র্উৎসর্গ : শ্রদ্ধেয় নানা।
তখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি , বড় আপু ফোরে আর ছোট খালামনি ক্লাস ফাইভে।
নানা বাড়িতে থাকতাম আমরা। বাবা ঢাকায় চাকুরী করত একাটা প্রাইভেট কোম্পানিতে।
গ্রামের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম আমরা তিনজন।
নানা ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক।
নানা বাড়ি থেকে স্কুলের পথ মাইল দেড়েক হবে।
আপু আর খালামনি ওদের বান্ধবী দের সাথে স্কুলে হেটে যেত। আর আমি নানার প্রিয় সেই দিচক্রযানের পিছনে বসে যেতাম। আসার সময় ও তাই হত।
এভাবে করে চলছে স্কুলের জীবনের দিনগুলো।
দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এল।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে নোটিশ হল অমুক দিন বিদায় অনুষ্ঠান হবে।
বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভালই আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।
যথারীতি বিদায় অনুষ্ঠানের দিন সবাই একত্রিত হলাম। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে শুরু করে গ্রামের গন্য মান্য ব্যক্তি বরগ উপস্থিত।
সভাপতির অনুমতি ক্রমে অনুষ্ঠান শুরু হল, একে একে সবাই ভাষন দিচ্ছে, সবশেষে প্রধান শিক্ষক তার মুল্যবান বক্তব্য পেশ করল।
তারপর সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করা হল।
অনুষ্ঠান শেষে সেদিন আর নানার সাইকেলে না চড়ে বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছি।
তো সবাই আলোচনা করছি, কে কোন নতুন স্কুলে যাব। কেউবা বলছে আমি অমুক স্কুলে আবার কেউবা বলছে না না ওই স্কুল ভাল না, চল আমরা অন্য আর এক স্কুলে যাই।
গল্প করতে করতে বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসেই মা কে বললাম, মা আজ তো আমাদের বিদায় দিয়েছে।
এখন আমি কোন স্কুলে পড়ব?
আমার কথা শুনেই তো মা হেসে ফেলল Smile
বলল ক্লাস থ্রী তেই প্রাইমারী পাশ করবি তুই।
আমি তো কিছুই বুঝলাম না।
পরে মা বুঝিয়ে বলল সবকিছু। আসলে বিদায় দিয়েছিল ৫ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের।
তারপর আমার দুচিন্তা কেটে গেল।
এর বছর দুয়েক পর নানা আর আমি দুজনেই একসাথে বিদায় নেই। সালটা ২০০০। খুব কষ্টের মুহুরত ছিল সেই সময়!!!!
নানা সেই বার চাকুরী থেকে স্থায়ী ভাবে অবসর গ্রহন করে। আমার এখনো চোখে ভাসে সেই সৃতি!!!!
আমি মানপত্র পড়ছি আর নানার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরছে!!!!!!!!
নানার সেই সাইকেলটা আজও আছে কিন্তু আর কখনো ওভাবে সাইকেলে উঠা হয়না।
সাইকেলটাকেও বিদায়!!!!!!
Sad( Sad(