ঘুম ভাঙল শেয়ালের ডাকে। হুজুর।
বাইরে তাকাল সিংহ। ভোর হই হই করছে। গুহায় মাত্র সূর্যের আলো ঢুকতে শুরু করেছে।এত সকালবেলা শিয়াল হারামজাদাটা চায় কি?
এক থাবায় হারামজাদাটার ঘাড় চেপে ধরল। কি সমস্যা? এই সকালবেলা আমার ঘুম ভাঙ্গালি কেন? জানিস না, গতকাল রাতে খুব ভোজ হয়েছে? আজ সারাদিন ঘুমাব আমি।
-ওটা নিয়েই কথা বলতে এসেছি আমি। শিয়াল ভয়ে ভয়ে জবাব দিল।
-আমার ভোজ নিয়ে কথা বলবি! এত বড় সাহস তোর হয় কি করে? এক থাবায় মটকে দেই তোর ঘাড়টা?
-হুজুর, আমিতো আপনারই লোক। আমাকে যদি মেরে ফেলেন ...
-তোর মত ধুরন্ধর শিয়াল কারও আপন হয় না।আজ আমি এই বনের রাজা বলেই তুই হুজুর হুজুর করছিস, কাল বুড়ো হয়ে গেলে সেই তুই-ই আমার রক্ত চুষে খাবি।
-হুজুর, আমি ভবিষ্যতে কি করব-সে পরে দেখা যাবে।আপাতত পালান।
-পালাব মানে? পাগল নাকি? আমার জঙ্গল, আমার রাজত্ব-সেটা ছেড়ে আমি পালাব কেন?
-হুজুর, বনের সব পশুরা ক্ষেপে আছে। আপনাকে মেরে ফেলবে বলে ওরা এদিকে ছুটে আসছে।
-কি? এত বড় দুঃসাহস? কে? আমাকে নাম বল শুধু।
-হুজুর, পুরো জঙ্গলই ক্ষেপে আছে। আপনার বিরুদ্ধে ওরা সবাই আজ একজোট।
-বলিস কি? সবাই একজোট? আমিতো সবসময় বিড়ালের পিছে কুকুরকে, সাপের পিছে বেজিকে, মাছের পিছে ঈগলকে-সবাইকে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়ায় ব্যস্ত রাখতাম। ওরা আজ একজোট হল কি করে?
-আপনার হায়েনা বাহিনী।
-কি করেছে ওরা?
-খরগোশের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নদীর পাড়ে গিয়েছিল পানি খেতে। আপনার হায়েনা বাহিনীর সাথে জঙ্গলবাসীর চুক্তি ছিল গ্রীষ্মের দিনে কেউ নদীর পানি পান করার জন্য আসলে ওরা শিকার করবে না, ছোট শিশু হলেতো একেবারেই নয়।
-তাহলে ওরা করল কেন?
-ওদের কথা হল খরগোশের বাচ্চাগুলো নাকি বিরোধী পক্ষ।ওরা নাকি নদীর পানি ঘোলা করছিল যাতে কেউ পানি খেতে না পারে আর সবাই আপনার ওপর ক্ষেপে যায়।
-খরগোশ কি পানি ঘোলা করে? পানি ঘোলা করে খাওয়ার অভ্যাসতো শুকরের।
-হুজুর, এখন এসব বলে কি লাভ? আপনার হায়েনা বাহিনী তথ্য বের করার নামে খরগোশগুলোকে মেরে ফেলেছে। খরগোশগুলোকে খেয়ে ফেলে ওদের হাড়গোড় ভাসিয়ে দিয়েছে নদীর স্রোতে।
-তো ঠিকইতো করেছে। গণতন্ত্রের চেতনা সমুন্নত রেখেছে আমার হায়েনারা।
-ওই সমুন্নত চেতনার ধাক্কায় এখন সারা জঙ্গল চেতে আছে।
-শিয়াল।
-জ্বি হুজুর।আমার হায়েনা বাহিনীতো কোন সাক্ষী রাখার মত কাঁচা কাজ করে না।জঙ্গলবাসী জানল কি করে?
-কুমির।
-হোয়াট?
