বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ। তাই ভাবলাম বাসা থেকে ঘুরে আসা যাক। রাজশাহী থেকে টংগী তে আসলাম । অনেক পর বাসায় আসলে যা হয় আর কি? স্বাস্থ্য হাজার ভাল থাকলেও মায়ের চোখে মুখে শুধুই হতাশার কথা।
কি করস তুই? না খাইয়া খাইয়া শরীরটারে কি বানাইছোস !! ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ থেকে আইলি নাকি, এই রকম কত কথা।
তারপর মায়ের কথা শেষ হইলে বলতাম, মা আমার ওজন দশ কেজি বাড়ছে জানো?
ক্যাম্পাসের বন্ধু বান্ধব ছেড়ে বাসায় প্রথম দুই তিনদিন ভালই লাগে কিন্তু পরের সময়টা কাটতেই চায় না। টংগী তে ফ্রেন্ড সার্কেল তেমন একটা বেশি নাই যেও বা আছে তাদের বাসা আমার বাসা থেকে বেশ দুরে। অবশ্য কাছের কিছু ছোট আর বড় ভাই আছে যাদের সাথে আড্ডা ভালই জমে। কাম কাজ নাই কবে ক্যাম্পাস খুলবে তারো ঠিক নাই।
আদরের ছোট ভাই অংকুর দের বাসার সামনে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে, সবে মাত্র দোতালা পর্যন্ত ছাদ হয়েছে। এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি। রোজদিন আমরা সেই বিল্ডিং ক্যারাম খেলছি দিব্ব্যি মনের আনন্দে। সাথে অংকুর, আসিফ আর আশিক এর সাথে আড্ডা তো চলছেই। দিনে ক্যারাম খেলা আর রাতে ছাদে আড্ডা মারা এই হচ্ছে বিগত কয়েকদিনের রুটিন আমার।
তারিখ টা ঠিক মনে নেই আমার, মার্চ কি এপ্রিল এর মাঝামাঝি হবে। রাতে কারেন্ট চলে গেছে, অংকুর ফোন দিয়ে ডাকল আড্ডা মারার জন্য। কাজ নেই তাই দ্রুত চলে এলাম, একটু পর আসিফ ও চলে এল। দিনটা যতদূর মনে পড়ে শুক্রবার ছিল, তিনজনে মিলে গল্প করছি আর রেডিও তে ভুত এফ এম শুনছি।
ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোন শব্দ নেই চুপচাপ ব্যস্ত শহর যেন ঘুমিয়ে পরেছে। সবাই মিলে গল্প করছি, আর ভুত এফ এম এর গল্প নিয়ে সমালোচনা করছি, আসিফ বলছে ভাই এইসব সব ভুয়া গল্প। এই রকম নানান কথার ফাকেও একটু একটু ভয় তো লাগছেই সবার। আকাশের কোথায় চাঁদ তারা কিছুই নেই। রাতও প্রায় গভীর হয়ে আসছে..
কথা বলতে বলতেই হঠাত দেখি আমরা ছাদের যে কোনায় বসে ঠিক তার উল্টো দিকে একজন দাড়িয়ে নামায পড়ছে আর একজন পায়চারী করছে। ঐদিকে তাকাতেই দেহে কাঁপুনি ধরে গেল। কালো কাপড়ে ঢাকা সাড়া শরীর, বেশ লম্বা, বুজতে পারছি না পুরুষ না মহিলা। দেখেই তো গা ছমছম শুরু হয়ে গেছে, তিনজনই দেখে না দেখার ভান করছি। প্রথমে ভেবেছিলাম কল্পনা দেখছি, কিন্তু না এতো সত্যিই দেখছি। কারো মুখে কোন কথা নেই, গায়ের লোম শিউরে উঠেছে।
এই বাসায় তো কেউ থাকেনা, তাহলে এত রাতে ওনারা কোথা থেকেই বা এল এখানে। মাথায় কিছুই কাজ করছে না তিনজনের।
তিনজনের মধ্যে আমি বড় হলেও সাহস বেশি ছিল না। এতটাই ভয় পেয়ে গেছি যে মোবাইল এর টরচ লাইট মেরে যে দেখব সে সাহস ও কারো নেই। আবার তাকালাম, হ্যা এখনো আছে রুকু সিজদা যথারীতি দিচ্ছে। ভয় ক্রমশ বেড়েই চলছে, ছাদ থেকে যে লাফ দিব সে সাহস ও নেই। আবার সিড়ি দিয়ে যে নেমে পালাবো সে উপায়ও নেই , কারন যে পায়চারী করছিল সে সিড়ির খুব নিকটে ছিল।আর এমন ভাবে পায়চারী করছে একটুও শব্দ হচ্ছে না। ছোটবেলায় গল্প শুনতাম জিনরা হাটলে নাকি পা মাটির উপরে থাকে।
এতদিন জিন ভুত নিয়ে নানান রকম ফাজলামি করছি, আজ সত্যি সত্যি যে এরকম একটা কিছু হবে ভুলেও কলপ্না করিনি কেউ।
বিপদে পড়লে নাকি মানুষ আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, আমরাও তাই শুরু করলাম। আর মনে মনে ভাবছি কারেন্ট টা কেন আসে না। শালার অন্যদিন দশমিনিটেই চলে আসে আর আজ আধাঘন্টা হয়ে গেল তবুও কোন খবর নেই। নাকি জিন ভুতেই কারেন্ট এর লাইন অফফ করে দিয়েছে......
দেখতে দেখতে আধাঘণ্টা পার হয়ে গেছে এরই মাঝে কারেন্ট চলে এল, এবার সাহস করে তাকালাম। তারপর এগিয়ে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির আংকেল আর আন্টি। ভয়ে ভয়ে সালাম দিলাম। আংকেল জিজ্ঞেস করল এত রাতে তোমারা এখানে কেন?
না আংকেল কারেন্ট নাই তো, তাই আড্ডা দিচ্ছি এই আর কি।
যাও অনেক রাত হয়েছে বাসায় যাও??
ঠিক আছে আংকেল বলে তিনজনে বাসায় ফিরে আসলাম, রাতে আর ঠিকমত ঘুম হলনা। ঘুমের মধ্যেও মনে হচ্ছে সত্যি কি আংকেল আন্টি ছিল নাকি অন্য কিছু????
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই...
পরদিন সকালে আবার সেই ছাদে গেলাম,তারপর দেখলাম আমরা যে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিক তার পাশের বিল্ডিং থেকে এই ছাদে আসার জন্য একটা মই রাখা হয়েছে। আর সেই মই দিয়েই আংকেল আন্টি গত রাতে ছাদে এসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিল।