প্রায় বছর খানেক ধরে উত্তরার রাজলক্ষ্মীরর ওভারব্রিজটা আমার অতি আপন হয়ে গেছে, ঠিক বাসা আর অফিসের সিড়িগুলির মত। রোজদিন এই ওভারব্রিজ এ দুবার হলেও পদচিহ্ন পরে আমার। ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে নাকি টাকা মেলে। হ্যা শুধুই অলি গলি না ওভারব্রিজ ও ঢের মেলা টাকার ব্যবসা চলে।
কিন্তু রাজলক্ষ্মীর এই ওভারব্রিজে সেইরকম বেশি হকার নেই, যা আছে গনা সাতেক ভিক্ষুক।
এই সাতজনকে গত এক বছর ধরেই দেখছি, আমার মত তারাও রোজ সকালে এখানে অফিস করে আবার সন্ধায় ছূটি হলে বাসায় ফিরে। আমি হয়তো মাস শেষে কিছু পাই কিন্তু তারা পুরা নগদ ইনকামে বিশাসসী, কোন বাকি পাওনা নেই।
এই সাত জনের চেহেরা কথার স্টাইল সব আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম খুব মায়া হত ওদের জন্য।
কিন্তু কিছুদিন পরেই তা কমতে শুরু করল, অবশ্য এর পিছনে অনেক যুক্তিসংগত কারন ও ছিল। থাক সেসব নিয়ে কথা বলে কি আর হবে, একদল আছে যারা আবার বলবে গরীব মানুষদের কেন আবার পেটে লাত্থি দিচ্ছেন। যারা কোটি কোটি টাকা দিনে দুপুরে চুরি ডাকাতি করছে তাদের বিরুদ্ধে তো কথা বলার সাহস নেই। হ্যা আসলেই সাহস নেই আমার, আর সেই জন্যেই আজ এ লেখা।
আবার যদি সাহস করে লিখেই ফেলি তখন আবার শুরু হবে কে এই লোক? এত্ত কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে? নিশ্চয়ই কেউ আছে এর পিছনে, তারপর আই এস আই, জংগি ব্লা ব্লা বলতে বলতে দুদককে পিছে লাগিয়ে দিবে।
থাক বাবা আমি এত্ত বড় হইনি এখনো তাই........
বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে বারবার পরাজিত হচ্ছি, এভাবে আর কতদিন???
হয়তো বিবেকের মৃত্যু অচিরেই ঘটবে আমার সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
কিছুদিন আগে দেখলাম সাতজনের এখানে নতুন একজনের চাকুরী হইছে।
কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না, বেচারা শেষমেশ দোতালায় জায়গা না পেয়ে সিড়ির নিচেই চ্যাম্বার খুলে বসছে।
ভালই ইনকাম হচ্ছে নতুন অফিসে। অন্য সবাই অফিসে আসত একদাম অফিসিয়াল ড্রেস পড়ে, কিন্তু নবাগত এই ভিক্ষুক করমকরতা একদাম সেসবের তোয়াক্কা নাই। শীতের দিনে প্রচন্ড কাপছে খালি গায়ে সে, আর এই কারনেই তার সেলারি ও তিনগুণ বেড়ে গেছে।
তা একদিন ভাবলাম সবাইকে তো একবার হলেও বোনাসের কিছু অংশ দিছি তা এই নতুন জনকে তো কিছুই দেওয়া হলনা। মনের মধ্যে কিছুটা সংশয় নিয়ে ওইদিন বললাম তোমাকে একটা শীতের পোষাক কিনে দেই, নিবা?
উত্তর দিল সে, না স্যার পোষাক দিয়া কি করুম, পারলে ট্যেকা দেন।
দিলাম পকেট থেকে সবচেয়ে ছোট সাইজের নোটটা।
জন্মদিন, থার্টি ফার্স্ট, ভ্যালেন্টাইন এইরকম হাজার দিবসে টাকা উড়াইতে কোন আপত্তি নাই মাগার মসজিদে দান আর ভিক্ষুককে খয়রাত দিতে গেলেই টাকা বের হইতেঈ চায়না। কোন এক শক্তি যেন হাতটাকে বড় করতেই দেয় না।
অবাক লাগে মাঝে মাঝে, চিনি না জানি না কিন্তু সেই শক্তি কি এমন যে তার কাছে পরাজিত হই প্রতিনিয়ত।
এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার আমির জগতটা কেন জানি কালো রংগে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কত ভাবনাই আমাকে করছে ভাবান্তারিত, উদাসী পথ হারা এক বিভ্রান্ত পথিক হয়ে বসে আছি প্রিয় রাজ্জাক কাকার চায়ের দোকানে।
সাথে সব ভাই ব্রাদার্স গ্রুপের সদস্য, চায়ে এক চুমুক দিতেই বোরকা পরিহিতা এক মহিলা সাথে পিচ্চি বাচ্চা নিয়ে হাজির।
নিজে হয়তো পাপী বান্দা তাই বলে ভাল কাউকে দেখলে শ্রদ্ধা করতে কিঞ্চিৎ কারপন্য করি না।
আগ বারিয়ে এসে আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াল। বন্ধু মহলে থাকলে যা হয়, দান খয়রাত না করলে সবাই বলব হালায় কিপ্টা,
তাই মোটামুটি সবাই পকেটে হাত ঢুকালাম।
মনে কেন জানি সন্দেহ হল, ওই মহিলা তার বাড়ি যে অঞ্চলের কথা বলেছিল ঘটনাক্রমে আমার বাড়িও সেই এলাকায়।
কিন্তু ওনার কথায় কোন মিল নেই, ওই অঞ্চলের ভাষা তো দুরের কথা দু চারটা নামও সে জানে না।
তারপর যখন ধরলাম তখন বলল সে বড় বিপদে পরছে মিথ্যা বলছে এই.......
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল, কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করার পর নিজের মনের অবস্থা যে আরও বেশি খারাপ হয় সেটা তো কাউকে বুঝাইতে পারি না।
চলতে ফিরতে হাজারো চিটার বাটপারের মাঝে অনেকেই হয়তো সত্যিকারের বিপদে পরে আশায় দুটা হাত বাড়ায়।
আর মজার ব্যাপার হল সত্যিকারের লোকগুলি ভাল অভিনয় করতেও পারে না।
দেখা গেছে ভাল আর মন্দের মাঝে প্যাচ লাগাইয়া ভাল কাউকেই উত্তম মাধ্যম করছি।
ইদানীং যেটা শুনলাম তা তো আরো ভয়ংকর, ইচ্ছা করেই নাকি কানা ল্যাংড়া হচ্ছে আর তাতে নাকি ভালই ইনকাম বাড়ে ডাবল প্রমোশন একবারে।
আমাদের এলাকায় এক ভিক্ষুকের নাকি চার তালা বাড়িও আছে!!!!!
মনে শুধুই দ্বিধা!!!! ভিতর বাহির সবখানে।
চারিদিকে শুধুই প্রতারনা, হরেক রকমের ফাদ, ভেজাল আর ভেজাল।
এতদিন তো খাবারে ফরমালিন ছিল এখন তো প্রেমেও নাকি ফরমালিন পাওয়া যায়।
আল্লাহ তুমি আমাদের হেদায়ত কর।।সহীহ জ্ঞান দান কর, আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৬