-জ্বি। আপনার জ্বালায়তো সে আর ডাঙ্গায় এসে শিকার করতে পারে না, তাই কালকের ঘটনার পুরো সুযোগটাই সে নিয়েছে। দূর থেকে প্রথমে সে পুরো ঘটনা দেখেছে, কাউকে থামায়নি। পুরো ঘটনা শেষে আপনার হায়েনারা যখন আরাম করছিল তখনই সে আক্রমণ করেছে। লেজের বাড়িতে এক হায়েনাকে অজ্ঞান করে দিয়েছে।
-তারপর?
-তারপর আর কি? আপনার বীর বাহাদুর বাকি হায়েনারা কুমিরের চেহারা দেখেই ভয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
-আর যে হারামজাটারা ধরা পড়েছে?
-সে আর কি করবে? কুমিরের রিমান্ড কি আর যে সে কথা? লেজের দুটো ঘা খেয়েই সব স্বীকার করেছে সে। কুমিরও তখন তার চোখে পানি নিয়ে ছুটে গেছে সবার কাছে। সব শুনে খুব কাঁদল খরগোশগুলোর বাবা-মা। তারপর হঠাৎ এক খরগোশ ঘোষণা করল সন্তান হত্যার বদলা নেবে সে।
-এহহহ, বললেই হল?
-আমিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম।
-তো এখন কি ভাবছিস?
-হুজুর, নদীর ওপারের হাতীকে আপনিতো চেনেনই। আর কেউ মানুক, না মানুক, নিজেকে সে জঙ্গলের মোড়ল ভাবে। সে ঘোষণা দিয়েছে আপনাকে সে পায়ের নিচে পিষে মারবে।
-আর আমি মরে গেলে গেলে জঙ্গলের দায়িত্ব কে নেবে?
-তা জানিনা। তবে আমার একটা সন্দেহ আছে।
-কি সন্দেহ?
-আমার ধারণা কুমির আর হাতীর মধ্যে কোন গোপন চুক্তি হয়েছে। আপনাকে মেরে ফেলে হয়ত নদীর এপারটা দখল করবে কুমির আর ওপারের দখল নেবে হাতী।
হঠাৎ জঙ্গল কাঁপিয়ে হেসে ওঠে সিংহ। এই চরম দুঃসময়ে সিংহের হাসি দেখে অবাক হয়ে যায় শিয়াল। অধিক শোকে সিংহ ব্যাটা পাগল হয়ে গেল নাকি?
-শিয়াল।
-জ্বি হুজুর।
-জঙ্গলবাসী মনে কাছাকাছি চলে এসেছে। ওদের উন্মাদ চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।
শিয়াল ভয়ে ভয়ে বলে, আমারও তাই মনে হচ্ছে।
-চলতো গুহা থেকে বের হই, পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে দাড়াই।
মনে মনে বিরক্ত হলেও সিংহকে না বলার মত সাহস পায় না শিয়াল। নীরবে তাকে অনুসরণ করে পৌছে যায় পাহাড়ের চূড়ায়।
দূর থেকে ক্রোধে উন্মত্ত একদল জংলী জানোয়ারকে ছুটে আসতে দেখে শিয়াল। ক্ষোভে ঘৃণায় অন্ধ এই পশুগুলোকে চালিয়ে নিয়ে আসছে একটা কুমির, যার হাত থেকে জীবন বাচিয়ে নদী পেরনোই দায় আর একটা বিশাল হাতী-যার পায়ের নীচে তাদের প্রায়ই পিষে মরতে হয়।
-কি বুঝলি? হঠাৎ জানতে চায় সিংহ।
অবাক হয় শিয়াল। আমিতো চোখের সামনে শুধু বিপদই বুঝতে পারছি। এর বেশী কি বুঝব?
-ওরে বেকুব, যে "জঙ্গল বসন্তে"র নেতৃত্ব দেয় একটা হিংস্র কুমির আর একটা পাগল হাতী, সেই "জঙ্গল বসন্ত"-এর ভবিষ্যত কি?
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র, ঘটনা ও সংলাপ কাল্পনিক, বাস্তবতার এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কেউ বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজে পেলে তা নিজ দায়িত্বেই পাবেন, আমি এর মধ্যে নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২০