somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ- "হেমলক সোসাইটি"(২০১২)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভেবেছিলাম আর মুভি রিভিউ লেখব না । একে তো আমি মুভি রিভিউ তেমন একটা ভাল লেখতে পারি না তার ওপর আবার আমার নিজের বই পড়ার প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে বলে ই নিয়ে আলোচনা করাটাই আমার জন্য উপযুক্ত একটা কাজ । কিন্তু রিসেন্টলি যে মুভিটা দেখলাম, সেটা দেখে আমার ব পড়ার কাছাকাছি অনুভূতি হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না । মুভিটা হল টালিউডের অন্য ধারার পরিচালক শ্রীজিত মুখার্জীর “হেমলক সোসাইটি” । যারা ইন্ডিয়ান যে কোন মুভি পছন্দ করেন না তারা আগেই হইচই করে উঠবেন না যেন, আমি নির্মোহভাবে মুভিটির পজিটিভ-নেগেটিভ দুই ধরণের বিষয়গুলো নিয়েই লেখাটি সাজানোর ট্রাই করলাম ।

কলকাতার বাংলা মুভির সমালোচকরা বলেন, কলকাতার আর্ট মুভি নাকি কেবলই প্রাসঙগিক- অপ্রাসঙ্গিক বেড সিন, গভীর ভাবের কিছু সংলাপ, মাখন মাখন কিছু ন্যাকা কথাবার্তার সম্মিলীত খিচুড়ী । কিন্তু আমি সেভাবে আর্ট মুভি তেমন দেখি না, তবে এই অভিযোগ যে অনেকাংশেই সত্য, এটা অবশ্য জানি । এবার আসুন দেখি, “হেমলক সোসাইটি” ও এই সমস্ত দোষে দুষ্ট কিনা ।

মুভিটা শুরু হয় একটি শ্রুতিমধুর গান দিয়ে । তবে বিখ্যাত গায়ক সিদ্ধার্থ রয়(শীলাজিত) কেন বারে বসে গান গাবেন, সেটা ঠিক স্পষ্ট হল না । আর বারের পরিবেশ এই ধরণের গানের প্রতি সুবিচার করে না বলেই জানি । যাই হোক, ছবির প্রথমেই মেঘনা(কোয়েল মল্লিক) এর সাথে ছেলেবন্ধুর বিচ্ছেদ ঘটে যেতে দেখানো হয়, ওদিকে মেঘনা আগে থেকেই মৃতা মায়ের স্মৃতি আর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মানসিকভাবে বিপ্রযস্ত ছিল । এসব কারণে স্লিপিং পিল খেয়ে সুইসাইড করার কথা ভাবে মেঘনা, কিন্ত ওষুধের দোকান থেকে আনন্দ কর(পরম ব্রত) ফলো করে মেঘনার চেষ্টা ব্যার্থ করে দেয় ।

মেঘনা ক্ষেপে যায় । তখন আনন্দ মেঘনাকে “হেমলক সোসাইটী” নামক একটী সংস্থার কথা বলে । যারা আসলেই আত্ম হত্যা করতে চান তারা যেন সব শিখে আত্ম হত্যা করতে পারেন, এটাই এ সংস্থার মটো । আনন্দের এইসমস্ত বাড়াবাড়ী রকমের মাখনযুক্ত ডায়লগ থেকে হুশিয়ার মুভিখোরদের মুভিটির “ডার্ক কমেডী” হিসেবে বুঝে ফেলার কথা । যাই হোক, মেঘনা হেমলক সোসাইটীর ওয়ার্ক শপ আরম্ভ করে ।

