প্রথম স্কুলে যাওয়ার পর গভীর বন্ধুত্বটা সেই মানুষটির সাথেই হবে যে কিনা আপনার বিল্ডিংয়ের কোন ফ্ল্যাটে থাকে কিংবা আপনার পাশের বিল্ডিং-এ বড় হয়েছে। অন্য কোন পাড়ার ছেলে কিংবা চশমা পড়া মেয়েটির সাথে হবে না। যার সাথে আপনি স্কুলে যাওয়া আসা সহ এক মুহূর্ত বেশি কাটাবেন সে-ই হবে আপনার বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাকে ছাড়া ক্যারম, লুডু, জিটিএ, ফিফা, ক্রিকেট যেকোন কিছু খেলা আপনার পক্ষে অসম্ভব কাজ বলেই মনে হবে। আশা করেন সারাটা জীবন সেই বন্ধুটির সাথে এভাবেই টাইম পাসের...
.
ক্লাস ফোর অবধি সব চলার পর স্কুল চেঞ্জের ব্যাপার স্যাপার ঘটে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! আপনার ঠিকানা এক স্কুলে, আর আপনার বন্ধুর ঠিকানা আরেক স্কুলে।
আপনি হাই স্কুলে গিয়ে একটু থতমত খেয়ে পড়েন। সব মুখই অচেনা। প্রথম কয়েকদিন গার্ডিয়ান নিয়ে যায়। আপনি দেখেন আপনারই এরিয়ার আরো কয়েকজন আপনার স্কুলে পড়ে। হয়ে যায় সে কয়েকজনের সাথে স্কুলে যাওয়া আসা। সে কয়েকজন আপনার ক্লোজ ফ্রেন্ডের তালিকায় স্থানলাভ করে। অন্য ছেলেদের সাথে জাস্ট হাই-হ্যালো সম্পর্ক থাকলেও এই কয়েকজনের সাথে একটু বেশিই চাটাচাটি চলে। একসময় সবাই মিলে কোন কোচিং-এ ভর্তি হতে যান। একসাথে সব চলে বছর বছর নতুন ছেলে আপনাদের গ্যাং-এ যোগ হয়। এই গ্যাং'টিই আপনার কাছে সব...
সেই কেজি স্কুলের ফ্রেন্ডটির সাথে ফ্রেন্ডশিপ অনেকটাই কমে গেছে। আগে যাকে ছাড়া এককদম আগানো অসম্ভব কল্পনা ছিলো এখন সেও আপনার মতো নতুন বন্ধু পেয়েছে। আপনার মতো তার কাছেও সেই বন্ধুগুলো এখন সব।
.
একসময় এই হাইস্কুলেরও অবসান হয়। কলেজে উঠার পর ম্যাক্সিমাম টাইম এই গ্যাং গুলো ভেঙে পড়ে। প্রায় ছেলেই মেয়ে আর মেয়ে বন্ধু নিয়ে বিজি হয়ে পড়ে। তখন তার কাছে তারাই সব। কলিজার টুকরো! চলবে না তাদের ছাড়া....
.
যদি আপনি ঢাকা বা আউট ডিস্ট্রিক্ট এ যান তখন ঢাকাইয়া পাব্লিক গুলোর চাইতে চিটাগনিয়ান গুলোকেই বেশ আপন মনে হবে। তাঁর সাথে আপনার পরিচিতি বা আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকুক... তবুও আপনার কাছে সে আপন। অন্ততপক্ষে একজন ঢাকাইয়া থেকে।
.
বাইরের দেশে যাওয়ার পর বাংলাদেশিদের প্রতি টান জিনিসটা অবিস্মরণীয় ভাবে বেড়ে যায়। সব বিদেশিদের ভিড়ে একজন বাঙালি পেলে তার প্রতি বেশ দূর্বলতা অনুভূত হয়। বাঙালি লোকটাকে বেশ আপন মনে হয়। সুযোগ পেলেই তার সাথে কথা বলায় মেতে উঠতে চাইবেন। পুরা মন খুলেই আড্ডা চলবে। দেশের বন্ধুদের কথা মনে পড়বে কিন্তু সেই বাঙালিটিই হবে আপনার বেষ্ট ফ্রেন্ড।
যে দেশে বাঙালি পাবেন না সে দেশে একজন সাউথ এশিয়ানকেই আপনার কাছের বলে মনে হবে।
.
যদি পৃথিবী থেকে দুজন মানুষকে নিয়ে রোবটিক্স বা এলিয়েনদের জগতে ছেড়ে দেওয়া হয় তখন সেই দুজন মানুষই বেষ্ট ফ্রেন্ড হবেন। কোন এলিয়েন বা রোবটিক্স নয়। তখন আপনাকে কষ্ট দেওয়া প্রতারককেও বন্ধু মনে হবে। ওবামা প্লুতিনও তখন ব্রাদার ফ্রম ডিফারেন্ট মাদার হয়ে যাবেন।
.
বেষ্ট ফ্রেন্ড ব্যাপারটা আপেক্ষিক। কেউ কখনো চিরজীবনের জন্য কারো বেষ্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না। এর কারণ অভাব মানুষের মধ্যে অন্য মানুষকে আপন করে নিতে বাধ্য করে। যে সময় যে যতটা আপন হতে পারে সে তখনি বেষ্ট ফ্রেন্ড নামক একটা উপাধি অর্জন করে।