দেশের অন্যসব ফকিরবাবাদের মত মোহনবাবাও অল্প কয়েকদিনেই ক্ষ্যাত হয়ে গেল ।দিনদিন তার কাছে রোগীর পরিমাণ বাড়তেই ছিল-যেন দশদিক থেকে সব রোগীরা এসেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে অবস্থা!!
এই যুগেও মানুষগুলা কিভাবে এই ফকির-ফকরামি বিশ্বাস করে বুঝতে পারি না ।আমি একা নই ,আমার মহল্লার প্রায় সবগুলা চ্যাংড়া পুলাপানই এই না-বুঝের কাতারে ।।চোখের সামনে দিয়ে কাছে-দূরের-ঘড়ের-বাহিরের সব মানুষ ভিড় জমাচ্ছে এই "মোহনবাবা" নামে উদিত ফকিরের(কবিরাজও বটে!) কাছে ।কিন্তু আমরা ক্রিকেট-ফুটবল-গুটি-লাঠি খেলে দিক-বিদিক জয় করতে পারলেও মোহনবাবার ভন্ডামি বন্ধ করতে পারছি না ।ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস ,এর চেয়ে বেশি মারাত্মক হয়ে দাড়ানোর হুমকি সামনে উপস্থিত ।
কি করে ওর ভন্ডামি বন্ধ করা যায় ভাবছিলাম বহুদিন ।শুধু ভাবছিলাম না -দুবার এক্সপেরিমেন্টও করেছিলাম ।কিন্তু উনার কাছে যার যেই রোগ নিয়েই যাই কীভাবে যেন নিরাময় হয়ে যায় ।টীমের অনেকেতো ভন্ডের উপ্রে বিশ্বাসও এনে ফেলছে ।
দূর বরিশাল থেকে এক হার্টের রোগী এসেছিল উনার কাছে ।দেশের সব নামীদামী ডাক্তারদের কাছথেকে মৃত্যুপরোয়ানা নিয়ে এসেছিল ।এমবিবিএস-বিসিএস-হ্যান-ত্যান ডিগ্রী সব ফেল মারলো মোহনফকিরবাবার কাছে এসে !!দুইতিনটা ঝারফুক আর পানি পরা খেয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন তিনি ।ঘটনাটা আমাদের এলাকায়তো বটেই চারদিকে সারা ফেলে দিয়েছে ।রোগীর সংখ্যার প্রবৃদ্ধি তাই উল্লেখযোগ্য হারেরই বাড়তেছিল ।
এদিকে সেই রোগীব্যক্তি নিজ খরচে মোহনবাবার খানকায় একটা বিলাসবহুল ঘড়বানিয়ে দিয়েছে ।তখন তার(রোগী) সাথে তার ব্যক্তিগত লাইফ নিয়ে আমি অনেক কথাও বলেছি ।ব্যাপারটায় আমিও রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম ।কিন্তু কোথায় যেন গলদ ছিল ।ফকিরের ভন্ডামিটা বুঝতে পারছিলাম না । এবার একটা মাস্টার প্লান ঠিক করলান ।
আমার একটা "মেমরি-কার্ড" নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।রিকভারিও আনা যাচ্ছিল না ।প্লানটা আমাদের চ্যাংড়া টিমকে শেয়ার করলাম ।তারপর সবাই মিলে গেলাম ফকির বাড়ি ফকিরবাবার দরবারে ।রোগী "মেমরি-কার্ড" !! ফকিরের কাছে রোগ মোটামুটি বর্ণনা শেষ ।বাকিটা উনিই বুঝে নিবেন ।।আমরা যে একটা গোলযোগ করতে চাচ্ছি উনি খুব ভাল করেই টের পেয়েছিলেন ।কিছুটা উদ্বিগ্ন ভাব চেহারায়ও ছিল ।কিন্তু বরাবরের মতই ভাবগম্ভীর ।।আমাদের যুক্তি ছিল- "যিনি মানুষের হার্ট ঠিক করতে পারেন ,তিনি সামন্য একটা মেমরী ঠিক করতে পারবে না- এটা হয় নাকি!!"। কিন্তু আমরা ঠিকই জানতাম- গ্রামের মূর্খ ভন্ডফইকরামি কইরা মনুষ্য রোগ ভাল করতে পারলেও ,,আইসিটিতে একেবারেই অঞ্জ ইনি মেমরী রিকভারী আনতে কোনভাবেই পারবে না ।
উত্সুক চ্যাংড়া টিম ফকিরের ক্যাড়ামতি অথবা প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় ।ফকির ভাবলেষহীন ।পরিশেষে বলল- "কালকে আসো ।মেমরীটা থাক্ আমার কাছে ।" আমিও না করলাম না ।যেহেতু জানতাম-এই মহল্লায় যদি কারো পক্ষে এটা ডিফেজ করা সম্ভব হয় সেটা আমি ।আর সেই যখন ফেল মারছি- তখন ,মেমরী কি জিনিস ,এতে কীভাবে কি থাকে এব্যাপারে বিন্দুমাত্র ঞ্জানও যার নাই সে যে এটা ঠিক করতে পারবে না এজন্মেও ,আমি নিশ্চিত ছিলাম।তাই এখন নতুন কোন গোলযোগ না করে উনার খানকার নির্দিষ্ট জায়গায় নিজহাতে রেখে আসলাম মেমরীটা।
পরদিন সবাই উপস্থিত ।চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই গোপনে লাঠিসোটাও এনেছে ।এটা হেস্তনেস্ত আজই হবে ,এর ভন্ডামির।। আমি ভিতরে গেলাম ।আমার রোগীর অবস্থা জানতে চাইলাম ।বলল..যেখানে রেখেছিল ওখান থেকেই নিয়ে চলে যাও ।আসন্ন বিপদসামনেও গলায় সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন জবাব ।যেন উল্টো আমাকে ধমক দিলেন ! আমি মেমরীটা হাতে নিয়ে মোবাইলে পুস করালাম- কিন্তু অবাক কান্ড!! মেমরী সম্পূর্ণ ঠিক ।সব ডাটা ব্যাকআপ করা ।আমার চোখ চরকখাছে ।একটা ক্ষোভ নিয়ে বের হয়ে গেলাম সবাইকে নিয়ে ।।এটা কিকরে সম্ভব !গত ২৪ঘন্টা উনি আমাদের টিমের বিশেষ নজরদারিতে ছিলেন যেন বাইরে থেকে এটা ঠিক করে আনতে না পারে ।তার মানে অনলি-ঝারফুঁকে "মেমরী-কার্ড" রিকভারিড!! এটা অবিশ্বাস্যের চেয়ে বেশি কিছু.....আর আমাদের বিশ্বাসের উপর বিশাল একটা ধাক্কা.... (চলবে..)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