-কিরে, কতদূর এগোল? মাহিন জানতে চায়।
-কি? সাকিব পাল্টা প্রশ্ন করে।
-কি আবার? প্রিপারেশন। টার্ম ফাইনালের সময় আর কিসের কথা জিজ্ঞেস করব? মাহিন খোঁচা দেয়।
-তোর কোন বিশ্বাস নাই। গত টার্মে তুই আর আবীর যেভাবে শুরু করেছিলি, ভাবছিলাম এবারও সেরকম কিছুর কথা জিজ্ঞেস করলি কিনা।
-আমি আবার গতবার কি করলাম? মাহিন অবাক।
-কেন? গতবার টার্ম ফাইনালের মাঝখানে তুই আর আবীর যেভাবে প্রিজন ব্রেকের পিছে লাগলি, মনে হল ওইটার চার সিজনই তোদের সিলেবাস। শেষ করতে না পারলে শিওর ল্যাগ।
-আবীর হারামজাদাটার কারণেই গতবার সিজিটা থ্রী’র নিচে নেমে গেল। হালায় একটা হারামি।
-এবার কোন সিরিয়াল নিয়ে আসে নাই?
-আসছিল, লা কাছা দে পাপেল।
-কয় সিজন?
-দুইটা। দেখবি?
-আগে পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর। তুই দেখেছিস?
-নাহ।
-রিভিউ কেমন?
-ভালই।
-তাহলে শুরু কর।
-দুচির ভাই। তুইও হালা আবীরের মতই হারামি। গতবারতো তাও টু পেয়ে পাস করছিলাম। এবার একই কাহিনী করলে শিওর ল্যাগ।
সাকিব চুপ করে থাকে।
-তোর প্রিপারেশন কেমন? মাহিন আবার জানতে চায়।
-সুবিধার না।
-কেন?
-আরে অনেকগুলা ম্যাথ বুঝতেছি না।
-তুই না ম্যাথ অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ান! এবার মাহিন খোঁচা দেয়।
-বালের নাটক করিস না। টার্মের মাঝখানে অনেকগুলা ক্লাস মিস দেয়ার মজা বুঝতেছি এখন।
-ভাল কথা। টার্মের মাঝখানে প্রায় দুইতিন সপ্তাহ কইছিলি রে?
-আরে, আব্বার বাইপাস সার্জারি হইল না। ওইনিয়ে দৌড়ের উপর ছিল।
-তাই নাকি?
-হ্যা।
-আজব, জানতামই না।
-তোরা শালারা সব দুধের মাছি, জানবি ক্যামনে?
-সাকিব?
-বল।
-আংকেলের অবস্থা এখন কেমন?
-আগের চেয়ে ভাল।
-অফিস থেকে ছুটি নিছে?
-নিয়েছিল, সপ্তাহখানেক আগে আবার জয়েন করছে।
-যাক, ভাল খবর।
-সেটাই।
হঠাৎ দুজনেই চুপ হয়ে যায়।
-মাহিন।
-বল।
-হঠাৎ আমার রুমে আসলি?
-আমি আসছি কয়েকটা ম্যাথ বোঝার জন্য। এখনতো মনে হচ্ছে তোর অবস্থাও আমার মতই।
-আমি কালকে সকালে আউলায় যাব।
-নাভিদের রুমে?
-হ্যা।
-ফাইট দিতে?
-হ্যা। আসিস।
-কখন?
-আটটায়।
-পিএলে এত সকালে উঠব?
-সমস্যা কি? মাত্র বারটা বাজে। রুমে গিয়ে এখনই ঘুমায় পড়।
-এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি আতলামি।
-চার ক্রেডিটে ডি পাইলে আতলামি পিছন দিয়ে বের হবে।
-তাও ঠিক কথা। তুই কি এখন ঘুমায় পড়বি?
-আপাতত বাইরে যাব।
-নীচে?
-নাহ, পলাশীতে।
-চা খাবি?
-পরটা আর চাইনিজ মারব।
-রাতে খাস নাই?
-আরে নাহ। টিউশানির থেকে আসতে দেরী হয়ে গেছে। এক ঘন্টা ধানমন্ডি ২৭ এ আটকে ছিলাম। হলে এসে দেখি ডাইনিং বন্ধ।
-চল, আমিও যাই।
-তুই খাস নাই রাতে?
-খাইছি।দুইটা পরটা এক্সট্রা খাইলে কিছু হবে।
-দাড়া তাহলে, লুঙ্গিটা চেঞ্জ করে নি।
মাহিন উঠে পড়ে। সাকিব লুঙ্গি পাল্টে প্যান্ট পড়ে। হল থেকে বেরিয়ে পড়ে দুজন।
সাকিবের ফোনটা বেজে ওঠে।
সাকিব স্ক্রীনের দিকে তাকায়। সাবিহা।
-হ্যালো।
-ভাইয়া, তুমি বিজি?
