোড়লরা তাদের গড়া পার্থক্যটা বোঝে নিবে।
আর আমাদের দেশে বসে যারা স্টিল ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া সাপোর্ট করছেন তারাও সেদিন পাগলের মতো বাংলাদেশের সাপোর্ট করবেন।