মুভিটার আরো একটা বিশেষ দিক হল, অতিথি চরিত্রের আধিক্য । হাত কেটে কিভাবে মরতে হয় সেটা শিখাবেন ড ধমনী ঘোষ(সব্যসাচী চক্রবর্তী), বিভিন্ন ওষূধ খেয়ে মরতে শেখাবেন দয়াল খাসনবিশ (শ্রীজিত মুখার্জী), ফাঁসিতে ঝুলে মরতে শেখাবেন ঝুলন গুপ্ত( সাবিত্রী চ্যাটার্জী), আগুনে পুড়ে মরতে শেখাবেন শিখা গুন( সুদেশনা রায়), ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে মরতে শেখাবেন সেতু ভেঙ্কট্ রমণ(রাজ চক্রবর্তী), ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যেতে শিখাবেন ট্রেনলেট বিশ্বাস...... কাজের সাথে নামের মিল,আত্ম হত্যা করতে চাওয়াদের প্রতি শিক্ষকদের কৌতুক মেশানো ডায়লগ, এবং নানা ঘটনাবলী হেমলক সোসাইটির প্রকৃত লক্ষ্য সম্পর্কে দর্শকদের দ্বিধায় ফেলে দেয় । কর্মশালার মাধ্যমে মেঘনা সবাই বুঝতে শুরু করে যেসব কারণে তারা আত্ম হত্যা করতে চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দুঃখ নিয়ে অনেক মানুষ বেঁচে আছে । আর মরার জন্য যে সাহস লাগে তা আসলে তাদের নেই । এভাবে “হেমলক সোসাইটি”র কাহিনী এগিয়ে যায় পরিণতির দিকে ।


পজেটিভ কিছু দিকঃ

১। প্লট অভিনব ।

২। গেস্ট অভিনেতারা দুর্দান্ করেছেন । আর্মি অফিসারের বেশে সৌমিত্র চ্যাটার্জীর কোয়েল মল্লিককে লক্ষ্য করে, “আহা বলই না, তুমি যখন “পটী” কর, তখন কি বয় ফ্রেন্ডকে লাগে??” ডায়লগ শুনে পুরাই হা হা প গে............

৩ । ক্লাস্রুমের সেট চমতকার । মারাত্নক এক কথায় ।

৪ । ডিটেইলের কাজ গুলো আপনার ভালো লাগবে ।

৫ । ডায়লগে জোকসের সমাহার ।


নেগেটিভ কিছু দিকঃ

১। সেই পশ্চিমবঙ্গের চিরাচরিত মাখন মাখন নেকু নেকু ডায়লগ ।

২। অল্পবিস্তর আঁতলামি আছে ।

৩। কিছু অংশ ভালো লাগবে না ।



এখন বলতে পারেন, এত মুভি থাকতে আমি এই মুভির রিভিউ কেন লেখলাম??? এর কারণ হচ্ছে মুভির মেসেজটা । আমরা আমাদের আশেপাশেই এমন অনেককেই দেখতে পাই যারা তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে সুইসাইড করার কথা চিন্তা করে । বাবা মা হয়ত সাধ্যের বাইরে গিয়েও সন্তানের আকাশ কুসুম চাওয়াগুলো পূরণ করছেন, কিন্তু দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বুঝে সন্তান আরো বিগড়ে যাচ্ছে, চাহিদা পূরণ না হলে সুইসাইড করারও হুমকি দিয়ে দিচ্ছে... নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছে । আবার অনেকে প্রেম করতে পারছে না বলে নিজেকে “লুজার” উপাধি দিয়ে বসে আছে । যুগের সাথে তাল মেলাতে প্রেম করছে, ছ্যাক খাচ্ছে, মনমরা হয়ে থাকছে, তাদের কাছে এই মুভিটার শিক্ষণীয় আবেদন আছে ।


আমার পরামর্শঃ নেকু নেকু ডায়লগ সহ্য না হলে টেনে টেনে ক্লাস্রুমের অংশগুলো দেখতে পারেন । ওটাই মুভিটার সার অংশ ।


(আমার নেট প্যাকেজের কমতি আছে । জবাব দিতে দেরি হবে । আগেই ক্ষমা চেয়ে রাখছি । সবাই ভালো থাকবেন ।)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৬
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্মাদযাত্রা

লিখেছেন মিশু মিলন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

একটা উন্মুল ও উন্মাদ সম্প্রদায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে যা হয় আর কী, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ঘুরপাক খায় আর নিন্মগামী হয়! এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×