-নাহ, বল।
-আম্মু ফোন করছিল তোমাকে রাতে। তুমি ফোন ধর নাই। আম্মা টেনশান করতেছিল। সেজন্য কল দিলাম।
-টিউশানি থেকে আসতেছিলাম, রাস্তায় ছিলাম। ভাবছিলাম রুমে ফিরে ফোন দিব আম্মাকে। পরে আর মনে নাই। আম্মা শুয়ে পড়ছে?
-হ্যা।
-আচ্ছা, আম্মাকে মানা করিস টেনশান করতে। আব্বার কি অবস্থা?
-ঐ, চলতেছে আরকি?
-অফিস করতেছে?
-হ্যা।
-আচ্ছা, তুইও শুয়ে পড়। আমি কালকে আম্মাকে ফোন দিব।
-ঠিক আছে।
সাকিব ফোন কেটে দেয়।
-মামা, দুইটা চাইনিজ আর চারটা পরটা।
-বসেন মামা।
সাকিব আর মাহিন একটা বেঞ্চে বসে পড়ে।
-মাহিন।
-বল।
-আচ্ছা, এই জিনিসের নাম চাইনিজ কেন?
-মানে?
-মানে, একটা ডিম। পিয়াজ-মরিচ দিয়ে তেলে ভাজতেছে। এই জিনিসের নাম চাইনিজ কেন? তোর কি মনে হয়?
-জানিনা। তুই কি বুয়েট থেকে পাশ করে বাংলা টিচার হবি? পোলাপানকে নামকরণের সার্থকতা পড়াবি?
মাহিনের জবাব শুনে সাকিব হঠাৎ হেসে ওঠে।
দোকানদার লোকটা দুটো প্লেটে ডিম ভাজি আর পরটা দিয়ে যায়। দুজন নিঃশব্দে খেতে শুরু করে।
-সাকিব, চা খাবি?
-দিতে বল।
-মামা, দুইটা চা।
এমন সময় হাম্বা হাম্বা শোনা যায়। সাকিব আর মাহিন দুজনেই তাকিয়ে দেখে ওদের সমান কিংবা ওদের চাইতে কমবয়সী দুটো ছেলে ছয়টা মহিষ নিয়ে পলাশীর মোড় অতিক্রম করছে। পলাশী মোড়ে মাঝরাতের নিয়মিত দৃশ্য। আরো কিছুক্ষণ বসলে এরকম আরো কয়েক ব্যাচ মহিষ আর রাখাল বালক দেখা যাবে। মাঝরাতে এতগুলো মহিষ নিয়ে ওরা কোথায় যায়, কে জানে।
দোকানদার দুকাপ ধোয়া তোলা চা দিয়ে যায়।
সাকিব চুমুক দিতে যাবে, এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে।নিতি।
-হ্যালো।
-তুমি কি হলে? নিতি জানতে চায়।
-পলাশীতে। কেন?
-একটু শামসুন্নাহারে আসতে পারবে?
-শামসুন্নাহার হলে?
-হ্যা।
-এতরাতে নিজের হল ছেড়ে তুমি ওইখানে কি কর?
-আরে, এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন ছিল। আমরা আসছিলাম সেলিব্রেট করতে। এখন একা হলে ফিরতে ভয় করছে?
-সাথে ফ্রেন্ডরা কেউ নাই।
-আরে, আমাদের মেডিকেলের কেউ নাই।আমি ছাড়া সবাই ডিইউ’র।
-তাহলে আজকে রাতে থেকে যাও।
-নাহ, কালকে আইটেম আছে।আমার হলে ফিরতেই হবে।
-আচ্ছা, আসতেছি।
সাকিব ফোনটা কেটে দেয়।
-ভাবী নাকি? মাহিন জানতে চায়।
সাকিব হাসে। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে ‘বউ’ আর বন্ধুর প্রেমিকাকে ‘ভাবী’ ডাকা এখনকার পোলাপানের ট্রেন্ড, যদিও কেউই জানেনা সম্পর্কটা চূড়ান্ত পরিণতি পাবে কিনা।
-কি হল? এই মাঝরাতে আবার ডিউটি পড়ল নাকি? মাহিন আবার জানতে চায়।
-হু, সাকিব প্রায় নিঃশব্দে জবাব দেয়।
-সাকিব, আমি কি আসব সাথে?
-লাগবে না। তুই হলে যা। আর মাথায় রাখিস, কালকে সকাল আটটায়।
-ওকে।
সাকিব আর মাহিন দুজনেই উঠে পড়ে।
মাহিন হলের দিকে পা বাড়ায়, সোডিয়ামের হলুদ আলোয় ফুলার রোডে সাকিবের ছায়া পড়ে।
================================================================
অনেককাল আগে সাকিবকে নিয়ে দুটো গল্প লিখেছিলাম। এটা সাকিবের তৃতীয় কিস্তি। সাকিবকে নিয়ে আরো কয়েকটা গল্প লেখার পরিকল্পনা আছে, দেখি কবে নাগাদ লিখতে পারি।
আগের দুটো গল্পের লিংকঃ
গল্পঃ ভালবাসার বৃষ্টি
গল্পঃ কুয়াশায় ঢাকা গল্প যত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